নেপালে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রবর্তনের পর থেকে একক ব্যবস্থার অধীনে পৌরসভা এবং গ্রামীণ পৌরসভার মতো স্থানীয় প্রশাসনগুলির উন্নয়নের লক্ষ্যে এত বেশি তহবিল এর আগে কখনও বরাদ্দ করা হয়নি। তরাই, পার্বত্য এবং পাহাড়ি অঞ্চল থেকে শুরু করে প্রায় সমস্ত পৌরসভা এবং গ্রামীণ পৌরসভার রাস্তা, সেচ এবং ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত নানাবিধ উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। তবে ব্যাপক দুর্নীতি, জনসাধারণের উপর আরোপ করা বিশাল করের বোঝা, তহবিলের অপব্যবহার এবং যুক্তরাষ্ট্রীয়, প্রাদেশিক এবং স্থানীয় পর্যায়ে কাজের পুনরাবৃত্তি বাস্তবায়নের মাত্র ছয় বছরের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রতি মানুষের মোহভঙ্গের কারণ হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষিতে কাঠমান্ডুতে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের অবসানের জন্য বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষ এক সুবিশাল বিক্ষোভের আয়োজন করেন।
২০১৫ সালে নেপালের সংবিধানে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা চালু হয়। সেই অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রীয় পার্লামেন্ট, প্রাদেশিক অ্যাসেম্বলি এবং স্থানীয় প্রশাসনগুলির জন্য দু’বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল – প্রথম বার ২০১৭ সালে এবং দ্বিতীয় বার ২০২২ সালে। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার অধীনে দেশে ৭৬১টি সরকার কার্যকর রয়েছে যার মধ্যে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় স্তরে, সাতটি প্রাদেশিক পর্যায়ে এবং ৭৫৩টি স্থানীয় পর্যায়ে কাজ করছে। সাংবিধানিক বিধান অনুসারে ৭৬১টি সরকারের প্রত্যেকটিই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারলেও প্রাদেশিক এবং স্থানীয় সরকারগুলি আর্থিক সহায়তা এবং প্রশাসনিক কর্মীদের জন্য কাঠমান্ডুতে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের উপর বহুলাংশে নির্ভর করে।
ব্যাপক দুর্নীতি, জনসাধারণের উপর আরোপ করা বিশাল করের বোঝা, তহবিলের অপব্যবহার এবং যুক্তরাষ্ট্রীয়, প্রাদেশিক এবং স্থানীয় পর্যায়ে কাজের পুনরাবৃত্তি বাস্তবায়নের মাত্র ছয় বছরের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রতি মানুষের মোহভঙ্গের কারণ হয়ে উঠেছে।
মদেশীয়, জনজাতি, দলিত এবং অন্যান্য সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর দীর্ঘ সংগ্রামের পর দেশে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। তরাই কংগ্রেস নেতা বেদানন্দ ঝা ১৯৫০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনের পক্ষে আওয়াজ তুলেছিলেন। পরবর্তী সময়ে মাওবাদীরাও ১৯৯৬ এবং ২০০৬ সালের মধ্যে ও তার পরেও তাদের গণযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে সমর্থন করেছিল।
নেপাল যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও প্রাদেশিক ও স্থানীয় প্রশাসনগুলিকে পর্যাপ্ত প্রশাসনিক ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। বাস্তবে তারা প্রশাসনিক কর্মী নিয়োগও করতে পারে না। কেন্দ্রে নেপালের যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক প্রশাসনিক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে। একই ভাবে নেপাল সরকারের অর্থমন্ত্রক প্রাদেশিক এবং স্থানীয় প্রশাসনগুলিকে তহবিলের একটি বড় অংশ প্রদান করে।
বিদ্যমান যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় স্থানীয় প্রশাসনগুলির ভূমিকা তুলনামূলক ভাবে বেশি। জনগণের দৈনন্দিন জীবনে প্রাদেশিক সরকারগুলির ভূমিকা বরং সীমিত। এই কারণেই রাজেন্দ্র লিংডেলের অধীনে রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি এবং রবি লামিছনের অধীনে স্বতন্ত্র পার্টি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো থেকে প্রাদেশিক সরকারগুলিকে বাদ দিতে চান।
