Author : Ajay Bisaria

Published on Nov 05, 2024 Updated 0 Hours ago

ভারত চিরাচরিত নিরপেক্ষতার ঊর্ধ্বে উঠে শান্তি কূটনীতির জন্য সক্রিয়তর এবং কম ঝুঁকিসম্পন্ন ভঙ্গি গ্রহণ করেছে

ভারতের শান্তি স্থাপনের প্রয়াস কি কার্যকর হবে?

ভারতীয় কূটনীতি এক নতুন অবস্থান গ্রহণ করেছে, যা বিশ্বব্যাপী সংঘাতে চিরাচরিত নিরপেক্ষতার ঊর্ধ্বে উঠে শান্তি স্থাপনের সক্রিয় প্রচেষ্টার দিকে চালিত হয়েছে। ইউরোপের প্রাণকেন্দ্রে একটি সক্রিয় যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফর নিঃসন্দেহে একটি সাহসী এবং ঝুঁকিসম্পন্ন কূটনৈতিক মিশন এবং এই প্রথম কোন ভারতীয় নেতা শান্তির পক্ষে ওকালতি করতে যুদ্ধক্ষেত্রে সরাসরি প্রবেশ করেছিলেন। ইতালিতে জি৭ নেতাদের সঙ্গে মোদী ৩.০-র জুন মাসের বৈঠক, পুতিনের সঙ্গে জুলাই মাসে শীর্ষ সম্মেলন, অগস্ট মাসে কিয়েভে যাত্রা, তাঁর ইউক্রেন সফরের ফলাফল সম্পর্কে জানানোর জন্য পুতিন ও বাইডেনের সঙ্গে টেলি-কনফারেন্স, সেপ্টেম্বর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনাঅক্টোবর মাসে রাশিয়া ব্রিকস সম্মেলনের আলোচনা ইত্যাদি কূটনৈতিক পদক্ষেপকে অবশ্যই বৃহত্তর প্রেক্ষিতে বিবেচনা করা উচিত।

ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্য সাধনের কাজটি গুরুত্বপূর্ণকারণ যুদ্ধরত শিবির অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া উভয়ের সঙ্গেই ভারতের শক্তিশালী সমতাপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে।

ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্য সাধনের কাজটি গুরুত্বপূর্ণকারণ যুদ্ধরত শিবির অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া উভয়ের সঙ্গেই ভারতের শক্তিশালী সমতাপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। এই দুটি আন্তর্জাতিক শক্তিই ভারতের কৌশলগত, নিরাপত্তা, শক্তি এবং প্রযুক্তিগত চাহিদার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং সমস্ত প্রধান শক্তির সঙ্গে বহুমুখী সম্পৃক্ততা ভারতের বর্তমান বিদেশনীতি মতবাদের কেন্দ্রে রয়েছে। কিন্তু মধ্য ইউরোপের প্রসারের ক্ষেত্রে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্টতই ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যের ঊর্ধ্বে উঠে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যের সঙ্গে জড়িত হয়েছে।

একটি ‘উজ্জ্বল’ অংশীদারিত্ব

২২ অগস্ট পোল্যান্ডে মোদীসফর কার্যকর ভাবে ভারতকে মধ্য ইউরোপে তার উপস্থিতি বাড়াতে সাহায্য করেছিল। পোল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পঞ্চম বৃহত্তম দেশ এবং ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে পোল্যান্ড ইইউ-র পরিবর্তনশীল সভাপতিত্বের ভার গ্রহণ করবে। এই সফরের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কগুলি কৌশলগতঅংশীদারিত্বের স্তরে উন্নীত হয়েছে (একটি ভারত-ইইউ কৌশলগত অংশীদারিত্বের কাঠামোর আওতায়)। এটি এমন এক ধরনের কূটনৈতিক সম্মতি যা এ কথাই দর্শায় যে, সম্পর্কটি ইতিবাচক মনোভাব এবং যুক্তিসঙ্গত রাজনৈতিক, প্রতিরক্ষা অর্থনৈতিক স্বার্থের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সমস্যামুক্ত সম্পর্ক। ভারতের প্রায় ৪০টি কৌশলগত অংশীদারিত্বের নিরিখে এই কূটনৈতিক সঙ্কেতটি ভারতের কৌশলগত সম্পর্কের উপাদানের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যদিও উভয় পক্ষই শ্রমিকদের চলাচলের প্রচারের জন্য একটি সামাজিক নিরাপত্তা চুক্তি চূড়ান্ত করেছে।

