Author : Aleksei Zakharov

Published on Oct 22, 2024 Updated 0 Hours ago

যদিও রাশিয়া-ভারত প্রতিরক্ষা সম্পর্ক অত্যাবশ্যক, ইউক্রেনের যুদ্ধ ও ভূ-রাজনীতির পরিবর্তন অংশীদারিত্বের পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজন উস্কে দিচ্ছে

ভারত-রাশিয়া প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পরিবর্তনশীল প্রকৃতি

মস্কোতে ৮-৯ জুলাই অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক ভারত-রাশিয়া শীর্ষ বৈঠকে কোনও উল্লেখযোগ্য চুক্তি হয়নি। ফলাফলের নথিতে সহযোগিতার মূল ক্ষেত্রগুলি নিয়ে পর্যাপ্ত বিবরণের অভাব রয়েছে, এবং তার মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষাও যা ঐতিহ্যগতভাবে ভারত-রাশিয়া অংশীদারিত্বের প্রধান স্তম্ভ। উল্লেখযোগ্যভাবে, কোনও পূর্ণাঙ্গ প্রতিনিধি পর্যায়ের আলোচনা হয়নি, এবং অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন না। শক্তি ক্ষেত্র বর্তমানে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে চললেও, দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা রূপান্তরের মধ্যে রয়েছে এবং তার পরীক্ষা প্রয়োজন।

একটি অনিশ্চিত স্তম্ভ

বড় প্রতিরক্ষা চুক্তির অনুপস্থিতির আলোকে, নয়াদিল্লির প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল মস্কোর সঙ্গে বিদ্যমান চুক্তির রূপায়ণ নিশ্চিত করা। রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্বের প্রভাব, সেইসঙ্গে অর্থ প্রদান-সম্পর্কিত এবং প্রযুক্তিগত সমস্যাসহ বিভিন্ন কারণে, গত কয়েক বছর ধরে রাশিয়া-উৎপাদিত প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহে বেশ কিছু বিলম্ব হয়েছে। যেমন, এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের অবশিষ্ট দুটি রেজিমেন্টের ডেলিভারি
মার্চ ও অক্টোবর ২০২৬ পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আরেকটি প্রকল্প যা বিলম্বের সম্মুখীন হয়েছে তা হল কালিনিনগ্রাদ অঞ্চলের ইয়ান্টার শিপইয়ার্ডে ১১৩৫৬আর প্রোজেক্ট ফ্রিগেট নির্মাণ। চুক্তিটিতে সম্প্রতি অগ্রগতি হয়েছে, 'তুশিল' ফ্রিগেট এখন গ্রহণের জন্য প্রস্তুত, এবং ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে বিতরণের জন্য নির্ধারিত;‌ এছাড়া দ্বিতীয় যুদ্ধজাহাজ 'তমাল' আগামী বছর কমিশনড হবে বলে প্রত্যাশিত ‘

সোভিয়েত/রাশিয়া-জাত সরঞ্জামের খুচরা যন্ত্রাংশের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ ভারতের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা তৈরি করে। একটি সম্ভাব্য সমাধান হল ভারতের মাটিতে উৎপাদন সুবিধা তৈরি করা, যা দুই পক্ষ অদূর ভবিষ্যতে অনুসরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারত ও রাশিয়া ইতিমধ্যেই একে-২০৩ কালাশনিকভ রাইফেল,
টি-৭২ ও টি-৯০ ট্যাঙ্কগুলির জন্য ১২৫ মিমি 'ম্যাঙ্গো' রাউন্ড, এবং মিগ-২৯ জেট ফ্লিটের জন্য আরডি-৩৩ ইঞ্জিনগুলির উৎপাদন ইউনিট স্থাপন করেছে৷ এস-৪০০ সিস্টেমের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য একই পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।

সোভিয়েত/রাশিয়ান-উৎপত্তির সরঞ্জামগুলিতে খুচরা যন্ত্রাংশের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ ভারতের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা উপস্থাপন করে।



এই বিষয়টি লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে সমস্ত কার্যকারিতার সুবিধার বিষয়ে নয়াদিল্লি ও মস্কো সম্মত হয়েছিল। কোনও তুলনামূলক প্রকল্প এখন স্বল্পমেয়াদে বাস্তবায়িত হতে পারে কি না, তা বর্তমানে স্পষ্ট নয়। এখনও পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে বড় কোনও  প্রতিরক্ষা উদ্যোগের অগ্রগতির বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা নির্ধারিত লাল রেখার প্রতি ভারত তার বিচক্ষণতা দেখিয়েছে। মস্কো-নয়াদিল্লি সম্পর্কের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে বিরাজমান স্থবিরতা সত্ত্বেও, এটা স্পষ্ট যে
ওয়াশিংটন রাশিয়া থেকে ভারতে অস্ত্র ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের উপর নজর রাখবে

