Author : Sushant Sareen

Published on Feb 08, 2024 Updated 0 Hours ago

পাকিস্তান জুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ কথা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, জনগণের উপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে

পাকিস্তান: গণবিক্ষোভ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাধরদের বিচলিত করেছে

সুপ্রাচীন কৌশল আর মোটেই কার্যকর নয়। রাষ্ট্রের কেন্দ্রে থাকা ক্ষমতাধরদের এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতি ভয়, আতঙ্ক, শঙ্কা ক্রমশ হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানকে দখল ও নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ব্যবহৃত নৃশংস ক্ষমতা প্রদর্শনের পদ্ধতি এ বার অকার্যকর বলে প্রমাণিত হচ্ছে। জনগণের প্রতিবাদ ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠছে। বিক্ষোভকারীরা এতটাই নির্ভীক হয়ে উঠেছেন যা পাকিস্তানে অবশ্যই অস্বাভাবিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য আগে একজন সেনা অফিসারের শুধু মাত্র অঙ্গুলিহেলনেই কাজ হত। তবে সে দিন এখন অতীত। মনে করা হচ্ছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের নিরিখে একেবারে খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছেলক্ষ লক্ষ বিদ্রোহী জনগণকে কী ভাবে সামলানো যায়, সে সম্পর্কে সেনাবাহিনীর কোনও ধারণাই আর কাজ করছে না। যা পরিস্থিতিকে আরও গুরুতর করে তুলেছে, তা হল পাবলিক ডিসকোর্স বা পাবলিক ন্যারেটিভ অর্থাৎ জনসাধারণের মতামত বা আখ্যানকে আকার দেওয়া তো দূর, নিয়ন্ত্রণ করাই অসম্ভব হয়ে পড়েছেপাকিস্তানের পরিস্থিতি এমন ভাবেই বদলে গিয়েছে যে, দেশের জনসাধারণ আর নীরবে সেনাবাহিনীর কাছে মাথা নত করে আনুগত্য প্রকাশ করতে ইচ্ছুক নয়। এবং ঠিক এই পরিস্থিতিকে কী ভাবে উদীয়মান বাস্তবতার সঙ্গে ফের সাযুজ্যপূর্ণ ও পুনর্নির্মাণ করা যায়, সে ব্যাপারে সেনাবাহিনীর কোনও ধারণাই নেই।

এই বিক্ষোভের নিছক ভৌগোলিক বিস্তার আসলে পাকিস্তান রাষ্ট্রের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা অসন্তোষের মাত্রা এবং তা কী ভাবে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে… তা নিয়ে নিজস্ব আখ্যান রচনা করে।

 

