Published on Aug 23, 2023 Updated 0 Hours ago

প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এবং নীতি পরিবর্তনের সংমিশ্রণ ভারতের প্রতিরক্ষা নীতিতে গভীর পরিবর্তন এনেছে

ভারতের প্রতিরক্ষা নীতির পরিবর্তমান রূপরেখা

গত বছরে ভারতীয় প্রতিরক্ষা নীতি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বদলের সাক্ষী থেকেছে। চারটি প্রধান এবং শনাক্তকরণযোগ্য পরিবর্তন গতি পেয়েছে: প্রথমত ভারতের বিদেশ থেকে অস্ত্র কেনার ক্ষেত্রে প্রকৃতিগত পরিবর্তন; দ্বিতীয়ত, দেশজ উৎপাদনের উপর অধিক জোর; তৃতীয়ত, বিদেশ থেকে অস্ত্র কেনার সঙ্গে ভারতীয় প্রতিরক্ষা উত্পাদন সংস্থা এবং গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রযুক্তি স্থানান্তরের (টিওটি) মধ্যে সংযোগ; এবং চতুর্থত, প্রতিরক্ষা রফতানির মাধ্যমে ভারতের একটি প্রধান নিরাপত্তা প্রদানকারী হিসেবে আবির্ভূত হওয়া।

প্রথমত, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক (এমওডি) ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংগ্রহের পদ্ধতি বা ডিফেন্স অ্যাকুইজিশন প্রসিডিউর (ডিএপি) পরিবর্তনের অংশ হিসাবে ঘোষণা করেছিল যে, ভবিষ্যতে তিনটি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এবং ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী বা ইন্ডিয়ান কোস্ট গার্ড (আইসিজি)-এর সমস্ত সরঞ্জাম সংগ্রহের উৎস হতে হবে দেশীয় শিল্পই। এমওডি স্পষ্টতই জানিয়েছে যে, তিনটি বাহিনী সংক্রান্ত এবং আইসিজি-র চাহিদা মেটাতে বিদেশি সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ হবে ব্যতিক্রমী, কিন্তু আদর্শ কখনওই নয়। এ ছাড়াও তিনটি বাহিনী এবং আইসিজি দ্বারা বিদেশ থেকে অস্ত্র সংগ্রহের জন্য বর্তমানে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংগ্রহ কাউন্সিল বা ডিফেন্স অ্যাকুইজিশন কাউন্সিলের (ডিএসি) পূর্ব অনুমোদন প্রয়োজন হয়৷ এর উদ্দেশ্যই হল বিদেশি বিক্রেতাদের কাছ থেকে সামরিক হার্ডওয়্যার অধিগ্রহণের পরিমাণ হ্রাস করা। ২০২০ সালের মে মাসের শেষের দিকে মোদী সরকার কর্তৃক ঘোষিত আত্মনির্ভর ভারত উদ্যোগের (এএনবিআই) একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হল দেশজ শিল্প থেকে উৎসের জন্য ক্রয়কে উৎসাহ জোগায়, এমন নীতির নির্ধারণ।

এমওডি স্পষ্টতই জানিয়েছে যে, তিনটি বাহিনী সংক্রান্ত এবং আইসিজি-র চাহিদা মেটাতে বিদেশি সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ হবে ব্যতিক্রমী, কিন্তু আদর্শ কখনওই নয়। 

দ্বিতীয়ত, এই পরিবর্তনের ফল স্বরূপ, এমওডি-র প্রতিরক্ষা নীতি বিদেশি হার্ডওয়্যারকে দেশজ উপাদান দিয়ে প্রতিস্থাপন করে দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পকে সশক্ত করার উপর জোর দিয়েছে। বৃহত্তর দেশীয়করণের দিকে এই নীতির পরিবর্তনও সরকারের ইনোভেশন ফর ডিফেন্স এক্সিলেন্স- এর (আইডিইএক্স) একটি ফল, যা ভারতের স্টার্ট আপ প্রতিভা এবং ক্ষুদ্র, স্বল্প, মাঝারি সংস্থার (এমএসএমই) শক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য একটি প্রচেষ্টা।

