Published on Dec 16, 2024 Updated 0 Hours ago

সাম্প্রতিক বিদ্রোহ এবং রুটোর অধীনে কেনিয়া সরকারের কর্তৃত্ববাদী প্রতিক্রিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কেনিয়া কৌশল পরিবর্তন করতে প্ররোচিত করেছে।

রুটোর কেনিয়া: মার্কিন বিদেশনীতির জন্য একটি পরীক্ষা

২০২২ সালের আগস্টে উইলিয়াম রুটো কেনিয়ার নির্বাচনে জয়লাভ করে কেনিয়ার পঞ্চম প্রেসিডেন্ট হন। এটি কয়েকটি বিশিষ্ট পারিবারিক রাজবংশ দ্বারা শাসিত কেনিয়ার রাজনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন চিহ্নিত করেছিল। কেনিয়ার রাজনীতির এই আভিজাত্য-‌নির্ভরতাকে  উৎখাত করার প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে রুটো নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতিতে পরিশ্রম করে চলা দরিদ্র কেনিয়ানদের দিকে নজর রেখে একটি নীচ-‌থেকে-‌উপরের (বটম-‌আপ) অর্থনৈতিক মডেলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যা চাকরির সুযোগ সম্প্রসারিত করবে এবং দেশকে "ঋণ দাসত্ব" থেকে মুক্ত করবে।

পরের মাসগুলিতে রুটো আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেকে একজন আন্তরিক নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে গতি অর্জন করতে থাকেন। তিনি প্রকাশ্যে বিভিন্ন বৈশ্বিক ফোরামে আফ্রিকার নেতাদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করা হয় তার
সমালোচনা করেন, এবং সারা বিশ্বের নেতাদের সঙ্গে সম-‌আচরণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। তিনি আফ্রিকার ক্রমবর্ধমান আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য ব্রেটন উডস কাঠামো প্রতিস্থাপিত করে একটি নতুন আর্থিক ব্যবস্থার পক্ষে কথা বলেন

রুটোর লক্ষ্য ছিল জলবায়ু অর্থায়নে আফ্রিকার অগ্রাধিকারের পক্ষে ওকালতি করা এবং আফ্রিকার উদ্বেগগুলির দিকে আরও কার্যকরভাবে নজর দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিকে অনুরোধ করার মাধ্যমে কেনিয়ার নেতৃত্বমূলক ভূমিকাকে উন্নত করা।



আঞ্চলিক কূটনীতি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার প্রতি তাঁর দৃঢ় অঙ্গীকার ছিল। আরও, রুটোর লক্ষ্য ছিল
জলবায়ু অর্থায়নে আফ্রিকার অগ্রাধিকারের পক্ষে ওকালতি করা এবং আফ্রিকার উদ্বেগগুলির দিকে আরও কার্যকরভাবে নজর দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিকে অনুরোধ করার মাধ্যমে কেনিয়ার নেতৃত্বমূলক ভূমিকাকে উন্নত করা। ২০২৪ সালের জুনে তাঁর সরকার এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সংগ্রামরত হাইতির পুলিশকে সহায়তা করার জন্য হাইতিতে কয়েকশো পুলিশ কর্মকর্তা মোতায়েন করেছিল।

প্রাথমিকভাবে, রাজনৈতিক হিংস্রতার সঙ্গে সম্পর্কিত ইতিহাসের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রুটোর প্রতি সন্দিহান ছিল, বিশেষ করে
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত তাঁকে বিতর্কিত ২০০৭ সালের নির্বাচনের পরে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করার প্রেক্ষিতে। যাই হোক, সাহেলে মার্কিন প্রভাব হ্রাস পাওয়ার পর যেখানে অনেক আফ্রিকান দেশ আফ্রিকাজুড়ে ক্রমবর্ধমানভাবে উপস্থিত রাশিয়া ও চিনের দিকে ঝুঁকছে, সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রুটোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চেয়েছিল। রুটোকে একজন সম্ভাব্য মিত্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে ২০২৩ সালের মে মাসে রাষ্ট্রীয় সফরে আমন্ত্রণ জানায়, যা তাঁকে দুই দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে প্রথম কেনিয়ার নেতা হিসেবে আমেরিকায় রাষ্ট্রীয় সফরে নিয়ে যায়। উপরন্তু, মার্কিন সরকার কেনিয়াকে সাব-সাহারান আফ্রিকায় তার প্রথম প্রধান নন-ন্যাটো মিত্র হিসাবেও মনোনীত করে। এই বিরল সম্মানের সঙ্গে কেনিয়া মার্কিন বিদেশনীতিতে অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের  মতো একই মর্যাদাভুক্ত হয়েছিল।

