-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
বাংলাদেশে উদীয়মান ‘ভারত-বিরোধী’ মনোভাবের বিশ্বাসযোগ্যতা নিরীক্ষণ করা প্রয়োজন। কারণ সোশ্যাল মিডিয়ায় চিত্রিত উদাহরণের তুলনায় বাস্তব এক ভিন্ন আখ্যানকেই দর্শায়।
রমজান উদ্যাপনের সময় কলকাতার বাজারগুলি প্রাক্-উত্সব কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতাদের ভিড়ে জমজমাট ছিল। তবুও দোকানদারদের সঙ্গে দর কষাকষি কিংবা ট্যাক্সিচালকদের সঙ্গে সাবলীল বাংলায় ভাড়া নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত সকল ক্রেতাই যে স্থানীয় ছিলেন, এমনটা নয়। প্রকৃতপক্ষে, এক দিকে যখন শহরের নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বিমানবন্দর প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে আগত মানুষদের পরিষেবা প্রদানে ব্যস্ত ছিল, তখন অন্য দিকে ঢাকা ও খুলনা থেকে আসা মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং বন্ধন এক্সপ্রেসের আগমনের দরুন চিৎপুর স্টেশনও ছিল জমজমাট। এই প্রাণবন্ত দৃশ্যগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওগুলির তুলনায় সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র তুলে ধরে। কারণ সোশ্যাল মিডিয়ার চিত্রগুলিতে দেখা গিয়েছে যে, ঢাকার দোকানদাররা ‘বয়কট ইন্ডিয়ান প্রোডাক্টস’ এবং ‘ইন্ডিয়া আউট’ স্লোগান তুলে ভারতীয় পণ্য বিক্রি করতে অস্বীকার করছেন। তাঁদের মূলত প্রতিবাদ ছিল বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের কথিত হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পঞ্চম মেয়াদে ক্ষমতায় পুনর্বহাল করেছে। এই আবেগ বিরোধী দল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির (বিএনপি) আখ্যানের আবেগকেও প্রতিধ্বনিত করে, যা ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর থেকে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়েছে। সুতরাং বাংলাদেশে ‘ভারত-বিরোধী’ আবেগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা প্রয়োজন এবং খতিয়ে দেখা দরকার যে পারস্পরিক নির্ভরতা আদৌ কমিয়ে আনা সম্ভব কি না।
প্রকৃতপক্ষে, এক দিকে যখন শহরের নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বিমানবন্দর প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে আগত মানুষদের পরিষেবা প্রদানে ব্যস্ত ছিল, তখন অন্য দিকে ঢাকা ও খুলনা থেকে আসা মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং বন্ধন এক্সপ্রেসের আগমনের দরুন চিৎপুর স্টেশনও ছিল জমজমাট।
বিএনপির আখ্যান ও চিনা উস্কানি
বিএনপি ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারের সমর্থনে সরব হয়েছে, যাকে তারা বাংলাদেশের জনগণের কাছ থেকে উদ্ভূত এক সাধারণ প্রতিবাদ বলে অভিহিত করেছে। দলের সিনিয়র জয়েন্ট সেক্রেটারি রুহুল কবির রিজভি বলেন, গত ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লিগ সরকার বাংলাদেশের নাগরিকদের ভোটে নয়, ভারতের সাহায্য ও সমর্থনে অবৈধ ভাবে ক্ষমতায় ফিরে আসছে। দেখা গিয়েছে, রিজভি ভারত থেকে নিয়ে আসা তাঁর কাশ্মীরি শাল রাস্তায় ছুড়ে ফেলছেন এবং তার পরে বাংলাদেশি মহিলাদের ভারতীয় শাড়ি বর্জন করার আহ্বান জানাচ্ছেন। বিএনপি-র প্রচারাভিযানটি মলদ্বীপের ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ, যা ২০২৩ সালে মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর নেতৃত্বাধীন প্রোগ্রেসিভ পার্টি দ্বারা শুরু হয়েছিল। এ হেন প্রচারের মূল দাবি ছিল, ভারতের লক্ষ্য হল মালের নিকটবর্তী উথুরুথিলাফালহু দ্বীপে নির্মিত সামরিক ঘাঁটি ব্যবহার করে মলদ্বীপের স্বায়ত্তশাসন হ্রাস করা। মুইজ্জুকে চিনের ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা হয় এবং তাঁর নির্বাচনী কর্মসূচিতে তিনি ‘ড্রাগন’ বা চিনের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্কের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
