Author : Hari Bansh Jha

Published on Feb 03, 2023 Updated 0 Hours ago

নেপাল আরেকটি রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে থাকায় দহল প্রশাসনের সামনে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে

নেপালের আকাশে লাল তারা

২০১৫ সালে নেপালের সংবিধান কার্যকর হওয়ার পর নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি (এনসিপি) ২০১৭ সালের নির্বাচনে ফেডারেল পার্লামেন্টে দুই–তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল, এবং কেন্দ্রীয় স্তরে সরকার গড়ার পাশাপাশি দেশের সাতটি প্রদেশের মধ্যে ছয়টিতে ক্ষমতা দখল করে। কিন্তু দলের অভ্যন্তরে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে দলটি তিনটি উপদলে বিভক্ত হয়ে যায়, যা ১৩ জুলাই ২০২১–এ শের বাহাদুর দেউবার প্রধানমন্ত্রিত্বে নেপালি কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট সরকার গঠনের পথ প্রশস্ত করে। জনতা সমাজবাদী পার্টি (জেএসপি) ও সংযুক্ত জনমোর্চা ছাড়াও এনসিপি–র দুটি বিভক্ত উপদল মাওবাদী কেন্দ্র (সিপিএন–এমসি) ও কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল–ইউনিফাইড সোশ্যালিস্ট (সিপিএন–ইউএস) দেউবা সরকারে যোগ দেয়।

৭৮টি আসন নিয়ে নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি–ইউনিফাইড মার্কসবাদী–লেনিনবাদী (সিপিএন–ইউএমএল) দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসাবে উঠে এসেছে, আর ৩২টি আসন নিয়ে সিপিএন–এমসি হয়েছে তৃতীয় বৃহত্তম দল।

পরবর্তী কালে ২০ নভেম্বর ২০২২–এ ফেডারেল পার্লামেন্ট ও প্রাদেশিক অ্যাসেম্বলির নির্বাচনে নেপাল পার্লামেন্টের ২৭৫ সদস্যের হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস (এইচওআর)–এ ৮৯টি আসন পেয়ে একক বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হয় নেপালি কংগ্রেস। ৭৮টি আসন নিয়ে নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি–ইউনিফাইড মার্কসিস্ট–লেনিনিস্ট (সিপিএন–ইউএমএল) দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসাবে উঠে এসেছে, আর ৩২টি আসন নিয়ে সিপিএন–এমসি হয়েছে তৃতীয় বৃহত্তম দল। ২০টি আসন লাভ করে নবগঠিত রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র পার্টি চতুর্থ বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। এরপরে আছে রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি (১৪টি আসন), জনতা সমাজবাদী পার্টি (১২টি আসন), সিপিএন-ইউএস (১০টি আসন), ও জনমত পার্টি (৬টি আসন), লোকতান্ত্রিক সমাজবাদী পার্টি (৪টি আসন) এবং নাগরিক উন্মুক্তি পার্টি (৩টি আসন)। যেহেতু শের বাহাদুর দেউবার নেপালি কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোটের সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যার চেয়ে মাত্র দুটি আসন কম ছিল, তাই তারা ছোট দলগুলির সমর্থন নিয়ে কেন্দ্রে এবং তার পাশাপাশি দেশের সাতটি প্রদেশে সরকার গঠনের জন্য তৈরি হচ্ছিল।

নেপালে ক্ষমতার লড়াই

তারপর একটি নাটকীয় পট পরিবর্তনে ক্ষমতার খেলা উল্টে গেল। শেষ সময় পর্যন্ত এমনকি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবারও ধারণা ছিল না যে তাঁর ক্ষমতাসীন জোটের অংশীদার সিপিএন–এমসি নেতা পুষ্প কমল দহল (৬৮) তাঁর স্থলাভিষিক্ত হবেন এবং ২০২২ সালের ২৬ ডিসেম্বর শীতল নিবাসে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে নেপালের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন।

