Published on Aug 15, 2021 Updated 0 Hours ago

ভারত-বাংলাদেশ-নেপাল এই সংলগ্ন এলাকাই শুধু নয়, সারা দক্ষিণ এশিয়ায় অসংঠিত বাজারের প্রলোভনের শিকার এই অসহায় পরিযায়ী শ্রমিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে তাঁদের পক্ষ নিয়ে কথা বলবে কে বা কারা?

আন্তর্দেশীয় নারী পাচারের মোকাবিলায় চাই সুচারু, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও সংবেদনশীলতা

বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে, আন্তর্দেশীয় নারী ও শিশু পাচার, তাদের অননুমোদিত অভিবাসন (মাইগ্রেশন), সংখ্যা ও মাত্রা — এই দুয়ের দিক থেকেই অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক ভাবে সংগঠিত এই অপরাধ ক্রমেই মানবাধিকারের এক গভীর সঙ্কট হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক কার্যালয়ের (ইউ এন ও ডি সি ) সাম্প্রতিক কালে প্রকাশিত এক রিপোর্ট, গ্লোবাল রিপোর্ট অন ট্রাফিকিং ইন পারসন ২০২০-এ বলা হয়েছে যে এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত আন্তর্জাতিক পাচারচক্র অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে, সুসংগঠিত ভাবে সমাজের প্রান্তিক ও অসহায় মহিলা ও শিশুদেরই চিহ্নিত করে। তাদের দারিদ্র ও অসহায়তার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন কর্মসংস্থানের প্রলোভন দেখিয়ে এই পাচার প্রক্রিয়ার ফাঁদে ফেলে। বেশির ভাগ সময়ে ভুক্তভোগী এই মানুষগুলো নিজেদের অজান্তেই যৌন নির্যাতনের, বলপূর্বক শ্রম, গৃহকর্মের নামে আরও অন্যান্য ধরনের শোষণের শিকার হয়ে যায়। ইউ এন ও ডি সির ঐ রিপোর্ট বলছে, বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রতি ১০ জন পাচার হওয়া মানুষের মধ্যে ৫ জন মহিলা আর ২ জন নাবালিকা। এঁদের মধ্যে যাঁরা অননুমোদিত অভিবাসী (আনডকুমেন্টেড মাইগ্র্যান্টস), বা আরও সহজ করে বললে যাঁদের আভিবাসনের সময় কোনো বৈধ অনুমতিপত্র থাকে না, এঁদের বেশির ভাগ এই পাচারচক্রের জালে পড়েন।

বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রতি ১০ জন পাচার হওয়া মানুষের মধ্যে ৫ জন মহিলা আর ২ জন নাবালিকা।

বর্তমানে আন্তর্জাতিক মানব-পাচার ক্রমেই এক লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আই এম এফ) ২০১৮-র রিপোর্টে উল্লিখিত একটি পরিসংখ্যানের দিকে পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যেতে পারে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে যে বিশ্বে প্রতি বছরে এই লাভজনক ব্যবসা থেকে আয় হয় প্রায় ১৫০ বিলিয়ান মার্কিন ডলার। এই পরিসংখ্যান আমাদের সহজেই এই মানব-পাচার পক্রিয়ার দ্রুত ছড়িয়ে পড়া জাল ও তার ব্যাপ্তির একটা আভাস দেয়। বস্তুত, কোভিড-১৯ আতিমারীর কারণে সৃষ্ট অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে বিশেষ করে যেসব দেশে কর্মসংস্থানের বৃদ্ধির হার ভালো নয়, সেখানে বেকারত্বের হারের তীব্র বৃদ্ধির ফলে মানব-পাচার আরও বাড়ার প্রভূত আশঙ্কা রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল ও অপেক্ষাকৃত গরীব দেশগুলির উপর এর আঁচ যে পড়তে চলেছে সে বিষয় সন্দেহ নেই।

কোভিড-১৯ আতিমারীর কারণে সৃষ্ট অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে বিশেষ করে যেসব দেশে কর্মসংস্থানের বৃদ্ধির হার ভালো নয়, সেখানে বেকারত্বের হারের তীব্র বৃদ্ধির ফলে মানব-পাচার আরও বাড়ার প্রভূত আশঙ্কা রয়েছে।

