Author : Rumi Aijaz

Published on Jul 01, 2023 Updated 0 Hours ago

শহর পরিকল্পনা এবং উন্নয়নকারী সংস্থাগুলিকে অবশ্যই অরক্ষিত শহুরে জনগোষ্ঠীর সমস্যা সমাধানের জন্য পদক্ষেপ করতে হবে

শহরগুলিকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করা

শহরগুলি বিভিন্ন ধরনের কাজের সুযোগ করে দেওয়ার মাধ্যমে ক্রমাগত বিপুল সংখ্যক মানুষকে আকর্ষণ করে। এ ক্ষেত্রে উপলব্ধ সুযোগের পরিসর এতটাই বৈচিত্র্যময় যে, বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের মানুষেরা শহরে চাকরি খুঁজে পেতে সফল হন। এমনকি যাঁদের কোনও বা ন্যূনতম শিক্ষাগত অর্জন বা দক্ষতা নেই, তাঁরাও সাইকেল রিকশা চালানো, নির্মাণকাজ এবং আবাসিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় প্রয়োজনীয় অন্য নানা পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কাজ পান। প্রকৃত পক্ষে, বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর আকাঙ্ক্ষা পূরণে শহরগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এই ধরনের প্রবণতা ভারতীয় শহরগুলিতে বেশ সাধারণ এবং এর ফলে শহুরে এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন জনসংখ্যার বসতি স্থাপিত হয়েছে। এ কথা বলা যেতে পারে যে, ভারতীয় শহরগুলির সামগ্রিক ব্যক্তিত্ব বিরাজমান সামাজিক বৈচিত্র্য দ্বারা  নির্মিত। এই প্রবণতাগুলি উত্সাহব্যঞ্জক হলেও এই ধরনের বৈচিত্র্যময় জনসংখ্যার আরও ভাল ব্যবস্থাপনার জন্য একটি জরুরি প্রয়োজন বিদ্যমান। শহরের সরকারগুলি সমস্যা সমাধানের জন্য নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে এবং অনেক উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলেও সুবিধাগুলি বেশ কিছু জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছয় না।

বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘শহুরে সামাজিক বৈষম্য’ হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে,  যেখানে শহরের জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশের কাছে মৌলিক প্রয়োজনীয়তাগুলির পর্যাপ্ত লভ্যতা নেই এবং ফলে তা নিম্ন মানের জীবনযাত্রার দিকে পরিচালিত করে। এ প্রসঙ্গে একাধিক গবেষক এই মত পোষণ করেন যে, নগর নীতি এবং উদ্যোগগুলি আসলে ‘বর্জনীয়’ এবং বর্তমান পদ্ধতিটিকে সমাজের বঞ্চিত অংশগুলির উদ্বেগগুলিকে মোকাবিলা করতে হবে, যাঁরা শহরগুলির কার্যকারিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। শহরগুলিকে ইনক্লুসিভ বা ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ করার জন্য নেতৃস্থানীয় বিশ্ব সংস্থাগুলির বারবার জোর দেওয়ার নেপথ্যে এই প্রশাসনিক ঘাটতি একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

শহরের সরকারগুলি সমস্যা সমাধানের জন্য নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে এবং অনেক উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলেও সুবিধাগুলি বেশ কিছু জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছয় না।

উপলব্ধি হওয়া সত্ত্বেও ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক শহর’-এর অগ্রগতি হতাশাজনক। উন্নত অর্থনীতিতে এটি জাতিগত সঙ্কট থেকেই বেশ স্পষ্ট, যেখানে স্থানীয় জনসংখ্যা ব্যতীত অন্য নাগরিকরা প্রায়শই জাতিগত অপবাদ, হয়রানি এবং বৈষম্যের শিকার হন। কখনও কখনও উত্তেজনা সহিংস সামাজিক সংঘাতের দিকেও ত্বরান্বিত করে। বিশ্বের অন্যান্য অংশে বর্জনীয় প্রবণতা অবশ্য ভিন্ন। যেমনটা আগেও উল্লেখ করা হয়েছে যে, অরক্ষিত জনগোষ্ঠী একটি শালীন জীবনযাপনের জন্য প্রশাসনের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সহায়তা পায় না। এর মধ্যে রয়েছে নারী, নানা ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বা শারীরিক ভাবে বিশেষ সক্ষম ব্যক্তি, সাইকেল রিকশা চালক, পথচারী এবং সমাজের অর্থনৈতিক ভাবে অরক্ষিত মানুষ।