যুদ্ধক্ষেত্রের অভিমুখে

পোল্যান্ড শুধুমাত্র নব্য ইউরোপের মুখই নয়, এটি ন্যাটোর পূর্ব সীমাও বটে এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ প্রচেষ্টার নিরিখে একটি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারীমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার দরুন পোল্যান্ডকে কখনও কখনও ‘ফিফটি ফার্স্ট স্টেট’ বা ‘৫১তম রাষ্ট্রহিসাবে উল্লেখ করা হয় যুদ্ধের কারণে আকাশপথ বন্ধ থাকায় পোল্যান্ড কিয়েভ সফরের জন্য মোদীস্টেজিং পোস্ট হিসেবেও কাজ করেছিল। মোদী পোল্যান্ড থেকে বুলেটপ্রুফ পোলিশ ট্রেন রেল ফোর্স ওয়ান-চড়ে পোলিশ ট্রান্স-কারপাথিয়ান প্রদেশ রেজেসজো থেকে কিয়েভ পর্যন্ত ১০ ণ্টার সফর করেন। এই সফরটিকে শান্তির জন্য আর কটি ঝুঁকি নেওয়ার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে এবং তা ২০১৫ সালে লাহোরে করা মোদীর শুভেচ্ছা সফর সেই সফরে মোদী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পারিবারিক বিয়েতে যোগ দিতে পাকিস্তানি হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছিলেন।

মোদী পোল্যান্ড থেকে বুলেটপ্রুফ পোলিশ ট্রেন রেল ফোর্স ওয়ান’-চড়ে পোলিশ ট্রান্স-কারপাথিয়ান প্রদেশ রেজেসজো থেকে কিয়েভ পর্যন্ত ১০ ণ্টার সফর করেন।

জুলাই মাসে মোদীর মস্কো সফরও সক্রিয় সংঘর্ষের মধ্যে হয়েছিল। কিন্তু এ বার ভারতের প্রধানমন্ত্রী এমন একটি সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে সফর করেছেন, যেখানে বিদ্যমান যুদ্ধ বিপজ্জনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং সফরের দিন পনেরো আগে রাশিয়ার কারস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের আক্রমণএবং ইউক্রেনের দোনেৎস্কে রাশিয়ার অবিচলিত আগ্রাসনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। মোদী পৌঁছনোর আগের রাতেই বিমান হামলার সাইরেন শোনা গিয়েছিল। ৩০ মাসব্যাপী যুদ্ধে উভয় পক্ষই ভবিষ্য শান্তি আলোচনায় নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য আঞ্চলিক বাফার (শূন্যস্থান) তৈরি করতে ব্যস্ত ছিল। আর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী সে দেশ ছাড়ার পরে রক্তক্ষয় আরও তীব্র হয়।

শান্তি প্রক্রিয়ার সূচনা করা ছাড়াও সফরটির নেপথ্যে প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পশ্চিমী অংশীদারদের মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখা। উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকলেও এবং নেতাদের মধ্যে কথাবার্তা বন্ধ থাকলেও রাশিয়া ইউক্রেন উভয়েই মোদীসঙ্গে সংঘাত সংক্রান্ত আলোচনায় রাজি হয় এমন এক সময়ে, যখন খুব কম সংখ্যক আন্তর্জাতিক নেতাই উভয় দেশের তরফে এমন আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ শক্তিশালী ভেটো প্রয়োগের দরুন অচল হয়ে পড়েছে।

দিল্লিতে একটি গ্লোবাল সাউথ ভার্চুয়াল সামিটের আয়োজন করার পরপরই মোদী বিশ্বব্যাপী খাদ্য, জ্বালানি এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার উপর এই দ্বন্দ্বের বেদনাদায়ক প্রভাবগুলি নিয়ে আলোচনা করেন, যা দরিদ্র দেশগুলির উপর অসামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে প্রভাব ফেলেছে। দক্ষিণ গোলার্ধের জন্য মোদীর প্রস্তাবিত ‘গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট কমপ্যাক্ট’টির পরিপূরক হয়ে ওঠার জন্য একটি ‘পিস কমপ্যাক্ট’-এর প্রয়োজন, যেটির লক্ষ্য হল সেই সকল যুদ্ধের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা, যেগুলিতে ধনী দেশ অংশগ্রহণ করে এবং দুর্বল দেশগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