আগেই বলা হয়েছে যে মানব পাচারের মতো এই অপরাধমূলক ব্যবসা এত গোপনীয়তার সংগে চালানো হয় যে এর সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া খুবই মুশকিল। আর দক্ষিণ এশিয়ায় সেই হিসাবের নাগাল পাওয়া আরোই কষ্টকর। তাহলেও বর্তমানে ইউ এন ও ডি সির রিপোর্টের বিশ্লেষণ অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার অবস্থা সম্মন্ধে একটা মোটামুটি ধারণা করা যায়। ওই সংস্থার ২০২০ সালে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের সনাক্তকরণের হার প্রায় সমান, যথাক্রমে ৪৫ (ছেলে ২৪ এবং মেয়ে ২১ শতাংশ) এবং ৪৪ শতাংশ। যাঁরা এই মানব-পাচারের শিকার হন, তাঁদের অধিকাংশই বলপূর্বক শ্রমের (ফোর্সড্‌ লেবর) জন্য পাচার হন যা মোট সংখ্যার ৫২ শতাংশ এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হন সেই অনুপাতে কিছুটা কম, ৩৬ শতাংশ। তবে বেশীরভাগ সময়ে দেখা যায় অনেক মহিলা যাঁরা প্রথম পর্যায়ে শ্রমিক হিসেবে অর্থের সংস্থানে নিজেদের বাড়ি, ঘর ছেড়ে পথে নাবেন তাদের অবশেষে ঠাঁই হয় কোনও নিষিদ্ধপল্লিতে।

মহিলাদের সনাক্তকরণের হার প্রায় সমান, যথাক্রমে ৪৫ (ছেলে ২৪ এবং মেয়ে ২১ শতাংশ) এবং ৪৪ শতাংশ। যাঁরা এই মানব-পাচারের শিকার হন, তাঁদের অধিকাংশই বলপূর্বক শ্রমের (ফোর্সড্‌ লেবর) জন্য পাচার হন যা মোট সংখ্যার ৫২ শতাংশ এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হন সেই অনুপাতে কিছুটা কম, ৩৬ শতাংশ।

মানব-পাচারের নিরিখে দক্ষিণ এশিয়াকে এই প্রক্রিয়ার উৎপত্তিস্থল হিসেবে গণ্য করা হয়, যেখান থেকে সারা পৃথিবীতে পাচার হওয়া মানুষদের যোগান দেওয়া হয়। প্রকৃতপক্ষে, দক্ষিণ এশিয়া থেকে বিশ্বের ৪০ টিরও বেশি দেশে মহিলা ও শিশুদের পাচার করা হয় আর তাঁদের প্রধান গন্তব্যস্থল হল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি। এছাড়াও,কিছুটা হলেও, দক্ষিণ এশিয়া থেকে পাচারের প্রবাহ পশ্চিম ও দক্ষিণ ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকাতেও দেখা গিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারত থেকে পাচার হওয়া মহিলা ও শিশুদের গন্তব্যস্থল দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এবং সীমিত সংখ্যায় হলেও পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকা।

মানব-পাচারের নিরিখে দক্ষিণ এশিয়াকে এই প্রক্রিয়ার উৎপত্তিস্থল হিসেবে গণ্য করা হয়, যেখান থেকে সারা পৃথিবীতে পাচার হওয়া মানুষদের যোগান দেওয়া হয়।

পাচারকারীদের গতিবিধি, পাচারের পথ, পদ্ধতি ক্রমশই আরও সংগঠিত হয়েছে, এবং তাই সংগঠিত অপরাধ সিন্ডিকেটগুলির আধিক্য এই অঞ্চলে বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। যেহেতু আজকের দুনিয়া প্রযুক্তিগত ভাবে অনেক উন্নত, সেই উন্নতি পাচারকারীদেরও প্রভাবিত করেছে। মানব-পাচারের সুবিধার জন্য ইন্টারনেট প্রযুক্তি ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রযুক্তির উন্নয়নকে কাজে লাগিয়ে পাচারকারীরা ভুক্তভোগীদের বিজ্ঞাপন, নিয়োগ এবং শোষণের জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করছে। প্রসঙ্গত, এই প্রক্রিয়ায় প্রথম ইন্টারনেট ব্যবহারের চল শুরু হয় ২০০৪ সালে। কিন্তু, ২০০৪ সাল থেকে ২০০৯ সালের মধ্যেই এক লাফে শুন্য থেকে ৫১ শতাংশ বেড়ে গেছে ইন্টারনেট প্রযুক্তির ব্যবহার। ইউ এন ও ডি সির ডেটা সেট অনুযায়ী মোট পাচার হওয়া ৭৯ জনের বিচারাধীন মামলায় দেখা গেছে প্রায় ৫৭ জনের ক্ষেত্রেই, ইন্টারনেট ব্যবহারের দিকটি সুস্পষ্ট এবং তাদের মধ্যে ৩৪ জন আবার একাধিকবার পাচার হয়েছেন।

