প্রিটোরিয়া থেকে জোহানেসবার্গে ‘তাইপেই লিয়াজোঁ অফিস’ নামে পরিচিত অনানুষ্ঠানিক তাইওয়ানি দূতাবাসকে স্থানান্তর করার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার নবগঠিত জাতীয় ঐক্য সরকারের (জিএনইউ) সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত চিনা সরকারের চাপ এবং তার এক চিন নীতির বলপূর্বক আরোপ প্রতিফলিত করে। বাণিজ্য অফিস হিসাবে লিয়াজোঁ অফিসের নাম পরিবর্তন করার নির্দেশটি সম্পর্কের অ-কূটনৈতিক প্রকৃতিকে আরও স্পষ্ট করে, যা বিশ্বব্যাপী তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্ন করা ও ভয় দেখানোর জন্য চিনের সমন্বিত প্রচেষ্টার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
শেষ পর্যন্ত, এই ফলাফল রোধ করার জন্য তাইওয়ানের সামান্যই কিছু করার ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শাসনের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও, আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি)-এর নেতৃত্বে কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকে তাইওয়ান তার প্রভাব বজায় রাখতে সংগ্রাম করেছে।
১৯৯৪ সালে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর আড়াই বছর ধরে এএনসি এক চিন নীতিতে নমনীয় পদ্ধতি অনুসরণ করেছিল, এবং আনুষ্ঠানিকভাবে তাইওয়ান ও চিন উভয়কেই স্বীকৃতি দিয়েছিল। তাইপেই তখনও এএনসি-র সঙ্গে যথেষ্ট দর কষাকষির ক্ষমতা রাখত, কারণ এএনসি-র ১৯৯৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় তাইওয়ান আর্থিকভাবে সমর্থন করেছিল এবং তাদের পুনর্গঠন ও উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরডিপি) প্রচুর বিনিয়োগ করেছিল।
যাই হোক, ১৯৯৭ সালে ব্রিটিশদের হংকংকে চিনের কাছে হস্তান্তর করা গতিশীলতা পরিবর্তিত করে। তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলিকে চিন হুমকি দেয় হংকং-এ তাদের উপস্থিতির উপর বিধিনিষেধ জারি করা হবে। অবশেষে, ১৯৯৬ সালের নভেম্বরে ম্যান্ডেলা প্রশাসন এই চাপের কাছে নতিস্বীকার করে, এবং এক চিন নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চিনের পক্ষে দাঁড়িয়ে তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে।
দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য তাইওয়ানের পদ্ধতি ছিল ‘লুকোচুরি খেলা’র অনুরূপ, কারণ এটি চিনের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়িয়ে জনসম্প্রদায়-স্তরের উদ্যোগের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
কূটনৈতিক পরিবর্তন সত্ত্বেও, দক্ষিণ আফ্রিকা তাইওয়ানকে প্রিটোরিয়ায় একটি যোগাযোগ অফিসের মাধ্যমে প্রতীকী উপস্থিতি বজায় রাখার অনুমতি দেয়। তারপর থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য তাইওয়ানের পদ্ধতি ছিল ‘লুকোচুরি খেলা’র অনুরূপ, কারণ এটি চিনের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়িয়ে জনসম্প্রদায়-স্তরের উদ্যোগের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। যদিও এই তৃণমূল প্রকল্পগুলির মধ্যে অনেকগুলি কার্যকর ছিল এবং উল্লেখযোগ্য ফলাফল দিয়েছে, সেগুলি চিনের বৃহৎ মাপের বিনিয়োগের তুলনায় ম্লান হয়ে গিয়েছে। তাইওয়ান যখন লো-প্রোফাইল থেকেছিল এবং স্থানীয় প্রচেষ্টায় মনোনিবেশ করেছিল, চিন তখন সক্রিয়ভাবে যথেষ্ট ঋণ ও অনুদান দিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের আকৃষ্ট করেছিল।
যদিও এটি তাইওয়ানের বহির্দেশীয় সার্বভৌমত্বের আকাঙ্ক্ষার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ধাক্কা, আফ্রিকার কোনও দেশের তরফে তার প্রশাসনিক রাজধানী থেকে তাইওয়ানের লিয়াজোঁ অফিস স্থানান্তর করানোর ঘটনা আগেও ঘটেছে। ২০১৭ সালে নাইজেরিয়া তাইওয়ানকে তার অফিস আবুজা থেকে লাগোসে স্থানান্তরের জন্য অনুরোধ করেছিল। তাইওয়ান তা মেনেও নিয়েছিল।
গত দুই দশকে বুরকিনা ফাসো, চাদ, গাম্বিয়া, লাইবেরিয়া, মালাউই, সেনেগাল, এবং সাও টোমে ও প্রিন্সিপে-সহ আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ তাইওয়ানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। বর্তমানে এসওয়াতিনি, দক্ষিণ আফ্রিকার পাশে একটি ছোট রাজতন্ত্র, আফ্রিকায় তাইওয়ানের শেষ অবশিষ্ট কূটনৈতিক মিত্র হিসাবে থেকে গিয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকায়, তাইওয়ান দুটি অফিস পরিচালনা করে: একটি প্রিটোরিয়ায় এবং আরেকটি বাণিজ্য অফিস কেপটাউনে। যদিও তাইওয়ানের বিদেশ মন্ত্রক তীব্র প্রতিবাদ করেছে এবং রাজধানী থেকে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে, তবে সিদ্ধান্তটি অপরিবর্তনীয় বলে মনে হচ্ছে। তাইওয়ান আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পর প্রতিষ্ঠিত তাদের পারস্পরিক প্রতিনিধি অফিসের অবস্থান সম্পর্কিত ১৯৯৭ সালের চুক্তির উল্লেখ করেছে। তবুও, দক্ষিণ আফ্রিকা জোর দিয়ে তাইওয়ানকে ছয় মাসের মধ্যে স্থানান্তর করার কথা বলেছে।
