Author : Sauradeep Bag

Published on Jun 10, 2023 Updated 0 Hours ago

হংকংয়ে চিনের ডিজিটাল সম্পদ পরীক্ষানিরীক্ষা বিশ্বের আগ্রহের ক্ষেত্র, কারণ তা আরও ভাল নীতি নির্ধারণে সহায়তা করতে পারে

হংকং কি চিনের ক্রিপ্টো স্যান্ডবক্স?

একটি অশান্ত এবং অনিশ্চিত বিশ্বে ক্রিপ্টো শিল্প ভাগ্যের জোয়ার-ভাটার প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। তবুও বিশৃঙ্খলার মধ্যে হংকং অটলভাবে ডিজিটাল সম্পদের কেন্দ্র হয়ে ওঠার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা মূল ভূখণ্ড চিনের তুলনায় সম্পূর্ণ বিপরীত, যেখানে বেজিং সমস্ত ধরনের ক্রিপ্টো-সম্পর্কিত কার্যকলাপের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। জুন মাসে হংকং ক্রিপ্টো ট্রেডিং মঞ্চের জন্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ফিউচার কমিশন কর্তৃক লাইসেন্স বাধ্যতামূলককারী প্রবিধান বাস্তবায়ন করবে। নিয়ন্ত্রক ভার্চুয়াল অ্যাসেট ট্রেডিং মঞ্চের তত্ত্বাবধানে তার প্রস্তাবের উপর একটি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যা চিনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলে ডিজিটাল মুদ্রার চিরবিকাশমান পরিসরে একটি নতুন অধ্যায় চিহ্নিত করেছে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি ছাড়াও চিন হংকংয়ের ক্রিপ্টো-সম্পর্কিত কার্যকলাপগুলির উপর নজর রাখছে, যার মধ্যে নতুন ক্রিপ্টোসম্পর্কিত পণ্য এবং ব্লকচেন-ভিত্তিক সমাধান প্রদান অন্তর্ভুক্ত।

ক্রিপ্টোকে নিবিড় নিয়ন্ত্রক পরীক্ষানিরীক্ষার আওতায় আনার জন্য এই পদক্ষেপ নিরীক্ষণ করার সময় চিনা সরকার ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ওয়েব ৩-এর বিশ্বে হংকংয়ের প্রবেশের উপরও নিবিড় নজর রাখছে। বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন যে, বেজিং হংকংয়ের ক্রিপ্টো প্রবিধান কীভাবে বাজারে প্রভাব ফেলবে, তা পর্যবেক্ষণ করছে। হংকংয়ের নিয়ন্ত্রক পদ্ধতি সফল প্রমাণিত হলে এটি চিনের অন্যান্য অংশে নীতি প্রণয়নের নির্দেশনায় সাহায্য করতে পারে। ক্রিপ্টোকারেন্সি ছাড়াও চিন হংকংয়ের ক্রিপ্টো-সম্পর্কিত কার্যকলাপগুলির উপর নজর রাখছে, যার মধ্যে নতুন ক্রিপ্টোসম্পর্কিত পণ্য এবং ব্লকচেন-ভিত্তিক সমাধান প্রদান অন্তর্ভুক্ত।

ওয়েব ৩ কী?

বিকেন্দ্রীভূত ওয়েব নামে পরিচিত ওয়েব ৩ ইন্টারনেটের একটি নতুন প্রজন্মকে বোঝায়, যা ব্যবহারকারী এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলির মধ্যে বিকেন্দ্রীভূত এবং পিয়ার-টু-পিয়ার আদানপ্রদান সক্ষম করতে ব্লকচেন প্রযুক্তি ব্যবহার করে। ওয়েব ২.০-র বিপরীতে, যেখানে বড় সংস্থাগুলি প্রচুর পরিমাণে ব্যবহারকারীর তথ্য এবং অনলাইন অভিজ্ঞতার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখত, ওয়েব ৩ ব্যবহারকারীদের তাদের তথ্য এবং মিথস্ক্রিয়াগুলির উপর আরও নিয়ন্ত্রণ এবং মালিকানা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়। বিকেন্দ্রীভূত প্রোটোকল এবং মঞ্চ ব্যবহার করে এমনটা করা সম্ভব হয়েছে, যেমন ইথেরিয়াম এবং আইপিএফএস, যা বিকেন্দ্রীভূত অ্যাপ্লিকেশন (ডিঅ্যাপস) তৈরি এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের মাধ্যমে মূল্য বিনিময়ের অনুমতি প্রদান করে। ওয়েব ৩ সম্ভাব্য ভাবে অর্থায়ন থেকে সোশ্যাল মিডিয়া পর্যন্ত শিল্পের বিস্তৃত পরিসরে রূপান্তর ঘটাতে পারে এবং উদ্ভাবন এবং সহযোগিতার জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম।