সেনা-শাসিত পাকিস্তানি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচরণ, যা এক সময়ে চারাগাছের মতো জন্ম নিয়েছিল, তা বর্তমানে মহীরুহে পরিণত হয়েছে। বিক্ষোভ চলছে সারা দেশ জুড়ে। এই বিক্ষোভের নিছক ভৌগোলিক বিস্তার আসলে পাকিস্তান রাষ্ট্রের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা অসন্তোষের মাত্রা এবং তা কী ভাবে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে… তা নিয়ে নিজস্ব আখ্যান রচনা করে। ব্যাপক ভাবে প্রতিরোধের দুটি  সুস্পষ্ট এবং স্বতন্ত্র প্রবণতা উদ্ভূত হচ্ছে। প্রথমটি হল সহিংস প্রতিরোধ, যা শুধু মাত্র তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান-এর (টিটিপি) মতো ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলি দ্বারা নয়, বরং বেলুচিস্তানের জাতিগত বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গিগোষ্ঠীগুলি এবং কিছুটা হলেও সিন্ধ অঞ্চলের জঙ্গিগোষ্ঠী থেকেও উঠে আসছে। দ্বিতীয় এবং আরও মারাত্মক প্রবণতা (পাকিস্তান রাষ্ট্রের ক্ষমতাধরদের দৃষ্টিকোণ থেকে) হল শান্তিপূর্ণ, অহিংস প্রতিরোধ এবং পাকিস্তান রাষ্ট্রের দ্বারা সংঘটিত অন্যায়ের প্রতি অবজ্ঞা। এই শেষ প্রবণতার মধ্যে নাগরিকদের অবাধ্যতা বিক্ষোভ, সব বন্ধ করে ধর্মঘট এবং পথে নেমে এসে প্রতিবাদ করার মতো নানা ধরনের চিরাচরিত প্রতিবাদী ভাষাও অন্তর্ভুক্ত।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য দ্বিতীয় রকমের প্রবণতা অর্থাৎ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ আরও বেশি উদ্বেগজনক কারণ কী ভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা নিয়ে সেনাবাহিনীর মধ্যে কোনও পরিকল্পনাই নেই। এ কথা সত্যি যে, হিংসাত্মক আন্দোলন রক্তাক্ত হলেও তা মোকাবিলা করা সহজ। আগ্নেয় শক্তি ও সম্পদের কথা মাথা রাখলে কোন দলই আক্ষরিক অর্থে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। হিংসা পাকিস্তান রাষ্ট্রকে বিদ্রোহীদের দমন করার জন্য তার উচ্চতর ক্ষমতা ব্যবহার করার বৈধতা দেয়। তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোন রাজনৈতিক পরিশীলন বা মানুষের সঙ্গে রাজনীতির মধ্যে সেতু বন্ধনের প্রয়োজন নেই। কিন্তু শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের ক্ষেত্রে তা নিয়ন্ত্রণ করার উপায় এক রকম নয়। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের নেপথ্যে থাকে সুবিশাল রাজনৈতিক মনোভাব এবং যে কোনও রাজনৈতিক আন্দোলনকে দাবানলে পরিণত করার সম্ভাবনা, যা অতীতের পূর্ব পাকিস্তানে অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশে আওয়ামী লিগের নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের স্পন্দন জাগিয়ে তুলেছিল।

 

বালোচ বিক্ষোভকারীরা নিজেদের প্রতিবাদের মাত্রা বাড়িয়েছে এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে নিজেদের বার্তা বাকি বিশ্বের কাছে প্রেরণ করে চলেছে

 

গত কয়েক বছরে প্রতিরোধী ও প্রতিবাদী মনোভাবের সংক্রমণ ক্রমশ ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু প্রতিবাদের সংখ্যাই নয়, তাদের আয়ুষ্কাল ও মাত্রার পাশাপাশি অনুরণনও ক্রমশ বেড়ে চলেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বালোচদের ‘গণহত্যার’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বালোচ ইয়াকঝেতি কমিটি (বিওয়াইসি) ইসলামাবাদে মিছিল করেছে। বালোচ নারীকর্মীদের নেতৃত্বে মিছিলকারীদের থামানোর প্রচেষ্টা করা সত্ত্বেও পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তার অক্ষম কৌশল বিভাগ ব্যর্থ হয়। প্রায় দুমাস ধরে এই বালোচ বিক্ষোভকারীরা ইসলামাবাদের কেন্দ্রস্থলে পুরো কূটনৈতিক সম্প্রদায়ের চোখের সামনে প্রকাশ্যে শিবির স্থাপন করেছে, যা এই সঙ্কটকে আগের চেয়ে আরও অনেকগুণ গুরুতর করে তুলেছে। বালোচ বিক্ষোভকারীরা নিজেদের প্রতিবাদের মাত্রা বাড়িয়েছে এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে নিজেদের বার্তা বাকি বিশ্বের কাছে প্রেরণ করে চলেছেরাষ্ট্রপুঞ্জের স্পেশ্যাল র‍্যাপোর্চারস বা বিশেষ প্রতিবেদকরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলছেন, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও এই বিক্ষোভগুলিকে খবরের শিরোনামে তুলে আনছে এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পঞ্চম বালোচ বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর থেকে গত ২০ বছর ধরে খবরের নিরিখে বেপাত্তা থাকা বালোচরা ফের প্রচারের আলোয় ফিরে এসেছেন। ইসলামাবাদের প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় উষ্ণ বিছানা, তাঁবু ইত্যাদির মতো ন্যূনতম মৌলিক সুযোগ-সুবিধাগুলি প্রদান করতে অস্বীকার করে পাকিস্তান রাষ্ট্র বিক্ষোভকারীদের উদ্যমকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চালিয়েছে। পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা কুখ্যাত ডেথ স্কোয়াডের সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের বিপরীতে একটি শিবির স্থাপন করে তাঁদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছিল। সেই কৌশলধোপে টেকেনি। প্রকৃতপক্ষে, পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিটি কৌশল বেলুচিস্তানে জনসাধারণকে উত্তেজিত করেছে এবং বিওয়াইসি বিক্ষোভকারীদের প্রতি মানুষের সংহতি প্রকাশ দর্শায় যে, বিক্ষোভ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে।

