Published on May 31, 2025 Updated 0 Hours ago

জি২০ প্রেসিডেন্সির ক্ষেত্রে প্রস্তুত হওয়ার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে আফ্রিকার ক্রমবর্ধমান চাহিদা, তার অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা এবং ট্রাম্পের মার্কিন-আফ্রিকা নীতির মূল বিষয়গুলি মোকাবিলা করতে হবে

ট্রাম্পের ছায়া অতিক্রম করা: দক্ষিণ আফ্রিকার জি২০ চ্যালেঞ্জ

২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যবসায়িক রাজধানী জোহানেসবার্গে জি২০ শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনকারী প্রথম আফ্রিকান দেশ হবে। শা করা হচ্ছে যে, দক্ষিণ আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলনের সময় আফ্রিকা অগ্রাধিকারগুলি সফল ভাবে তুলে ধরবে। দারিদ্র্য, খাদ্য নিরাপত্তা, উচ্চ ঋণ এবং কোভিড-১৯ পরবর্তী পুনরুদ্ধার থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিভাজনকারী ভূ-রাজনীতির মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ পর্যন্ত… সব সমস্যার কথাই আফ্রিকা তুলে ধরতে পারবে এবং এই তালিকাটি অবশ্যই দীর্ঘ।

শীর্ষ সম্মেলনের সময় দক্ষিণ আফ্রিকা বিভিন্ন স্বার্থের মাঝে পথ খুঁজে নেওয়া এবং তার ৫৪টি সদস্য দেশের মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তুলতে আফ্রিকান ইউনিয়ন-এর (এইউ) সমর্থন পাবে। এম২৩ বিদ্রোহীদের বিষয়ে রুয়ান্ডা ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো (ডিআরসি), রেনেসাঁ বাঁধ নিয়ে মিশর ইথিওপিয়া, সোমালিল্যান্ডের সার্বভৌমত্ব নিয়ে ইথিওপিয়া সোমালিয়া এবং পশ্চিম সাহারা নিয়ে মরক্কো আলজেরিয়ার মতো বেশ কয়েকটি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান বিরোধ উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ইতিমধ্যে, মালি, বুর্কিনা ফাসো নাইজার পশ্চিম আফ্রিকান আঞ্চলিক ব্লক ইকোনমিক কমিউনিটি অফ ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস (ইকোওয়াস) ত্যাগ করা এবং তাদের নিজস্ব ফেডারেশন অর্থাৎ অ্যালায়েন্স অফ সাহেল স্টেটস গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের আরও দেশ বিচ্যুতির পথে হাঁটতে পারেতাই আফ্রিকার সবচেয়ে শক্তিশালী আঞ্চলিক ব্লকের সম্ভাবনা ম্লান হয়ে যাচ্ছে। এই বিরোধপূর্ণ পক্ষগুলিকে একটি চুক্তিতে আনা দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য বেশ কঠিন কাজ হবে।

দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনীতি তার সবচেয়ে অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে কারণ প্রথম বারের মতো প্রধান বিরোধী দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স-এর (ডিএ) সঙ্গে একটি জোট সরকার পরিচালনা করছে।

এ ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকার বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে যা এই জি২০ অনুষ্ঠানের সাফল্যকে প্রভাবিত করতে পারে এবং মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনীতি তার সবচেয়ে অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে কারণ প্রথম বারের মতো প্রধান বিরোধী দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স-এর (ডিএ) সঙ্গে একটি জোট সরকার পরিচালনা করছে। অভ্যন্তরীণ বা বিদেশনীতির ক্ষেত্রে এএনসি এবং ডিএ প্রায়শই দু বিপরীত মেরুতে থাকে।

১৯৯৪ সালের বর্ণবাদী বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে নেলসন ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে এএনসি ক্ষমতায় আসার পর থেকে দলটি সর্বদা দেশ শাসন করে আসছে। তবে ব্যাপক দুর্নীতি, উচ্চ বেকারত্ব, ক্রমাগত অর্থনৈতিক বৈষম্য ক্রমবর্ধমান অপরাধ এই সবই লিবারেশন পার্টির ধীরে ধীরে পতনে অবদান রেখেছে।