একটি অতিরিক্ত চুক্তি

রেসিপ্রোকাল এক্সচেঞ্জ অফ লজিস্টিকস এগ্রিমেন্ট (আরইএলওস) ঘিরে আলোচনা রুশ সরকারের খসড়া নথি প্রকাশের পরে একটি কৌতূহলী মোড় নিয়েছে। পাঠ্যটি যৌথ মহড়া ও প্রশিক্ষণ অভিযানের সময় সামরিক গঠন, যুদ্ধজাহাজ ও সামরিক বিমানের জন্য লজিস্টিক সহায়তার রূপরেখা, এবং সেইসঙ্গে মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ত্রাণ মিশনগুলিকে বর্ণনা করে। নয়াদিল্লি ইতিমধ্যেই সমস্ত কোয়াড অংশীদার (‌জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া)‌, ফ্রান্স, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও ব্রিটেন‌সহ অনেক দেশের সঙ্গে অনুরূপ চুক্তি করেছে।

আরইএলওস-এর বিষয়ে মস্কো ও নয়াদিল্লির মধ্যে আলোচনা ২০১৮ সাল থেকে চলছে। ২০২১ সালে নয়াদিল্লিতে আগের শীর্ষ সম্মেলনের প্রাক্কালে দুই পক্ষ চুক্তি স্বাক্ষরের কাছাকাছি ছিল বলে জানা গিয়েছিল। এমনকি তারা "সশস্ত্র বাহিনীর জন্য লজিস্টিক সহায়তা এবং বাহিনীগুলির পারস্পরিক বিধানের জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকৃতি " দিলেও চুক্তিটি "টেকনিকাল সমস্যার কারণে স্থগিত করা হয়েছিল";‌ অনেকে এর কারণ "অনুবাদ সংস্করণ সম্পর্কে পার্থক্য" হিসাবেও বর্ণনা করেছিলেন।


আরইএলওস-এর বিষয়ে মস্কো ও নয়াদিল্লির মধ্যে আলোচনা ২০১৮ সাল থেকে বিরতিহীনভাবে চলছে। ২০২১ সালে নয়াদিল্লিতে আগের শীর্ষ সম্মেলনের প্রাক্কালে দুই পক্ষ চুক্তি স্বাক্ষরের কাছাকাছি ছিল বলে জানা গিয়েছিল।



এটি অসম্ভাব্য যে শব্দ সংক্রান্ত পার্থক্যগুলি আরইএলওস চূড়ান্তকরণে ক্রমাগত বিলম্বের একমাত্র ব্যাখ্যা হতে পারে। এমন হতে পারে যে যতক্ষণ রাশিয়া যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে ততক্ষণ নয়াদিল্লি রাশিয়ার সঙ্গে লজিস্টিক বিনিময় চুক্তিতে প্রবেশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এমন অনেক ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে যে, গত দুই বছরে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে সেনাবাহিনীর-সঙ্গে-সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততার মাত্রা হ্রাস পেয়েছে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ২০২০ সাল থেকে রাশিয়া সফর করেননি, এবং ২০২৪ সালের মে মাসে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রধান হিসাবে নিযুক্ত হওয়ার পর থেকে তার সমকক্ষ আন্দ্রে বেলোসভের সঙ্গে কোনও মতবিনিময়ও করেননি। তা ছাড়া, ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর আন্তঃকার্যক্ষমতার স্তর সর্বকালের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। ২০২২ ও ২০২৩ সালে উভয়ই ইন্দ্র অনুশীলন স্থগিত রেখেছে। শুধুমাত্র একটি দ্বিপাক্ষিক মহড়া হয়েছে:‌ ২০২৩ সালের নভেম্বরে বঙ্গোপসাগরে নৌ মহড়া। এ ছাড়া বহুপাক্ষিক মহড়ায় — '
ভস্টক ২০২২ ও 'মিলান ২০২৪'-এ — অংশগ্রহণের দুটি উদাহরণ রয়েছে।

সীমিত সামরিক বিনিময়ের প্রেক্ষাপটে আরইএলওএস-এ দুই পক্ষের আলোচনা পুনরায় শুরু করার যৌক্তিকতা অস্পষ্ট রয়ে গেছে। দেখা যাচ্ছে যে দুই রাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে লজিস্টিক সহায়তার বিধানের বিশদ বিবরণ প্রদান করা অসময়োচিত ও অপ্রয়োজনীয়।

