Published on Nov 05, 2021 Updated 0 Hours ago

কপ২৬ (‌COP26)‌ শীর্ষ বৈঠকের আগে ভারতকে নেট জিরো এমিশন–এ পৌঁছনোর যাত্রাপথ ফের সংজ্ঞায়িত করতে হবে, এবং কয়লার উপর নির্ভরতার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

গ্লাসগোয় ব্যথার শরিক হওয়ার প্রসঙ্গে

অক্টোবরের ৩১ তারিখে গ্লাসগোয় কপ২৬ (‌COP26)‌ শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তুতিপর্বে উৎসাহ টগবগ করছে, আর সেটা হওয়ারই কথা। পৃথিবীকে রক্ষা করতে হলে আমরা জানি বার্ষিক কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ কমাতে হবে ৩৪ গিগা টন (‌২০১৮)‌, যার ৩৭ শতাংশ করতে হবে বিশ্বের সেই ১৬ শতাংশ মানুষকে যাঁদের বাস উঁচু আয়ের অর্থনীতির দেশে।

এটা নিশ্চিত যে আয়ের বৈষম্য বিশ্বজনীন। ক্ষমতাধর অভিজাতশ্রেণি, যাঁরা ‘‌দ্বৈত অর্থনীতি’‌ ব্যবস্থার সুবিধাভোগী, বিশেষ করে উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে তাঁরা ‘‌ধনী বিশ্বের’‌ জীবনশৈলী ভোগ করেন। কাজেই তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না। জলবায়ু পরিবর্তনের বিপরীতযাত্রার প্রয়াসে যে ‘‌সাধারণ’‌ বিশ্বজনীন দায়িত্বের কথা বলা হয়, তার পিছনে মূল যুক্তি হল এই ব্যাপ্ত বৈষম্য। কিন্তু ‘‌পৃথকীকৃত’‌ দায়িত্বের দিকটাও দুটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, এখানে পৃথকীকরণ করা হচ্ছে যারা প্রযুক্তির সাহায্যে ফসিল শক্তি ব্যবহারের ধরন পাল্টাতে সক্ষম সেই উচ্চতর প্রাতিষ্ঠানিক ও আর্থিক ক্ষমতাসম্পন্ন ধনী বিশ্বের সঙ্গে কম–ক্ষমতাসম্পন্ন উন্নয়নশীল বিশ্বের। দ্বিতীয়ত, এর মধ্যে প্রতিফলিত হচ্ছে ‘‌জলবায়ু ন্যায়বিচার’‌, কারণ‌ যারা বিপুল কার্বন নিঃসরণের ফলে লাভবান হয়েছে, এখন তাদেরই বলা হচ্ছে উল্টো পথে গিয়ে ক্ষতি পূরণ করতে।

১৯৯৭–এ কিয়োতোতে ‘‌পৃথকীকৃত‌ দায়িত্বের’‌ প্রশ্নটি হয়ে উঠেছিল দৃশ্যতই লক্ষণীয়। কিন্তু ২০১৫–র প্যারিসের মধ্যে তা বদলে হয়ে গেল ‘‌অসংগঠিতভাবে সকলের জন্য উন্মুক্ত’‌। সেখানে সকলেই রাজি হলাম নিজের নিজের পথে চলতে, আর সেখানে তুলনামূলক হালকা একটা ব্যক্তিগত দায়িত্বভার বর্তাল যে নিজেদের অর্থনীতির সবুজায়নের জন্য কে কী করছে তা ন্যায়নিষ্ঠ ভাবে সবাই প্রকাশ্যে জানাবে। এ যেন অনেকটা সেই রকম যে ভাবে বিচ্ছেদের মুখে দম্পতি নিজেদের অতীতের দায়িত্বগুলোকে দেখে।

গত ছয় বছরে রাষ্ট্রপুঞ্জ (‌ইউএন)‌, সবুজ আন্দোলনের কর্মীরা, উদ্বিগ্ন নাগরিকেরা, এবং কিছু শিল্পগোষ্ঠী আরও মৌলিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনের কথাটা জিইয়ে রেখেছিল। এটা যে কতটা অপরিহার্য তা ষষ্ঠ আইপিসিসি রিপোর্টের জন্য তৈরি ওয়ার্কিং গ্রুপ বুঝিয়ে দিয়েছে।

