Published on Feb 16, 2025 Updated 0 Hours ago

মলদ্বীপ শ্রীলঙ্কায় চিনের দৃষ্টিভঙ্গি মেগা-প্রকল্প থেকে উচ্চ স্তরের মিথস্ক্রিয়া বৃদ্ধি ছোট উন্নয়নমূলক উদ্যোগে রূপান্তরিত হচ্ছে

শ্রীলঙ্কা ও মলদ্বীপে চিনা প্রভাবের পরিবর্তনশীল প্রকৃতি

২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু তাঁর প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর হিসেবে চিন সফর করেন। তাঁর পূর্বসূরিরা প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর হিসেবে ভারতকে বেছে নিলেও মুইজ্জু বিপরীতে হেঁটেছিলেন এবং বেজিংয়ের প্রতি মুইজ্জুর ঝোঁক চিনের তরফে মলদ্বীপের নতুন প্রশাসনের প্রতি ব্যাপক প্রত্যাশার ইঙ্গিত দেয়। তা সত্ত্বেও এক বছর পরে আখেরে তেমন কিছু বাস্তবায়ন হয়নি। এটি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় অবশ্য। শ্রীলঙ্কাতে২০২১ সালের শেষের দিকে অর্থনৈতিক সঙ্কটের শুরু থেকে চিন খুব একটা সক্রিয় ছিল না। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে, বিশেষ করে মলদ্বীপ শ্রীলঙ্কায় চিনের প্রসারের পরিবর্তন ঘটছে বলে মনে হচ্ছে। চিন এখন আর্থিক সহায়তা প্রদান মেগা-অবকাঠামো প্রকল্পে সহায়তা করার মতো অতীতের কৌশলগুলি ব্যবহার করতে দ্বিধা করছে। বরং চিন এ বার উচ্চ-স্তরের মিথস্ক্রিয়া, দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততা ও ছোট উন্নয়নমূলক প্রকল্পের সংখ্যা বৃদ্ধি করছে।

চিন এখন আর্থিক সহায়তা প্রদান মেগা-অবকাঠামো প্রকল্পে সহায়তা করার মতো অতীতের কৌশলগুলি ব্যবহার করতে দ্বিধা করছে।

তুলনাহীন চিনা প্রসার নতুন নিষ্ক্রিয়তা

দক্ষিণ এশিয়া ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের কারণে শতাব্দীর শুরুতে এই অঞ্চলে চিনা স্বার্থ প্রভাব বিশেষ করে ঋণ, বিনিয়োগ উন্নয়নমূলক সহায়তার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রসারিত হয়েছেশ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধ তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিন একটি উল্লেখযোগ্য দাতা ও উন্নয়নমূলক সহযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়। একই সময়ে চিমলদ্বীপে প্রবেশ করতে শুরু করে। যাই হোক, ২০১৩ সালে বেল্ট রোড ইনিশিয়েটিভ-এর (বিআরআই) প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই উভয় দেশেই চিনের প্রভাব ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পায়। অভ্যন্তরীণ সংস্কারের ন্যূনতম শর্ত ঋণের দ্রুত বণ্টন চিনকে উভয় দেশের অংশীদার করে তোলে। মনে করা হচ্ছে, ২০২০ সালের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় চিনের অবকাঠামো বিনিয়োগ প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল।