তাইওয়ান আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পর প্রতিষ্ঠিত তাদের পারস্পরিক প্রতিনিধি অফিসের অবস্থান সম্পর্কিত ১৯৯৭ সালের চুক্তির উল্লেখ করেছে।
তাইওয়ান দক্ষিণ আফ্রিকাকে সমানুপাতিক পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছে, যেমন দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাইপেই থেকে তার অফিস স্থানান্তর করার নির্দেশ দেওয়া, দক্ষিণ আফ্রিকানদের জন্য কঠোর ভিসার প্রয়োজনীয়তা আরোপ করা, এবং শিক্ষা বিনিময় স্থগিত করা। তবে এই বিকল্পগুলির কোনওটিই তাইওয়ানের জন্য ব্যবহারিক বলে মনে হচ্ছে না।
তাইওয়ানের বিদেশ মন্ত্রক ছাড়াও একমাত্র উল্লেখযোগ্য প্রতিবাদ এসেছে টেনেসির রিপাবলিকান সেনেটর মার্শা ব্ল্যাকবার্নের কাছ থেকে, যিনি চিনের গুন্ডামিমূলক কৌশলের নিন্দা করেছেন এবং বাইডেন প্রশাসনকে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির কাছে আত্মসমর্পণের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে মার্কিন সরকারের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের বিকল্প রয়েছে, বিশেষ করে এই কথা বিবেচনা করে যে দেশটি আফ্রিকান গ্রোথ অ্যান্ড অপরচুনিটি অ্যাক্ট (এজিওএ)-এর সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী, যা মার্কিন বাজারে শুল্কমুক্ত হাজার হাজার পণ্য সরবরাহ করার সুযোগ দেয়। রাশিয়া ও চিনের সঙ্গে নৌ-মহড়ার কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা গত বছর থেকে মার্কিন তদন্তের অধীনে রয়েছে। দেশটি কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন ও অংশীদারিত্ব সংক্রান্ত পছন্দের বিষয় হিসাবে তার ক্রিয়াকলাপগুলির পক্ষে যুক্তি দিয়েছে। তবে বিশেষত রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের বার্ষিকীর কাছাকাছি সময়ে চালিত এই মহড়ার পক্ষে যুক্তিটি অনেক মার্কিন নীতিনির্ধারককেই প্রভাবিত করেনি। যাই হোক, নিষেধাজ্ঞা নিয়ে অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলা যায়, এজিওএ সুবিধাগুলি প্রত্যাহার করা হলেও দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থান পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম।
তাইওয়ানের উপস্থিতিকে আরও প্রান্তিক করার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার সিদ্ধান্ত বিস্ময়কর নয়। কিছু উপায়ে, এই ঘটনা নতুন জোট সরকারের অধীনে চিন-দক্ষিণ আফ্রিকা সম্পর্কের ভবিষ্যতের পূর্বাভাস দেয়।
তাইওয়ানের উপস্থিতিকে আরও প্রান্তিক করার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার সিদ্ধান্ত বিস্ময়কর নয়। কিছু উপায়ে এই ঘটনা নতুন জোট সরকারের অধীনে চিন-দক্ষিণ আফ্রিকা সম্পর্কের ভবিষ্যতের পূর্বাভাস দেয়। ২০২৪ সালের মে মাসে, গণতান্ত্রিক দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ক্ষমতাসীন এএনসি তার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে, এবং প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (ডিএ)-সহ একাধিক বিরোধী দলের মিত্র হয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে, ডিএ চিনের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সমালোচনা করেছে। এএনসি-র এই পদক্ষেপ চিনকে আশ্বস্ত করার একটি প্রয়াস হতে পারে যে, দক্ষিণ আফ্রিকায় উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক পরিবর্তন সত্ত্বেও তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মূল নীতিগুলি অটুট থাকবে।
এই পদক্ষেপটি আফ্রিকা মহাদেশে তীব্র ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং তাইওয়ানের জন্য কূটনৈতিক সমর্থন দুর্বলতর করার জন্য এবং দেশটিকে আরও বিচ্ছিন্ন করার জন্য চিনের চাপ নির্দেশিত করে, যদিও তা প্রায়শই সূক্ষ্মভাবে ব্যবহৃত হয়। এই স্থানান্তর চিনের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করবে এবং তাইওয়ানের প্রকৃত সার্বভৌমত্বকে হ্রাস করবে।
এই ভাষ্যটি প্রথম দ্য ডিপ্লোম্যাট -এ প্রকাশিত হয়েছিল।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.