 

স্থানীয় জনগণ মাছ ধরার চিনা নৌকা ট্রলার মাফিয়াদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে, যারা তাদের মাছ ধরার রাক্ষুসে পদ্ধতির মাধ্যমে গোয়াদরের আশেপাশের সাগরাঞ্চলে মাছ চোরাশিকার করে চলেছে ক্রমশ অঞ্চলটি নষ্ট করছে।

 

বেলুচিস্তানের পাশতুন অঞ্চলেসীমান্ত শহর চমনে গত ৯০ দিন ধরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করছেতাঁরা আফগানিস্তানে এবং আফগানিস্তান থেকে ভ্রমণের জন্য এই অঞ্চলের জনজাতিদের চিরাচরিত স্বাচ্ছন্দ্যগত অধিকারকে বাধা দেওয়ার দায়ে দুষ্ট পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের তরফে গৃহীত কঠোর পদক্ষেপের প্রত্যাহার দাবি করেছেন। এই বিক্ষোভগুলি যত দীর্ঘ হবে, পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের সংবেদনশীলতার বিরুদ্ধে পাশতুন জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ততই বাড়বে। একই ভাবে, পাকিস্তান রাষ্ট্র গোয়াদরে স্থানীয় বাসিন্দাদের মৌলিক অধিকার অস্বীকার করায় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন চলছে। আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, স্থানীয় জনগণ মাছ ধরার চিনা নৌকা ট্রলার মাফিয়াদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে, যারা তাদের মাছ ধরার রাক্ষুসে পদ্ধতির মাধ্যমে গোয়াদরের আশেপাশের সাগরাঞ্চলে মাছ চোরাশিকার করে চলেছে ক্রমশ অঞ্চলটি নষ্ট করছে।

গিলগিট-বাল্টিস্তানের পাকিস্তান-অধিকৃত অঞ্চলে রাষ্ট্রীয় মদপুষ্ট সুন্নি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীগুলি সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের বিরুদ্ধে সুবিশাল বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। গিলগিট-বাল্টিস্তানের জনগণও নিজেদের জন্য গমের ভর্তুকি পুনরুদ্ধারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে। বেশ কয়েক বছর ধরে গিলগিট-বাল্টিস্তানের জনগণ আবার ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার দাবি তুলেছে। এই একই প্রতিবাদের ভাষা পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের আকাশ-বাতাসে অনুরণিত হচ্ছে, যেখানে সরকারি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অহরহ প্রতিবাদ এখন নিউ নর্মাল বা নিত্যনৈমিত্তিক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সময়ে নানা উপজাতি যে অঞ্চলে একত্র হয়েছেন, সেই খাইবার পাখতুনখোয়া (কে-পি) প্রদেশে সুন্নি সন্ত্রাসবাদীরা কুররাম গোষ্ঠীকে নৃশংস ভাবে হত্যা করায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। অন্য উপজাতীয় জেলাগুলিতে টিটিপি বিভিন্ন ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। উপজাতীয় জেলাগুলিতে প্রতিবাদের সবচেয়ে সাধারণ স্লোগান হল ইয়ে জো দেহশাতগর্দি হ্যায়, ইস কে পিছে ওয়র্দি হ্যায় (এই সন্ত্রাসবাদের পিছনে আসলে রয়েছে উর্দির রোয়াব)অর্থাৎ সব প্রতিবাদের নিশানায় উঠে এসেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তার গোয়েন্দা সংস্থাগুলি

