Author : Seema Sirohi

Published on Jan 02, 2023 Updated 0 Hours ago

মার্কিন মধ্যবর্তী ভোট এমন এক রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে এল যা নানা বাধায় আকীর্ণ

মার্কিন মধ্যবর্তী ভোটের পর: বাইডেনের নজর অচলাবস্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে

উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং কম জনপ্রিয়তা রেটিং সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রচলিত ধারণাকে ভুল প্রমাণ করার জন্য রেকর্ড বইয়ে স্থান পেয়েছেন। এক্ষেত্রে ধারণাটি এই ছিল যে সাধারণত মধ্যবর্তী নির্বাচনে হোয়াইট হাউসে ক্ষমতাসীন দল ধাক্কা খায়।

ডেমোক্র্যাটদের ফলাফল এতটাই অপ্রত্যাশিত ছিল যে এমনকি হাউস অফ রেপ্রেজেন্টেটিভস–এর পরাজয়কেও ‘‌জয়’‌ হিসাবে দেখা হয়েছে, কারণ রিপাবলিকানদের জয়কে বাইডেনের প্রত্যাখ্যান হিসাবে গণ্য করার পক্ষে ব্যবধান খুব কম ছিল। তাছাড়া ডেমোক্র্যাটরা সেনেটের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে।

এমনকি প্রাদেশিক স্তরেও ডেমোক্র্যাটরা প্রত্যাশার চেয়ে ভাল করেছে, যার ফলে গভর্নরশিপে সব মিলিয়ে তাদের লাভ হয়েছে এবং কয়েকটি প্রাদেশিক আইনসভার পরিস্থিতি উল্টে দিয়েছে। সব মিলিয়ে ডেমোক্র্যাটরা গত একশো বছরের মধ্যে যে কোনও দলের জন্য সেরা মধ্যবর্তী ফলাফল করেছে।

রিপাবলিকানরা তদন্ত শুরু করতে এবং প্রশাসনকে বিব্রত করতে হাউসে তাদের সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা ব্যবহার করার চেষ্টা করবে।

কিন্তু বাইডেন নতুন বছর এবং একটি নতুন কংগ্রেসের জন্য প্রস্তুত হওয়ার সময় দেখতে পাচ্ছেন তিনি একটি বিভক্ত আইনসভার মুখোমুখি। রিপাবলিকানরা তদন্ত শুরু করতে এবং প্রশাসনকে বিব্রত করতে হাউসে তাদের সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা ব্যবহার করার চেষ্টা করবে। ডেমোক্র্যাটরা পাল্টা লড়াই চালাবে, এবং পরের দুই বছর রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা যাবে। বিদেশ বা অভ্যন্তরীণ নীতির ক্ষেত্রে কিছু করতে গেলে অসুবিধার মাত্রা বেশি হবে, তবে এমন নয় যে তা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

সম্ভাব্য রাজনৈতিক স্থবিরতার কারণে বাইডেনের অ্যাজেন্ডার সঙ্কট নিয়ে হাহুতাশ ও বিপন্নতার মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে এই ঘটনাটি যে রিপাবলিকানরা এখন একটি কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি:‌ দলটি কোথায় যাচ্ছে?  এখন যখন ভোটাররা প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থিত চরমপন্থী প্রার্থীদের প্রত্যাখ্যান করেছে, নেতৃত্ব কি দলের উপর তাঁর দখল গুরুত্বসহকারে শিথিল করার চেষ্টা করবে, নাকি তাঁকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান বা গ্রহণ না–করার কৌশলই অব্যাহত রাখবে?

এ কথা মনে রাখা ভাল যে রিপাবলিকান পার্টি অতীতে ট্রাম্পের কাছ থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেছে, এবং তার সমর্থনভিত্তি পরীক্ষা করে আবার ফিরে এসেছে। এবার তার অন্যথা হবে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়।

অনেক রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা ও বিশ্লেষক এই নির্বাচনে ‘‌রেড ওয়েভ’‌ বা রিপাবলিকান ঝড় না–ওঠার জন্য ট্রাম্পকে দায়ী করেছেন। কোনও প্রমাণ না–থাকা সত্ত্বেও ২০২০ সালের নির্বাচনে তাঁকে চুরি করে হারিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের অবিরত দাবির কারণে স্বতন্ত্র ও সুইং ভোটাররা ভয় পেয়েছিলেন। কিছু রিপাবলিকান প্রার্থী এই মিথ্যা দাবি প্রচার করার পর ভোটে তাঁদের বড়সড় ক্ষতি হয়েছিল।

কোনও প্রমাণ না–থাকা সত্ত্বেও ২০২০ সালের নির্বাচনে তাঁকে চুরি করে হারিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের অবিরত দাবির কারণে স্বতন্ত্র ও সুইং ভোটাররা ভয় পেয়েছিলেন।

ট্রাম্প যে ‘‌বিশৃঙ্খলা’‌র প্রতিনিধিত্ব করেন, যেভাবে নিজেকে ‘‌ভিকটিম’‌ বলে তুলে ধরেন এবং বন্ধু ও শত্রুদের একইভাবে আঘাত করেন, সে সবের কারণেও অনেক ভোটার বিরূপ হয়ে গিয়েছেন। মধ্যবর্তী ফলাফল থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে রিপাবলিকান দলের বড় বড় ডোনাররা প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের থেকে দূরে সরে গিয়েছেন।