দহল দাবি করেছেন তিনি সিপিএন–ইউএমএল (৭৮ আসন), সিপিএন–এমসি (৩২ আসন), রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র পার্টি (২০ আসন), রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি (১৪ আসন), জনতা সমাজবাদী পার্টি (১২ আসন), জনমত পার্টি (৬ আসন) এবং নাগরিক উন্মুক্তি পার্টি (৩ আসন)–সহ পার্লামেন্টের ১৬৯ জন সদস্যের সমর্থন পেয়েছেন। শপথ নেওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী দহল পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করেছেন।

দহলকে অভিনন্দন জানানোর সময় কাঠমান্ডুতে মার্কিন দূতাবাস বলেছে যে নেপালের সঙ্গে তার দৃঢ় ও দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত।

দহল প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কাঠমান্ডুর চিনা দূতাবাস তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছে। একইভাবে দহলকে অভিনন্দন জানানোর সময় কাঠমান্ডুতে মার্কিন দূতাবাস বলেছে যে নেপালের সঙ্গে তার দৃঢ় ও দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত।

তাঁর পূর্বসূরি দেউবার বিপরীতে, যিনি আমেরিকাপন্থী ও ভারতপন্থী, দহলকে চিনপন্থী হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তিনি ১৯৯৬ ও ২০০৬–এর মধ্যে দেশে মাওবাদী বিদ্রোহ শুরু করেছিলেন। পরে তিনি মূলধারার রাজনীতিতে যোগ দেন এবং ২০০৮ সালে কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলির নির্বাচনে তাঁর মাওবাদী দল বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। এবার ২০২২ সালে তিনি তৃতীয় বারের মতো নেপালের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। এর আগে তিনি ২০০৮ ও ২০১৬ সালে এই পদে ছিলেন।

পি কে দহল সরকারের অস্তিত্ব নির্ভরশীল সিপিএন–ইউএমএল নেতা কে পি শর্মা ওলির উপর, যিনি ২০১৮–২০২১ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ভারতের  সঙ্গে সীমান্তে ভূখণ্ডগত বিরোধ তৈরি করেছিলেন। তিনি ২০১৫–১৬ সালে এবং পরে ২০১৭ সালের নির্বাচনের সময় ভারতকে অর্থনৈতিক অবরোধের জন্য কঠোরভাবে অভিযুক্ত করেছিলেন। ২০০৮ সালে তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় ভারতে যাওয়ার আগে প্রথমে চিন সফর করার রেকর্ডের অধিকারী পি কে দহলকে নিয়ে জোরদার জল্পনা রয়েছে যে তিনি নেপালের উত্তরের প্রতিবেশীর দিকে ঝুঁকবেন।

এনসিপি–র বিভক্ত উপদল সিপিএন–ইউএস, যা এখনও নেপালি কংগ্রেসের সঙ্গে রয়েছে, তারা সম্ভবত মাওবাদী নেতা পি কে দহলের নেতৃত্বাধীন সরকারে যোগ দেবে। এই ধরনের কিছু ঘটনাপ্রবাহের ফলে কমিউনিস্টরা ছোট দলগুলির সমর্থনে দেশের সাতটি প্রদেশের সব কটিতেই ক্ষমতা দখল করতে পারে। তারা তাদের দলীয় নেতাদের মধ্যে থেকে প্রেসিডেন্ট, ভাইস-প্রেসিডেন্ট, স্পিকার, গভর্নর ও প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীদের নির্বাচিত করাতে পারবে। আগামী দিনে এ ধরনের ঘটনা তাদের দেশের রাজনীতির উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে সক্ষম করতে পারে।

এই ধরনের কিছু ঘটনাপ্রবাহের ফলে কমিউনিস্টরা ছোট দলগুলির সমর্থনে দেশের সাতটি প্রদেশের সব কটিতেই ক্ষমতা দখল করতে পারে।

