Published on Oct 30, 2021 Updated 0 Hours ago

এস ডি জি ৪ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শিক্ষানীতির অগ্রাধিকার নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সংস্থানের পক্ষে সওয়াল তোলা এই দেশগুলির তরফে এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হতে পারে।

এস ডি জি ৪ বা সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস ৪ অর্থাৎ ‘সকলের জন্য উন্নত মানের শিক্ষাব্যবস্থা’র লক্ষ্য পূরণে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের ক্ষেত্রে জি২০ সম্মেলনের সম্ভাব্য ভূমিকা

২০২০ সালের এপ্রিল মাসের শেষ দিকে পৃথিবী জুড়ে দেশ নির্বিশেষে স্কুল বন্ধ থাকার ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করা যায়, যা নিঃসন্দেহে আধুনিক সময়ের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ঘটনা। ১৯০টি দেশের প্রায় ৯০%-এরও বেশি সংখ্যক ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করার প্রক্রিয়াটি এই সময়ে ব্যাহত হয়েছে। যদিও অতিমারির সংকটের সম্মুখীন হয়ে সংবেদনশীলতার পরিচয় দিয়ে প্রাথমিক ভাবে আপৎকালীন ব্যবস্থা অবলম্বন করা হলেও, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের (এল আই সি) এবং নিম্ন-মধ্য আয়ের (এল এম আই সি) দেশগুলিতে এই সকল ব্যবস্থার বাস্তবায়ন যে যথেষ্ট নয় এবং প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ হতে চলেছে, তা দ্রুতই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য একাধিক ধরনের পরোক্ষ উপায় অবলম্বন করা হলেও রান্না করা গরম খাবার, স্বাস্থ্য পরিষেবা, মনস্তাত্ত্বিক এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্রদানকারী সর্বজনীন কেন্দ্র হিসেবে কাজ করা স্কুলগুলির পক্ষে অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। বিশ্লেষণকারী গবেষণাগুলি থেকে উঠে আসা ব্যক্তি এবং সামাজিক জীবনে এই ঘটনার অব্যবহিত এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফের ২০৩০ সালের মধ্যে স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির অসীম গুরুত্বের উপরে জোর দিয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে দেশগুলির মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসাম্যের মধ্যে এস ডি জি ৪ লক্ষ্যমাত্রা এবং সকলের জন্য উচ্চ মানের শিক্ষা সুনিশ্চিত করার পথে কোভিড-১৯ অতিমারি নতুন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে।

পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য একাধিক ধরনের পরোক্ষ উপায় অবলম্বন করা হলেও রান্না করা গরম খাবার, স্বাস্থ্য পরিষেবা, মনস্তাত্ত্বিক এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্রদানকারী সর্বজনীন কেন্দ্র হিসেবে কাজ করা স্কুলগুলির পক্ষে অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে।

বিশ্বজনীন এই সংকট গ্লোবাল সাউথ বা লাতিন আমেরিকা, এশিয়া, আফ্রিকা এবং ওশিয়ানিয়ার দেশগুলির জন্য এক তীব্র সমস্যার সৃষ্টি করেছে। কোভিড-১৯ অতিমারির ফলে এই দেশগুলির আপৎকালীন পরিস্থিতি এবং তা কাটিয়ে ওঠার সময়কালীন শিক্ষানীতির পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন প্রবল ভাবে ধাক্কা খেয়েছে। এর অন্যতম কারণ হল- জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটের প্রেক্ষিতে বাজেটে টান পড়ায় শিক্ষাখাতে বরাদ্দ টাকার পরিমাণ ব্যাপক হারে কমে যাওয়া। আদ্দিস আবাবা ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স ফর ফিন্যান্সিং ডেভেলপমেন্ট বা অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে করা প্রতিশ্রুতি মতো ২০৩০ সালের মধ্যে এস ডি জি ৪ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক বিনিয়োগ সুনিশ্চিতকরণের উপরে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। ও ই সি ডি ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স কমিটি (ডি এ সি) বা অর্গানাইজেশন ফর ইকনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সদস্য হিসেবে জি২০ দেশগুলি দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে দ্বৈত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। যদিও ২০৩০ সালের কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য এখনও ন’বছর সময় আছে এবং জি২০ সম্মেলনের লক্ষ্য হওয়া উচিত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে সদস্য দেশগুলির নজর রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে সরিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে অতিমারির অব্যবহিত প্রভাবকে অতিক্রম করা থেকে শুরু করে পড়াশোনার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক অবস্থার দীর্ঘমেয়াদি পুনরুদ্ধার। এস ডি জি ৪ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শিক্ষানীতির অগ্রাধিকার নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সংস্থানের পক্ষে সওয়াল তোলা এই দেশগুলির তরফে এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হতে পারে।

