Author : Aneesh Parnerkar

Published on Sep 28, 2024 Updated 0 Hours ago

শরিফের সাম্প্রতিক চিন সফরের তাড়াহুড়ো গভীরতর ঋণ সঙ্কট এবং ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার মাঝে চিনের উপর ইসলামাবাদের বাড়তে থাকা নির্ভরতাকে তুলে ধরে।

চিনা অর্থের সন্ধানে মরিয়া শেহবাজ শরিফ

পাকিস্তানের প্রাইম মিনিস্টার শেহবাজ শরি২০২৪ সালের ৮ জুন চিনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাঁর পাঁচ দিনের সরকারি সফর শেষ করেন। তাঁর প্রতিনিধি দলে ১০০ জনেরও বেশি পাকিস্তানি ব্যবসায়ী-সহ বিদেশ, প্রতিরক্ষা, অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রীরা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে, সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের উপস্থিতি এই সফরের কৌশলগত তাৎপর্যকেই তুলে ধরে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে একটি নতুন ঋণ চুক্তি সুরক্ষিত করার জন্য ইসলামাবাদের প্রচেষ্টাই ছিল এই সফরের প্রধান চালিকাশক্তি, যা  পাকিস্তানের বৃহত্তম দ্বিপাক্ষিক ঋণদাতা চিনের অনুমোদনের উপর নির্ভর করে। পাকিস্তানের বাজেট - যা সাধারণত ১০ জুন পেশ করা হয় - এ বার শরিফের বেজিং থেকে ফিরে না আসা পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল। এই সফর গভীরতর ঋণ সঙ্কট এবং ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার মাঝে চিনের উপর ইসলামাবাদের বাড়তে থাকা নির্ভরতাকে তুলে ধরে।

সফর থেকে প্রত্যাশা

চিন সফরের আগে তিনটি মূল প্রত্যাশার কথা উঠে এসেছিল। প্রথমত,  ইসলামাবাদের লক্ষ্য ছিল চিনা ঋণ পরিশোধের একটি রোলওভার সুরক্ষিত করা কারণ পাকিস্তান চিনের কাছে ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি ঋণের দায়ে জর্জরিত, যা একটি ক্রমবর্ধমান ঋণ সঙ্কটের মাঝেই বিপজ্জনক ভাবে খেলাপি অবস্থায় দাঁড়িয়ে। সর্বোপরি, রিফের সরকার মরিয়া হয়ে একটি নতুন আইএমএফ কর্মসূচির অধীনে ৬-৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রত্যাশা করছে। কারণ বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার প্রায় শূন্য; গম, পেঁয়াজ, দুধ এবং মাংসের মতো প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে; বিদ্যুৎহীনতার লাগামহীন ধাক্কা এবং সাধারণ ভাবে আর কটি বিতর্কিত নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে জনগণ অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েছে। তাই ইসলামাবাদের সর্বোত্তম উদ্দেশ্য ছিল আরও অন্তত তিন বছরের জন্য ঋণ পরিশোধ স্থগিত করা, যার ফলে আইএমএফ আলোচনার পরবর্তী দফাকে সহজতর করা যায়

দ্বিতীয় এবং আরও বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল চিন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের (সিপিইসি) দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা। ২০১৫ সালে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এর (বিআরআই) অধীনে ৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সিপিইসি-র প্রথম অংশে অবকাঠামো, জ্বালানি এবং বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের উপর মনোযোগ দেওয়া হয়েছিল এবং সফরের আগে অনেক জল্পনা-কল্পনা সিপিইসি ২.০-র সম্ভাবনাকে উস্কে দিয়েছে।

দ্বিতীয় এবং আরও বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল চিন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের (সিপিইসি) দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা।

তৃতীয় উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানে কর্মরত চিনা নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়ে চিনা নেতৃত্বকে আশ্বাস প্রদান। সিপিইসি প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত চিনা প্রকৌশলীদের উপর হামলার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় পরে এই গুরুতর উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে (যা এই প্রকল্পকে স্থগিত করে দেওয়ার নিরিখে আর কটি বড় প্রতিবন্ধকতা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে) নিজের সফরের আগে শরিচিনাদের এই বলে আশ্বস্তও করেছিলেন যে, তাঁর সরকার, বিশেষ করে সামরিক বাহিনী দুর্নীতি দূকরার জন্য কাঠামোগত সংস্কার শুরু করেছে এবং চিনা শ্রমিকদের জীবনের সুরক্ষা প্রদানে সর্বতোভাবে প্রয়াস চালানো হবে। যাই হোক, সিপিইসি-কে সমস্যায় ফেলতে পারে এ হেন ক্রমাগত নিরাপত্তা উদ্বেগ মোকাবিলায় এই আশ্বাস কতটা অর্থবহ হবে তা দেখার বিষয়।