চিদেশগুলির অবকাঠামোগত ঘাটতি মোকাবিলা করে উল্লেখযোগ্য রকমের আন্তঃনির্ভরশীলতা তৈরি করেছে। শ্রীলঙ্কায় থাকাকালীন রাস্তা, বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর, শক্তি, টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্র এবং জল সরবরাহ প্রকল্পগুলির উপরেই চিনের প্রধান মনোযোগ ছিল এবং অন্য দিকে মলদ্বীপের ক্ষেত্রে তারা মূলত রাস্তা বিমানবন্দরের সংস্কার, সুবৃহৎ সেতু, আবাসন প্রকল্প, বিদ্যুৎ এবং ডিস্যালিনেশন বা লবণশোধনকারী প্রকল্পগুলিতে মন দিয়েছিল। এই প্রকল্পগুলির বেশির ভাগই ঋণের উপর নির্ভরশীল ছিল। তবে শ্রীলঙ্কায় কয়েকটি কৌশলগত প্রকল্প বিনিয়োগের রূপ নেয় এবং মলদ্বীপে কয়েকটি প্রকল্প অনুদান সার্বভৌম গ্যারান্টির রূপ নেয়। সারণি এবং ২-এ যথাক্রমে শ্রীলঙ্কা মলদ্বীপে এই ধরনের বেশ কয়েকটি চিনা প্রকল্পের কথা তুলে ধরা হল।

সারণি ১. শ্রীলঙ্কায় মূল চিনা প্রকল্প

প্রধান প্রকল্প

সাহায্যের ধরন

অঙ্ক

কলম্বো-কাতুনায়াকে এক্সপ্রেসওয়ে

ঋণ

২৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার

সাদার্ন এক্সপ্রেসওয়ে

ঋণ

১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

আউটার সার্কুলার হাইওয়ে

ঋণ

৪৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার

হাম্বানটোটা (মাত্তালা) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

ঋণ

১৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার

নরচোলাই পাওয়ার স্টেশন

ঋণ

১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

কলম্বো পোর্ট সিটি

বিনিয়োগ

১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

কলম্বো ইন্টারন্যাশনাল কন্টেনার টার্মিনাল

বিনিয়োগ

৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার

লোটাস টাওয়ার

ঋণ

৮৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার

হাম্বানটোটা পোর্ট

ঋণ

১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

জল সরবরাহ প্রকল্প

ঋণ

৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার

মাতারা-কাতারাগামা রেলওয়ে লাইন

ঋণ

২৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার

সূত্র: চ্যাথাম হাউস, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ডিপার্টমেন্ট অফ এক্সটার্নাল রিসোর্সেস

সারণি ২. মলদ্বীপে মূল চিনা প্রকল্প

প্রধান প্রকল্প

সাহায্যের ধরন

অঙ্ক

সিনামালে সেতু

অনুদান

১০৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার

ঋণ

৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার

বিমানবন্দরের রাস্তার সংস্কার

সার্বভৌম গ্যারান্টি

৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার

আবাসন প্রকল্প

সার্বভৌম গ্যারান্টি

৫৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার

ভেলানা বিমানবন্দরে সিপ্লেন ফেসিলিটি

সার্বভৌম গ্যারান্টি

৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার

জ্বালানি প্রকল্প

সার্বভৌম গ্যারান্টি

১৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার

আবাসন প্রকল্প

ঋণ

২১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার

ভেলানা বিমানবন্দরের সংস্কার

ঋণ

৩৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার

লামু লিঙ্ক রোড

অনুদান

প্রযোজ্য নয়

ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্ট

অনুদান

প্রযোজ্য নয়

সূত্র: বাণী সেন্টার

যাই হোক, গত কয়েক বছরে, চিন তার আর্থিক সহায়তা মেগা-অবকাঠামো প্রকল্পের প্রচারে গতি কমিয়ে এনেছে।

