Author : Heena Makhija

Published on Nov 18, 2025 Updated 0 Hours ago

সন্ত্রাসবাদ বহুপাক্ষিক সংস্কারের মতো বিষয়গুলিতে বিস্তৃত ঐকমত্য থাকা সত্ত্বেও ব্রিকস কৌশলগত উত্তেজনা, সীমিত প্রাতিষ্ঠানিক ম্যান্ডেট এবং একটি সুসংগত শান্তি ও নিরাপত্তা কাঠামো গঠনে ভিন্ন জাতীয় স্বার্থের দ্বারা সীমাবদ্ধ থেকেছে

বহুপাক্ষিক শান্তি ও নিরাপত্তা কাঠামো প্রসঙ্গে ব্রিকস

২০২৫ সালের ৬-৭ জুলাই রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত ১৭তম শীর্ষ সম্মেলনে ব্রিকস নেতারা যখন একত্রিত হন, তখন দ্রুত বর্ধনশীল এই মঞ্চের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। যৌথ ঘোষণাপত্রে ১১টি সদস্য রাষ্ট্র অর্থ, ক্ষুধা, জলবায়ু পরিবর্তন উদীয়মান প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে। তবে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলার ব্রিকসকে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের (এনএএম) উত্তরাধিকারী হিসেবে ঘোষণা করার মন্তব্য, চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অনুপস্থিতি, এই গোষ্ঠীর ধারণাগত ভূ-রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে উদ্বেগকে পুনরুজ্জীবিত করে। নিরাপত্তা কাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে অন্তর্নিহিত কৌশলগত উত্তেজনার কারণে ব্রিকস সামান্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। পার্থক্যগুলি সংঘাত সমাধানের জন্য একটি সম্মিলিত প্রতিক্রিয়া তৈরি করার ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করলেও সাধারণ নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য একটি সঙ্কীর্ণ পরিসর রয়েছে।

ব্রিকস নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ

সাধারণ নিরাপত্তা হুমকি সংঘাত মোকাবিলার জন্য একটি অভিন্ন সাধারণ কাঠামো তৈরি করা ব্রিকসের জন্য একটি অবিরাম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দুটি প্রধান ঘটনা - সদস্যপদ সম্প্রসারণ এবং প্রধান সদস্য রাষ্ট্রগুলির সংঘাতে জড়িত থাকা - অভ্যন্তরীণ গতিশীলতাকে আরও জটিল করে তুলেছে। সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ধারণাগত মতবিরোধ এবং গোষ্ঠীর মধ্যেই অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক ভাবে শক্তিশালী দেশগুলির আধিপত্য এর মূল ম্যান্ডেটকে বরং দুর্বল করে দিয়েছে, যা জি৭ গোষ্ঠীর দেশগুলির বিকল্প হিসেবে উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য কাজ করার লক্ষ্যে তৈরি হয়েছিল।

সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ধারণাগত মতবিরোধ এবং গোষ্ঠীর মধ্যেই অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক ভাবে শক্তিশালী দেশগুলির আধিপত্য এর মূল ম্যান্ডেটকে বরং দুর্বল করে দিয়েছে, যা জি৭ গোষ্ঠীর দেশগুলির বিকল্প হিসেবে উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য কাজ করার লক্ষ্যে তৈরি হয়েছিল।

ফলস্বরূপ, সদস্যরা কোনও সাধারণ নিরাপত্তা কৌশল গঠনের ব্যাপারে নয়, বরং সংঘাত নিরসনে রাষ্ট্রপুঞ্জ (ইউএন) আন্তর্জাতিক আইনের সর্বোচ্চ গুরুত্ব বজায় রেখে তাদের নিজস্ব জাতীয় স্বার্থ রক্ষার উপর মনোযোগ দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ইউক্রেনে বিদ্যমান যুদ্ধের বিষয়ে ২০২২ সাল থেকে সমস্ত ব্রিকস ঘোষণাপত্রে রাষ্ট্রপুঞ্জে প্রকাশিত জাতীয় অবস্থানগুলি ধারাবাহিক ভাবে স্মরণ করা হয়েছে এবং আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানকে উৎসাহিত করা হয়েছে। এর দুই পারমাণবিক সদস্য রাষ্ট্রের - ভারত চিন - মধ্যে টানাপড়েনপূর্ণ সম্পর্কেরও সরকারি ঘোষণাপত্রে কোনও উল্লেখ নেই এবং কূটনৈতিক উপায়ে বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির উপর সাধারণ জোর দেওয়া হয়েছে। এমনকি একটি প্রাতিষ্ঠানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়গুলিতে এর সর্বজনীন সদস্যপদ সংজ্ঞায়িত ম্যান্ডেটের কারণে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রক্রিয়াগুলি অগ্রাধিকার পেয়েছে

স্বার্থ কোথায় একত্রিত হয়?