 

গিলগিট-বাল্টিস্তানের জনগণও নিজেদের জন্য গমের ভর্তুকি পুনরুদ্ধারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে।

 

প্রদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ-এর (পিটিআই) বিরুদ্ধে ধরপাকড়ের ঘটনা কে-পি-তে পাকিস্তান সেনাবাহিনী-বিরোধী মনোভা উস্কে দিয়েছে। পিটিআই-কে ধ্বংস করার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দলটির সমর্থনের ভিত্তি শক্তিশালী রয়েছে। সামরিক বাহিনীর শক্তিশালী কৌশলের ফলে বহু মানুষই এখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করছেন, বিশেষ করে সেই পরিস্থিতিতে যখন জনগণকে নিজেদের সরকার বেছে নেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য পাকিস্তান রাষ্ট্র কারচুপি করেছে। কে-পি, বেলুচিস্তান, জিবি, পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীর এবং সিন্ধ অঞ্চলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ আইন অমান্য আন্দোলনের বিস্ফোরণ সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত না হলেও অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় হল পাকিস্তানের সবচেয়ে বাধ্য, পদলেহী এবং অধীনস্থ প্রদেশ পঞ্জাব থেকে রাষ্ট্রের বিরোধিতা। পঞ্জাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ সামরিক কর্তাদের জন্য বেশ উদ্বেগজনক। পঞ্জাবে বরাবরই প্রতিষ্ঠান-বিরোধী আবেগের চোরাস্রোত ছিল। কিন্তু ইমরান খান সেটাকে কাজে লাগিয়ে প্রকাশ্যে এনেছেন। সেনাবাহিনীর বিরোধিতাকারী কর্মীদের উপর নৃশংস দমন-পীড়ন হয়তো বিক্ষোভকারীদের খানিক থমকে দিয়েছে মনে হলেও প্রতিরোধ অব্যাহতই রয়েছে। প্রতিবাদ অবশ্য প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। বরং সাইবার পরিসরে তা আরও বেশি প্রকাশ পাচ্ছে। একটি ব্যাপক প্রতিষ্ঠান-বিরোধী প্রচার চালানো হচ্ছে, যা নিয়ন্ত্রণ বা মোকাবিলা করতে সেনাবাহিনী স্পষ্টতই ব্যর্থ।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মধ্যেও ভয় কাজ করছে। কারণ ভিন্নমতের সঙ্গে মোকাবিলা করা এবং এই ধরনের প্রতিবাদগুলি সামলানোর জন্য তাদের চিরাচরিত পদ্ধতিগুলি আর কাজ করছে না। অতীতে পাকিস্তানি রাষ্ট্র প্রতিবাদ আন্দোলনগুলি খুব বড় হয়ে ওঠার আগেই তার মধ্যে অনুপ্রবেশ করা নাশকতামূলক নানাবিধ উপায় ব্যবহার করত‘প্রাতিষ্ঠানিক’ কর্মীরা প্রতিবাদকারীদের মারধর করতে পারে এবং ভয় দেখাতে পারেএমনকি বিক্ষোভ বা আন্দোলনকারী নেতাদের ঘুষ দেওয়ার পন্থার আশ্রয় নিতে পারে। যদি সে সব কিছুই কাজ না করে, তা হলে তারা নৃশংস ক্ষমতা ব্যবহার করবে এবং বিক্ষোভকারীদের জোর করে গুম করবে, এমনকি কিছু অপহৃত কর্মীকে হত্যা করবে। এই ধরনের ঘটনা হাজারে হাজারে আজও ঘটে চলেছে। তা সত্ত্বেও প্রতিবাদের পারদ চড়ছেই। স্পষ্টতই, প্রতিবাদকে দমানোচূর্ণবিচূর্ণ করার পরিবর্তে গুণ্ডামি, ঘুষ এবং মারধরের পুরনো রাষ্ট্রীয় কৌশল আখেরে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভকে উস্কে দিয়েছে এবং বিক্ষোভ যেন ক্যানসারের মধ্যে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে, যেখানে ধ্বংসই হল শেষ কথা।