শুধু নৈতিক রাজনীতি নয়

ভারতের জন্য এই সক্রিয় শান্তি অবস্থানটি বুদ্ধ গান্ধীর মাটি থেকে উঠে আসা শুধু মাত্র অযৌক্তিক নৈতিকতাই নয়। এটি একাধিক বাস্তবসম্মত উদ্দেশ্য পূরণ করেছে এবং সেগুলি ভারতের মাল্টি-ভেক্টর আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততার জন্য কূটনৈতিক পরিসর তৈরি করা, যা দেশটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া উভয়ের সঙ্গেই ফলপ্রসূ ভাবে সম্পৃক্ত থাকার সুযোগ দেয়; চিন থেকে পৃথক এবং একটি দায়িত্বশীল শান্তি-অন্বেষণকারী উদীয়মান শক্তি হিসাবে ভারতের সুনামকে সশক্ত করা; সংঘাত থেকে নিজস্ব অর্থনৈতিক সঞ্চারপথে পথচ্যুত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করা; এবং তাদের কণ্ঠস্বর হিসাবে কাজ করে গ্লোবাল সাউথের নেতৃত্বকে শক্তিশালী করা

ভারতীয় কূটনীতির জন্য এ কথাও গুরুত্বপূর্ণ হল, দক্ষিণ এশিয়াএকাধিক সমস্যায় জড়িয়ে না পড়লেও একটি আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা এবং নিজের বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষা করতে সক্ষম হওয়া। মোদী শুধুমাত্র প্রথাগত কাজই করছেন না, বরং তাঁর মিশনকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁসফরে তাঁকে সঙ্গ দিয়েছেন দেশের বিদেশমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা-সহ শীর্ষ বিদেশনীতি ও নিরাপত্তা দল।

জেলেনস্কি ব্যক্তিগত ভাবে পুতিনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেও তিনি রাশিয়ার নেতার বিরুদ্ধে তাঁর প্রকাশ্য তীব্র সমালোচনার বিষয়টি সফর-পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলনের জন্যই তুলে রাখেন, যেখানে তিনি পুতিনকে বিশ্বাস এবং খারাপ পরিস্থিতির দায়ে অভিযুক্ত করেছিলেন।

মোদী কিয়েভে উভয় পক্ষকেই পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, একসঙ্গে আলোচনা করেই এই সঙ্কট থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। মোদী ইউক্রেনকে আশ্বস্ত করে বলেছেন যে, তিনি ব্যক্তিগত ভাবে বন্ধু হিসেবেএবং ভারত শান্তি স্থাপনের যে কোন প্রচেষ্টায় সক্রিয় ভূমিকাপালন করতে প্রস্তুত থাকবে। উভয় পক্ষ ভারত-ইউক্রেন যৌথ বিবৃতিতেও কাজ করেছে। রাশিয়ার ইউক্রেন দখল সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যাপক মতপার্থক্যের নিরিখে এই যৌথ বিবৃতি বিস্ময়করও। জেলেনস্কি ব্যক্তিগত ভাবে পুতিনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেও তিনি রাশিয়ার নেতার বিরুদ্ধে তাঁর প্রকাশ্য তীব্র সমালোচনার বিষয়টি সফর-পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলনের জন্যই তুলে রাখেন, যেখানে তিনি পুতিনকে বিশ্বাস এবং খারাপ পরিস্থিতির দায়ে অভিযুক্ত করেছিলেন। ভারত সার্বভৌমত্ব আঞ্চলিক অখণ্ডতার নীতির প্রতি তার দায়বদ্ধতা দর্শিয়েছে, যা চিরাচরিত প্রতিদ্বন্দ্বী চিন ও পাকিস্তানের ঐতিহাসিক সাম্প্রতিক আঞ্চলিক আগ্রাসনের নিরিখে ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই নীতিগুলির উপর জোর দেওয়া এবং একই সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধের জন্য দেশটির নিন্দা না করা ও পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞা না মানা গত দশকব্যাপী ভারতের অটল অবস্থানকেই দর্শায় – অন্ততপক্ষে রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করার পর থেকে।