পি কে দহলের নেপালি কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট ত্যাগ করার কারণ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা তাঁকে প্রথম আড়াই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। সিপিএন–ইউএমএল–এর বিরোধী জোটের নেতা কে পি শর্মা ওলি তাঁর দাবি মেনে নিলে তাঁর উদ্দেশ্য পূরণ হয়। দুই নেতার মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী দহল প্রথম আড়াই বছরের জন্য নেপালের প্রধানমন্ত্রী হবেন, এরপর কে পি শর্মাকে বাকি আড়াই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী করা হবে।

এর আগে, ২০১৭ সালে, ফেডারেল পার্লামেন্টের নির্বাচনের পরে কে পি শর্মা ওলি ও পুষ্প কমল দহলের মধ্যে একই রকম একটি চুক্তি হয়েছিল, যেখানে ওলি প্রথম আড়াই বছরের জন্য এবং দহল তার পরের আড়াই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী হবেন বলে কথা হয়েছিল।  কিন্তু ওলি তা থেকে পিছিয়ে যান এবং মেয়াদের পরেও প্রধানমন্ত্রীর পদ ধরে রাখেন। এটি ছিল দুই নেতার মধ্যে দ্বন্দ্বের প্রধান কারণ, যা তাঁকে এবং তাঁর সহকর্মী মাধব কুমার নেপালকে ওলির সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটাতে এবং ১৩ জুলাই ২০২১ –এ নেপালি কংগ্রেসের শের বাহাদুর দেউবার নেতৃত্বে সরকার গঠনে বাধ্য  করেছিল।

এই নেতাদের অধিকাংশের ক্ষমতার প্রতি চরম লালসা এবং ক্ষমতার খেলায় তাঁদের দক্ষতার কারণে বেশিরভাগ সরকারই গড়ে এক বছরের বেশি সময় টিকে থাকে না। ১৬ বছরে নেপালে ১৩ জন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।

পি কে দহলের নেপালি কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট ত্যাগ করার কারণ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা তাঁকে প্রথম আড়াই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

সামনে কী আছে

সামনের দিনগুলো দহলের জন্য কঠিন। তিনি তাঁর সাবেক চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ওলির অহংবোধ সন্তুষ্ট করতে পারবেন কি না সন্দেহ। এ নিয়েও সংশয় রয়েছে যে তাঁর সরকারে যোগদানকারী প্রান্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যাশা তিনি পূরণ করতে পারবেন কি না, কারণ তারা এমন কিছু শর্ত রেখেছে যা পূরণ করা সহজ নয়। ব্যাপক দুর্নীতি, বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতি, বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় হ্রাস এবং লিকুইডিটি সংকটও এমন কিছু বিষয় যা তাঁর সরকার উপেক্ষা করতে পারবে না। আরও গুরুত্বপূর্ণ, চাইনিজ বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এবং আমেরিকান মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশন (এমসিসি) বাস্তবায়নে ভারসাম্য আনা, এবং ভারত ও চিনের সঙ্গে সম্পর্কের পুনর্বিন্যাসও কম চ্যালেঞ্জিং নয়।

যেহেতু দহলের বহুদলীয় জোট সরকার একটি বিভক্ত রাজনৈতিক ব্যবস্থা, তাই নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা বেশি। ক্ষমতায় তাঁর টিকে থাকা নির্ভর করবে শুধু সিপিএন–ইউএমএল–এর সমর্থনের উপরেই নয়, ছোট দলগুলোর উপরেও। নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে দেশে তাঁর জনপ্রিয়তা কমছে। এদিকে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল নেপালি কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার লোভ ছাড়তে পারেনি। এই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, যার উপর তাঁর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই, যে কোনও সময় দহল সরকারের পতন ঘটতে পারে, এবং দেশ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় ডুবে যেতে পারে, যা ভবিষ্যতে দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.