গ্লাসগোয় ২৬তম কনফারেন্স অফ পার্টিজ–এর প্রস্তুতির সময় রাষ্ট্রপুঞ্জ আহ্বান জানিয়েছে যাতে সব দেশ দায়বদ্ধ হয় ২০৩০ সালের মধ্যে ২০১০ সালের থেকে বিশ্বজনীন নিঃসরণ ৪৫ শতাংশ কমাতে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.‌৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আটকে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় ব্যবস্থা নিতে, এবং ২০৫০ সালের মধ্যে নেট জিরো এমিশনের (অর্থাৎ কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ যাতে আর না–বাড়ে)‌‌ লক্ষ্যে কাজ করতে।

গ্লাসগোয় ২৬তম কনফারেন্স অফ পার্টিজএর প্রস্তুতির সময় রাষ্ট্রপুঞ্জ আহ্বান জানিয়েছে যাতে সব দেশ দায়বদ্ধ হয় ২০৩০ সালের মধ্যে ২০১০ সালের থেকে বিশ্বজনীন নিঃসরণ ৪৫ শতাংশ কমাতেতাপমাত্রা বৃদ্ধি .‌ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আটকে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতেএবং ২০৫০ সালের মধ্যে নেট জিরো এমিশনের (অর্থাৎ কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ যাতে আর নাবাড়ে)‌‌ লক্ষ্যে কাজ করতে।

গ্লাসগোয় ভারতের সামনে আছে তিনটি ইস্যু। প্রথম, আমরা কি নেট জিরো লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য কোনও তারিখ ঘোষণা করব, এবং করলে, সেই তারিখটা কী?‌ দ্বিতীয়, নেট জিরোর লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য সংজ্ঞায়িত উত্তরণপথ ঘোষণা করা হবে কি?‌ তৃতীয়, এবং এটি দ্বিতীয় প্রশ্নের সংশ্লিষ্ট, নিঃসরণ কবে চূড়ান্ত মাত্রায় পৌঁছবে তার তারিখ আমরা কি ঘোষণা করব?‌ এই শেষ প্রশ্নের অর্থ আমাদের প্রাথমিক শক্তি–উৎস হিসেবে সেই কয়লা কবে বর্জ্ন করা হবে, এ দেশে ফসিল শক্তি–উৎস হিসেবে যার প্রাচুর্য রয়েছে।

কোন পথে নেট জিরো

চিন ও ইন্দোনেশিয়া ২০৬০ সালের মধ্যে নেট জিরোয় পৌঁছনোর লক্ষ্য ঘোষণা করে উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য লক্ষ্যে পৌঁছনোর গতি নির্ধারিত করে দিয়েছে। ভারতের নিজের দায়বদ্ধতার জন্য এই সময়টাকেই চিহ্নক (মার্কার) হিসেবে ব্যবহার করা উচিত। ভারতে মাথাপিছু নিঃসরণের মাত্রা চিনের মাথাপিছু নিঃসরণের এক–তৃতীয়াংশেরও কম (‌২০১৯)।‌ কাজেই ভারতের ২০৬০–এর পরবর্তী কোনও লক্ষ্যের জন্য কাজ করাও যুক্তিসঙ্গত হবে।

চিনের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সঙ্গে তুলনায় আমরা ২০ বছর পিছিয়ে আছি। ২০২০ সালে ভারতের মাথাপিছু মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি ছিল ১,৯৬১ মার্কিন ডলার (‌২০১০–এ মার্কিন ডলারের মূল্যে), আর চিন এই জায়গায় পৌঁছেছিল ২০০১ সালে। চিনের দীর্ঘদিন–ধরে–চলা চমকপ্রদ দুই অঙ্কের বৃদ্ধির হারের ভিত্তি ছিল তার অনন্য ‘বৈশিষ্ট্যসমূহ’‌, যেখানে অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে স্থান দেওয়া হয় সাম্য, মানবাধিকার বা আইনের শাসনের উপরে। এই ঘটনা ভারত–সহ সব গণতন্ত্রের মূল ধারার বিরোধী।

১৯৯৩–২০১২ এই দু’‌‌দশক ধরে আমাদের সর্বোচ্চ গড় বার্ষিক বৃদ্ধির হার ছিল ৬.‌৫ শতাংশ (কনস্ট্যান্ট টার্মস–এ)‌। এটা সেই সময়কার ঘটনা যখন উদারীকৃত মুক্ত অর্থনীতির কাঠামোর সূচনা হয়ে গিয়েছে। আমাদের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়ে ৮ শতাংশে গেলেও চিনের ২০২০ সালে মাথাপিছু মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন যে জায়গায় ছিল সেই ৮,৪০৫ মার্কিন ডলারে (‌২০১০–এ মার্কিন ডলারের মূল্যে)‌ পৌঁছতে ভারতের ২০৪০ সাল হয়ে যাবে। চিন অতিক্রমণ ঘটাতে চার দশক সময় ধরেছে। সেই অনুযায়ী আমরা নেট জিরোয় পৌঁছনোর লক্ষ্য ধার্য করতে পারি ২০৮০।