সফরের ফলাফল

সফরের পরে জারি করা ৩২ অনুচ্ছেদবিশিষ্ট যৌথ বিবৃতি জুড়ে কৃষি, শিল্প সহযোগিতা, অবকাঠামো, বাজার নিয়ন্ত্রণ, সমীক্ষা এবং মানচিত্রায়ন, গণমাধ্যম ও চলচ্চিত্রের মতো ক্ষেত্রব্যাপী ২৩টি চুক্তি এবং সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরের কথা ছাড়া আর বিশেষ কিছুই বলা হয়নি। যাই হোক, বিবৃতির অসম্পূর্ণতা নজর কাড়ার মতো। চিনেকাছে ইসলামাবাদের পাহাড়প্রমাণ ঋণের পুনর্গঠন বা সিপিইসি ২.০- জন্য উল্লেখযোগ্য নতুন বিনিয়োগ সংক্রান্ত কোন ঘোষণার কথা উল্লেখ করা হয়নি।

চিনেকাছে ইসলামাবাদের পাহাড়প্রমাণ ঋণের পুনর্গঠন বা সিপিইসি ২.০-র জন্য উল্লেখযোগ্য নতুন বিনিয়োগ সংক্রান্ত কোন ঘোষণার কথা উল্লেখ করা হয়নি।

সিপিইসি-র প্রথম ধাপে মন্থর অগ্রগতি চিনা কর্তৃপক্ষের মনে বিশ্বাসের সঞ্চার করতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রস্তাবিত ২১টি বিদ্যুৎ প্রকল্পের মধ্যে মাত্র ১৪টি সম্পন্ন হয়েছে, দুটি নির্মাণাধীন রয়েছে এবং পাঁচটির কাজ এখনও শুরু করা হয়নি। একই ভাবে, প্রস্তাবিত পরিবহণ-সম্পর্কিত ২৪টি প্রকল্পের (সড়ক ও রেল) মধ্যে মাত্র ছটি সম্পন্ন হয়েছে এবং ১৩টি প্রকল্পের কাজে কোন অগ্রগতি হয়নি। নটি প্রস্তাবিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের বা স্পেশ্যাল ইকোনমিক জোনের (এসইজেড) মধ্যে মাত্র চারটিতে সামান্য অগ্রগতি দেখা গিয়েছে, কিন্তু কোনটিই সম্পূর্ণ রূপে কর্মক্ষম নয়। প্রকল্পটি ২০২২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানে ২৫.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ আনলেও এটি দেশের ক্রমাগত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে দুর্নীতি আমলাতান্ত্রিক বিপদ সঙ্কেত সম্পর্কে চিনা উদ্বেগ-সহ ব্যাপক বাধার সম্মুখীন হয়েছে।

যৌথ বিবৃতিতে শুধু মাত্র একটি সংস্কারকৃত চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তির সম্পর্কে অস্পষ্ট ভাবে ইঙ্গিত করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে: দুই পক্ষ স্বীকার করেছে যে, সিপিইসি আসলে বিআরআই-এর একটি অগ্রণী প্রকল্প... সিপিইসি-র প্রথম দশকের সাফল্যের পর উভয় পক্ষই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সিপিইসি-উন্নত সংস্কারের জন্য তৈরি হচ্ছে... যাই হোক, প্রকাশ্যে ঘোষিত ঋণ ত্রাণ প্যাকেজের সুস্পষ্ট অভাব বা চিন থেকে উল্লেখযোগ্য নতুন বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি নিঃসন্দেহে ইসলামাবাদের জন্য একটি বড় হতাশা বলে বিবেচিত হবে।

পাকিস্তানের প্রাইম মিনিস্টার শেহবাজ শরিফ তার পাঁচ দিনের সরকারি সফরের পর প্রায় খালি হাতে ফিরে এসেছেন এবং বেজিং বিশেষ করে সিপিইসি-র পুনরুজ্জীবনের মাধ্যমে বিনিয়োগের আর কটি বড় অন্তর্প্রবাহ সম্পর্কিত ইসলামাবাদের আশায় জল ঢেলে দিয়েছে। তবে পাকিস্তান সামান্য লাভের মুখ দেখেছে। চিন করাচি এবং পেশোয়ারের মধ্যে রেলের অবকাঠামো উন্নত করতে ৬.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের মেন-লাইন- রেলওয়ে প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে। সিপিইসি-র কাজ যে আসলে এগোচ্ছে, সে কথা দর্শানোর জন্য চিনের তরফে এই বিনিয়োগকে আসলে বেজিংয়ের সামান্য প্রচেষ্টা বলে মনে হচ্ছে।

সফরের সময় শরিফ এবং জেনারেল মুনির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ব্যাপক আলোচনা চালান এবং সম্ভবত পাকিস্তানে চিনা নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। যাই হোক, ইসলামাবাদ তার সব সময়ের বন্ধুকে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে হচ্ছেকারণ চিপাকিস্তানকে যথেষ্ট আর্থিক সহায়তা দিতে আগ্রহী নয়।