রাষ্ট্রপুঞ্জ সংঘাত নিরসনের কর্তৃত্ব বজায় রাখলেও ব্রিকস দেশগুলি উদীয়মান নিরাপত্তা উদ্বেগ মোকাবিলায় তাদের প্রচেষ্টা সমন্বয় করার চেষ্টা করেছে। বেশির ভাগ ব্রিকস ঘোষণাপত্রে সন্ত্রাসবাদকে একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। ২০২০ সালে ব্রিকস সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কৌশল গ্রহণ একটি সাধারণ পদ্ধতির ধারণা তৈরির দিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এটি ব্রিকস কাউন্টার-টেররিজম ওয়ার্কিং গ্রুপ (সিটিডব্লিউজি) গঠন করে এবং গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি) অপব্যবহার রোধ এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন গ্রহণের মতো লক্ষ্যগুলির রূপরেখা প্রদান করে ব্রিকস সদস্যরা মহাকাশ প্রযুক্তিতেও সহযোগিতা করেছে এবং মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা প্রতিরোধের নীতি (পিএআরওএস) স্বীকার করেছে। ২০২১ সালে সদস্যরা একটি ব্রিকস রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইট নক্ষত্রমণ্ডল তৈরির জন্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, যা প্রতিটি দেশের পর্যবেক্ষণ উপগ্রহগুলিকে তথ্য ভা করে নেওয়ার জন্য একটি শৃঙ্খলে সংযুক্ত করবে। মহাকাশের অস্ত্রায়ন সম্পর্কে ব্রিকস-এর উদ্বেগ গণবিধ্বংসী অস্ত্র (ডব্লিউএমডি) সম্পর্কে তাদের বৃহত্তর সাধারণ অবস্থানের সুঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক অস্ত্র এবং অন্যান্য ডব্লিউএমডি-মুক্ত একটি অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পক্ষে সমর্থন করে।

রাষ্ট্রপুঞ্জ সংঘাত নিরসনের কর্তৃত্ব বজায় রাখলেও ব্রিকস দেশগুলি উদীয়মান নিরাপত্তা উদ্বেগ মোকাবিলায় তাদের প্রচেষ্টা সমন্বয় করার চেষ্টা করেছে। বেশির ভাগ ব্রিকস ঘোষণাপত্রে সন্ত্রাসবাদকে একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

এই গোষ্ঠীটি তাদের ঘোষণাপত্রে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতা সশস্ত্র সংঘাতের কথা ধারাবাহিক ভাবে উল্লেখ করেছে। অতীতে ব্রিকস সিরিয়ার সংঘাতের যে কোন সামরিক সমাধানের নিন্দা করেছে এবং দামেস্কের আঞ্চলিক অখণ্ডতা নিশ্চিত করেছে। ২০২৫ সালের জুন মাসে প্রতীকী ইঙ্গিতে দেখা যায়, এই গোষ্ঠীটি ব্রিকস সদস্য ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলার নিন্দা জানিয়ে একটি যৌথ বিবৃতি জারি করে এবং সংঘাতের তীব্রতা বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। রিও ঘোষণাপত্রে, সদস্য রাষ্ট্রগুলি গাজা উপত্যকা অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের অন্যান্য সমস্ত অংশ থেকে ইরায়েলি বাহিনীকে সম্পূর্ণ রূপে প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক গাজা উপত্যকাকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অধীনে একত্রিত করার প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করেছে। পশ্চিমি হস্তক্ষেপবাদী পদ্ধতির বিরোধিতা রাষ্ট্রপুঞ্জে ব্রিকস সদস্যদের জন্য একটি সমাবেশের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং বিদ্যমান বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য স্থিতিশীল দাবি অব্যাহত রেখেছে।