তবে কয়েক মাসের মধ্যে পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে রুটো প্রশাসন নতুন করের মাধ্যমে ৪.৫ ট্রিলিয়ন কেনিয়ান শিলিং বা প্রায় ৩১.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তোলার পরিকল্পনা ঘোষণা করে। যেহেতু তিনি
জ্বালানিতে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করেছিলেন, যা দামে ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটাবে, তাই এই পদক্ষেপটি কেনিয়ার জনগণের ব্যাপক বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছিল। তিনি আরও ঘোষণা করেন একজন শ্রমিকের মাসিক বেতনের ১.৫ শতাংশ হাউজিং লেভি ধার্য হবে, এবং ডিজিটাল সামগ্রীর নির্মাতা ও প্রভাববিস্তারকারীদের উপর তাদের উপার্জনের ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কর বৃদ্ধি করা হবে।


পরিস্থিতি ২৫ জুন ঘোরতর হয়ে ওঠে, যখন বিক্ষোভকারীরা নাইরোবিতে কেনিয়ার ন্যাশনাল পার্লামেন্ট ভবনে হামলা চালায়, যা জনগণের আক্রোশের একটি সহিংস চূড়ান্ত পরিণতি চিহ্নিত করে।



এই ঘোষণায় দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ১৮ জুন থেকে বিতর্কিত ২০২৪ ফিনান্স বিলের প্রতিবাদে হাজার হাজার, প্রধানত জেনজেড, বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে আসেন। বিক্ষোভের তীব্রতা দেখে অনেকেই এই প্রতিবাদকে
সাব-সাহারান 'আফ্রিকার বসন্ত' বলে অভিহিত করেন। যাই হোক, বিক্ষোভকারীদের দাবিগুলি দ্রুত প্রসারিত হতে থাকে, এবং সরকারকে বৈষম্য, দুর্নীতি ও অভিজাত রাজনীতি মোকাবিলার আহ্বান জানাতে থাকে। পরিস্থিতি ২৫ জুন ঘোরতর হয়ে ওঠে, যখন বিক্ষোভকারীরা নাইরোবিতে কেনিয়ার ন্যাশনাল পার্লামেন্ট ভবনে হামলা চালায়, যা জনগণের আক্রোশের একটি সহিংস চূড়ান্ত পরিণতি চিহ্নিত করে। বিক্ষোভকারীরা সুপ্রিম কোর্টের বাইরে যানবাহন জ্বালিয়ে দেয় এবং গভর্নরের অফিসে আগুন দেয়।

আলোচনার পরিবর্তে, রুটোর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল বিক্ষোভকারীদের নিন্দা করা। তাঁর সরকার
সারা দেশে ইন্টারনেট সুযোগ সীমিত করে দিয়ে, এবং নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করে টিয়ার গ্যাস ছুঁড়ে, জল কামান ব্যবহার করে, এবং শেষ পর্যন্ত বিক্ষোভকারীদের উপর লাইভ রাউন্ড গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে। মানবাধিকার সংগঠনগুলি তখন থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত নির্বিচার গ্রেপ্তার এবং কর্মীদের গুম করার অভিযোগ এনেছে

যাই হোক, অবশেষে রুটো
চাপের কাছে নতিস্বীকার করে তাঁর বিতর্কিত অর্থ বিল বাতিল করতে এবং মন্ত্রিসভা ভেঙে দিতে সম্মত হন। তা সত্ত্বেও, কেনিয়ার প্রেসিডেন্টের প্রতিক্রিয়া একদিকে অনলাইনে বক্তব্য শোনার মাধ্যমে প্রতিবাদকারীদের স্থান দেওয়া, এবং অন্যদিকে জনগণের অসন্তোষ প্রকাশ করার অধিকার সীমাবদ্ধ করার চেষ্টার পাশাপাশি তাঁর রাজনৈতিক সমস্যার জন্য বিরোধী দলকে দোষারোপ করার মধ্যে ওঠানামা করতে থাকে। তার উপর বরখাস্তের কয়েকদিন পর বিশ্বাসযোগ্যতা হারানো মন্ত্রীদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে পুনরায় নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত তাঁকে মোটেই সাহায্য করেনি।

যদিও বিক্ষোভকারীরা রাষ্ট্রের দমনমূলক প্রতিক্রিয়ার একটি বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত দাবি করেছিল, কেউ কেউ এমনকি
রুটোর পদত্যাগের দাবিও জানিয়েছে। প্রতিক্রিয়া হিসাবে, রুটো রাজনৈতিক অভিজাতদের একটি জোট গঠন করার চেষ্টা করেন, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগুলিকে কাছে টেনে নেন, এবং সংগঠক ও অংশগ্রহণকারীদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করেন। অর্থাৎ, তাঁর প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসাবে প্রচারের সময় তিনি যে বিষয়গুলির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন, ঠিক সেই কাজগুলিই রুটো করতে শুরু করেন।