এ বার ভারতীয় শহরগুলির কিছু নগর পরিকল্পনার ঘাটতির পর্যালোচনা করা যাক, যা সমস্যাটিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। প্রথমত, জনপরিসরে নারীদের নিরাপত্তা একটি বড় উদ্বেগের বিষয়; এটি হিংসা এবং অপরাধের পুনরাবৃত্তি থেকে স্পষ্ট। গ্রেটার মুম্বই পুলিশের ক্রাইম স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিপোর্ট শহরে নারীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, অপহরণ, খুন, হয়রানি, অ্যাসিড হামলা, শ্লীলতাহানি এবং ইভ-টিজিংয়ের মতো নানা ধরনের অপরাধের তথ্য প্রদান করে। বাস এবং মেট্রো রেলের মতো পাবলিক ট্রানজিট সিস্টেমের সঙ্গে সংযুক্ত প্রথম ও শেষ অংশে এই ধরনের ঘটনা ঘটে। রাস্তার আলো, সিসিটিভি ইত্যাদির মতো শহুরে পরিকাঠামোর অভাব এবং এই ধরনের এলাকায় টহলদারদের অনুপস্থিতি অপরাধীদের অবাধ সুযোগ করে দেয়। নিরাপত্তার অভাব নারীদের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে; এটি তাঁদের শহুরে জীবনে অবদান রাখার ক্ষমতা হ্রাস করার পাশাপাশি সুযোগও সীমিত করে। এ হেন পরিস্থিতি নিরাপত্তা অডিট-সহ লিঙ্গ সংবেদনশীল হস্তক্ষেপের দাবি রাখে।

অরক্ষিত জনগোষ্ঠী একটি শালীন জীবনযাপনের জন্য প্রশাসনের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সহায়তা পায় না।

দ্বিতীয়ত, আবাসন ক্ষেত্রে সবচেয়ে সাধারণ সমস্যাগুলি হল শহুরে দরিদ্রদের আবাসনের জন্য জমি বরাদ্দ ও ক্রয়ক্ষমতা সম্পর্কিত। নিম্ন উপার্জনক্ষম বহু মানুষই পরিকল্পিত আবাসিক এলাকায় বাড়ি কিনতে বা ভাড়া নিতে সক্ষম নন। এর পাশাপাশি সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন প্রকল্পগুলি সাধারণত জমির প্রাপ্যতার কারণে শহরের সীমানা জুড়ে অবস্থিত হলেও এই ধরনের এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ, মৌলিক পরিকাঠামো এবং পরিষেবাগুলির ঘাটতি বিদ্যমান। ফলে একটি বৃহৎ অংশের জনসংখ্যা শহরের কেন্দ্রীয় এলাকায় অবস্থিত বস্তি এবং দুর্বল ভাবে নির্মিত অন্যান্য পরিকাঠামোয় বসবাস করতে পছন্দ করে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার (শহর) মতো উদ্যোগের মাধ্যমে শহরে আবাসন বৈষম্য কমানোর প্রচেষ্টা চলছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (শহর) আসলে এমন এক ধরনের আবাসন প্রকল্প, যার লক্ষ্য হল সকল বাসিন্দাদের জন্য উপযুক্ত আবাসন (ভাড়ার আবাসন-সহ) প্রদান করা। সরকারি পরিসংখ্যান দর্শায় যে, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত জাতীয় প্রকল্পের অধীনে অনুমোদিত বাড়ির ৪০ শতাংশই এখনও সম্পূর্ণ  হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকারি তহবিল সময় মতো দেওয়া সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করে এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য আবাসন ঋণের ব্যবস্থা করে এই কাজটিকে ত্বরান্বিত করা দরকার।

