-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
Image Source: Getty
ভারতের উচিত সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং বিশেষ করে তার বন্দর ব্যবহার করা। এবং এমনটা করলে তা আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে চিনের প্রভাব মোকাবিলায় ভারতকে একটি মূল্যবান সাধনী প্রদান করতে পারে।
লোহিত সাগরে প্রবেশের সন্ধানে ভারতের উচিত জনাকীর্ণ জিবুতি এড়িয়ে যাওয়া এবং সোমালিল্যান্ডের বারবেরা বন্দর বেছে নেওয়া। বারবেরা জিবুতির বন্দরের তুলনায় দশ ভাগের মাত্র এক ভাগ ট্রাফিক পরিচালনা করে। তবে ব্রিকস গোষ্ঠীর নতুন সদস্য ও ভারতের মূল অংশীদার ইথিওপিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির (ইউএই) বিনিয়োগের জন্য অঞ্চলটিতে ক্রমশ ভিড় বাড়ছে।
এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য ভারত প্রায়শই সোমালিল্যান্ডের উত্তরে এডেন উপসাগরে জলদস্যু-বিরোধী টহলদার নৌকা এবং যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে। যেহেতু ভারত এই অঞ্চলে আরও প্রভাব অর্জনের চেষ্টা করছে, তাই সোমালিল্যান্ড নিজেই ভারতের কৌশলগত কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান ও ইতিহাস ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাগুলি রাখে। সোমালিয়ার একটি বিচ্ছিন্ন অঞ্চল এই সোমালিল্যান্ড লোহিত সাগর বরাবর ৮৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলরেখা নিয়ন্ত্রণ করে এবং বারবেরা আফ্রিকার ব্যস্ততম বন্দরগুলির মধ্যে অন্যতম। গৃহযুদ্ধের দরুন বারবেরা ধ্বংস হওয়ার আগে ব্রিটিশরা ইথিওপিয়াকে ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত করতে বন্দরটিকে ব্যবহার করেছিল। এবং এই বছরের শুরুতে ইথিওপিয়া বারবেরা বন্দরে বাণিজ্যিক ও সামরিক প্রবেশাধিকার পেতে সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান ও ইতিহাস ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাগুলি রাখে। সোমালিয়ার একটি বিচ্ছিন্ন অঞ্চল এই সোমালিল্যান্ড লোহিত সাগর বরাবর ৮৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলরেখা নিয়ন্ত্রণ করে এবং বারবেরা আফ্রিকার ব্যস্ততম বন্দরগুলির মধ্যে অন্যতম।
ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সঞ্চারপথ মেনে ভারত সোমালিল্যান্ডের অংশীদারিত্বের ক্রমবর্ধমান শৃঙ্খলে যোগদান করবে। সোমালিয়া এবং অন্য অনেক আফ্রিকান দেশের বিপরীতে সোমালিল্যান্ড তুলনামূলক ভাবে স্থিতিশীল এবং সেখানে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গণতন্ত্র রয়েছে। একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে ব্যাপক ভাবে অস্বীকৃত হওয়া সত্ত্বেও এটি অনেক দেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব শুরু করেছে। সোমালিল্যান্ডের রাজধানী হারগেইসায় জিবুতি, ইথিওপিয়া ও তুরস্কের দূতাবাসের পাশাপাশি ব্রিটেন, ডেনমার্ক,সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, মিশর ও কেনিয়ার যোগাযোগ কার্যালয় রয়েছে।
ভারত ও সোমালিল্যান্ড ইতিমধ্যেই শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক ভাগ করে নিয়েছে। সোমালিল্যান্ড ভারত থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে এবং এর মধ্যে রয়েছে খাদ্য, পেট্রোলিয়াম, গ্যাস, যন্ত্রপাতি, নির্মাণ সামগ্রী, পোশাক, তামাক, ওষুধ এবং গাড়ি। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, চিন, তুরস্ক, মালয়েশিয়া এবং সৌদি আরবের পাশাপাশি ভারতও সোমালিল্যান্ডের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার।
বারবেরা বন্দরের চিত্তাকর্ষক কার্যকলাপ এবং আফ্রিকার মধ্যে তার অবস্থান অঞ্চলটিকে ভারতের জন্য একটি কৌশলগত সম্পদ করে তোলে। গত বছর বারবেরা বিশ্বব্যাঙ্কের কন্টেনার পোর্ট পারফরমেন্স সূচকে কেনিয়ার মোম্বাসা বন্দরের উপরে স্থান করে নিয়েছে।
ভারতের নৌঘাঁটি স্থাপনের জন্যও এটি উপযুক্ত। সোমালিল্যান্ডের মাধ্যমেই ভারত মোজাম্বিক ও কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে ইসলামি চরমপন্থা ছড়িয়ে দেওয়ার পাকিস্তানের প্রচেষ্টার পাশাপাশি জিবুতিতে ঘাঁটি রয়েছে এ হেন চিনা সেনাবাহিনীর আঞ্চলিক প্রভাব মোকাবিলা করতে পারে।
সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককেও শক্তিশালী করতে পারে, যা বারবেরা বন্দর এবং কাছাকাছি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল সম্প্রসারণে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। সোমালিল্যান্ডে অন্যান্য বিস্তৃত বিনিয়োগ ও সহায়তার পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরশাহি স্থলবেষ্টিতে দেশটিকে বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত করতে ইথিওপিয়ার সঙ্গে বারবেরা করিডোরের উন্নয়নে ব্রতী হয়েছে। এই ধরনের সাহায্যের বিনিময়ে সোমালিল্যান্ড সংযুক্ত আরব আমিরশাহিকে বারবেরায় একটি বিমান ও নৌ ঘাঁটি স্থাপনের অনুমতি দেবে।
সোমালিল্যান্ডে অন্যান্য বিস্তৃত বিনিয়োগ ও সহায়তার পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরশাহি স্থলবেষ্টিতে দেশটিকে বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত করতে ইথিওপিয়ার সঙ্গে বারবেরা করিডোরের উন্নয়নে ব্রতী হয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ইতিমধ্যেই ইয়েমেনের প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে বারবেরায় জাহাজ নোঙর করেছে, যেখানে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট রয়েছে এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সৈন্যই রয়েছে, যারা সম্প্রতি হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছিল।
যেহেতু ইথিওপিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ২০২৩ সালে ব্রিকস-এর সদস্য হয়েছে, তাই তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা গোষ্ঠীটির মধ্যে ভারতের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে পারে এবং বারবেরা বন্দরে প্রবেশের সুযোগ করে দিতে পারে। ইথিওপিয়া তার সমস্ত বাণিজ্য বারবেরায় স্থানান্তরিত করার বিষয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
উল্লেখযোগ্য ভাবে সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক ভারতকে এই অঞ্চলে চিনের প্রভাব মোকাবিলায় সহায়তা করবে। ২০২০ সালে সোমালিল্যান্ড তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দিয়েছে। চিনের তীব্র চাপ ও বিরোধী ওয়াদানি পার্টির সদস্যদের বিরোধিতা সত্ত্বেও সোমালিল্যান্ড কূটনৈতিক ভাবে তাইওয়ানকে সমর্থন করে চলেছে। যাই হোক, সোমালিল্যান্ডের অর্থনীতির ছোট আকার এবং বিস্তৃত কূটনৈতিক স্বীকৃতির অভাবের কারণে তারা চিনের প্রভাবকে খুব বেশি দিন প্রতিরোধ করতে পারবে না। তাই এই অঞ্চলে ভারতের উচিত সোমালিল্যান্ডের পাশে দাঁড়ানো।
ভারত যদি সোমালিল্যান্ডে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা করে, তা হলে এটি ভারতীয় ব্যবসার জন্য উপকৃত হবে এবং সোমালিল্যান্ডের সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করবে। যেহেতু আফ্রিকার দেশগুলি ক্রমশ চিনের ঋণ-ফাঁদ কূটনীতি থেকে নিজেদের বের করে আনতে এবং বিকল্পগুলির সন্ধান করতে উৎসুক, তাই এই অঞ্চলে ভারতের ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততা শক্তিগুলিকে চিনের তরফে অর্থ বর্জন করতে অনুপ্রাণিত করতে পারে।
ভারতকে অবশ্যই তার আফ্রিকা কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে হবে এবং এই অঞ্চলে চিনের প্রভাব মোকাবিলায় অন্যান্য সমমনস্ক দেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করতে হবে। সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক পূর্ব আফ্রিকার উপকূলে ভারতের প্রভাব বৃদ্ধি করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম দি অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি-তে প্রকাশিত হয়।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Samir Bhattacharya is an Associate Fellow at ORF where he works on geopolitics with particular reference to Africa in the changing global order. He has a ...
Read More +