Author : Soumya Bhowmick

Published on Feb 04, 2024 Updated 0 Hours ago

সরকারি উদ্যোগ এবং একটি গতিশীল কর্মিবাহিনীসহ ভারত বৈচিত্র্যময় ও শক্তিশালী কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য ভাল অবস্থানে রয়েছে

ভারতের সুপার ১০: কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সুযোগের ক্ষেত্র

তার বিশাল ও বৈচিত্র্যময় অর্থনীতিসহ ভারত কয়েক বছর ধরে কর্মসংস্থানের গতিশীলতায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করেছে। অর্থনীতির কর্মসংস্থানের ভূচিত্র বিকশিত হচ্ছে, এবং অনেক ক্ষেত্র যথেষ্ট বৃদ্ধির সম্ভাবনা প্রদান করছে। ভারত তার অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে চলতে থাকায় ভারতীয় অর্থনীতিতে নিম্নলিখিত সুযোগ ক্ষেত্রগুলি দেশের কর্মসংস্থানের দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

(১) ডিজিটাল পরিষেবা

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে (৪আইআর) ভারতের নেতৃত্ব উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করেছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তি গ্রহণের দিকে চালিত করেছে, এবং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, ডেটা সায়েন্স ও ডিজিটাল মার্কেটিংএ দক্ষ পেশাদারদের চাহিদা তৈরি করেছে। ডিজিটাল অর্থনীতি ২০২৫ সালের মধ্যে সম্ভাব্য ৬০ থেকে ৬৫ মিলিয়ন চাকরি তৈরি করতে পারে, যার জন্য সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ডিজিটাল দক্ষতা প্রয়োজন। এই প্রবণতাটি ডিজিটালাইজেশনের দিকে বৃহত্তর বৈশ্বিক পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে ভারতের দক্ষতা ও কর্মিবাহিনী কাজের ভবিষ্য গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত।

চিত্র ১: ভারতের আইটি শিল্পের ক্ষেত্রভিত্তিক বৃদ্ধির হার (শতাংশে)

সূত্র:
ডিপার্টমেন্ট অফ কমার্স, ইউএসএ

 (২) আর্থিক পরিষেবা:

ব্যাঙ্কিং ‌ও বিমা পরিষেবার চাহিদা বৃদ্ধির কারণে ভারতে আর্থিক পরিষেবা ক্ষেত্র উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অধিকন্তু,
ফিনটেক উদ্ভাবনের উত্থান শিল্পকে নতুন আকার দিচ্ছে, এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ উন্মুক্ত করছে। প্রথমত, ডিজিটাল ব্যাঙ্কিংয়ের দিকে পরিবর্তন মোবাইল ও অনলাইন ব্যাঙ্কিং প্রযুক্তিতে, গ্রাহক অভিজ্ঞতা ডিজাইন করায় এবং সাইবার নিরাপত্তায় দক্ষ পেশাদারদের চাহিদা তৈরি করে। দ্বিতীয়ত, প্রযুক্তি সংহতকরণের মাধ্যমে বিমা ক্ষেত্র একটি পরিবর্তনের সাক্ষী হচ্ছে। বিমা ক্ষেত্রটি গুরুত্বপূর্ণ হবে, যার আয়তন ২০২৫ সালের মধ্যে ২৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার US$ 250 billion by 2025   হবে বলে প্রত্যাশিত, এবং ২০২০৩০ সালের মধ্যে ৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিরিক্ত জীবনবিমা প্রিমিয়ামের সুযোগ তৈরি হবে।

(৩) স্বাস্থ্য পরিষেবা:

ভারতীয় স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রটি
বিভিন্ন কারণের দ্বারা চালিত উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রথমত, বয়স্ক জনসংখ্যা এখন স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবার চাহিদা বাড়াচ্ছে, বিশেষ করে বয়সসম্পর্কিত এবং দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার জন্য। দ্বিতীয়ত, উচ্চতর স্বাস্থ্যসেবা সচেতনতা বাড়িয়েছে চিকিৎসা পরিষেবা, প্রতিরোধমূলক যত্ন এবং নিয়মিত চেকআপের প্রয়োজনীয়তা। টেলিমেডিসিন ও স্বাস্থ্য অ্যাপসসহ প্রযুক্তিগত অগ্রগতি স্বাস্থ্যসেবার প্রাপ্তিযোগ্যতা বাড়িয়েছে, বিশেষ করে কোভিড১৯ অতিমারির পরে, এবং দূরবর্তী পরামর্শের জন্য টেলিমেডিসিন প্রাধান্য পেয়েছে। ২০১৭ সালে ৬১.৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের হাসপাতাল শিল্পটি ২০২৩ সালের মধ্যে ১৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছে গিয়েছে বলে আশা করা হচ্ছে।