মানবাধিকার সংগঠনগুলি তখন থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত নির্বিচার গ্রেপ্তার এবং কর্মীদের গুম করার অভিযোগ এনেছে।



এই অভ্যুত্থান এবং কেনিয়ার সরকারের দুর্বলতা ও অসঙ্গতিপূর্ণ কর্তৃত্ববাদী প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তার কেনিয়া-কৌশল পরিবর্তন করতে প্ররোচিত করেছে। তবুও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মহাদেশে তার উপস্থিতি বাড়াতে চাইছে, এবং কেনিয়া সম্ভবত সবচেয়ে প্রয়োজনীয় মিত্র যাকে ওয়াশিংটনের পাশে রাখা প্রয়োজন। প্রকৃতপক্ষে, কেনিয়া অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা দ্বারা চিহ্নিত একটি অস্থির পূর্ব আফ্রিকায় শান্তির ঘাঁটি হিসাবে নিজেকে বজায় রেখেছে। কেনিয়ার জনগণ একটি পরিপক্ব গণতন্ত্রে অভ্যস্ত, যা মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং আইনের শাসনকে সম্মান করে। উপরন্তু, কেনিয়া আঞ্চলিক সংঘাত মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ভূমিকা পালন করে এবং প্রায়শই আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা প্রচেষ্টায় অবদান রাখে। এইভাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কেনিয়ার মধ্যে অংশীদারি ক্রমবর্ধমানভাবে অপরিহার্য হয়ে ওঠে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন একটি সংশয়ের মুখোমুখি: রুটোকে তাঁর ক্রমবর্ধমান অনিয়মিত নীতি এবং স্বৈরাচারী আচরণ সত্ত্বেও সমর্থন করে যাওয়া হবে, নাকি তাঁর থেকে দূরত্ব তৈরি করা হবে? রুটোকে সমর্থন করা কেনিয়ার জনসাধারণের কাছে ভুল বার্তা পাঠাতে পারে, যারা তাঁকে পশ্চিমপন্থী এবং কেনিয়া-‌বিরোধী হিসাবে দেখতে পারেন। নেতার বিরুদ্ধে তাঁদের অসন্তোষ সহজেই যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতায় রূপান্তরিত হতে পারে। এদিকে চিন, এই অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়, কোনও নির্ণায়ক পদক্ষেপ করার আগে ঘটনাবলি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।


কেনিয়া আঞ্চলিক সংঘাত মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ভূমিকা পালন করে এবং প্রায়শই আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা প্রচেষ্টায় অবদান রাখে।



সামনের দিনে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেনিয়াকে একটি
সার্বভৌম ঋণ নিশ্চয়তা সরবরাহ করার কথা ভাবতে পারে, যা দেশটিকে কম সুদে পুঁজিবাজারে প্রবেশ করতে সক্ষম করবে। এই আর্থিক সহায়তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুনাম বাড়াতে পারে, এবং কিছু সদিচ্ছা অর্জন করতে পারে। এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কোভিড-১৯ অতিমারি চলাকালীন ভ্যাকসিন বর্ণবাদের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছিল।

উপরন্তু, কেনিয়ার শক্তিশালী ও স্থিতিস্থাপক নাগরিক সমাজের সঙ্গে সহযোগিতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রচারের জন্য অপরিহার্য। ক্রমবর্ধমান হিংস্রতা এবং উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের আহ্বানের মধ্যে এই বিক্ষোভের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। যাই হোক, তরুণ বিক্ষোভকারীদের আকাঙক্ষার সঙ্গে মার্কিন প্রচেষ্টাকে সারিবদ্ধ করা হলে তা কেনিয়ার যুবকদের মধ্যে আমেরিকার ভাবমূর্তিকে আরও উন্নত করতে পারে। 

যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তরুণ ও শহুরে কেনিয়ানদের মধ্যে নিজের অনুকূল ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়, তবে অন্য আফ্রিকান দেশগুলির সঙ্গে তার কার্যকর অংশীদারির ক্ষমতা বিপন্ন হতে পারে। আফ্রিকাকে জয় করার জন্য মার্কিন পথ রুটোর কেনিয়ার মধ্য দিয়ে যায় বলে মনে হচ্ছে।



সমীর ভট্টাচার্য অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন অ্যাসোসিয়েট ফেলো

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Samir Bhattacharya

Samir Bhattacharya

Samir Bhattacharya is an Associate Fellow at ORF where he works on geopolitics with particular reference to Africa in the changing global order. He has a ...

Read More +