Author : Rumi Aijaz

Published on Jan 22, 2025 Updated 0 Hours ago

যদিও দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলে দূষণ মোকাবিলায় গ্রাপ-এর কিছু কার্যকারিতা রয়েছে, দিল্লির নাগরিক এবং জাতীয় সরকারের সমর্থিত আরও কার্যকর সমাধান প্রয়োজন।

দিল্লির বায়ু দূষণ সংকট মোকাবিলা করা

দিল্লি ও তার আশেপাশের অঞ্চলে বায়ু দূষণ একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু বৈচিত্রসহ এটি বার্ষিক অভিজ্ঞতা। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ষার মরসুমে, উদাহরণস্বরূপ, বায়ু দূষণ ন্যূনতম থাকে, কারণ ঘন ঘন বৃষ্টিপাত এটিকে ছড়িয়ে দেয় বা বাড়তে দেয় না। তবে বাকি মাসগুলিতে এর তীব্রতা অনেক গুণ বেড়ে যায়। অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতের মাসগুলিতে বায়ুর গুণমান সবচেয়ে খারাপ হয়


দিল্লি অঞ্চলে চরম বায়ু দূষণের ঘটনা খুবই উদ্বেগের বিষয়। এটি জীবজগৎ ও প্রকৃতিকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করছে। এই সমস্যার সবচেয়ে সাধারণ ইঙ্গিতগুলি হল দুর্বল দৃশ্যমানতা, শ্বাস নিতে অসুবিধা, একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর শ্বাসকষ্ট, ভূপৃষ্ঠের জলের ক্রমবর্ধমান নিম্ন গুণমান, এবং শহরের কার্যক্রমে ব্যাঘাত।


জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ষার মরসুমে, উদাহরণস্বরূপ, বায়ু দূষণ ন্যূনতম থাকে, কারণ ঘন ঘন বৃষ্টিপাত এটিকে ছড়িয়ে দেয় বা বাড়তে দেয় না।



মিডিয়া হাউস, রাজনৈতিক দল এবং সংশ্লিষ্ট ‌গোষ্ঠীগুলি প্রতি বছর পিক পিরিয়ডগুলিতে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে এবং সমস্যা তুলে ধরে। সমস্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য সুপ্রিম কোর্ট, জাতীয় সরকার এবং শহর প্রশাসন বিভিন্ন উপায়ে হস্তক্ষেপ করেছে, এবং বায়ু দূষণের উৎসের উপর ভিত্তি করে অসংখ্য সমাধানসূত্র প্রয়োগ করেছে।

জানা গিয়েছে যে, বায়ু দূষণের ঘটনাটি
মানব এবং প্রাকৃতিক কারণের সংমিশ্রণে ঘটে। দিল্লি অঞ্চলটি ভারতের সবচেয়ে জনবহুল, এবং এর বৃহৎ জনসংখ্যা বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপে যুক্ত রয়েছে — ভ্রমণ, নির্মাণ ও ম্যানুফ্যাকচারিং, কৃষি, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহার, পরিচ্ছন্নতা এবং উৎসব উদযাপন। এই কার্যক্রমগুলির মধ্যে অনেকগুলি পরিবেশের দিক থেকে ক্ষতিকর পদ্ধতিতে সঞ্চালিত হয়, যার ফলে ধূলিকণা তৈরি হয় এবং বায়ুতে দূষিত পদার্থ নির্গত হয়।