এটি সম্ভবত পাকিস্তানে সিপিইসি-সম্পর্কিত প্রকল্পগুলিকে কেন্দ্র করে গুরুতর নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ এবং অর্থনৈতিক শোষণের ধারণাকেই তুলে ধরেছে।

এটি সম্ভবত পাকিস্তানে সিপিইসি-সম্পর্কিত প্রকল্পগুলিকে কেন্দ্র করে গুরুতর নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ এবং অর্থনৈতিক শোষণের ধারণাকেই তুলে ধরেছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রান্তিক বেলুচ জনগোষ্ঠীর কাছে চিনের অর্থায়নে পরিচালিত গোয়াদর বন্দর আসলে অব্যাহত অর্থনৈতিক অবিচারের প্রতীক। সিপিইসি অবকাঠামো স্থানীয় জনগণের জন্য প্রতিশ্রুত চাকরি এবং অর্থনৈতিক সুবিধা প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছে। দুই মিলিয়নেরও বেশি সিপিইসি-সম্পর্কিত চাকরির পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও আড়াই লক্ষেরও কম চাকরি বাস্তবায়িত হয়েছে। তদুপরি, পাঞ্জাব এবং সিন্ধ অঞ্চলের বিকাশকারীরা - যাঁরা বেলুচিস্তানে জমি ব্যবসা করে লাভবান হয়েছিলেন – তাঁরা প্রতিশ্রুত স্কুল, হাসপাতাল এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে ব্যর্থ হয়েছে এই অবহেলা সম্ভবত বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হিংসাত্মক প্রতিশোধের আগুনে উস্কানি দিয়েছে, যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বিদেশি বিনিয়োগকারী, বিশেষ করে চিনা নাগরিকদের নিরুৎসাহিত করেছে, যাঁরা শুধু মাত্র ২০২৪ সালে ২৪টিরও বেশি আত্মঘাতী বোমা হামলা-সহ তিনটি বড় হামলার সম্মুখীন হয়েছেন।

বেজিংয়ের জন্য আর কটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা উদ্বেগ সম্ভবত তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যে দলটি পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম উপজাতীয় অঞ্চল এবং খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে আঞ্চলিক শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তনের পাশাপাশি তাদের ইসলামিক আইনের ব্যাখ্যা কঠোর ভাবে আরোপের দাবি করেছে। টিটিপি-উপর ২০২৪ সালের মে মাসে শাংলা আত্মঘাতী বোমা হামলার পরিকল্পনার দায় চাপানো হয়েছে, যে হামলায় পাঁচ জন চিনা নাগরিক প্রাণ হারান।

উপসংহার

ফলস্বরূপ, বেজিং পাকিস্তানের দীর্ঘায়িত অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা এবং অনিশ্চিত নিরাপত্তামূলক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে দেশটিতে আরও বড় আকারের বিনিয়োগের বিষয়ে বিচক্ষণতা অবলম্বন করে সতর্ক হয়েছে। কিছু ত্রাণ আসন্ন হলেও তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য আর্থিক সহায়তা অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। শরিফের সফর আবারও দর্শিয়েছে যে, চিন পাকিস্তানকে সমান অর্থনৈতিক অংশীদার নয়, বরং ভারতের উত্থানের নিয়ন্ত্রণ ও দেশটির সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষার কাজে পাকিস্তানকে শুধু মাত্র কৌশলগত বোড়ে হিসেবেই মনে করে।

সামরিক ভাবে অনিরাপদ পরিস্থিতির মধ্যে পাকিস্তান অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার সম্মুখীন হওয়ায় কোনও পরিস্থিতিই পাকিস্তানের জন্য খুব ভাল বলে মনে হচ্ছে না। দেশের অর্থনীতির - যার মূল্য প্রায় ৩৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং প্রায় ১৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিশাল ঋণের চাপে রয়েছে – ৭২ শতাংশের বেশি ঋণ বাহ্যিক দ্বিপাক্ষিক পদ্ধতিতে চিন প্রদান করেছিল। এই সবের মধ্যে ৬-৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রেডিট লাইফলাইনের জন্য আইএমএফের সঙ্গে আলোচনাও আয়কর সংস্কার সম্পর্কিত মতবিরোধের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে। সম্ভাব্য বিপর্যয়মূলক সার্বভৌম খেলাপির ঝুঁকি এড়াতে ইসলামাবাদের এই নতুন আইএমএফ বেলআউট ঋণ সুরক্ষিত করা অত্যন্ত প্রয়োজন। তাই অর্থবর্ষ শেষ হওয়ার আগে সরকার কিছু ধরনের অর্থনৈতিক স্বস্তি পেতে আগ্রহী। চিন সাময়িক স্বস্তি দিতে পারলেও নগদ অর্থহীন পাকিস্তানের সামনে রাস্তা অবশ্যই কঠিন।

 


অনীশ পারনারকার অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, মুম্বইয়ের রিসার্চ ইন্টার্ন।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.