শিক্ষা সংক্রান্ত নীতিগুলির অগ্রাধিকার সুনিশ্চিত করা

শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়টিকে ২০১৮ সালে আর্জেন্টিনার সভাপতিত্বে হওয়া জি২০ সম্মেলনে প্রথম বার একটি স্বাধীন ওয়ার্কিং গ্রুপ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর ফলে এই ফোরামের অধীনে শিক্ষানীতি সংক্রান্ত অগ্রাধিকারের প্রসঙ্গে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে আলোচনার পাশাপাশি জি২০ সম্মেলনের আওতাভুক্ত থিঙ্ক ২০, ইউথ ২০ এবং সিভিল ২০ গ্রুপগুলিতেও শিক্ষা সংক্রান্ত উদ্যোগের ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়। একই সঙ্গে এই সম্মেলন সদস্য দেশগুলির শিক্ষামন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সভা, শীর্ষ সম্মেলন এবং আনুষঙ্গিক সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিশ্ব শিক্ষানীতি নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে নতুন ভাবে আলোচনা করার অনুপ্রেরণা জোগায়। ২০১৮ সালে এডুকেশন ওয়ার্কিং গ্রুপ চালু করার ঘটনা ফোরামটির জন্য এক বাঁকবদলের সূচনা করে: ২০১৮ সালে আর্জেন্টিনা, ২০১৯ সালে জাপান এবং ২০২০ সালে সৌদি আরবে হওয়া সম্মেলনগুলিতে শীর্ষ নেতাদের দেওয়া বিবৃতিতে শিক্ষানীতির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্তরে সহযোগিতা জোরদার করার গুরুত্বের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। একই রকম ভাবে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলির বিশেষজ্ঞদের প্রকাশিত সরকারি ইস্তাহার এবং নীতি যেমন থিঙ্ক ২০-র টাস্ক ফোর্স (জি২০ বিশেষজ্ঞদের দল যারা থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এবং গবেষণা কেন্দ্রগুলিকে সংযুক্ত করে) উন্নত শিক্ষাব্যবস্থার সুবিধে, গুণমান এবং তা সম্পূর্ণ করার জন্য প্রাক-শৈশব স্তরে বিকাশের নীতিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, স্টেম বা বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-ইঞ্জিনিয়ারিং-গণিত শাস্ত্র পড়ার সুযোগ, মেয়েদের শিক্ষা ইত্যাদির উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করার কথা বলেছে। ২০২১ সালে ইতালির সভাপতিত্বে হওয়া সম্মেলনে এই সকল বিষয়গুলির উপরে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে এবং সকলের জন্য শিক্ষার অধিকারকে ভবিষ্যতে মুক্ত সমাজ গঠনের মূল চাবিকাঠি হিসেবে গণ্য করার কথা বলা হয়েছে।