ভারতের ব্যতিক্রমিতা

প্রশ্ন করা যেতেই পারে ইন্দোনেশিয়া — একটা বৃহৎ নিম্ন মধ্য–আয়ের দেশ যার জনসংখ্যা ২৭ কোটি ৩০ লক্ষ এবং মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণ ২০১৮ সালে ভারতের থেকে ১৯ শতাংশ বেশি ছিল — যদি নেট জিরোর জন্য লক্ষ্য ধার্য করতে পারে ২০৬০ সালকে, তা হলে ভারত তা করবে না কেন?‌ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লার উপর ইন্দোনেশিয়ার ৩০ শতাংশ নির্ভরতা তো অনেকটা ভারতের ২৮ শতাংশ ও চিনের ২০ শতাংশের মতোই।

তবে ভারত কেন অন্য রকম, তার তিনটে কারণ আছে। প্রথমত, ২০২০ সালে ইন্দোনেশিয়ার মাথাপিছু মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (‌২০১০ কনস্ট্যান্ট)‌ ৪,৩১২ মার্কিন ডলার, যা ভারতের দ্বিগুণের বেশি ও চিনের অর্ধেক। কাজেই ভারতের থেকে তাদের মাথায় উন্নয়নের চিন্তার ভার কম হওয়ার কথা। দ্বিতীয়ত, ইন্দোনেশিয়া বা চিন প্রাথমিক অভ্যন্তরীণ ফসিল শক্তির উৎস হিসেবে পুরোপুরি কয়লার উপর নির্ভরশীল নয়। ইন্দোনেশিয়া বা চিনের অনেক বেশি তৈল সম্পদ আছে — ভারতের থেকে মাথাপিছু ভিত্তিতে যথাক্রমে ২.৫ ও ৫.‌৬ গুণ বেশি। গ্যাসের ক্ষেত্রেও তাই, ভারতের থেকে যথাক্রমে ৪.‌৭ ও ৬.‌১ গুণ বেশি।

নেট জিরোর মতো সৎ অভিপ্রায়বিশিষ্ট  দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য কি কাজের?‌

প্রযুক্তি যে ভাবে অচল হয়ে যায় তার সঙ্গে তাল রেখে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা খুব কমই ২০ বছরের বেশি মেয়াদের হয়। এখনকার দিনে অচলতা আসে আরও দ্রুত, ৫ থেকে ১০ বছরে, যে সময়ের মধ্যে পুরনো মূলধনী সম্পদ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পিছিয়ে পড়ে। ভারতের দীর্ঘদিনের পরিবেশ কর্মী সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট–এর সুনীতা নারায়ণের বক্তব্য, সিদ্ধান্তের দিগন্তটা ১০ বছরের বেশি হওয়া উচিত নয়, আর মধ্যমেয়াদে নিঃসরণ হ্রাসের একটা রূপায়ণযোগ্য কৌশল এবং স্বল্পমেয়াদে সবুজ বিনিয়োগের একটা পরিকল্পনা তৈরি করার উপর গ্লাসগোয় জোর দেওয়া দরকার। দীর্ঘমেয়াদী অতিক্রমণের জন্য কম সুদের অর্থের জোগানও প্রয়োজন।

এক ন্যায়সঙ্গত অতিক্রমণ

২০৩০ সালের মধ্যে ২০১০ সালের থেকে কার্বন নিঃসরণ ৪৫ শতাংশ কমাতে ষষ্ঠ আইপিসিসি রিপোর্টে যে ভাবে সাধারণ দায়িত্বভারের কথা বলা হয়েছে, তা সব থেকে ভাল ভাবে কী করে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বণ্টন করা সম্ভব?‌ একটা ভাল উপায় হল আয়ের ভিত্তিতে, যার আসল মানে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষমতার ভিত্তিতে, দেশগুলিকে বিভিন্ন গোষ্ঠীতে ভাগ করে ‘দায়িত্বভার’‌ বণ্টন। নিঃসরণ যে হেতু মানুষের ক্রিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত, তাই হ্রাসলক্ষ্যের সাফল্য পরিমাপের জন্য মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণ একটা ভাল মাপকাঠি হতে পারে। নিচের সারণি ১ দেখুন।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে নিম্ন আয়ের দেশগুলো — যাদের জনসংখ্যার অংশভাগ ৮ শতাংশ (‌২০১৯)‌ এবং মাথাপিছু আয় ৮২১ মার্কিন ডলার (‌অ্যাটলাস পদ্ধতি) — তারা তাদের কার্বন নিঃসরণের অংশভাগ‌ ২০১০–২০১৮–র মধ্যে ২৫ শতাংশ কমিয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে বড় দেশগুলো এই গোষ্ঠীর বাইরে চলে গেছিল। ১৯৯৮—২০১৮–র মধ্যে তাদের নিঃসরণ বেড়েছিল ৭ শতাংশ।