প্রস্তাবিত প্রবিধান

হংকংয়ের সাম্প্রতিক ক্রিপ্টো প্রবিধানগুলি শর্ত প্রদান করে যে, শহরে সক্রিয় কেন্দ্রীভূত ভার্চুয়াল মুদ্রা এক্সচেঞ্জ বা অঞ্চলের বিনিয়োগকারীদের বিপণন পরিষেবাগুলিকে অবশ্যই সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ফিউচার্স অথরিটির কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। নতুন প্রবিধানের মধ্যে রয়েছে সম্পদ সুরক্ষা ব্যবস্থা, ক্লায়েন্ট শনাক্তকরণ, বিরোধ সমাধান, সাইবার নিরাপত্তা, আর্থিক গণনা, ঝুঁকির মূল্যায়ন, অর্থ তছরূপ এবং সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং বাজারের অসদাচরণকে রুখে দেওয়া। ক্রিপ্টোকারেন্সি শিল্পে উদ্ভাবন এবং উন্নয়নের প্রচার করার সময় বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা প্রদানই এই প্রবিধানের লক্ষ্য। এটি ব্লকচেন এবং ক্রিপ্টোসম্পর্কিত ব্যবসার জন্য হংকংকে আরও আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত করার একটি পদক্ষেপ হিসাবে স্বীকৃত হয়েছে। পরিশেষে এটি আরও ব্লকচেন-বান্ধব নীতি গ্রহণের নিরিখে চিনের অন্যান্য অঞ্চলের জন্য একটি মডেল হিসাবে কাজ করে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি শিল্পে উদ্ভাবন এবং উন্নয়নের প্রচার করার সময় বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা প্রদানই এই প্রবিধানের লক্ষ্য।

উদ্ভাবনকে ফিরিয়ে আনা?

ক্রিপ্টো ট্রেডিং সংক্রান্ত চিনা হস্তক্ষেপের পরে দেশের ক্রিপ্টো সংস্থাগুলি তাদের মনোযোগ বিদেশে স্থানান্তর করতে বাধ্য হয়েছে এবং অনেকেই আরও উপযুক্ত স্থানে ঘাঁটি স্থাপন করেছে। আরও কিছু উদ্ভাবনী সংস্থা সিঙ্গাপুর এবং দুবাইয়ের মতো জায়গায় নতুন কেন্দ্র স্থাপন করেছে এবং পাশাপাশি চিনে বিষয়টি ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ক্রিপ্টোকারেন্সির জন্য হংকংয়ের আরও শিথিল নিয়ন্ত্রক পরিকাঠামো এই নির্বাসিত সংস্থাগুলির মধ্যে কয়েকটিকে দেশে ফিরে আসতে প্রলুব্ধ করতে পারে। ক্রিপ্টো ট্রেডিংয়ের অস্থিরতা থেকে পৃথক বিনিয়োগকারীদের রক্ষা করার জন্য বেজিংয়ের পদক্ষেপ সাম্প্রতিক বাজারের অস্থিরতার আলোকে বেশ বুদ্ধিমত্তার ছাপ রাখে। এটি ওয়েব ৩-তে ক্রমবর্ধমান আগ্রহকে অস্বীকার করতে পারে না। কারণ এটি পরবর্তী বৃহৎ ক্ষেত্র হয়ে উঠতে চলেছে, যার উপর গোটা বিশ্ব নিবিড় ভাবে নজর রাখছে।

বিশ্বের জন্য পাঠ

হংকংয়ে ডিজিটাল সম্পদ বিধি সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রক উন্নয়ন শুধু মাত্র চিনের জন্য নয়, ভারত এবং বাকি বিশ্বের জন্য একটি জটিল পরিস্থিতি উপস্থাপন করে। হংকং বিশ্বের বৃহত্তম আর্থিক কেন্দ্রগুলির অন্যতম হিসাবে বিশ্বব্যাপী আর্থিক পরিসরের উপর একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। এটি কী ভাবে ডিজিটাল সম্পদের বিধিবিধানগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং সেগুলির সঙ্গে মানিয়ে নেয়, তা বিশ্বব্যাপী অর্থ ও নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থাপত্র উভয়ের পরিপ্রেক্ষিতে বাকি বিশ্বের জন্য সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে৷ এই ধরনের অন্তর্দৃষ্টিগুলি বিশ্ব জুড়ে নীতিনির্ধারকদের জন্য সহায়ক। কারণ ডিজিটাল সম্পদ নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনও একটি পন্থাই সর্বজনীন নয়। তবে মূল নীতিগুলিও বিদ্যমান যা নীতি-কাঠামোর জন্য বিল্ডিং ব্লক হিসাবে কাজ করে৷ এই বিল্ডিং ব্লকগুলির আন্তঃকার্যকারিতার অনুধাবন নিয়ন্ত্রকদের তাদের দেশের জন্য অনন্য সমাধান খুঁজে পেতেও সাহায্য করবে।