এই প্রক্রিয়ায় প্রথম ইন্টারনেট ব্যবহারের চল শুরু হয় ২০০৪ সালে। কিন্তু, ২০০৪ সাল থেকে ২০০৯ সালের মধ্যেই এক লাফে শুন্য থেকে ৫১ শতাংশ বেড়ে গেছে ইন্টারনেট প্রযুক্তির ব্যবহার।

ইন্টারনেট-ভিত্তিক প্রযুক্তিগুলি ব্যবহারের তো কোন সীমানা নেই, তাই পাচারের মতো অপরাধমূলক ব্যবসার ব্যাপ্তি এত ব্যাপক হারে বেড়ে চলেছে। এর ফলে, ইন্টারনেট প্রযুক্তি পাচারকারীদের অপারেশনের ভৌগোলিক পরিধি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে পাচারকারীরা ফেসবুক, মাইস্পেস, স্কাইপ, হোয়াটসঅ্যাপ এর মতো সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে তাদের ব্যবসার জাল বিস্তার করেছে। দক্ষিণ এশিয়াও এই পাচারের সাইবার প্রবাহের ব্যতিক্রম নয়।

ইন্টারনেট-ভিত্তিক প্রযুক্তিগুলি ব্যবহারের তো কোন সীমানা নেই, তাই পাচারের মতো অপরাধমূলক ব্যবসার ব্যাপ্তি এত ব্যাপক হারে বেড়ে চলেছে।

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে মূলত ভারত, বাংলাদেশ ও নেপাল-সংলগ্ন ভৌগোলিক অঞ্চল মানব-পাচারের চারণক্ষেত্র হিসাবে পরিগণিত হয়। এর মধ্যে ভারত ও নেপালের উন্মুক্ত সীমানা পাচারকারীদের কাছে বাড়তি প্রলোভনের বিষয় যেহেতু মানুষের সীমানা পারাপারের জন্য কোনও ভিসা দরকার হয় না। এই সংলগ্ন অঞ্চলে অবশ্য আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক — এই দু ধরণের মানব-পাচার দেখা যায়। মোটের উপর প্রায় ৪ শতাংশ মহিলা ও শিশু আন্তর্জাতিক সীমানা পার হয়ে পাচার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এই প্রক্রিয়ায় বেশিরভাগ সময় পাচার ভারত-অভিমুখী হলেও ভারত সবসময় মূল গন্তব্যস্থল নয়। ভারত থেকে তাঁদের আবার মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়। তাই একবার পাচার হওয়া মহিলা বা শিশু বার বার পাচার হতে থাকেন।

মহিলা ও শিশু পাচারের এই রমরমা ব্যবসার পিছনে রয়েছে ক্রমবর্ধমান চাহিদা। মানব পাচারের বেশিরভাগ গবেষণায় মূলত সরবরাহ বা যোগান এবং তার সঙ্গে যুক্ত কারণগুলির উপর বেশি দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়, যেমন দারিদ্র্য, সামাজিক বৈষম্য এবং কর্মসংস্থানের সুযোগের অভাব, গার্হস্থ হিংসা ও নির্যাতন এবং অন্যান্য বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্বার্থ। যাই হোক, পাচারের চাহিদার দিকটিও বোঝার প্রয়োজন রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বাজারের প্রকৃতি, ক্রেতাদের মনোভাব এবং অপরাধদমন নীতির বাস্তবায়নে শিথিলতা। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, দক্ষিণ এশিয়ায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার হার পূর্ব এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। বেশির ভাগ সময় দেখা যায় দীর্ঘদিন ধরে বিচারাধীন থাকার পরও দুষ্কৃতী, পাচারকারীদের কোনও সাজা হয় না। অপরদিকে, সামাজিক সম্মান, লজ্জা ও ভয়ের কারণে পাচার হওয়া মেয়েরা সচরাচর জনসমক্ষে মুখ খুলতে চান না। মহিলা বা মেয়েদের ক্ষেত্রে সেই প্রবণতা আনেক বেশি। ফলে দোষীর কোনও সাজা হয় না।পাচারচক্রর শক্তি আরও মজবুত হয়। আর শুধু পুরুষরাই যে পাচারকারী হিসাবে কাজ করে তা নয়। মহিলারাও পাচারচক্রের দালাল হিসাবে কাজ করে। সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যান বলছে নেপালে যে সব পাচারকারীদের আটক করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ যদি পুরুষ হোয় তাহলে ২৬ শতাংশ মহিলা।