উদাহরণস্বরূপ, চিন সর্বশেষ ২০২১ সালে ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের কারেন্সি সোয়্যা (মুদ্রা অদলবদল) আকারে শ্রীলঙ্কাকে তার আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছিল। মুদ্রার অদলবদল এই শর্তে জারি করা হয়েছিল যে, দেশে তিন মাসের বৈদেশিক মুদ্রা ভাণ্ডার থাকলেই এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। ২০২২ সালের মধ্যে যখন শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সঙ্কট গভীরতর হয়, তখন চিন মানবিক ত্রাণ হিসাবে মাত্র ৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রস্তাব দিয়েছিল। চিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বিলিয়ন মার্কিন ডলার নতুন ঋণ, ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্রেডিট লাইন এবং ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মুদ্রা অদলবদল) সাহায্যের বিষয়ে শ্রীলঙ্কার অনুরোধের প্রতি বিন্দুমাত্র পাত্তা দেয়নি। এমনকি শ্রীলঙ্কার ঋণ পুনর্গঠনের সময়ও চিন সরকারি ঋণদাতা কমিটির বাইরে ছিল এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সুনিশ্চিত করার বিষয়ে একেবারে পিছনের সারিতে থেকেছে ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের চিনা বাণিজ্যিক ঋণের পুনর্গঠন ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে চূড়ান্ত করা হয়েছিল। হাম্বানটোটা বন্দরে ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের তেল শোধনাগার ছাড়াও চিশ্রীলঙ্কায় অন্য কোন মেগা-অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ করেনি।

চিন নতুন ঋণ দিতে দ্বিধা করছে এবং এমনকি এই মনোভাবও বজায় রেখেছে যে, ঋণ পুনর্গঠন মলদ্বীপের নতুন ঋণ গ্রহণের সম্ভাবনাকে আরও সীমিত করবে।

একই ভাবে, প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু তাঁচিন সফরের সময় ২০টিরও বেশি সমঝোতাপত্রে (মউ) স্বাক্ষর করেন এবং আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি ঋণ পুনর্গঠনের অনুরোধ করেন। এখনও পর্যন্ত চিন মালে ভিলিমালেতে রাস্তার সংস্কার করার জন্য এবং বিনামূল্যে সিনামালে সেতু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদানের প্রস্তাব দিয়েছে। মুইজ্জুর সফরের এক বছর পরেও মলদ্বীপের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক অসুবিধা সত্ত্বেও চিন এখনও পাঁচ বছরের ছাড় প্রদানের প্রতিশ্রুতি রাখেনি। চিন নতুন ঋণ দিতে দ্বিধা করছে এবং এমনকি এই মনোভাবও বজায় রেখেছে যে, ঋণ পুনর্গঠন মলদ্বীপের নতুন ঋণ গ্রহণের সম্ভাবনাকে আরও সীমিত করবে। অক্টোবর মাসে চিঅবশ্য ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের পুনঃঅর্থায়ন করেছে (নতুন ঋণের প্রস্তাব দিয়েছে), যাতে মলদ্বীপ তার চিনের এক্সিম (রফতানি-আমদানি) ঋণের কিছু অংশ পরিশোধ করতে পারে। চিকৃষি অঞ্চল, আবাসন প্রকল্প কাধধু বিমানবন্দরের সংস্কার করার আগ্রহ প্রকাশ করলেও তা কিন্তু সহায়তার পরিবর্তে বিনিয়োগের আকারে ঘটছে।

পরোক্ষ নীতির মূল্যায়ন

সক্রিয় পদ্ধতির এই অভাবের নেপথ্যে থাকতে পারে নিম্নলিখিত কারণসমূহ:

এটি মেগা-অবকাঠামো প্রকল্পগুলির চেয়ে ছোট সুন্দর প্রকল্পগুলিকে পছন্দ করার বিষয়টি চিনের সাধারণ নীতির সঙ্গে সমাপতিত হতে পারে। এই ধাক্কা এমন এক সময়ে আসে, যখন চিনা অর্থনীতি তার কোভিড-পরবর্তী সময়ের সঙ্গে রীতিমতো যুঝছে। অর্থনৈতিক মন্দা, ধীর গতির উৎপাদন, রিয়েল এস্টেটের উচ্চ মূল্য, বেকারত্ব, ভোক্তাদের আস্থা হ্রাস ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা বেজিংকে বিদেশে তার প্রতিশ্রুতি পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছে এবং বিশেষ করে সেই ঋণগ্রস্ত দেশগুলিতে উচ্চ ঝুঁকি উচ্চ মূল্যের প্রকল্পগুলিতে বিনিয়োগ সহায়তা করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে, যারা ঋণ পরিশোধের বিষয়ে নিজেরাই যুঝছে।