উচ্চ আয়ের দেশগুলো — যাদের জনসংখ্যার অংশভাগ ১৬ শতাংশ এবং মাথাপিছু আয় ৪৬,০৩৬ মার্কিন ডলার — কার্বন নিঃসরণের অংশভাগ‌ ২০১০–২০১৮–র মধ্যে কমিয়েছিল ৫ শতাংশ এবং ১৯৯৮—২০১৮–র মধ্যে ২ শতাংশ।

এই সময়কালগুলোর মধ্যে উচ্চ ও নিম্ন–মধ্য আয়ের দেশগুলোর নিঃসরণ বেড়েছিল, তবে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে:‌ উচ্চ–মধ্য আয়ের দেশগুলোতে কম ও নিম্ন–মধ্য আয়ের অর্থনীতিগুলোতে বেশি। এই ভিন্নমাত্রিক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটা বিপরীতধর্মী বাস্তবতার শিক্ষা পাওয়া গেল, আর তা হল এই যে সম্ভবত অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিঃসরণ কমানোর উপযোগী, কারণ উন্নয়নের ফলে আরও ভাল প্রযুক্তির নাগাল পাওয়ার অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা ও নাগরিক প্রত্যাশা বাড়ে।

এই সময়কালগুলোর মধ্যে উচ্চ  নিম্নমধ্য আয়ের দেশগুলোর নিঃসরণ বেড়েছিলতবে ভিন্ন ভিন্নভাবে:‌ উচ্চমধ্য আয়ের দেশগুলোতে কম  নিম্নমধ্য আয়ের অর্থনীতিগুলোতে বেশি। এই ভিন্নমাত্রিক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটা বিপরীতধর্মী বাস্তবতার শিক্ষা পাওয়া গেলআর তা হল এই যে সম্ভবত অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিঃসরণ কমানোর উপযোগীকারণ উন্নয়নের ফলে আরও ভাল প্রযুক্তির নাগাল পাওয়ার অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা  নাগরিক প্রত্যাশা বাড়ে।

প্যারিসে জলবায়ু পরিববর্তনের সঙ্গে যুঝতে উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোকে বছরে ১০,০০০ কোটি মার্কিন ডলার দেওয়ার পুরণ না–হওয়া অঙ্গীকারের পেছনে এটাই ছিল যুক্তি। শর্তনির্ভর অতিরিক্ত অর্থের হস্তান্তর প্রাপককে সরাসরি সাহায্য করে। জলবায়ুর খারাপ প্রভাবের সঙ্গে লড়াই করতে গরিব বিশ্বের অভ্যন্তরীণ

আর্থিক ক্ষমতা বাড়ালে তা দাতা দেশগুলির প্রশমনের বোঝা কমাবে।

সারণি ১ দেখাচ্ছে কেন ভারতের মতো নিম্ন বা নিম্ন–মধ্য আয়ের দেশগুলো এখনই নিঃসরণ কমাতে এগিয়ে আসতে পারছে না। যদি বিশ্বের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের অংশভাগ অনুযায়ী দেখা হয়, তা হলেও এই বাড়তি অর্থনৈতিক বোঝার ফলে বৃদ্ধি অবশ্যই বাধাপ্রাপ্ত হবে। এবং তার ফলে ধনী দেশগুলোর জন্য যে ৪৫ শতাংশ হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে তা দ্বিগুণ হয়ে যাবে, বা তারও বেশি। এর বিকল্প হল মাথাপিছু নিঃসরণের সাধারণ সর্বোচ্চ সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া। এর মধ্যে লক্ষ্যপূরণের বিভিন্ন তারিখ যেমন থাকবে, তেমনই থাকবে পরিবেশবান্ধব বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগের স্বেচ্ছানিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি।

২০৩০ সালের মধ্যে অর্থনীতির শক্তি–প্রগাঢ়তা ২০০৫–এর থেকে ৩৩–৩৫ শতাংশ কমানোর জন্য ভারতের অভিপ্রেত অবদান (‌ইনটেন্ডেড ন্যাশনালি ডিটারমিন্‌ড কন্ট্রিবিউশন বা আইএনডিসি)–এর কথা‌ ঘোষণার মূলে আছে ভবিষ্যৎ সবুজ উন্নয়নের পথে এগনোর ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য সীমাবদ্ধতা। এখন এটাকে নতুন ধার্য ভিত্তিবর্ষ ২০২০ অনুযায়ী বদলে নেওয়া দরকার।