হংকং বিশ্বের বৃহত্তম আর্থিক কেন্দ্রগুলির অন্যতম হিসাবে বিশ্বব্যাপী আর্থিক পরিসরের উপর একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে।

ডিজিটাল সম্পদের উত্থান বর্তমান আর্থিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করে না, কিন্তু চিরাচরিত অর্থের বিকল্প উপস্থাপন করে। ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ব্লকচেনভিত্তিক টোকেনগুলির দক্ষতা, লব্ধতা এবং অর্থের নিরাপত্তা উন্নত করার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও দ্রুত পরিবর্তনশীল আর্থিক পরিসরে প্রাসঙ্গিক থাকার জন্য চিরাচরিত আর্থিক ব্যবস্থাকে অবশ্যই এই পরিবর্তনগুলির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।

পর্যবেক্ষণ এবং তদন্ত

জুন মাসে কার্যকর হতে চলা আসন্ন ক্রিপ্টো প্রবিধানের মধ্যে হংকং ৮০টিরও বেশি বিদেশি এবং চিনা সংস্থার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, যা শহরে একটি ওয়েব ৩ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে৷ হংকং মনিটারি অথরিটি স্থিতিশীল মুদ্রা সংক্রান্ত প্রবিধান নিয়েও কাজ করছে, যা ২০২৪ সালের মধ্যে বলবৎ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। উপরন্তু, সরকার ওয়েব ৩ বাস্তুতন্ত্রের বৃদ্ধিকে সমর্থন করার জন্য ৫০ মিলিয়ন হংকং ডলার (৬.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বরাদ্দ করেছে, যেমন ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁর ২০২৩-২০২৪ বাজেট বক্তৃতার সময় হংকংয়ের আর্থিক সচিব পল চ্যান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

চিনের একটি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হিসাবে হংকং তার অর্থনৈতিক নীতি এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামোয় স্বায়ত্তশাসনের সুবিধা ভোগ করে। এটি এটিকে একটি বিশ্বব্যাপী আর্থিক কেন্দ্র হিসাবে তার সুখ্যাতি বজায় রাখার সুযোগ করে দিয়েছে, যা সারা বিশ্ব থেকে পুঁজি এবং প্রতিভা আকর্ষণ করে। ইতিমধ্যেই মূল ভূখণ্ড চিন কঠোর প্রবিধান প্রয়োগ করে এবং এই উদীয়মান প্রযুক্তিগুলি যেমন ব্লকচেন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির লব্ধতা সীমিত করে একটি সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে।

হংকং মনিটারি অথরিটি স্থিতিশীল মুদ্রা সংক্রান্ত প্রবিধান নিয়েও কাজ করছে, যা ২০২৪ সালের মধ্যে বলবৎ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

চিনের নীতিনির্ধারকরা যেমন স্বচ্ছতা বাড়ানো, দক্ষতা উন্নত করা এবং খরচ কমানোর মতো ব্লকচেনের সম্ভাব্য সুবিধা সম্পর্কে সচেতন। ব্লকচেন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতি হংকংয়ের নিয়ন্ত্রক পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ করে চিনের নীতিনির্ধারকরা আর্থিক বাজারে এই প্রযুক্তিগুলির প্রভাব নিরীক্ষণ করতে পারেন এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি ও সুবিধাগুলি মূল্যায়ন করতে সক্ষম। যদি হংকংয়ের প্রবিধানগুলি উদ্ভাবন প্রচারে এবং বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় সফল বলে প্রমাণিত হয়, তা হলে তারা আরও ওয়েব ৩ এবং ব্লকচেন-বান্ধব নীতি গ্রহণের নিরিখে চিনের জন্য একটি মডেল হিসাবে কাজ করতে পারে।

হংকংয়ে চিনের ডিজিটাল সম্পদ পরীক্ষানিরীক্ষা বিশ্বের জন্য আগ্রহের আর একটি ক্ষেত্র। কারণ তা আরও ভাল নীতি নির্ধারণে সাহায্য করতে পারে। এই পরিসরটি নিয়ন্ত্রণ করা উচিত কি না সেই প্রশ্নটি জটিল এবং নতুন পণ্য বিকাশের জন্য ক্রিপ্টো বাস্তুতন্ত্রকে অবাধে কাজ দেওয়া একটি সম্ভাব্য এবং ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতি। সাফল্য এবং ব্যর্থতা হল উদ্ভাবন ও নিয়ন্ত্রণের অত্যাবশ্যকীয় দিক এবং এটি নীতিনির্ধারকদের জন্য উভয়ের মধ্যে গতিশীল আন্তঃকার্যকারিতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার আর একটি সুযোগ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.