২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী গড়ে ৬.৭ মাস স্কুল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার ক্ষতি এবং উপার্জনের ঘাটতির সম্মিলিত প্রভাব অর্থনৈতিক এবং সামাজিক স্থিতাবস্থা পুনরুদ্ধারের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কোভিড-১৯ অতিমারি এই সকল অগ্রাধিকার সম্পন্ন করা এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এস ডি জি ৪-এর লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পথে নতুন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী গড়ে ৬.৭ মাস স্কুল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার ক্ষতি এবং উপার্জনের ঘাটতির সম্মিলিত প্রভাব অর্থনৈতিক এবং সামাজিক স্থিতাবস্থা পুনরুদ্ধারের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর্থ-সামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া পরিবার, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং প্রায় নিরক্ষর বাবা-মায়ের সন্তানেরা সবচেয়ে খারাপ ভাবে পড়াশোনার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বিশ্বব্যাপী অণু-অর্থনীতিতে এর প্রভাব তীব্র ভাবে পড়তে চলেছে: কোভিড-১৯ অতিমারিতে স্কুল বন্ধ থাকায় সারা জীবনের সম্ভাব্য আর্থিক উপার্জনের পরিমাণ কমেছে। এই ক্ষতির পরিমাণ নিম্ন আয়ের দেশগুলির ক্ষেত্রে ৩৬৪০০ কোটি মার্কিন ডলার, মধ্য আয়ের দেশগুলির ক্ষেত্রে ৬.৮ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার এবং উচ্চ আয়ের দেশগুলির ক্ষেত্রে ৪.৯ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার- বিশ্বব্যাপী এই ক্ষতির পরিমাণ মোট ১৫.৩ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার।

আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন থিঙ্ক ২০-এর সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞ এবং গবেষকদের মতে শিক্ষাক্ষেত্রে ঘটে যাওয়া ব্যাঘাতের ফল স্বরূপ প্রাতিষ্ঠানিক এবং ব্যক্তিগত স্তরে অসাম্যের সৃষ্টি হবে। এর মধ্যে প্রথমটি শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে। অন্যটি প্রভাব ফেলবে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকা অরক্ষিত সম্প্রদায়ের সেই সকল মানুষের উপরে, যাঁরা বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির (দারিদ্র্য, লিঙ্গবৈষম্য, জাতি এবং ভাষা সংক্রান্ত বিভেদ) শিকার হয়ে মূলস্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বেঁচে আছেন। পাশাপাশি তা প্রভাব ফেলবে সেই সকল মানুষের উপরেও যাঁরা অতিমারি সংক্রান্ত সমস্যা এবং অবহেলায় জর্জরিত। এই পরিস্থিতির এবং ২০৩০ সালের কর্মসূচির উপরে এক দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের কথা মাথায় রাখলে এ কথা বলতে হয় যে, জি২০ সম্মেলনের মূল লক্ষ্য শুধু বিশ্বব্যাপী শিক্ষা সংক্রান্ত নীতি প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক স্তরে পারস্পরিক সহযোগিতার পক্ষে সওয়াল তোলাই নয়, সমগ্র ব্যবস্থাটির বাস্তবায়ন ও অরক্ষিত মানুষ এবং গোষ্ঠীর জন্য আর্থিক পুঁজির সুনিশ্চিতকরণও বটে।

এস ডি জি  বা সকলের জন্য উন্নত মানের শিক্ষার লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে অর্থের সংস্থান