ইন্দো-প্যাসিফিকে ভিন্নমুখী

নয়াদিল্লি ও মস্কোর মধ্যে সামরিক যোগাযোগ হ্রাসকে শুধুমাত্র ইউক্রেন সংঘাত দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। এটা সম্ভবত তাদের ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ক্রমবর্ধমান ভিন্নতার প্রকাশ বলে মনে হচ্ছে। চিনের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পৃক্ততার একটি তুলনা এই প্রসঙ্গটির উপর বিশেষভাবে আলোকপাত করে।

ইউক্রেন যুদ্ধ সত্ত্বেও রাশিয়া ও চিন প্রশান্ত মহাসাগরে উচ্চস্তরের সামরিক-সামরিক সম্পৃক্ততা এবং নিয়মিত যৌথ বিমান ও নৌ টহল বজায় রেখেছে।
২৫ জুলাই রুশ ও চিনা কৌশলগত বোমারু বিমান টিইউ-৯৫এমএস ও শিয়ান এইচ-৬ যথাক্রমে আলাস্কার কাছে টহল দেয় এবং প্রথমবারের মতো মার্কিন ও কানাডিয়ান যুদ্ধবিমানগুলি একসঙ্গে কাজ করার সময় বাধা দেয়। তাদের  সর্বশেষ নৌ-‌টহল পশ্চিম ও উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জুলাইয়ের শুরুতে পরিচালিত হয়েছিল, আর পৃথক নৌ লাইভ-ফায়ার ড্রিল  ‘মেরিটাইম কোঅপারেশন-২০২৪’ দক্ষিণ চিন সাগরে যৌথ কৌশলের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে


ইউক্রেন যুদ্ধ সত্ত্বেও রাশিয়া ও চিন প্রশান্ত মহাসাগরে উচ্চস্তরের সামরিক-সামরিক সম্পৃক্ততা এবং নিয়মিত যৌথ বিমান ও নৌ টহল বজায় রেখেছে।



এই মহড়াগুলি রুশ ও চিনা নৌবাহিনীর মধ্যে বৃহত্তর আন্তঃক্রিয়াশীলতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবুও,
দ্বিপাক্ষিক অনুশীলনের ক্রমবর্ধমান পুনরাবৃত্তি ও জটিলতা দুটি শক্তির মধ্যে গভীর সমন্বয়ের দিকে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। উপরন্তু, এই মহড়া ও যৌথ টহল নির্দেশ করে যে মস্কো ও বেজিং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করতে চায়। সামরিক স্তরে পারস্পরিক সংশয় থাকা সত্ত্বেও তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গির একত্রিত হওয়ার কারণ রুশ ও চিনা কর্মকর্তারা তথাকথিত "আবদ্ধ সামরিক-রাজনৈতিক জোট " দ্বারা সৃষ্ট বিপদকে তাদের পক্ষে অভিন্ন বিপদ হিসাবে দেখে। বিপরীতভাবে, মস্কো ও নয়াদিল্লির মধ্যে এই ধরনের সারিবদ্ধতার অভাব আঞ্চলিক উন্নয়নের বিভিন্ন উপলব্ধি এবং কোয়াড ও অওকাস-এর মতো গ্রুপিংয়ের ভূমিকার পৃথক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উদ্ভূত হয়।

যদিও রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষা সংযোগ নয়াদিল্লির জন্য একটি অগ্রাধিকার রয়ে গিয়েছে, প্রধানত অনুসারী সরঞ্জামগুলির প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ইউক্রেনের চলতি যুদ্ধ এই অংশীদারিত্বের পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজন উস্কে দিয়েছে। বড় চুক্তির অনুপস্থিতি এবং যুদ্ধোত্তর যুগের দিকে নজর রেখে রাশিয়া ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাজারে তার উপস্থিতি বজায় রাখার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হিসাবে প্রযুক্তিগত দক্ষতার স্থানান্তর অন্বেষণ করছে। সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে অবশ্য ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মস্কো ও বেজিংয়ের কৌশলগত স্বার্থের ক্রমবর্ধমান সারিবদ্ধতা ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে সামরিক সম্পর্কের সুযোগকে সীমাবদ্ধ করতে পারে, এবং সামগ্রিক সম্পর্কের উপর সম্ভাব্য প্রভাব ফেলতে পারে।

আলেক্সেই জাখারভ ইন্টারন্যাশনাল ল্যাবরেটরি অন ওয়ার্ল্ড অর্ডার স্টাডিজ এবং নিউ রিজিয়নালিজম ফ্যাকাল্টি অন ওয়র্ল্ড ইকনমি অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স, ন্যাশনাল রিসার্চ ইউনিভার্সিটি, হায়ার স্কুল অফ ইকনমিক্স, রাশিয়ার একজন রিসার্চ ফেলো

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.