(৪) আতিথেয়তা সেবা:

ভারতের পর্যটন শিল্প উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির মুখে রয়েছে, এবং হোটেল ম্যানেজমেন্ট, ট্রাভেল এজেন্সি, রন্ধনশিল্প, পরিবহ ও সম্পর্কিত পরিষেবাগুলিতে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। পর্যটন ক্ষেত্র অতিমারির পরে ঘুরে দাঁড়ানোর পর এখন অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান রাখার জন্য প্রস্তুত। উপরন্তু, স্যুভেনির শপ ও বিনোদন সহ পর্যটনসম্পর্কিত পরিষেবাগুলি কর্মসংস্থানের সুযোগ আরও প্রসারিত করে। বর্তমান
বাজারের আকার ২৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, এবং ৪.৭৩ শতাংশের একটি প্রতিশ্রুতিসম্পন্ন সিএজিআরসহ শিল্পটি ২০২৮ সালের মধ্যে ২৯.৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সারণী ১: খসড়া পর্যটন নীতি, ২০২২এর লক্ষ্যমাত্রা

সূত্র:
সিবিআরই

(৫) ভোক্তা খুচরা পরিষেবা:

কমার্স ও সংগঠিত খুচরা বিক্রেতার ক্রমবর্ধমান আধিপত্যের সঙ্গে
ভারতীয় খুচরা ক্ষেত্র একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল বিপণন ইকমার্স যুগে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, এবং এসইও বিশেষজ্ঞ, বিষয়বস্তু নির্মাতা, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার ও ডিজিটাল বিজ্ঞাপন বিশেষজ্ঞদের কাজগুলি ব্যবসার অনলাইন উপস্থিতিতে সক্রিয়ভাবে অবদান রাখছে। এই খুচরো ক্ষেত্রের রূপান্তর ভারতে চাকরির ভূচিত্রকে নতুন আকার দিচ্ছে;‌ লজিস্টিক, গুদামজাতকরণ, ডিজিটাল বিপণন ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ তৈরি করছে;‌ এবং এইভাবে ভারতীয় চাকরির বাজারকে শক্তিশালী করছে। ভারতের ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত জনসংখ্যার পাশাপাশি ২৫ শতাংশের সিএজিআর বৃদ্ধি পাবে বলে প্রত্যাশিত খুচরা বাজার ২০২৭ সালের মধ্যে ১.১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০৩২ সালের মধ্যে ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।

(৬) বিশ্বব্যাপী সক্ষমতা কেন্দ্র:

ভারতের গ্লোবাল ক্যাপাবিলিটি সেন্টারগুলি (জিসিসি) হল আইটিসক্ষম পরিষেবা ক্ষেত্রের অপরিহার্য উপাদান, যা বিশ্বব্যাপী বহুজাতিক কোম্পানির ব্যাকঅফিস ক্রিয়াকলাপকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই ক্ষেত্রটি ভারতে কর্মসংস্থানের একটি উল্লেখযোগ্য চালক, যা
বিভিন্ন কাজের সুযোগ প্রদান করে প্রথমত, জিসিসি গ্রাহক সহায়তা পরিষেবা প্রদান করে বলে শক্তিশালী যোগাযোগ দক্ষতা ও ভাষার দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়োগ করে। দ্বিতীয়ত, তারা আইটি পরামর্শ পরিষেবা দিয়ে থাকে এবং সেই কাজের জন্য সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, সিস্টেম বিশ্লেষক, সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং প্রকল্প পরিচালকদের জন্য চাকরি তৈরি করে। তৃতীয়ত, জিসিসির মধ্যেকার ফিনান্স ও অ্যাকাউন্টিং দলগুলি হিসাবরক্ষক, আর্থিক বিশ্লেষক ও নিরীক্ষক নিয়োগ করে।

(৭) নবায়নযোগ্য শক্তি:

ভারত পরিচ্ছন্ন শক্তি সমাধানের দিকে এগনোর জন্য যথেষ্ট অগ্রগতি করেছে, বিশেষ করে নবায়নযোগ্য পরিসরে, যা পরিবেশগত স্থায়িত্বকে উন্নত করে এবং উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, প্রাথমিকভাবে সৌর ও বায়ুশক্তিতে। সবুজ শক্তি প্রযুক্তিতে ইনস্টলেশন, রক্ষণাবেক্ষণ ও গবেষণার জন্য দক্ষ কর্মীদের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে নবায়নযোগ্য শক্তির সম্প্রসারণ লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। এই প্রবণতাটি পরিচ্ছন্ন শক্তির দিকে বৈশ্বিক পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে সৌর ফটোভোলটাইক, জলবিদ্যুৎ, জৈব জ্বালানি ও বায়ুশক্তির মতো ক্ষেত্রগুলি পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিক্ষেত্রে চাকরি বৃদ্ধি করে। ২০২২ সালে সৌরশিল্প একাই অতিরিক্ত ৫২,০৮০ জন লোককে নিয়োগ করেছিল। এই ক্ষেত্রটি বৃদ্ধি পাওয়ার সময়
২০৩০ সালের মধ্যে ১ মিলিয়ন মানুষকে নিয়োগ করতে পারে