এ ছাড়াও, ভারতের প্রধান ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও) ভারতীয় শিল্পের সঙ্গে ‘নামমাত্র মূল্যে’ প্রযুক্তি ভাগ করে নিচ্ছে এবং শিল্পকে তার পেটেন্টগুলিতে খরচমুক্ত লভ্যতা পেতে সহায়তা করছে। উল্লেখযোগ্য ভাবে, বৃহত্তর প্রতিরক্ষা স্বনির্ভরতার প্রতি এই প্রচেষ্টার পরিপূরক হিসাবে এমওডি দফায় দফায় প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সরঞ্জামগুলির পজিটিভ ইনডিজেনাইসেশন লিস্টস (পিআইএল) প্রকাশ করেছে। তালিকার প্রথমটি ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত হয়েছিল, যা তিনটি বাহিনীর জন্য ফিন স্টেবিলাইজড আর্মার পিয়ার্সিং ডিসকার্ডিং সাবট (এফএসএপিডিএস) থেকে ল্যান্ড অ্যাটাক ক্রুজ মিসাইল (এলএসিএম) পর্যন্ত হার্ডওয়্যার অপসারণের কথা বলেছিল। সর্বশেষটি হল চতুর্থ স্বদেশীকরণের তালিকা, যার জন্য ডিফেন্স পাবলিক সেক্টর আন্ডারটেকিংসকে (ডিপিএসইউ) ৭১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯২৮টি কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ‘লাইন রিপ্লেসমেন্ট ইউনিট (এলআরইউ) খুচরো যন্ত্রাংশ এবং উপাদান, সামরিক সাবসিস্টেম এবং অত্যাধুনিক উপকরণ’ শুধু দেশজ শিল্প থেকে সংগ্রহ করতে হবে। দেশীয়করণের তালিকাগুলির আর একটি লক্ষ্য হল সামরিক চুক্তির জন্য দর কষাকষিতে আগ্রহী দেশীয় সরকারি এবং বেসরকারি খাতের প্রতিরক্ষা উদ্যোগগুলির জন্য একটি ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ বা ‘সকলের জন্য সমান স্তর’ তৈরি করা।

বর্ধিত অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা উত্পাদনের জন্য এ হেন উদ্যোগকে সমর্থনকারী অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা লেনদেনের পুনর্বিন্যাস সম্ভব হয়েছে। এই পুনর্বিন্যাসটি দ্বিমুখী থেকেছে— যা সুনিশ্চিত করেছে যে বহিরাগত শক্তির কাছ থেকে কেনা নির্দিষ্ট যন্ত্রাংশ বা সামরিক মঞ্চ ভারতে তৈরি করার পাশাপাশি প্রযুক্তি স্থানান্তরের মাধ্যমে দেশের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন ক্ষমতাকেও জোরদার করা। মূলত ভারত এ কথা সুনিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে যে, গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগুলি – যেগুলি এখনও পর্যন্ত তার কাছে লব্ধ নয় – সেগুলি ভারতে তৈরি করার জন্য বিদেশি নির্মাতাদের সঙ্গে লাইসেন্সকৃত চুক্তির মাধ্যমে ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

দেশীয়করণের তালিকাগুলির আর একটি লক্ষ্য হল সামরিক চুক্তির জন্য দর কষাকষিতে আগ্রহী দেশীয় সরকারি এবং বেসরকারি খাতের প্রতিরক্ষা উদ্যোগগুলির মধ্যে একটি ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ বা ‘সকলের জন্য সমান স্তর’ তৈরি করা।

এফ৪১৪ ফাইটার জেট ইঞ্জিনের জন্য হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (এইচএএল) এবং জিই এরোস্পেসের মধ্যে সাম্প্রতিক সমঝোতাপত্র  (মউ) প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। মউটিতে ভারতের হালকা যুদ্ধ বিমান বা লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফট এমকে টু কর্মসূচির জন্য এইচএএল এবং জিই-এর মধ্যে এফ৪১৪ ইঞ্জিনের যৌথ উৎপাদনের বিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এখনও তা চূড়ান্ত  না হলেও ইঞ্জিনের যৌথ উত্পাদনের মাধ্যমে ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা বাস্তুতন্ত্র ফাইটার জেট ইঞ্জিন তৈরির সূক্ষ্ম প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রবেশাধিকার পাবে। দীর্ঘমেয়াদে এটি দেশের প্রতিরক্ষা শিল্প ভিত্তিকে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ভাগ করে নিতে এবং নিজস্ব স্বদেশি ফাইটার জেট ইঞ্জিন তৈরি করার কাজে সক্ষম করে তুলবে। এ ভাবে দেশের প্রতিরক্ষা উত্পাদন ক্ষমতা এবং সম্ভবত তার ফাইটার স্কোয়াড্রন শক্তি বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।