কোভিড-১৯ অতিমারির ফলে হওয়া বিশ্বব্যাপী মন্দার ফলে পৃথিবী জুড়ে অর্থনীতি এবং সরকারি অর্থব্যবস্থা ধাক্কা খেয়েছে, যার সর্বাধিক প্রভাব পড়েছে নিম্ন আয় এবং নিম্ন মধ্য-আয়ের দেশগুলির উপরে। ২০২০ সালের আগস্ট মাসে রাষ্ট্রপুঞ্জের করা মন্তব্য অনুযায়ী জনস্বার্থ খাতে খরচের জন্য অর্থের অভাব হলেও, সরকারগুলির উচিত কোভিড-১৯ সময়কালীন পরিষেবা কর্মসূচি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা এবং অর্থনীতির উন্নয়ন-সহ শিক্ষার দিকটিকেও নিয়ে আসা, যাতে সরকারের তরফে শিশু শিক্ষার উপরে অতিমারির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব প্রশমন করা সম্ভব হয়। যদিও ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি (কানাডা), সি আই পি পি ই সি (আর্জেন্টিনা), আই আই ই পি- ইউনেসকো, ইউনিসেফ, আই এন ই ই এবং সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ-এর (ভারত) যে বিশেষজ্ঞরা থিঙ্ক ২০-র টাস্ক ফোর্স ‘সামাজিক সুসংহতি এবং জনকল্যাণমূলক ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ’-এ কাজ করছেন, তাঁরা সতর্ক করে দিয়েছেন, জি২০ সম্মেলনের আওতাভুক্ত দেশগুলিতে বিভিন্ন রকম ছবি দেখা যাচ্ছে। দেখা গেছে যে, একাধিক দেশ পুঁজির অভাবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে রাশ টানার কথা ঘোষণা করেছে, যা সমগ্র ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবনের পথে বড় বাধা সৃষ্টি করতে চলেছে।

প্রাথমিক ভাবে পাওয়া প্রমাণের ভিত্তিতে অতিমারির শুরু থেকেই নিম্ন আয় এবং নিম্ন মধ্য-আয়ের দেশগুলিতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ টাকার পরিমাণ অর্ধেকের চেয়েও কমে গেছে। এবং শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য সরকারি সাহায্যের পরিমাণও অত্যন্ত কম ও অনিশ্চিত। যদিও ২০১২ সাল থেকেই শিক্ষাক্ষেত্রে মানবিকতার খাতিরে অর্থের জোগানে একটি ধীর অথচ ঊর্ধ্বগামী ধারা লক্ষ করা গেছে, তবুও সেটির পরিমাণ মাত্র ২.৬%-তেই সীমাবদ্ধ থেকেছে, যা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ১০% লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেকটাই কম। বহু সংখ্যক দেশই এ ক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে। নজরের বাইরে থাকা এই দেশগুলিতে শিশু এবং তরুণদের পড়াশোনার বেহাল দশা কোভিড-১৯ অতিমারির আগেও বিদ্যমান ছিল। অতিমারি পূর্ববর্তী সময়ে নিম্ন আয় এবং নিম্ন মধ্য-আয়ের দেশগুলিতে বার্ষিক ১৪,৮০০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থের অভাব ২০৩০ সালের মধ্যে সকলের জন্য উন্নত মানের শিক্ষার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অন্তরায় হয়ে ছিলই। অতিমারির ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির বন্ধ হয়ে যাওয়া এই ফারাককে ৩,০০০ থেকে ৪,৫০০ কোটি মার্কিন ডলার বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষাক্ষেত্রে বর্ধিত হারে কয়েক বছরব্যাপী আর্থিক সাহায্যের সংস্থান তাই অত্যন্ত জরুরি।

অতিমারি পূর্ববর্তী সময়ে নিম্ন আয় এবং নিম্ন মধ্য-আয়ের দেশগুলিতে বার্ষিক ১৪,৮০০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থের অভাব ২০৩০ সালের মধ্যে সকলের জন্য উন্নত মানের শিক্ষার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অন্তরায় হয়ে ছিলই। অতিমারির ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির বন্ধ হয়ে যাওয়া এই ফারাককে ৩,০০০ থেকে ৪,৫০০ কোটি মার্কিন ডলার বাড়িয়ে দিয়েছে।