মলদ্বীপের মতো বাংলাদেশেও চিন বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগ করেছে। চিন বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার, বৈদেশিক সাহায্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস এবং সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের তৃতীয় বৃহত্তম উৎস। যাই হোক, আওয়ামী লিগ সরকার সবসময়ই ভারত ও চিনের সাথে তার সম্পর্কের ক্ষেত্রে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রেখেছে, যা চিনপন্থী বিএনপি-র বিপরীত। সুতরাং, এ কথা আশ্চর্যের কিছু নয় যে, বিএনপি শেখ হাসিনার সরকারকে সমর্থন করার জন্য ভারতের তীব্র সমালোচনা করলেও একই সরকারকে চিনের সমর্থনের প্রসঙ্গে নীরব থেকেছে। প্রকৃতপক্ষে, প্রাক্-নির্বাচনের পরিস্থিতিতে, চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঘোষণা করেছিলেন যে, চিন বাইরের চাপ প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে থাকবে। নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে চিনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এবং বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী হাসান মাহমুদের মধ্যে আলোচনার সময়ে বেজিং আওয়ামী লিগের প্রতি তাঁর সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। যাই হোক, ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্প্রীতির ইতিহাস নেই এবং আওয়ামী লিগের কঠোর সমালোচনামূলক বাগাড়ম্বরের মধ্যে অন্যতম হল এই যে, তারা ‘বাংলাদেশকে ভারতের উপগ্রহে পরিণত করেছে।’ তবুও ভারতের উপর বাংলাদেশের নির্ভরতা অস্বীকার করা যায় না।
পারস্পরিক নির্ভরতা
ভারত এবং বাংলাদেশ ভৌগোলিক ভাবে সংলগ্ন অঞ্চল ভাগ করে নেয় এবং এই ভাবে উভয় দেশের মধ্যে একটি স্বাভাবিক পারস্পরিক নির্ভরতা রয়েছে, যা অভিন্ন সম্পদ ভাগ করে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাকেই দর্শায়। এফডিআই-এর বাংলাদেশের শীর্ষ ১০টি উৎসের মধ্যে ভারত রয়েছে; ভারত অ-সহায়তা গোষ্ঠীর দেশগুলি থেকে দ্বিপাক্ষিক বৈদেশিক সহায়তার তৃতীয় বৃহত্তম অবদানকারী; এবং বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার। বাংলাদেশে ভারতীয় রফতানির পণ্য তালিকার দিকে নজর রাখলে দেখা যাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রয়েছে। যেমন মাছ, মাংস, দুগ্ধজাত দ্রব্য, শাকসবজি, ফলমূল, পানীয়, শস্য, তৈলবীজ, চিনি, সাবান, কাগজ, সিল্ক, উল, তুলো এবং আসবাবপত্রের মতো অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ও অভিন্ন সাধারণ সাংস্কৃতিক-ভাষাগত সম্পর্ক এবং সুলভ মূল্যে ভারতের চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের ক্ষমতা বাংলাদেশিদের ভ্রমণ ও চিকিৎসাকে সহজতর করেছে।
ভারতও বাংলাদেশের মেডিক্যাল ট্যুরিজমের একটি প্রাথমিক গন্তব্য এবং এ হেন প্রায় ৫৪ শতাংশ আগমনকারী বাংলাদেশি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ও অভিন্ন সাধারণ সাংস্কৃতিক-ভাষাগত সম্পর্ক এবং সুলভমূল্যে ভারতের চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের ক্ষমতা বাংলাদেশিদের ভ্রমণ ও চিকিৎসাকে সহজতর করেছে। যেহেতু ভারতের উপর বাংলাদেশের নির্ভরতা তার কল্যাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাই ভারতবিরোধী প্রচার বিরোধীদের রাজনৈতিক কর্মসূচি হওয়া ছাড়া অন্য কোনও অভিজ্ঞতামূলক মূল্য বহন করে না।