একজন প্রধান দাতা ব্ল্যাকস্টোনের সিইও স্টিফেন শোয়ার্জম্যান বলেছেন রিপাবলিকান পার্টিকে এমন একটি নতুন প্রজন্মের নেতাদের কাছে ফিরে যেতে হবে যাঁরা অতীত নয়, ভবিষ্যতের কথা ভাবছেন। এটি ছিল ২০২০ নির্বাচন নিয়ে ট্রাম্পের আচ্ছন্নতার প্রতি উল্লেখ। আর এক জন বড় দাতা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে তিনি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিসান্টিসকে সমর্থন করবেন

প্রাক্তন ট্রাম্প সহযোগী মাইক পেন্স, যিনি প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ভবিষ্যতের প্রতিদ্বন্দ্বী, তিনিও বলেছেন ভোটাররা নতুন নেতৃত্বের সন্ধান করছেন। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে তাঁদের ২০২৪ সালে প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের চেয়ে ‘‌ভাল পছন্দ’‌ থাকবে। ট্রাম্প ২০২৪ সালে আবার নির্বাচন লড়বেন বলে ঘোষণা করার কয়েক ঘণ্টা পরে পেন্স এই মন্তব্য করেছিলেন।

কিন্তু মধ্যবর্তী ভোট যদি রিপাবলিকান আকাশে কোনও ‘‌তারকা’‌ তৈরি করে থাকে, তবে তিনি হলেন ডিসান্টিস, যিনি ফ্লোরিডার গভর্নর হিসাবে দ্বিতীয় মেয়াদে জয়লাভ করেছেন এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশকে একটি ‘‌লাল’‌ প্রদেশে রূপান্তরিত করতে পেরেছেন। ডিস্যান্টিস ট্রাম্পের মতো অবস্থানের প্রতিনিধিত্ব করলেও নাটুকে বা অকর্মণ্য নন বলে তাঁকে একজন প্রকৃত প্রতিযোগী হিসাবে দেখা হচ্ছে।

অন্য প্রতিযোগীদের মধ্যে আছেন দক্ষিণ ক্যারোলিনার প্রাক্তন গভর্নর ও রাষ্ট্রপুঞ্জে ট্রাম্পের রাষ্ট্রদূত,ভারতীয় আমেরিকান নিকি হ্যালি, যিনি লাস ভেগাসে রিপাবলিকান ইহুদি জোটে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রতিযোগিতা করার ইঙ্গিত দিয়েছেন

ট্রাম্প রিপাবলিকানরা সনাতন রিপাবলিকানদের সঙ্গে কঠোর দর কষাকষি করে চলেছেন যাতে আরও চরমপন্থী অ্যাজেন্ডা অনুসৃত হয়;‌ অন্যদিকে প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাটরা মধ্যপন্থী ও নরমপন্থীদের বিরুদ্ধে স্থায়ী যুদ্ধের মোডে রয়েছেন, যা বাইডেনের কাজকে আরও কঠিন করে তুলছে।

রিপাবলিকান পার্টির গতিশীলতা ডেমোক্র‌্যাটিক পার্টির মতোই জটিল, কিছু বেশিও হতে পারে। একদিকে, ট্রাম্প–রিপাবলিকানরা সনাতন রিপাবলিকানদের সঙ্গে কঠোর দর কষাকষি করে চলেছেন যাতে আরও চরমপন্থী অ্যাজেন্ডা অনুসৃত হয়;‌ অন্যদিকে প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাটরা মধ্যপন্থী ও নরমপন্থীদের বিরুদ্ধে স্থায়ী যুদ্ধের মোডে রয়েছেন, যা বাইডেনের কাজকে আরও কঠিন করে তুলছে।

মার্কিন সমাজের বৃহত্তর মেরুকরণের পরিপ্রেক্ষিতে একটি বিভক্ত কংগ্রেস সম্ভবত বিভাজন কমানোর পরিবর্তে আরও গভীর করবে। উভয় পক্ষই তাদের নিজ নিজ ‘মূল’‌ বিষয়ে কথা বলবে এবং লড়াইয়ে লিপ্ত হবে। মৌলিক কাজগুলো সম্পন্ন করা হবে, যেমন বাজেট ও বরাদ্দের উপর ভোটদান, কিন্তু পরবর্তী দুই বছরে জনগণের জীবন পরিবর্তন করার জন্য কোনও সুদূরপ্রসারী প্রভাবসম্পন্ন আইন প্রত্যাশিত নয়।

কংগ্রেসম্যান কেভিন ম্যাকার্থি সম্ভবত ২০২৩ সালে হাউসের নতুন স্পিকার হবেন, যদি তিনি জানুয়ারিতে নতুন কংগ্রেসের অধিবেশন শুরুর আগে ট্রাম্প–রিপাবলিকানদের বাধা কাটিয়ে উঠতে পারেন। সাম্প্রতিক সময়ের দলীয় অতি–আনুগত্যের ঐতিহ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিনিও সম্ভবত কাজ করবেন আমেরিকানরা যাকে ‘‌ওয়েজ ইস্যু’‌ বলে অভিহিত করেন তা নিয়ে, যা ঐক্যবদ্ধ করার চেয়ে বেশি বিভক্ত করে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.