এমনকি আন্তর্জাতিক স্তরে সহযোগিতা শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দ টাকার পরিমাণ বাড়াতে সমর্থ হলেও এই বৃদ্ধি এস ডি জি ৪-এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হওয়া প্রয়োজন। কারণ কোভিড-১৯ অতিমারি অরক্ষিত সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি ঘটে চলা বৈষম্য দূরীকরণে নতুন আঙ্গিকের দাবিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। এ প্রসঙ্গে জি২০ সম্মেলনের উচিত সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারগুলিকে ‘টুইন ট্র্যাক’ বা ‘দ্বৈত পন্থা’ অবলম্বনে উৎসাহিত করা, যেখানে ইক্যুয়িটি ভিত্তিক অর্থায়নের কৌশল নিয়ে সকলের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগানের পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য বিশেষ পুঁজির বরাদ্দ করার দিকটিও থাকবে। ইউনেসকোর মতে, এই ধরনের কৌশল অবলম্বন করতে হলে অবিলম্বে সরকারি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। একই ভাবে জি২০-র আওতাভুক্ত দেশগুলির অবশ্যই উচিত শিক্ষাক্ষেত্রে বাধা অতিক্রম, দুই বা ততোধিক ক্ষেত্রে পুঁজির আপাত বিনিময় এবং বহুস্তরীয় অর্থায়নের কৌশল বাস্তবায়নে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা। এবং যেখানে সম্ভব সেখানে পুঁজি বিনিয়োগের দিকটির বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে স্থানীয় চাহিদা ও সমস্যার দিকগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া। এই সকল কৌশলের বাস্তবায়নের জন্য ও ই সি ডি ডি এ সি দাতা দেশগুলিকে শুধু মাত্র পুঁজির ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেই চলবে না, এই সকল কৌশলগুলিকে প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মভুক্তও করতে হবে। এক কথায়, জি২০-র আওতাভুক্ত দেশগুলির জন্য শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নয়নে মানবিক বিনিয়োগের দিকটি সুরক্ষিত করা এবং বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধিই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।

আদ্দিস আবাবা অ্যাকশন অ্যাজেন্ডা গ্রহণের ছয় বছর পর,কোভিড-১৯ অতিমারির প্রেক্ষিতে শক্তিশালী সহযোগিতার দিকটি আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে পৃথিবী জুড়ে মানুষ অভূতপূর্ব তীব্র সংকটের মুখে একাধিক ক্ষেত্রে প্রতিরোধ গড়ে তোলার নজির স্থাপন করেছেন। ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের অভিমুখে বর্তমান সংকটটি জি২০-র আওতাভুক্ত দেশগুলির সশক্তিকরণের ক্ষেত্রে এক বাঁকবদলের সূচনা করবে। এস ডি জি ৪ অর্থাৎ সকলের জন্য উন্নত মানের শিক্ষার প্রেক্ষিতে অর্থ বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা সুনিশ্চিতকরণ পৃথিবীর সকল মানুষের ভবিষ্যৎ গড়ার ক্ষেত্রে একটি ভিত্তি প্রস্তর হিসেবে কাজ করবে। সর্বোপরি, সকলের জন্য শিক্ষার সমান অধিকার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আগামিদিনে উদ্ভূত সম্ভাব্য প্রতিবন্ধকতাগুলির সম্মুখীন হতে সাহায্য করবে।


এই নিবন্ধটি ২০১৮ সাল থেকে থিঙ্ক ২০  সি আই পি পি  সি নেতৃত্বে শিক্ষামূলক কর্মসূচির রে ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ করে, এটি আই   পি ইউনেসকো, ইউনিসেফ, আই এন   এবং সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় অধ্যাপক প্রাচী শ্রীবাস্তব (ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন অন্টারিও) এবং আলেয়ান্দ্রা কারদিনি (সি আই পি পি  সি) নেতৃত্বে টি২০ সিরিজের উপর ভিত্তি করে তৈরি করেছে। কোভিড১৯ সংকটের মোকাবিলায় এই প্রতিবেদনটি ২০২০ সালে সৌদি আরব এবং ২০২১ সালে ইতালি থিঙ্ক ২০ সংস্করণের প্রেক্ষিতে তৈরি করা হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.