প্রধানমন্ত্রী হাসিনা সঠিক ভাবেই এই বয়কট প্রচারে সঠিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ঘটনাচক্রে তিনি বলেছেন যে, তিনি শুধুমাত্র বিরোধীদের ভারতীয় পণ্য থেকে বিরত থাকার ইচ্ছায় বিশ্বাস করবেন যদি সেই বিরোধী দলের নেতারা নিজের স্ত্রীর ভারতীয় শাড়ি পুড়িয়ে দেন এবং রান্নাঘরে ভারতীয় মশলা ব্যবহার করতে অস্বীকার করেন। ভারত সরকারের পক্ষে বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন যে, ‘ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী... আমাদের মধ্যে এক ব্যাপক অংশীদারিত্ব রয়েছে যা অর্থনীতি থেকে শুরু করে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, উন্নয়ন, সহযোগিতা, সংযোগ, এবং মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কে জড়িয়ে। যে কোনও মানবিক উদ্যোগের কথাই উল্লেখ করা হোক না কেন, তা ভারত ও বাংলাদেশ সম্পর্কের অংশ… এ ভাবেই এই অংশীদারিত্ব এতটাই প্রাণবন্ত এবং আগামিদিনেও তা অব্যাহত থাকবে।’ তা সত্ত্বেও, কিছু ভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী ‘ভারত-বিরোধী’ বিষয়বস্তু দ্বারা প্ররোচিত হয়েছেন, যা দুই দেশের জনগণের মধ্যে আস্থার পুনঃনির্মাণের প্রয়োজনীয়তাকেই দর্শায়।
যুব সংযোগ তৈরি করা
অতিমারি-পরবর্তী যুগে ভারত এবং বাংলাদেশ ডিজিটাল পরিসরে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সকল মনোযোগের কেন্দ্রে থাকবে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি। উভয় দেশের জনগোষ্ঠীর কিছু অংশের মধ্যে বিদ্যমান বিদ্বেষ নিরসনের জন্য যুব সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন, যারা উভয় দেশের ভবিষ্যতের প্রতিনিধি। এমনটা করার জন্য সুনিপুণ যৌথ উদ্যোগের প্রয়োজন যা তাদের অভিন্ন সাধারণ সাংস্কৃতিক, ভাষাগত এবং জাতিগত ঐতিহ্যের উপর জোর দেবে।
এ ছাড়াও দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ঐতিহাসিক মাইলফলকগুলির উদ্যাপন এবং স্মরণ অপরিহার্য। যেমন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন এবং বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে বন্ধুত্ব। সংহতির এই স্মৃতি দু’টি দেশের মধ্যে গভীরে প্রোথিত মূল সম্পর্কের শক্তিশালী অনুস্মারক হিসেবে কাজ করে।
প্রধানমন্ত্রী হাসিনা এই ভাবে এই বয়কট প্রচারে সঠিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ঘটনাচক্রে তিনি বলেছেন যে, তিনি শুধুমাত্র বিরোধীদের ভারতীয় পণ্য থেকে বিরত থাকার ইচ্ছায় বিশ্বাস করবেন যদি সেই বিরোধী দলের নেতারা নিজের স্ত্রীর ভারতীয় শাড়ি পুড়িয়ে দেন এবং রান্নাঘরে ভারতীয় মশলা ব্যবহার করতে অস্বীকার করেন।
সাম্প্রতিক অতিমারির অভিজ্ঞতা – ‘ভ্যাকসিন মৈত্রী’ উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে ভারতের উল্লেখযোগ্য টিকা সরবরাহ এবং কোভিড-১৯-এর দ্বিতীয় প্রবাহের সময়ে রেমডেসিভির ডোজ এবং পিপিই কিট দিয়ে ভারতকে ঢাকার দ্রুত সহায়তা - পারস্পরিক ভাবে পাশে থাকার প্রয়োজনীয়তাকেই আরও জোরদার করে। এ কথা জরুরি, যেহেতু যুব প্রজন্ম বেশির ভাগই সোশ্যাল মিডিয়ার সক্রিয় ব্যবহারকারী, তাই এই ধরনের বিনিময় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলিতে করা উচিত। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রবেশাধিকার এবং পরিসরকে কাজে লাগিয়ে এই প্রচেষ্টাগুলি শুধুমাত্র নাগরিকদের মধ্যে বৃহত্তর বোঝাপড়া ও সহানুভূতিকেই শক্তিশালী করবে না, বরং একই সঙ্গে সংহতিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
সোহিনী বোস অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
অনসূয়া বসু রায়চৌধুরী অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Sohini Bose is an Associate Fellow at Observer Research Foundation (ORF), Kolkata with the Strategic Studies Programme. Her area of research is India’s eastern maritime ...
Read More +Anasua Basu Ray Chaudhury is Senior Fellow with ORF’s Neighbourhood Initiative. She is the Editor, ORF Bangla. She specialises in regional and sub-regional cooperation in ...
Read More +