 

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মধ্যেও ভয় কাজ করছে। কারণ ভিন্নমতের সঙ্গে মোকাবিলা করা এবং এই ধরনের প্রতিবাদগুলি সামলানোর জন্য তাদের চিরাচরিত পদ্ধতিগুলি আর কাজ করছে না।

 

ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভকে দমন করা এবং ছিন্নবিচ্ছিন্ন করার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্ষমতাকে যে দু’টি জিনিস আরও বেশি করে নষ্ট করে দিয়েছে, তা হল: এক, রাষ্ট্র দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং কোনও ক্রমে টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে; এবং দুই, রাষ্ট্র আখ্যান গঠনের ক্ষেত্রে তার একচেটিয়া অধিকার হারিয়েছে কারণ চিরাচরিত গণমাধ্যম অর্থাৎ সংবাদপত্র, টিভি রেডিয়োকে ছাপিয়ে গিয়েছে সামাজিক গণমাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়া, যা অনেকটাই বিশৃঙ্খল, অনিয়ন্ত্রিত, সেন্সরবিহীন, অপ্রীতিকর এবং প্রতিবাদীএবং তার কারণ হল এই যে, সামাজিক গণমাধ্যম কারও অধীনস্থ নয় এবং কোনও নীতিপুলিশের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। বরং প্রচলিত গণমাধ্যমের চেয়ে সামাজিক গণমাধ্যমকে আরও বেশি করে বিশ্বাসযোগ্য, নির্ভরযোগ্য এবং সত্যবাদী বলে মনে করছেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁরা এই হাতিয়ারটি দারুণ ভাবে ব্যবহার করছে এবং পাকিস্তানি রাষ্ট্রের ক্ষমতা প্রদর্শন আসলে অক্ষম থাকার কৌশলকে প্রকাশ্যে এনেছেন, যা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভের আগুন জ্বালিয়েছে। এর পাশাপাশি সামাজিক গণমাধ্যম শুধু স্থানীয় ভাবে নয়, বিশ্বব্যাপীও প্রায় চোখের পলকে সমর্থকদের একত্র করার হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। সামাজিক গণমাধ্যমে যা ঘটে চলেছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী অবশ্যই তা নিরীক্ষণ করতে পারে তবে তা থামিয়ে দেওয়ার কোনও উপায় তাদের জানা নেই। কারণ এমনটা করলে ডিজিটাল অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার রাষ্ট্রীয় স্বপ্নও দুরমুশ হয়ে যাবে।

বিশ্ব জুড়ে সেনাবাহিনীকে যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেওয়া হয়, তা হল ব্যর্থতার মাত্রা আর বৃদ্ধি না করা। কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনী তার বিরুদ্ধে আবেগের উত্থান সামলানোর ব্যর্থতার মাপকাঠির তলানির চেয়ে নীচে নেমে গিয়েছেপন্থা বদলের পরিবর্তে পাকিস্তান ব্যর্থ কৌশল ও সাধনীর ব্যবহার চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা ফলস্বরূপ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জনসাধারণের বিরক্তি বিপজ্জনক ভাবে নতুন মাত্রায় উন্নীত হয়েছে। ২০২৪ সালের নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এ কথা বলা যায় যে, প্রাপ্তির চাইতে হৃতের পরিমাণ অবশ্যই বেশি। সহ্যের সীমা একেবারে শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেলে, লক্ষ লক্ষ বিদ্রোহ সঙ্ঘবদ্ধ হবে এবং তা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আধিপত্য রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের জন্য আক্ষরিক অর্থেই মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়ে দেবে।

 


সুশান্ত সারিন অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Sushant Sareen

Sushant Sareen

Sushant Sareen is Senior Fellow at Observer Research Foundation. His published works include: Balochistan: Forgotten War, Forsaken People (Monograph, 2017) Corridor Calculus: China-Pakistan Economic Corridor & China’s comprador   ...

Read More +