পরিবহণ, নির্মাণ, এবং কৃষি ক্ষেত্রগুলি এই অঞ্চলে বায়ু দূষণের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উৎস। বিপুল সংখ্যক মোটর যান জীবাশ্ম জ্বালানিতে চলে, এবং যানবাহন রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা রয়েছে। নির্মাণ কর্মকাণ্ডে প্রচুর ধূলিকণা তৈরি হয়, কারণ উন্নয়ন সংস্থাগুলি নতুন উন্নয়নশীল  কাঠামোকে সঠিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করে না। কৃষির ক্ষেত্রে এটা লক্ষ করা যায় যে, হরিয়ানা, পঞ্জাব ও উত্তর প্রদেশের মতো পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলিতে কৃষকদের দ্বারা ধান ও গমের অবশিষ্টাংশ (খুঁড়া) পোড়ানোর প্রথা রয়েছে। কৃষকেরা নতুন ফসল বপনের জন্য মাঠ পরিষ্কার করতে এই পদ্ধতিটিকে দ্রুত ও সুবিধাজনক মনে করলেও, এটি দিল্লিতে বায়ু দূষণের একটি প্রধান উৎস।



এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই)-‌এর মান এই সময়কালে অসাধারণভাবে বৃদ্ধি পায়, কারণ শীতকালে দূষিত বায়ু আটকা পড়ে বায়ুমণ্ডলের নিচের স্তরে।



উপরন্তু, সুবিধাজনক নিষ্পত্তির জন্য পৌরসভার কঠিন বর্জ্য পোড়ানোর অভ্যাস রয়েছে। আরও, দরিদ্র মানুষ ও নিরাপত্তারক্ষীরা, যাঁরা খোলা জায়গায় রাত কাটান, শীতের মাসগুলিতে ঠান্ডা থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য পাতা ও শুকনো কাঠ পোড়ান, যা দূষক নির্গত করে। আর একটি উৎস হল আতশবাজি।
দীপাবলি উৎসবের সময় এক সপ্তাহ ধরে রাতের বেলায় বাজির অবিরত বিস্ফোরণ প্রতি বছর শীতের মরসুমে বিষাক্ত ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই)-‌এর মান এই সময়কালে অসাধারণভাবে বৃদ্ধি পায়, কারণ শীতকালে দূষিত বায়ু আটকা পড়ে বায়ুমণ্ডলের নিচের স্তরে।

 
অন্যান্য মনুষ্যসৃষ্ট কারণ নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়নের ঘাটতিগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত। অনেক জায়গায় খালি জমিতে বালি আলগা হয়, কারণ দিল্লি অঞ্চল সাধারণত শুষ্ক থাকে এবং দমকা বাতাস সব দিকে ধুলো উড়িয়ে দেয়। এই ধুলো রাস্তার করিডোরে থিতু হয় এবং মোটরচালিত যানবাহনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। আরব উপদ্বীপ ও রাজস্থানের মরুভূমিসহ দূর-দূরান্ত থেকে এই অঞ্চলে ধূলিকণা আসার কারণে এই সমস্যা আরও বাড়ে। এই বিদ্যমান পরিস্থিতি মোটরচালক এবং পায়ে-‌হাঁটা জনসংখ্যা উভয়ের জন্য সমস্যা তৈরি করে।

বছরের পর বছর ধরে, সরকারি সংস্থাগুলি কাগজে-‌কলমে এবং বাস্তবের মাটিতে সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক
কাজ করেছে। উপলব্ধ তথ্যের পর্যালোচনা দেখায় যে বিভিন্ন দূষণ-নিঃসরণকারী উৎসগুলি নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন ও নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। বাস্তবে গৃহীত পদক্ষেপগুলির মধ্যে রয়েছে দিল্লি থেকে দূরে দূষিত শিল্প ইউনিটগুলিকে স্থানান্তর করা, পুরনো মোটরগাড়ির ব্যবহার বন্ধ করা, ডিজেল থেকে সমস্ত গণ-‌পরিবহণ যানের কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি)-‌এ স্থানান্তর, ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক যানবাহনগুলিকে আরও পরিচ্ছন্ন শক্তির ব্যবহারের জন্য পরিবর্তন করা, বৈদ্যুতিক যানবাহনের প্রবর্তন, রাস্তার ধারে যান্ত্রিকভাবে ঝাড়ু দেওয়া, সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্থাপন, এবং বায়ুর গুণমান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন।