এ দিকে অনেক নতুন মৌলবাদী দলের আবির্ভাব ঘটেছে। এর মধ্যে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার নেতৃত্বে ইউমখোনতো উইসিজওয়ে (এমকে) এবং জুলিয়াস মালেমার নেতৃত্বে ইকোনমিক ফ্রিডম ফাইটারস (ইএফএফ) সবচেয়ে প্রভাবশালী। সাম্প্রতিকতম এক বক্তৃতায় মালেমা বর্ণবাদ-যুগের গান দুবুল ইভুনুর বার্তাই উস্কে দিয়েছিলেন। এই গানের অর্থ হল বোয়ারদের গুলি করো, কৃষকদের গুলি করো’ এবং এই গানের মাধ্যমে আক্ষরিক অর্থে শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের হত্যা করার আহ্বান জানানো হয়েছিলজি২০ সম্মেলনের পর এই মৌলবাদী নেতারা কী করবেন, তা কেউ জানে নাকারণ তাঁরা অবশ্যই এই অনুষ্ঠানটিকে জনসাধারণের আরও দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য ব্যবহার করতে চাইবে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা তাঁর দেশের এই অনুষ্ঠানটি সফল ভাবে আয়োজনের ক্ষমতার উপর আস্থা প্রকাশ করার পাশাপাশি এই চ্যালেঞ্জগুলি সম্পর্কে সচেতন।

প্রসঙ্গ ট্রাম্প

শুধু এই অভ্যন্তরীণ মহাদেশীয় চ্যালেঞ্জগুলিই নয়, এর পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকাকে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মোকাবিলা করতে হবে। দ্বিতীয় বারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর পুনর্নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের অধীনে মার্কিন-আফ্রিকান নীতি কী ভাবে বিকশিত হবে, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা তুঙ্গে। প্রথম মেয়াদে আফ্রিকা মহাদেশের প্রতি ট্রাম্পের অবজ্ঞার কথা উল্লেখ করে বেশির ভাগ বিশ্লেষকই সন্দেহ করছেন যে, আফ্রিকা মহাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তির পুনরুজ্জীবনের কোনও সম্ভাবনা আছে কি না। যেহেতু ২০২৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জি২০-র নেতৃত্ব দেবে, তাই শীর্ষ সম্মেলনে ট্রাম্পের উপস্থিতি কিংবা অনুপস্থিতি দুই-ই আফ্রিকার প্রতি আসন্ন মার্কিন নীতির জন্য শক্তিশালী বার্তা প্রেরণ করবে।

দক্ষিণ আফ্রিকার জি২০ ছাড়াও আরও বেশি কিছুর জন্য ট্রাম্পের সমর্থন প্রয়োজন। এটিকে আফ্রিকা গ্রোথ অ্যান্ড অপারচুনিটি অ্যাক্ট-এর (এজিওএ) অংশ হতে হবে। ২০০০ সালে প্রবর্তিত এজিওএ হল এমন একটি মার্কিন আইন, যা সাব-সাহারান আফ্রিকা দেশগুলিকে শর্তসাপেক্ষে মার্কিন বাজারে প্রায় ১,৮০০ শ্রেণির মনোনীত পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার প্রদান করে। এই শর্তগুলির মধ্যে রয়েছে মার্কিন বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতা দূর করা, দারিদ্র্য হ্রাস করতে নীতিমালা প্রণয়ন করা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে এবং মানবাধিকার রক্ষা করা’

প্রথম মেয়াদে আফ্রিকা মহাদেশের প্রতি ট্রাম্পের অবজ্ঞার কথা উল্লেখ করে বেশির ভাগ বিশ্লেষকই সন্দেহ করছেন যে, আফ্রিকা মহাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তির পুনরুজ্জীবনের কোনও সম্ভাবনা আছে কি না।

নাইজার, গ্যাবন, উগান্ডা ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের - যারা আর এজিওএ-র অংশ নয় - উদাহরণ তুলে ধরে সেনেটরদের একটি দল এজিওএ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার বহিষ্কারের দাবি অব্যাহত রেখেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বেশ কিছু বিষয়ের প্রতিবাদ জানিয়ে তাঁরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে, ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে, রাশিয়ার পদক্ষেপের প্রকাশ্যে বিরোধিতা করতে অস্বীকার করে আসলে নীরবে সমর্থন করেছে, ২০২২ সালে কেপটাউনের কাছে একটি নিষেধাজ্ঞাবহনকারী রুশ জাহাজকে নোঙর করতে দিয়েছে এবং চিন ও রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক মহড়া আয়োজন করেছে। সর্বোপরি, তাইওয়ানকে প্রিটোরিয়া থেকে তার যোগাযোগের কার্যালয় স্থানান্তর করতে বলার বিষয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বশেষ সিদ্ধান্ত এমন একটি বিষয়, যা আক্ষরিক অর্থেই এই সেনেটরদের বিরক্ত করেছে।