(৮) ইকমার্স:

অনলাইন কেনাকাটার সম্প্রসারণ দক্ষ লজিস্টিক ও ডেলিভারি পরিষেবার চাহিদাকে চালিত করেছে, এবং হাজার হাজার ডেলিভারি পার্টনার ও গিগ কর্মীদের জন্য চাকরি তৈরি করেছে। ইকমার্স কোম্পানিগুলি উল্লেখযোগ্য নিয়োগকর্তা, এবং তারা আইটি বিশেষজ্ঞ, ডিজিটাল পেমেন্ট বিশেষজ্ঞ ও মার্চেন্ডাইজার সহ বিভিন্ন ধরনের পেশাদারদের নিযুক্ত করে থাকে। ভারতের ইকমার্স বাজার
২০২৬ সালের মধ্যে ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা তার ২০২০ সালের ৪৬.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের থেকে যথেষ্ট বেশি।

(৯) এমএসএমই (অতিক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ):

অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের উদ্যোগগুলি (এমএসএমই) ভারতের অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ, এবং রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য অংশসহ
জিডিপিতে ৩০ শতাংশের বেশি অবদান রাখে তারা কর্মসংস্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস, যারা লক্ষ লক্ষ জীবিকা সমর্থন করে, যা সংখ্যার নিরিখে কৃষির পরেই দ্বিতীয়। অধিকন্তু, এমএসএমইগুলি উদ্যোক্তা, উদ্ভাবন এবং বৃহত্তর অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার জন্য একটি প্রজনন ক্ষেত্র হিসাবে কাজ করে, যা তাদের ভারতের অর্থনৈতিক ভূচিত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান করে তোলে। এমএসএমইগুলো ১ জুলাই, ২০২০ থেকে ১ আগস্ট, ২০২৩এর মধ্যে রেকর্ড ১২৩.৬ মিলিয়ন মানুষের কাজের ব্যবস্থা করেছে।

চিত্র ২: এমএসএমইতে কর্মসংস্থানের বণ্টন

সূত্র: ‌এমএসএমই মন্ত্রক, বার্ষিক প্রতিবেদন

(১০) স্টার্টআপ বাস্তুতন্ত্র:

ভারতের ক্রমসমৃদ্ধ স্টার্টআপ বাস্তুতন্ত্রর সাফল্যের অনেকটাই ঘটেছে সরকারের নীতির জন্য, যেমন
২০১৬ সালের স্টার্টআপ ইন্ডিয়া ইনিশিয়েটিভ এবং কর প্রণোদনা, যা স্টার্টআপকে আর্থিক বোঝা থেকে মুক্তি দেয় এবং উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণকে উৎসাহিত করে। ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতির জন্য ভারতের সমন্বিত প্রচেষ্টা স্টার্টআপের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসাবে এর মর্যাদাকে উন্নত করেছে। এখন তা বেঙ্গালুরু, মুম্বই, চেন্নাই, গুগাঁও ইত্যাদির মতো ভারতীয় শহর ও নগরগুলির উন্নয়নে আরও ইন্ধন জোগাচ্ছে, এন্টারপ্রেনোয়ারশিপ হাব হিসাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করছে, এবং স্টার্টআপ অঙ্গনে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় ভারতের উন্নতি ঘটাচ্ছে।

চিত্র ৩: স্টার্টআপ দ্বারা তৈরি করা চাকরি

সূত্র:
ইন্ডিয়ান ইকনমিক সার্ভে, ২০২২২৩

সংক্ষেপে, ভারতের কর্মসংস্থানের ভূচিত্র বিভিন্ন ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্মুখীন হচ্ছে। ডিজিটাল পরিষেবা থেকে শুরু করে একটি ক্রমসমৃদ্ধ স্টার্টআপ বাস্তুতন্ত্র পর্যন্ত, দেশটি যথেষ্ট কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রস্তুত৷ সরকারি উদ্যোগ এবং একটি গতিশীল কর্মীবাহিনী সহ ভারত বৈচিত্র্যময় এবং শক্তিশালী কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য ভাল অবস্থানে রয়েছে, কারণ এটি ২০২৭২৮ সালের মধ্যে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার দিকে লক্ষ্য অব্যাহত রেখেছে।




সৌম্য ভৌমিক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সেন্টার ফর নিউ ইকনমিক ডিপ্লোম্যাসির অ্যাসোসিয়েট ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.