উপলব্ধ তথ্যের পর্যালোচনা দেখায় যে বিভিন্ন দূষণ-নিঃসরণকারী উৎসগুলি নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন ও নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।



পূর্ববর্তী ও চলতি হস্তক্ষেপগুলি কিছু পরিমাণে সমস্যাটির সমাধানে সহায়তা করেছে, তবে মানুষের অনুপযুক্ত ক্রিয়াকলাপের কারণে সমস্যার তীব্রতা বিশাল। তাই, বাস্তবে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দৃশ্যমান নয়।

গত কয়েক বছর ধরে এনসিআর অঞ্চলে যখনই বায়ুর মান খারাপ হয়েছে, তখনই
গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান  (গ্রাপ) প্রয়োগ করা হয়েছে। এই পরিকল্পনায় দূষণ মোকাবিলায় সাহায্য করার জন্য গ্রাপ নির্দেশিকা অনুযায়ী  সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলি (অর্থাৎ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড, নির্মাণ সংস্থা, পরিবহণ বিভাগ, ট্রাফিক পুলিশ, পৌরসভা ও বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা), আবাসিক কল্যাণ সমিতি, প্লট মালিক ও ব্যক্তিদের কিছু নির্দিষ্ট কাজ করার (বা বন্ধ রাখার) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


যখন একিউআই মান ২০০-এর বেশি বা 'মধ্যম' স্তরের উপরে উঠে যায়, তখন একাধিক ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হয়। এই ব্যবস্থাগুলি দূষণের তীব্রতার উপর নির্ভর করে চারটি পর্যায়ে বিভক্ত। উদাহরণস্বরূপ, যখন দূষণ কম হয়, তখন সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিকে নির্মাণ ও ধ্বংস (সিএন্ডডি), রাস্তা পরিষ্কার করা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কার্যক্রমে অধিকতর কর্মদক্ষতা নিশ্চিত করতে হয়। দূষণের আরও বৃদ্ধির সময় অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, যেমন প্রকাশ্য এলাকায় পার্কিং ফি বৃদ্ধি, সিএন্ডডি কার্যক্রমের উপর নিষেধাজ্ঞা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শারীরিক শিক্ষা বন্ধ করা, দিল্লিতে নিম্নমানের জ্বালানিতে চলা ট্রাক ও আন্তঃরাজ্য বাসের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, বাড়ি থেকে কাজ (‌ওয়র্ক ফ্রম হোম)‌ করা, এবং জোড়-‌বিজোড় মোটর গাড়ির প্রকল্প প্রবর্তন। নাগরিক সনদের মাধ্যমে নাগরিকদের করণীয় এবং না-‌করণীয় সম্পর্কে অবহিত করা হয়।

সেই অনুসারে, যখন ২০২৪ সালের নভেম্বরে দিল্লিতে গ্রাপ-এর চতুর্থ পর্যায় প্রয়োগ করা হয়েছিল, তখন শিক্ষার্থীদের অনলাইনে শিক্ষার পদ্ধতিতে স্থানান্তরিত করতে বলা হয়েছিল, মোটরগাড়িতে মানুষের ভ্রমণ সীমাবদ্ধ ছিল, দূষণকারী পণ্যবাহী যান (অপ্রয়োজনীয় পণ্য বহনকারী) প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, রাস্তা/ভবন নির্মাণ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছিল, এবং প্রকাশ্য এলাকায় পার্কিং ফি বৃদ্ধি করা হয়েছিল। অন্য কথায়, অনেক কার্যক্রম সঠিকভাবে সচল থাকতে পারেনি, এবং তা মানুষের জীবনকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। আবারও,
১৭ ডিসেম্বর ২০২৪-এ,  গ্রাপ-এর চতুর্থ পর্যায় প্রয়োগ করা হয়েছিল, কারণ একিউআই মানগুলি আনন্দ বিহার ও রোহিণীসহ দিল্লির অনেক জনাকীর্ণ এলাকায় ৪০০-র উপরে চলে গিয়েছিল।