কয়লার প্রহেলিকা

ভারতে ভবিষ্যৎ কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রিত করার বিষয়টি নির্ভর করবে বেড়ে–চলা বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে কয়লার পরিবর্ত ব্যবহার করার উপর। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে ২০৪০–এর মধ্যে ভারতের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন চার গুণ হয়ে যাওয়ার কথা, এবং সেই অনুযায়ী বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ার কথা। আমাদের এটা নিশ্চিত করতে হবে যে তখন কার্বন নিঃসরণও যেন চারগুণ না হয়ে যায়, বরং তার থেকে যেন প্রতিশ্রুত হারে কম হয়। এটা করা সম্ভব হবে কয়লার ব্যবহার কমালে।

বিকল্প হিসাবে ২০৪০ পর্যন্ত কিন্তু থাকবে প্রাকৃতিক গ্যাস বা পরমাণু শক্তি। দুটোরই ভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা ও ব্যয়জনিত পরিণাম আছে। সবুজ হাইড্রোজেন বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করার জায়গায় পৌঁছলে প্রাকৃতিক গ্যাসের সঙ্গে হাইড্রোজেনের মিশ্রণ ঘটিয়ে ব্যবহার করা যাবে, কিন্তু সেটা ২০৪০–এর পরেকার কথা।

এই প্রহেলিকার শিকার ভারত একা নয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভারতের স্থান তৃতীয়, চিন ও আমেরিকার পর। ইন্দোনেশিয়া হল দশম বৃহত্তম (‌নিচের সারণি ২ দেখুন)‌। মাথাপিছু ভিত্তিতে কয়লা উৎপাদনের ক্ষমতা ভারতের থেকে চিন, আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪ গুণের বেশি, জার্মানির ৩ গুণ, জাপানের ২ গুণ ও পোল্যান্ডের ৫ গুণ। কয়লা এখনও বহুল ব্যবহৃত, এবং তা শুধু গরিব দুনিয়ায় সীমাবদ্ধ নয়।

ভারতের বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লার উপর নির্ভরতার কারণে অন্তত ২০৪০–২০৫০ পর্যন্ত দেশে নিঃসরণ বাড়তেই থাকবে, এবং তারপর শুরু হতে পারে তিন–দশক দীর্ঘ নিঃসরণ হ্রাসের পর্ব, যার শেষ হবে ২০৮০ সাল বরাবর নেট জিরো নিঃসরণে পৌঁছে।

গ্লাসগোতে

কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য একটা অ–প্রতিসম সময়সূচিই হতে পারে বিভিন্ন আয়ের অর্থনীতিগুলির জন্য একটি ন্যায্য অতিক্রমণ কৌশল। জ্বালানির আধুনিক প্রযুক্তি (সবুজ হাইড্রোজেন), কার্বন বন্দি করা ও জমিয়ে রাখা, বায়ুপ্রবাহ ও সৌরশক্তির অসমতাজনিত সমস্যা অতিক্রম করতে গিগাওয়াট স্তরের ব্যাটারি স্টোরেজ‌ এবং গ্রিড–এর সাপ্লাই অ্যানসিলিয়ারি সারভিস, উৎপাদনের দক্ষতা বাড়াতে ধাতুবিদ্যাগত‌ ‌উদ্ভাবন, এবং বাণিজ্যিক শক্তির ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন দেশের মধ্যে এবং বিভিন্ন অর্থদাতা, ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে অবাধ ও সহযোগিতামূলক গবেষণা ও উন্নয়ন।

ভারতে জন্য কোয়াড জলবায়ুগত প্রযুক্তি নেটওয়র্কের গভীরতা বাড়ানোর নতুন রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে। গ্লাসগোয় কেন্দ্রবিন্দু হতে হবে নিঃসরণ হ্রাসে ন্যায়সঙ্গত, পরিমাপযোগ্য ও পৃথকীকৃত দায়ভার স্থির করার ব্যবস্থা নিয়ে ঐকমত্য গড়ে তোলা, আর নিচের তলার পাঁচটি আয়ের গোষ্ঠীর দেশগুলির দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যবস্থা করা। বাকি কাজটা করছে প্রযুক্তি ও বিশ্বব্যাপী সরবরাহ–শৃঙ্খলের আয়তনগত প্রভাব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.