তৃতীয় সমস্যাটি অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনৈতিক কর্মক্ষেত্রে নিযুক্ত ব্যক্তিদের কাজের অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত। শহরগুলিতে কর্মশক্তির একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মীদের নিয়ে গঠিত। যাঁরা জনপরিসরে পণ্য বিক্রির সঙ্গে জড়িত, তাঁরা নানা অসুবিধার সম্মুখীন হন। অপ্রাতিষ্ঠানিক অবস্থানের কারণে তাঁরা প্রায়শই প্রশাসনের দ্বারা হয়রানির শিকার হন। এর পাশাপাশি আবার তাঁদের জন্য উপযুক্ত ভেন্ডিং স্পেস বা পণ্য বিক্রয় করার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিসর এবং সুযোগ-সুবিধা (পানীয় জল, স্বাস্থ্যবিধি) তৈরি করা হয়নি। এ ধরনের পরিস্থিতি তাঁদের জীবিকা ও স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। বহু অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মী রাস্তার ধারে ও ফুটপাতে থেকে কাজ করেন এবং এই অভ্যাসটি পথচারী ও মোটর গাড়ির চলাচলকেও প্রভাবিত করে। সুতরাং ভেন্ডিং জোন নির্ধারণ, অস্থায়ী বহুস্তরীয় দোকান নির্মাণ এবং জনসাধারণের সুবিধার্থে নানা ব্যবস্থা তৈরির মাধ্যমে অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতিকে আরও দক্ষ ভাবে পরিচালনা করা দরকার।

একটি বৃহৎ অংশের জনসংখ্যা শহরের কেন্দ্রীয় এলাকায় অবস্থিত বস্তি এবং দুর্বল ভাবে নির্মিত অন্যান্য পরিকাঠামোয় বসবাস করতে পছন্দ করে।

চতুর্থত, বিপুল সংখ্যক মানুষ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী নন। তাঁরা অন্ধত্ব, শ্রবণ ও বাক-সমস্যায় জর্জরিত এবং হাত ও পায়ের অক্ষমতার মতো সমস্যায় ভোগেন। ভারতীয় শহরগুলি তাঁদের নানাবিধ চাহিদা পর্যাপ্ত ভাবে পূরণ করে না। কয়েকটি আবাসন, জন পরিসর, ট্রাভেল করিডোর এবং ট্রানজিট সিস্টেমে তাঁদের সুবিধার জন্য পরিকাঠামো, র‌্যাম্প, লিফট এবং দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করার জন্য উঁচু পৃষ্ঠতল-সহ ফুটপাতের মতো পরিষেবা রয়েছে। যাই হোক, ভিন্ন ভাবে সক্ষম জনসংখ্যার জন্য সমস্যাগুলির নিরিখে একটি শহরব্যাপী পরিকল্পনা এবং প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়ার অভাব রয়েছে। যেখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে শারীরিক ভাবে অক্ষম ব্যক্তিরা আক্রান্ত হন বলে মনে করা হয়, সেখানে এই সমস্যাটির জরুরি ভিত্তিতে সুরাহা  করা দরকার। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, পুনেতে বাসের ধাক্কায় দুই অন্ধ ছাত্র গুরুতর ভাবে আহত হন। ফুটপাতহীন রাস্তার অংশ দিয়ে তাঁরা হাঁটার সময়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

বর্জনের আর একটি উদাহরণ হল জনসাধারণের পরিবহণব্যবস্থা, পানীয় জল এবং স্বাস্থ্যবিধির মতো জনসাধারণের পরিষেবা / সুবিধা সংক্রান্ত নীতির অভাব। এটি মূলত আধা-শহুরে এলাকায় পরিলক্ষিত হয়, যেখানে সরকারকে কর প্রদান করা সত্ত্বেও বাসিন্দাদের সমস্যাগুলি মোকাবিলা করার জন্য নিজেদেরই ব্যবস্থা করে নিতে হয়।

তাই নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন সংস্থাগুলিকে অরক্ষিত জনগোষ্ঠীর সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে। নানাবিধ সাক্ষাৎকারমূলক সমীক্ষা এবং অরক্ষিত মানুষদের দৈনন্দিন কার্যকলাপের ক্ষেত্র নিয়ে গবেষণা কার্যকর সংস্কারমূলক কৌশল বিন্যাসে সাহায্য করতে পারে।


রুমি আইজাজ অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের আর্বান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.