-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি সরবরাহ শৃঙ্খলে চিনের আঁটোসাটো মনোভাব ভারতের শিল্প ও উদ্ভাবনী নীতি সুরক্ষিত করার প্রয়োজনীয়তাকেই দর্শায়।
একটি প্রথম সারির প্রযুক্তি সংস্থা এনভিডিয়া ঘোষণা করেছে যে, তারা চিনে তাদের এইচ২০ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চিপ বিক্রি করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। এই উন্নয়নটি তাদের সিইও জেনসেন হুয়াং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করার পর ঘটেছে। মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে এইচ২০ এআই চিপের বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করেছিল এবং এই শিথিলকরণ ওয়াশিংটনের প্রযুক্তি রফতানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার গতিপথে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের লক্ষণ।
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট এবং চিনা ভাইস প্রিমিয়ার হে লাইফেং-এর নেতৃত্বে বাণিজ্য সমাবেশে বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমনের জন্য দীর্ঘ আলোচনা ছিল। ২০২৫ সালের মে মাসে জেনেভায় আলোচনার পর ওয়াশিংটন ও বেজিং ৯০ দিনের জন্য তাদের পণ্যের উপর শুল্ক কমাতে সম্মত হয়েছিল। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার জন্য একটি কাঠামো গঠন করা হয়েছিল। জেনেভা আলোচনার সময় চিন আশ্বাস দিয়েছিল যে, তারা অ-শুল্ক পাল্টা ব্যবস্থা প্রত্যাহার করবে, যা ব্যাটারি এবং অন্যান্য উন্নত অ্যাপ্লিকেশন উৎপাদনে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞার একটি উল্লেখও বটে। যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও শিল্প সমিতিগুলি জানিয়েছে যে, চিনা কর্তৃপক্ষ রেয়ার আর্থের জন্য রফতানি শংসাপত্র প্রদানে সম্মত হচ্ছে না। পরিবর্তে, বেজিং ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে চিনা প্রযুক্তি সংস্থা হুয়াই কর্তৃক এআই চিপ ব্যবহারকে বিশেষ ভাবে সীমাবদ্ধ করার জন্য নিয়ম জারি করার অভিযোগ এনেছে। চিনা শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রদানের বিষয়টিও সামনে আসে, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করে যে, চিন ও হংকং থেকে আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই উন্নত করার জন্য অধ্যয়ন ভিসা সম্পর্কিত নির্দেশিকা পরিবর্তন করা হবে। পরে ২০২৫ সালের জুন মাসে ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট ও ভাইস প্রিমিয়ার হে লাইফেং লন্ডনে আলোচনার পর জেনেভা ঐকমত্য বাস্তবায়নের জন্য একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
গত পাঁচ বছরে প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক উত্তেজনার পর থেকে চিন ভবিষ্যতের আলোচনায় আমেরিকার সরবরাহ-শৃঙ্খল নির্ভরতাকে দর কষাকষির চিপ হিসেবে কাজে লাগানোর জন্য একটি রফতানি-নিয়ন্ত্রণ কাঠামো স্থাপনের কাজ শুরু করেছে।
এনভিডিয়ার এই পরিবর্তনের ফলে তাঁদের প্রধান নির্বাহী জেনসেন হুয়াং-এর উপর আলোকপাত হয়েছে, যিনি তাইওয়ানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে এসে নাগরিকত্ব লাভ করেছিলেন। এমন এক যুগে যেখানে প্রযুক্তি ভূ-রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে আটকে আছে, জেনসেনের স্বভাবোচিত কালো চামড়ার জ্যাকেটটি নেহাতই টেফলন-আচ্ছাদিত (অর্থাৎ যে কোনও পরিস্থিতিতে পার পেয়ে যেতে সক্ষম) বলে মনে হচ্ছে। ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ট্রাম্পের সঙ্গে এক নৈশভোজের জন্য জেনসেন ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও মার্কিন প্রশাসন চিনে এইচ২০ চিপ বিক্রি বন্ধ করে দেয়। বিচলিত না হয়ে জেনসেন বেজিংয়ের কাছে ছুটে যান এবং আশ্বাস দেন যে, তিনি পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন ও বাজারের প্রতি ‘আনুগত্য বজায় রেখেই সেবা’ প্রদানের কাজ চালিয়ে যাবেন। জেনসেন মে মাসে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও কাতারে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যদিও এই অঞ্চল ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকিতে পরিপূর্ণ। ট্রাম্প জেনসেনকে তাঁর ‘বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কারণ পরবর্তী কালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এআই সুপারকম্পিউটার তৈরির জন্য ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা মার্কিন প্রেসিডেন্টের উৎপাদন সংক্রান্ত স্বপ্নকে শক্তি জোগায়। অবশ্য এই মতামতও বিদ্যমান যে, এনভিডিয়ার এইচ২০ চিপস নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মন বদলের কারণ হতে পারে এই যে, জেনসেন ওয়াশিংটন ও বেজিংয়ের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।
এনভিডিয়া এইচ২০ চিপস নিয়ে মত পরিবর্তনের ফলে ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের চিনের রেয়ার আর্থ ক্ষমতার ব্যবহার সম্পর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে। গত পাঁচ বছরে প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক উত্তেজনার পর থেকে চিন ভবিষ্যতের আলোচনায় আমেরিকার সরবরাহ-শৃঙ্খল নির্ভরতাকে দর কষাকষির চিপ হিসেবে কাজে লাগানোর জন্য একটি রফতানি-নিয়ন্ত্রণ কাঠামো স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। চিন সাতটি রেয়ার পৃথিবী উপাদান ও চুম্বক - স্যামারিয়াম, গ্যাডোলিনিয়াম, টারবিয়াম, ডিসপ্রোসিয়াম, লুটেটিয়াম, স্ক্যান্ডিয়াম এবং ইট্রিয়াম - রফতানি সীমিত করেছে, যাদের প্রতিরক্ষা উৎপাদন, শক্তি উৎপাদন ও যানবাহন উৎপাদন খাতে প্রয়োগ রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা এবং এনভিডিয়ার চিপ সম্পর্কিত প্রযুক্তি রফতানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সফল ভাবে হ্রাস করার পর, বেজিং আরও ছাড় পেতে এই সুযোগকে আরও কাজে লাগাতে পারে। উপরন্তু, ট্রাম্পের আসন্ন বেজিং সফরের ফলে ওয়াশিংটন আপাতত আরও প্রযুক্তি নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করতে পারে। রেয়ার আর্থকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে ওয়াশিংটনের মন নরম করতে বেজিংয়ের আপাত সাফল্য তাকে অন্যত্রও এই সাধনী ব্যবহারে উৎসাহিত করতে পারে। ভারত-চিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই উন্নয়নের প্রভাব থাকতে পারে। কারণ উভয় দেশই ধারাবাহিক ভাবে সম্পর্ক স্বাভাবিক করছে। ২০২০ সালে গলওয়ানে চিনের সামরিক অভিযানের পর ভারত চিনা অ্যাপ, মূলধন বিনিয়োগ, ভিসা ও হুয়াইয়ের মতো তার প্রযুক্তিগত প্রধানদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সতর্কতামূলক স্বাভাবিকীকরণ সত্ত্বেও চিনের অর্থনৈতিক রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রভাব কমাতে অনেক পদক্ষেপ এখনও বহাল রয়েছে। ভারতের পাল্টা পদক্ষেপ সম্পর্কে চিনের মূল্যায়ন হল এই যে, তারা নয়াদিল্লির জন্য আরও বেশি কষ্টের সম্মুখীন হয়েছে। সাংহাই ইনস্টিটিউটস ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের দক্ষিণ এশিয়া গবেষণা কেন্দ্রের ডিরেক্টর লিউ জোংই যুক্তি দিয়েছিলেন যে, চিনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ভারতের প্রেরণা অর্থনৈতিক বিবেচনার কারণে এসেছে। লিউ চিনা প্রবাদ ‘xiè mò shā lǘ'’(卸磨杀驴) ব্যবহার করেছেন, যার অর্থ হল ‘সম্পূর্ণ ভাবে মুনাফা তুলে নেওয়ার পরেই কেউ গাধাকে মারতে উদ্যত হয়।’ ইঙ্গিতটি হল এই যে, ভারত তার নিজের দেশে ব্যবসা করা চিনা সংস্থাগুলির উপর অন্যায্য ভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে এবং তার পর থেকেই ভারত নাকি নিজের সিদ্ধান্তের জন্য অনুতপ্ত। এই চিনা মূল্যায়ন ২০২৩-২৪ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা দ্বারা সশক্ত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে, যা নিরাপত্তার প্রভাব উপেক্ষা করে চিনের সঙ্গে বৃহত্তর অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার জন্য একটি যুক্তি খাড়া করেছে।
রেয়ার আর্থকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে ওয়াশিংটনের মন নরম করতে বেজিংয়ের আপাত সাফল্য তাকে অন্যত্রও এই সাধনী ব্যবহারে উৎসাহিত করতে পারে। ভারত-চিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই উন্নয়নের প্রভাব থাকতে পারে। কারণ উভয় দেশই ধারাবাহিক ভাবে সম্পর্ক স্বাভাবিক করছে।
এর মাঝেই চিন কর্নাটক, তামিলনাড়ু ও তেলেঙ্গানার প্রায় ৩০০ জন চিনা কর্মীকে অ্যাপল আইফোন প্রস্তুতকারক ফক্সকন ইন্ডিয়ার কারখানায় ফিরিয়ে আনার খবর প্রকাশ করে। ভারতের উৎপাদন ভিত্তি উন্নত করার জন্য গ্যাজেট নির্মাতাদের আমন্ত্রণ জানাতে নয়াদিল্লি উৎপাদন-সংযুক্ত প্রণোদনা প্রকল্প ব্যবহার করেছে। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে শেষ হওয়া আর্থিক বছরে ভারতে মোট ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আইফোন একত্রিত করার কাজ হয়েছিল।
গাড়ি নির্মাতারা অভিযোগ করেছেন যে, তাঁরা চিনের কাছ থেকে রেয়ার আর্থ চুম্বক পেতে অক্ষম। ফলস্বরূপ, নয়াদিল্লির ই-যানবাহনের জন্য চাপ নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন রয়েছে। চিনে জার্মান সংস্থা হেরেনকনেট দ্বারা নির্মিত টানেল-বোরিং সরঞ্জামের নয়াদিল্লিতে সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে বেজিং। ২০২৪ সালের অক্টোবরে শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল এবং জার্মানির তৎকালীন মিনিস্টার ফর ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ক্লাইমেট অ্যাকশন রবার্ট হ্যাবেকের ভারত সফরের সময় বিষয়টি উঠে আসে। মোদী সরকারের অধীনে দিল্লি, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই ও কলকাতার মতো শহরে বেশ কয়েকটি মেট্রো-রেল প্রকল্প, আহমেদাবাদ-মুম্বই বুলেট ট্রেন প্রকল্প এবং টানেল-খনন যন্ত্রগুলি এই অবকাঠামো প্রকল্পগুলির মূল বিষয়। বেজিং ভারতে ফসলের পুষ্টি হিসাবে ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) রফতানিও কমিয়ে দিচ্ছে। এর খাদ্য নিরাপত্তা ও সামগ্রিক ভাবে ভারতীয় অর্থনীতির উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। কারণ ভারতীয় কর্মীদের বেশির ভাগই এখনও কৃষিতে নিযুক্ত। সরকারি রেকর্ড থেকে জানা যায় যে, ২০২৫ সালের মে মাসে মোট ডিএপি মজুদ ছিল ১.৮ মিলিয়ন টন, যা ২০২৪ সালের মে মাসে ছিল ২.৮ মিলিয়ন টন। অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়গুলিকে আটকে রাখার নীতিনির্ধারকদের প্রবণতা ভারতের চিন নীতির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেজিংয়ের অর্থনৈতিক প্রভাবকে ব্যর্থ করতে হলে নয়াদিল্লিকে তার উৎপাদন উচ্চাকাঙ্ক্ষা দ্বিগুণ করতে হবে।
কল্পিত এ মানকিকর অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Kalpit A Mankikar is a Fellow with Strategic Studies programme and is based out of ORFs Delhi centre. His research focusses on China specifically looking ...
Read More +