তার প্রতিরক্ষা শিল্পকে উন্নত করার কাজে ভারতের প্রতিরক্ষা অফসেট নীতি বা ডিফেন্স অফসেট পলিসিতে বিদেশি ঠিকাদারদের সঙ্গে চুক্তির ৩০ শতাংশ ভারতেই ব্যয় করা বাধ্যতামূলক করা হলেও বিগত বছরগুলিতে তা মিশ্র ফলাফলের সম্মুখীন হয়েছে। যাই হোক, ভারতের সাম্প্রতিক প্রতিরক্ষা লেনদেন এই নীতির ইতিবাচক  পুনর্বিন্যাস এবং বাস্তবায়নকেই প্রতিফলিত করে। বিশেষত, ভারতীয় বায়ুসেনার দরকারি ৫৬টি এয়ারবাস সি-২৯৫ পরিবহণ বিমান কেনার চুক্তির মধ্যে টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমস লিমিটেড ভারতে ৪০টি নির্মাণ করবে। ভারতে সি-২৯৫-এর উৎপাদনের মাত্রাকে এয়ারবাস ‘অভূতপূর্ব’ বলে বর্ণনা করেছে।

অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা উত্পাদনের উপর প্রাতিষ্ঠানিক মনোযোগ ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষা রফতানির গতিপথেও সুস্পষ্ট হয়েছে। ২০২২-২০২৩ অর্থবর্ষের জন্য ভারত ১৫৯২০ কোটি টাকা বা প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সর্বোচ্চ রফতানি করেছে — যা ২০১৬-১৮ সালের ১৫২১ কোটি টাকা মূল্যের রফতানির থেকে ১০ গুণ বেশি। এমনকি এটি ২০১৩-১৪ সালের ভারতের প্রতিরক্ষা রফতানির মাত্র ৬৮৬ কোটি টাকার তুলনায় এক উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি।

কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৪ সালে একটি প্রতিরক্ষা রফতানি কৌশলের সূচনা করে; দ্বিতীয়ত, প্রতিরক্ষা উত্পাদন এবং রফতানির জন্য লাইসেন্সিং এবং শংসাপত্রের নিয়মগুলির উদারীকরণ করা হয়েছিল।

প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এবং নীতি পরিবর্তনের সংমিশ্রণ ভারতের প্রতিরক্ষা রফতানিতে এই ক্রমবর্ধমান গতিপথকেই সুনিশ্চিত করেছে। প্রথমত, কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৪ সালে একটি প্রতিরক্ষা রফতানি কৌশলের সূচনা করে; দ্বিতীয়ত, প্রতিরক্ষা উত্পাদন এবং রফতানির জন্য লাইসেন্সিং এবং শংসাপত্রের নিয়মগুলির উদারীকরণ করা হয়েছিল। সর্বোপরি ইতিবাচক স্বদেশীকরণের তালিকা – যা নির্দিষ্ট সামরিক সরঞ্জাম বিদেশের পরিবর্তে স্থানীয় ভাবে সংগ্রহ করতে বাধ্য করে – নতুন প্রতিরক্ষা অধিগ্রহণ পদ্ধতির সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে রফতানি বৃদ্ধিকেই সক্ষম করেছে। ফিলিপিন্স, আর্মেনিয়া এবং ইকুয়েডরের মতো দেশগুলি ভারতীয় সামরিক সরঞ্জামের প্রাপক এবং ভারতকে তার প্রতিরক্ষা রফতানির মাধ্যমে প্রধান একটি নিরাপত্তা প্রদানকারী করে তুলেছে। সর্বোপরি ভারতে নির্মিত প্রতিরক্ষা মঞ্চগুলির বিদেশে বিক্রয় সুনিশ্চিত করার জন্য সরকার অন্যান্য দেশে লাইন অব ক্রেডিট বা ঋণ প্রদান শুরু করেছে। সংক্ষেপে, ভারতীয় প্রতিরক্ষা নীতির উন্নতি হয়েছে এবং ভারত নিঃসন্দেহে এই পরিবর্তনের সুফল ভোগ করবে।


কার্তিক বোম্মাকান্তি অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের সিনিয়র ফেলো।

সুচেত বীর সিং অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.