ঋণের ফাঁদের উদ্বেগও বেজিংকে তার কার্যপদ্ধতির বিষয় পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছে। প্রায় এক দশক ধরে চিন তার অর্থনৈতিক শক্তি ঋণদানের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়নশীল বিশ্বে উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রবেশ করেছে। কিছু শর্ত দেওয়া সংস্কারের আহ্বানের পাশাপাশি এই ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা ঋণগ্রহীতা দেশগুলির কাঠামোগত অর্থনৈতিক সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে এবং চি তার ঋণ দেওয়ার কৌশলগুলির বিরুদ্ধে সমালোচনাকে আরও উস্কে দিয়েছে। যেহেতু শ্রীলঙ্কা তার ঋণ পরিশোধ করতে যুঝছে, তাই হাম্বানটোটা বন্দর পরিচালনা করার জন্য চিনের সিদ্ধান্ত এবং ২০২২ সালের শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সঙ্কট চিনা ঋণের ফাঁদ নিয়ে উদ্বেগকে আরও তীব্র করেছে এবং এ সবই চিনকে তার কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছে।

ছোট দেশগুলি চিনকে ঋণ প্রদান ঋণ পুনর্গঠন করার ক্ষেত্রে আরও নমনীয় হতে বলেছে এবং কখনও কখনও ভারতকে খুশি করতে বা ভারতীয় স্বার্থের ক্ষতি না করার জন্য চিনা প্রকল্পগুলি বাতিল করেছে।

চিন অবকাঠামোগত ঘাটতি মোকাবিলায় একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা উপভোগ করলেও দক্ষিণ এশিয়ার অস্থির রাজনীতি ভূ-রাজনীতি এই কৌশলগুলির স্থিতিশীলতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। বর্তমানে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলি তাদের ক্ষমতার অনুশীলন করতে এবং ভারত ও চিনের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে শুরু করেছে কারণ ভারত তার অর্থনৈতিক রাষ্ট্রযন্ত্রকে সশক্ত করছে এবং চিনা ঋণের বিষয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ছোট দেশগুলি চিনকে ঋণ প্রদান ঋণ পুনর্গঠন করার ক্ষেত্রে আরও নমনীয় হতে বলেছে এবং কখনও কখনও ভারতকে খুশি করতে বা ভারতীয় স্বার্থের ক্ষতি না করার জন্য চিনা প্রকল্পগুলি বাতিল করেছে। শ্রীলঙ্কার চিনা মিশ্র ধরনের জ্বালানি প্রকল্প বাতিল করা, দ্বীপদেশটির অর্থনৈতিক সঙ্কট ও সোলিহ সরকারের বেশ কয়েকটি চিনা প্রকল্পকে কোণঠাসা করার বিষয়টি চিনকে ঋণ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা এবং এই অঞ্চলে মেগা-অবকাঠামো প্রকল্পের স্থিতিশীলতা নিয়ে পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছে

সর্বোপরি, শ্রীলঙ্কা মলদ্বীপ চিনের সংযোগমূলক বৃত্তের পরিধিতে রয়েছে। ভারত মহাসাগরে চিনের বিআরআই-এর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ করিডোর ছিল - চিন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (সিপিইসি), চিন-মায়ানমার ইকোনমিক করিডোর (সিএমইসি) এবং বাংলাদেশ-চিন-ইন্ডিয়া-মায়ানমার (বিসিআইএম) করিডোর। তিনটি উদ্যোগ চিনা উৎপাদনের জন্য নতুন বাজার খোঁজার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত হয়েছে এবং এগুলি মালাক্কা প্রণালীতে চোক পয়েন্ট থেকে বাঁচতে বিকল্প স্থলপথের প্রস্তাব করেছিল। চিন এই অঞ্চলের দূরবর্তী দ্বীপ দেশগুলির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের আগে ভারত মহাসাগরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ তৈরি করতে আগ্রহী ছিল। এই বিষয়ে শ্রীলঙ্কা মলদ্বীপ বেজিংয়ের বাজার সম্প্রসারণের পরিপূরক ছিল। বিআরআই এবং মেগা-অবকাঠামো প্রকল্পগুলি অন্যত্র অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলি  শ্রীলঙ্কা মলদ্বীপেও এগোতে থাকে। যাই হোক, বিসিআইএম বাস্তবায়িত না হওয়ায় এবং সিপিইসি ও সিএমইসি পাকিস্তান ও মায়ানমারের নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে উল্লেখযোগ্য বিলম্বের সম্মুখীন হওয়ায় শ্রীলঙ্কা মলদ্বীপের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সংযোগ নির্মাণ এই মুহূর্তে খুব একটা লাভজনক নয়।

অব্যাহত প্রসার

চিনের উন্নয়ন সহায়তার কৌশল মেগা-অবকাঠামো প্রকল্পগুলির গতি ধীর হয়ে গেলেও নিজের স্বার্থকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য দেশটির যথেষ্ট অর্থনৈতিক আন্তঃসম্পর্ক প্রভাব রয়েছে। চায়না ইন্ডিয়ান ওশান ফোরাম এবং  বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরাম ফর ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশনে চিন শ্রীলঙ্কা মলদ্বীপের সঙ্গে সম্পৃক্ততা অব্যাহত রেখেছে। চিন দু’টি দ্বীপদেশকে গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ (জিএসআই), গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই) এবং গ্লোবাল সিভিলাইজেশনাল ইনিশিয়েটিভ-এর (জিসিআই) মতো নতুন উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত করেছে।

চায়না ইন্ডিয়ান ওশান ফোরাম এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরাম ফর ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশনে চিন শ্রীলঙ্কা মলদ্বীপের সঙ্গে সম্পৃক্ততা অব্যাহত রেখেছে।

একই ভাবে, চিন তার বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের জন্য ক্রমাগত জোর দিচ্ছে। মলদ্বীপ সম্প্রতি ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি চিনের সঙ্গে তার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) বাস্তবায়ন করেছে এবং চিন শ্রীলঙ্কার সঙ্গে একটি এফটিএ নিয়ে আলোচনা করছে। নিজের ছোট সুন্দর প্রকল্পগুলির হাত ধরে চিন সম্প্রদায়মূলক উন্নয়ন প্রকল্প, অনুদান এবং মানবিক সহায়তায় দেশগুলির সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করেছে এগুলি সক্ষমতা বৃদ্ধি, বৃত্তি এবং বিনিময়মূলক কর্মসূচির সঙ্গে সম্পৃক্তচিন শ্রীলঙ্কা মলদ্বীপের রাজনৈতিক  শ্রেণি বেসামরিক কর্মচারীদের জন্য নিয়মিত উচ্চ পর্যায়ের সফর প্রশিক্ষণমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

যেহেতু ভারত মহাসাগর ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, তাই চিন শ্রীলঙ্কা এবং মলদ্বীপে তার বর্তমান প্রভাব ছিন্ন করার ঝুঁকি নেবে না। মেগা-অবকাঠামো প্রকল্পগুলির জন্য চিন ঋণ সমর্থন সংক্রান্ত চাপের মধ্যে থাকলেও অন্য সম্পৃক্ততা মিথস্ক্রিয়াগুলির মাধ্যমে চিন প্রাসঙ্গিক থাকছে। অতএব, নিজের প্রভাব বাড়াতে, ভারতকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং এই অঞ্চলে নিজের স্বার্থ উপস্থিতি আরও এগিয়ে নিতে চিন শ্রীলঙ্কা ও মলদ্বীপকে ব্যবহার করতেই থাকবে।

 


আদিত্য গৌদারা শিবমূর্তি অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.