তবে সাধারণ অবস্থান সত্ত্বেও ঘোষণাপত্রে বেশির ভাগ আবেদন - বিশেষ করে রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং অন্যান্য বহুপাক্ষিক সংস্কারের কথা উল্লেখ করে - কার্যকর ফলাফল অর্জন করতে পারেনি। সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে ব্রিকস সদস্যদের মধ্যে স্পষ্ট ঐমত্য থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে (ইউএনএসসি) পি৫-এর আধিপত্য বিদ্যমান নিরাপত্তা সমীকরণ ক্ষমতা কাঠামোকে আকার দিচ্ছে। চি-সহ অন্যান্য দেশের সমর্থনের অভাবের কারণে ইউএনএসসি-তে স্থায়ী আসনের জন্য ব্রাজিল ভারতের প্রচেষ্টা বারবার ব্যর্থ হয়েছে।

রিও ঘোষণা এবং এগিয়ে যাওয়ার পথ

ব্রিকস মূলত উদীয়মান অর্থনীতির একটি গোষ্ঠী, যা ভৌগোলিক ভাবে দূরে অবস্থিত এবং বৈশ্বিক বিষয়গুলিতে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে। এই মঞ্চটি সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে গ্লোবাল নর্থ দ্বারা প্রভাবিত বিদ্যমান বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার পক্ষপাতিত্ব মোকাবিলা করার জন্য একটি মঞ্চ প্রদান করে। বহুমেরুকৃত বিশ্ব ব্যবস্থার মধ্যে ব্রিকস-এর একটি প্রভাবশালী ব্লকে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা সাম্প্রতিক শীর্ষ সম্মেলনের প্রতি অন্যান্য দেশের প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ট। নিজের বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্রুত এই গোষ্ঠীর আমেরিকা-বিরোধী নীতি মেনে চলা দেশগুলির উপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন।

পশ্চিমি হস্তক্ষেপবাদী পদ্ধতির বিরোধিতা রাষ্ট্রপুঞ্জে ব্রিকস সদস্যদের জন্য একটি সমাবেশের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং বিদ্যমান বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য স্থিতিশীল দাবি অব্যাহত রেখেছে।

জলবায়ু পরিবর্তন, বাণিজ্য এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাস্তব অগ্রগতি হলেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, কৌশলগত উদ্বেগ সদস্য রাষ্ট্রগুলির ব্যক্তিগত অগ্রাধিকার সাধারণত বিশ্বব্যাপী সংঘাত নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলির প্রতি তাদের প্রতিক্রিয়া নির্ধারণ করে। তবে রিও ঘোষণায় ব্রিকস নেতারা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তায় সহযোগিতা করার জন্য আরও বেশি আগ্রহ দেখিয়েছেন। মূল বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলার নিন্দা, একতরফা রাষ্ট্রপুঞ্জ নিরাপত্তা পরিষদ-অনুমোদিত নিষেধাজ্ঞার নিন্দা, ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক সামরিক ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ, পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার নিন্দা এবং গাজা উপত্যকা দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের অংশ হওয়ার বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান। সর্বোপরি, রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রাধান্যের কারণে ব্রিকসের মতো মঞ্চগুলি বিশ্বব্যাপী সংঘাত সমাধানের ক্ষেত্রে সীমিত সুযোগ দর্শিয়েছেসাম্প্রতিক ঘোষণায় যেমন স্পষ্ট, সদস্য রাষ্ট্রগুলি রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং সংঘাতে জড়িত পক্ষগুলির মধ্যে আলোচনাকেই উৎসাহিত করেছে। ভূ-রাজনৈতিক ভাবে দ্বিধাবিভক্ত মঞ্চ হওয়া সত্ত্বেও ব্রিকস তার মঞ্চের মাধ্যমে যৌথ ভাবে পক্ষগুলির মধ্যে আলোচনা মধ্যস্থতা প্রচার করতে পারে। একটি সাধারণ নিরাপত্তা কাঠামো তৈরির ধারণাটি এখনও অসম্পূর্ণ থাকতে পারে তবুও বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ব্রিকস সদস্যদের অবশ্যই নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে, যার মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য আরও জোর দেওয়া।

 


হিনা মাখিজা অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।

 


নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখক(দের) ব্যক্তিগত।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.