২৩ অগস্টের বিবৃতিতে ভারত অভিনব সমাধানগুলি তুলে ধরার জন্য সমস্ত অংশীদারের মধ্যে আন্তরিক ব্যবহারিক সম্পৃক্ততার প্রয়োজনীয়তার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে, যা ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পাবে এবং দ্রুত শান্তি পুনরুদ্ধারের দিকে চালিত করবে।’ সব কিছুই দর্শায় যে, ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, রাশিয়াকে আলোচনায় যোগদান করা থেকে বিরত রাখলে কোন শান্তি প্রক্রিয়া অর্থবহ হবে না। ঠিক যেমনটা  সুইস শহর বার্গেনস্টকে হওয়া সুইস-ইউক্রেনীয় শান্তি শীর্ষ সম্মেলনের’ ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, যেখানে ভারত সরকারি পর্যায়ে অংশগ্রহণ করলেও শীর্ষ সম্মেলনের বিবৃতিতে কোনও স্বাক্ষর করেনি।

সুইজারল্যান্ড, চিন, তুর্কিয়ের প্রস্তাবনার অনুরূপ ভারত ইউক্রেনের জন্য কোনও ‘শান্তি পরিকল্পনা’র কথা তুলে ধরেনি। কিন্তু এই ইঙ্গিত স্পষ্ট যে, ভারত উভয় পক্ষের হয়েই যে কোনও শান্তি প্রক্রিয়াজনিত ভূমিকা পালন করতে আগ্রহী এবং বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধের প্রেক্ষিতে ভারত এমনটা করতে ইচ্ছুক। আপাতত ভারত জেলেনস্কিকে আলাপ-আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে এবং এ কথাকে স্বীকৃতি দিয়েছে যে, সমাধা হওয়ার আগেই যুদ্ধের তীব্রতা বাড়তে পারে। এর পাশাপাশি ভারত ইউক্রেনে মানবিক ত্রাণ পাঠানো এবং দেশটির যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্নির্মাণের কাজে সহায়তার ইঙ্গিতও দিয়েছে। কূটনীতির পক্ষে ভারতের মত কিয়েভের হিসেব-নিকেশে অন্তর্ভুক্ত না-ও হতে পারে। নিঃসন্দেহে এই সমস্ত পদক্ষেপ রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের অন্যান্য মূল অংশীদারের সঙ্গে আগেভাগে আলোচনা করে নেওয়া হয়েছিল।

সুদীর্ঘ পথ

একটি ইউরোপীয় যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ভারতের কূটনীতির এই পর্ব থেকে তিনটি শিক্ষা গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রথমত, ভারত চিরাচরিত নিরপেক্ষতার ঊর্ধ্বে উঠে শান্তি কূটনীতির জন্য সক্রিয়তর কম ঝুঁকিসম্পন্ন ভঙ্গি গ্রহণ করেছে এবং সক্রিয় শান্তি প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হওয়ার সদিচ্ছা দর্শিয়েছে। প্রথম বার কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী দূরবর্তী সংঘাতে সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করলেন। মোদী এই পদ্ধতিকে একটি মোড়ক দিয়েছেন এবং বলেছেন যে, ভারত কখনই নিরপেক্ষ ছিল না, বরং শান্তির পক্ষে ছিল।

দ্বিতীয়ত, ভারত ইতিমধ্যেই শান্তি প্রক্রিয়ার সূচনা করেছে এবং উভয় যুদ্ধরত পক্ষকে একে অপরের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। পুতিনের সঙ্গে যুদ্ধের বিষয়ে মোদীর জুলাই মাসে আলোচনা সম্পর্কে ব্যক্তিগত ভাবে জেলেনস্কিকে জানানো হয়েছিল। একই ভাবে, জেলেনস্কির সঙ্গে হওয়া মোদীআলোচনা সম্পর্কে রাশিয়া অবগত হয়েছে। আসলে ইউক্রেন সফরের পর মোদী নিজেই পুতিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেনদেশে ফেরার পর মোদী এই যুদ্ধের মূল পশ্চিমী চালিকাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে আলোচনা করেন। এই সব আলাপ-আলোচনা একত্রিত ভাবে একটি বিশ্বাসযোগ্য শান্তি প্রচেষ্টাকেই দর্শায়, যদিও তীব্রতর হতে থাকা যুদ্ধের বর্তমান বাস্তবতার উপর এর যৎসামান্যই প্রভাব রয়েছে। তাই শান্তি স্থাপনের যদি দরকার পড়ে, তা হলে সেই প্রস্তাব নির্মাণের জন্য ভারতের হাতে যথেষ্ট সময় থাকবে