৫৫.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ফতানির পরিমাণের ফলে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন পর্যন্ত বৃহত্তম এজিওএ সুবিধাভোগী মহাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রফতানিকারকনিম্নলিখিত রফতানিকারকদের সম্মিলিত রফতানির চেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা অনেক বেশি পরিমাণই ফতানি করে: নাইজেরিয়া (১১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), কেনিয়া (৭.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), লেসোথো (৬.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) এবং মাদাগাস্কার (৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। বর্তমানে, দক্ষিণ আফ্রিকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গড় বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৬৭.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। ফলস্বরূপ, ট্রাম্প ২.০-এর অধীনে দক্ষিণ আফ্রিকা-মার্কিন সম্পর্কের স্বাভাবিকীকরণ রামাফোসা সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক কাজ হবে কারণ রাশিয়া চিন উভয়ই এই ফলাফল নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।

যাই হোক না কেন, মার্কিন কংগ্রেসকে ২০২৫ সালে এজিওএ প্রোগ্রামটি পুনরায় অনুমোদন করতে হবে। মার্কিন কংগ্রেসে ইতিমধ্যেই একটি বিল আলোচনাধীন রয়েছে, যা এজিওএ-কে ২০৪৫ সাল পর্যন্ত আরও ২০ বছর ধরে দীর্ঘায়িত করবে। এজিওএ আমেরিকাকে আফ্রিকায় তার অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ আফ্রিকায় চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব রোধ করার পাশাপাশি তার প্রভাবশালী অবস্থান পুনর্নির্মাণের একটি শক্তিশালী সুযোগ প্রদান করে।

এ দিকে, ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকায় সাহায্য বন্ধ করার জন্য একটি কার্যনির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন এবং ইউএস সেক্রেটারি অফ স্টেট মার্কো রুবিও দক্ষিণ আফ্রিকার বিতর্কিত ভূমি দখল আইনের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে জি২০-তে তাঁর অনুপস্থিত থাকার কথা ঘোষণা করেছেন। চিনের গভীর স্বার্থ ও রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা স্বার্থের কারণে ট্রাম্প যদি দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন, তা হলে তা আমেরিকার আফ্রিকা সংক্রান্ত ভরকেন্দ্রের সমাপ্তি ঘটাতে পারে।

এজিওএ আমেরিকাকে আফ্রিকায় তার অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ আফ্রিকায় চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব রোধ করার পাশাপাশি তার প্রভাবশালী অবস্থান পুনর্নির্মাণের একটি শক্তিশালী সুযোগ প্রদান করে।

সংহতি, সমতা ও স্থিতিশীল উন্নয়ন’ (ফস্টারিং সলিডারিটি, ইক্যুয়ালিটি, অ্যান্ড সাস্টেনেবল ডেভেলপমেন্ট)… এই ভাবনা নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। যেহেতু দক্ষিণ আফ্রিকা ১.৫ বিলিয়ন আফ্রিকানদের আশা বহন করে, তাই জি২০ শুধু দেশটির জন্যই নয়, সমগ্র মহাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে কাজ করবে। নানাবিধ চ্যালেঞ্জ নির্বিশেষে দক্ষিণ আফ্রিকা তার কূটনৈতিক তত্পরতা প্রমাণ করবে এবং শীর্ষ সম্মেলনের সময় গ্লোবাল সাউথের আকাঙ্ক্ষা চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি এএনসি-র মুক্তির পথও প্রশস্ত করতে পারে। যেমনটা এখনও পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছে তা হল, এএনসি-জি২০ গৌরবের পথ নির্ধারিত হবে আফ্রিকা ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতিত্বকে কতটা সফল ভাবে পরিচালনা করে, তার উপর।

 


সমীর ভট্টাচার্য অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.