একই ভাবে নেপাল সরকারের অর্থমন্ত্রক প্রাদেশিক এবং স্থানীয় প্রশাসনগুলিকে তহবিলের একটি বড় অংশ প্রদান করে।
গত ছয় বছরে প্রাদেশিক সরকারগুলি স্থানীয় প্রশাসনগুলির মতো একইভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রাদেশিক এবং স্থানীয়… উভয় সরকারই যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারকে তাদের দুর্বল কাজের জন্য অভিযুক্ত করে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার তাদের সময়মতো প্রয়োজনীয় তহবিল সরবরাহ করতে পারেনি বা দৈনন্দিনের প্রশাসন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক কর্মী সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্য দিকে, যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার প্রাদেশিক এবং স্থানীয় প্রশাসনগুলির প্রতি তাদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় না করার অভিযোগ তুলেছে।
প্রাদেশিক ও স্থানীয় প্রশাসনগুলি জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলেও তারা এখনও বিদ্যমান। প্রকৃতপক্ষে তারা বৃহৎ বা প্রান্তিক… প্রায় সব রাজনৈতিক দলের জন্য কামধেনু রূপে নিজেদের তুলে ধরেছে। এগুলি রাজনৈতিক দলের কর্মীদের নিয়োগ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।
তাই দেশের বিভিন্ন স্থানে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা সম্পর্কে মানুষের হতাশা বাড়ছে। প্রাদেশিক এবং স্থানীয় প্রশাসনগুলিতে কর্মরত বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধি তাঁদের স্বার্থের জন্য জনসাধারণের তহবিলের অপব্যবহার করেন এবং সুবিধা ভোগ করে্ন। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রবর্তনের পর দুর্নীতির ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণ হয়েছে। আগে দুর্নীতির বীজ বেশিরভাগ কেন্দ্রেই সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু এখন তা কেন্দ্র থেকে প্রদেশে এবং পৌরসভা বা গ্রামীণ পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডেও ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রাদেশিক এবং স্থানীয় প্রশাসনগুলিতে কর্মরত বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধি তাঁদের স্বার্থের জন্য জনসাধারণের তহবিলের অপব্যবহার করেন এবং সুবিধা ভোগ করে্ন।
সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ১৮০টি দেশের দুর্নীতি উপলব্ধি সূচক (২০২২) তুলে ধরেছে যেখানে ব্যাপক দুর্নীতি হওয়ার দরুন নেপাল ১১০তম অবস্থানে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভুটান ২৫তম, মলদ্বীপ ৮৫তম, ভারত ৮৫তম, শ্রীলঙ্কা ১০১তম, পাকিস্তান ১৪০ তম, বাংলাদেশ ১৪৭তম এবং আফগানিস্তান ১৫০তম স্থানে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় নেপালের চেয়ে শুধু পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানই বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত।
এটি দুর্ভাগ্যজনক যে, যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দুর্নীতির গহনে ডুবে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রীয়, প্রাদেশিক এবং স্থানীয় প্রশাসনগুলির মধ্যে দায়বদ্ধতা এবং সমন্বয় ব্যবস্থার অভাব দেশে ব্যাপক দুর্নীতি এবং তাদের দুর্বল কাজের জন্য অনেকাংশেই দায়ী। এটি দেশে যুক্তরাষ্ট্রীয়তার বর্তমান অবস্থার স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে যেখানে প্রধান সুবিধাভোগীদের মধ্যে রয়েছেন রাজনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক দলের কর্মীরা। দেশের ক্রমাবনত অর্থনৈতিক অবস্থাও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারকে সাতটি প্রাদেশিক এবং ৭৫৩টি স্থানীয় সরকারের সুবিশাল ব্যয় মেটানোর কাজ পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করছে। এমতাবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রীয়তার পতন আসন্ন বলেই মনে করা হচ্ছে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.