যখন ২০২৪ সালের নভেম্বরে দিল্লিতে গ্রাপ-এর চতুর্থ পর্যায় প্রয়োগ করা হয়েছিল, তখন শিক্ষার্থীদের অনলাইনে শিক্ষার পদ্ধতিতে স্থানান্তরিত করতে বলা হয়েছিল, মোটর গাড়িতে মানুষের ভ্রমণ সীমাবদ্ধ ছিল, দূষণকারী পণ্যবাহী যান (অপ্রয়োজনীয় পণ্য বহনকারী) প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, রাস্তা/ভবন নির্মাণ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছিল, এবং প্রকাশ্য এলাকায় পার্কিং ফি বৃদ্ধি করা হয়েছিল।



বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শহরের সংস্থাগুলিকে অবশ্যই বায়ু দূষণের সমস্যা মোকাবিলায় আরও বেশি দক্ষতা প্রদর্শন করতে হবে। এই অর্জন নির্ভর করে জাতীয় সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত যথেষ্ট সমর্থনের উপর। পাশাপাশি নাগরিকদের নিয়ম মেনে চলতে হবে।

দিল্লি অঞ্চলে বায়ু দূষণ কমাতে, নিম্নলিখিত কাজগুলি করা প্রয়োজন:

আঞ্চলিক গণপরিবহণ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। গুরুগ্রামে হাঁটার দূরত্বের মধ্যে  বাস পরিষেবা পাওয়া যায় না, এবং মানুষকে নিজেদেরই ব্যবস্থা করে নিতে হয়। তার উপর, অনেক মেট্রো রেল স্টেশনের সঙ্গে গণ-‌পরিবহণ ব্যবস্থার একীকরণের অভাব রয়েছে। বাস পরিষেবার মান, সময়-‌ব্যবধান ও নিরাপত্তার উন্নতি প্রয়োজন। অটোরিকশায় ভাড়ার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন। এই ধরনের ঘাটতি ব্যক্তিগত মোটর গাড়ির একটি অসাধারণ বৃদ্ধির দিকে চালিত করেছে।

রাস্তা ও বাড়ি নির্মাণ সংস্থাগুলিকে অবশ্যই ধুলো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। নির্মাণের সময় বিল্ডিং কাঠামো সঠিকভাবে গ্রিন বেরিয়ার দিয়ে আবৃত করা উচিত, এবং ধূলিকণা ছড়ানো রোধ করতে জল ছিটানো উচিত।

‌‌ কৃষিক্ষেত্রে খড় পোড়ানোর প্রথা বন্ধ করতে হবে। শহরাঞ্চলে কঠিন বর্জ্য সংগ্রহের মতোই কৃষি বর্জ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। চাষি ও কৃষি কর্মীদের বর্জ্য কাটতে এবং সংগ্রহ করতে বলা যেতে পারে, যা তারা পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতিতে নিষ্পত্তির জন্য সংগ্রহ কেন্দ্রে জমা করতে পারে। বিনিময়ে, কৃষক সম্প্রদায়কে কিছু প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে।

ছোট শিল্প ইউনিট-‌সহ এই অঞ্চলে অবৈধভাবে দূষণকারী অর্থনৈতিক কার্যকলাপগুলিকে চিহ্নিত করতে হবে, এবং মালিকদের অবশ্যই শক্তির পরিচ্ছন্ন রূপগুলিতে পরিবর্তনের জন্য সহায়তা দিতে হবে।



রুমি আইজাজ অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের আরবান পলিসি রিসার্চ ইনিশিয়েটি‌ভ‌-‌এর একজন সিনিয়র ফেলো

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Rumi Aijaz

Rumi Aijaz

Rumi Aijaz is Senior Fellow at ORF where he is responsible for the conduct of the Urban Policy Research Initiative. He conceived and designed the ...

Read More +