ভবিষ্যতে যদি আশার আলো দেখা যায়, তা হলে ভারত সংশ্লিষ্ট সব অংশীদারের মধ্যে একটি শান্তি আলোচনার নিরপেক্ষ মঞ্চ প্রদান করতে পারে। ভারত এই যুদ্ধের জন্য একটি বিশ্ব শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করতে পারে।

তৃতীয়ত, ভবিষ্যতে যদি আশার আলো দেখা যায়, তা হলে ভারত সংশ্লিষ্ট সব অংশীদারের মধ্যে একটি শান্তি আলোচনার নিরপেক্ষ মঞ্চ প্রদান করতে পারে। ভারত এই যুদ্ধের জন্য একটি বিশ্ব শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করতে পারে। এই সম্মেলনের সময়কাল আন্দাজ করা এখন নিঃসন্দেহে কঠিন। বিদ্যমান সংঘাতের অন্তিম পর্যায়টি নভেম্বর মাসে মার্কিন নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন যুদ্ধের সমাপ্তিকে তীব্র আকার দিতে পারে। তবে ট্রাম্প বা হ্যারিস হোয়াইট হাউসে ক্ষমতায় যিনি-ই আসুন না কেন, ভারত এখন শান্তি প্রক্রিয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।

বিশ্ব এখন এই আশা করবে যে, ইউক্রেন সংঘাত যেন ইউরোপে আর কটি বিশ্বযুদ্ধ অথবা পারমাণবিক সংঘাত উস্কে না দেয়। সংঘাত সমাধানের পথে এগোলে এ কথা বলা দুষ্কর যে, ইউক্রেন যুদ্ধের পরিণতি ঠিক কী হবে – একটি যুদ্ধবিরতি, একটি দীর্ঘায়িত হিমায়িতসংঘাত না কি আলোচনার মাধ্যমে শান্তি সমাধান। ভারত এই সংঘাতের সমাধানের জন্য বরাবরই কূটনীতির কথা তুলে ধরলেও ক্রমাগত রক্তক্ষয়ী সংঘাতের প্রেক্ষিতে ভূ-রাজনৈতিক পরিশীলন চালিয়ে যাওয়া দুষ্কর হবে। আপাতত ভারত স্বাধীন সিদ্ধান্তের জন্য পরিসর বজায় রাখতে সমর্থ হয়েছে এবং সাম্প্রতিক কূটনীতি রাশিয়া পাশ্চাত্য উভয়ের তরফেই ভারতের উপর চাপ কমিয়েছে। ভারত উভয় পক্ষের তরফেই অস্ত্র আমদানি অব্যাহত রেখেছে; রুশ তেল পশ্চিমী প্রযুক্তি ভারতে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারত ধৈর্য সহকারে যুদ্ধের এমন এক পর্বের অপেক্ষায় রয়েছে, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া দুই দেশই যুদ্ধবিরতি এবং আলোচনার পথে হাঁটতে চাইবে। এই প্রতীক্ষিত সময়টি নভেম্বর মাসের মার্কিন নির্বাচনের পরে আসতে পারে। ভারতকে সেই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, যাতে শান্তি প্রক্রিয়ায় সে একটি বৃহত্তর ভূমিকা পালন করতে পারে – এমনকি তার নিজস্ব শান্তি পরিকল্পনা না থাকলেও অন্তত পক্ষে বিশ্ব শান্তি সম্মেলনের জন্য যাতে মঞ্চ প্রদান করতে পারে।

 


অজয় বিসারিয়া অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডিস্টিঙ্গুইশড ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.