মহিলা ও শিশু পাচারের এই রমরমা ব্যবসার পিছনে রয়েছে ক্রমবর্ধমান চাহিদা। মানব পাচারের বেশিরভাগ গবেষণায় মূলত সরবরাহ বা যোগান এবং তার সঙ্গে যুক্ত কারণগুলির উপর বেশি দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়, যেমন দারিদ্র্য, সামাজিক বৈষম্য এবং কর্মসংস্থানের সুযোগের অভাব, গার্হস্থ হিংসা ও নির্যাতন এবং অন্যান্য বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্বার্থ।

এমনকি বর্তমান অতিমারীর অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতেও পাচারের প্রবাহ অব্যাহত। এক পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালের শুরু থেকে আগস্ট পর্যন্ত ভারত ও বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তে ধরা পড়া মহিলাদের সংখ্যা ছিল ৯১৫। ২০১৯ সালে যে সংখ্যা ছিল ৯৩৬, তা ২০১৮ এ ছিল ১,১০৭। গত বছর সীমান্তে ধরা পড়া মোট ৯১৫ মহিলাদের মধ্যে, ৮৮৮ জন দক্ষিণবঙ্গ থেকে, ১৪ জন ত্রিপুরা থেকে, ৬ জন অসমের গুয়াহাটি,, ৪ জন উত্তরবঙ্গ, ২ জন মিজোরাম ও কাছাড় থেকে এবং মেঘালয় থেকে ১ জন। বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ), ভারত ও জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার, বাংলাদেশের একটি যৌথ প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, গত এক দশকে ১২ থেকে ৩০ বছর বয়সী বাংলাদেশি নারী ও শিশু যাঁদের অবৈধভাবে ভারতে পাঠানো হয়েছে, তাঁদের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখের কাছাকাছি। অন্য দিকে ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস্‌ কমিশনের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ সালে প্রায় ৩৫,০০০ নেপালী নাগরিক (১৫,০০০ পুরুষ; ১৫,০০০ নারী; এবং ৫,০০০ শিশু) ভারতে পাচার হয়েছে। পাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কাজ করে, এমন এনজিওরা অনুমান করে যে, প্রতিদিন প্রায় ৫০ জন নারী নেপাল-ভারত সীমানা অতিক্রম করে ভারতে পাচার হয়ে আসছে, এবং সেখান থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে পুনরায় পাচার হচ্ছে।

এক পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালের শুরু থেকে আগস্ট পর্যন্ত ভারত ও বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তে ধরা পড়া মহিলাদের সংখ্যা ছিল ৯১৫।

এখানে উল্লেখ্য, রাষ্ট্রসঙ্ঘের পাচার রোধে “ট্র্যাফিকিং ইন পারসন” প্রোটোকল (২০০০) এর মতো আন্তর্জাতিক কিমবা সার্কের “কনভেনশন অন ট্র্যাফিকিং” (২০০২) এর মতো আঞ্চলিক ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও ভারত-বাংলাদেশ-নেপাল এই সংলগ্ন এলাকায় পাচার রোধ সম্ভব হয় নি। তবে একথা ঠিকই যে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ২০১৫ সালে যে চুক্তি হয়, তার ফলে দু-দেশের সরকারই অনেক ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। যদিও এখনও পর্যন্ত দুদেশের মধ্যে কোনও পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য একটি এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম) ঠিক হয় নি। নেপালের ক্ষেত্রেও তা নেই। এই পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না থাকলে এই সুসংগঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধকে প্রতিরোধ করা খুবই মুশকিল। যেহেতু পাচার হয়ে আসা ব্যক্তিরা অন্য দেশের নাগরিক, তার ফলে নাগরিকত্বের প্রশ্নও এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বলপূর্বক শ্রমের জন্যই যেহেতু বেশির ভাগ মানুষ পাচারের শিকার হন, তাই প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে এক দেশ থেকে অন্য দেশের সীমানা পেরিয়ে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদেরকেও এই আলোচনার সামিল করতে হবে। ভারত-বাংলাদেশ-নেপাল এই সংলগ্ন এলাকাই শুধু নয়, সারা দক্ষিণ এশিয়ায় অসংঠিত বাজারের প্রলোভনের শিকার এই অসহায় পরিযায়ী শ্রমিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে তাঁদের পক্ষ নিয়ে কথা বলবে কে বা কারা? প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলিকে এই বিষয় নিয়ে ভাবতেই হবে। ভারত, বাংলাদেশ ও নেপাল নিজ নিজ ক্ষেত্রে পাচার বিরোধী আইন প্রণয়ন করেছে ঠিকই, তবে তার সঠিক ফল পেতে হলে চাই আরও সংবেদনশীল দৃষ্টিভঙ্গি।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.