Author : Renita D'souza

Published on Dec 25, 2021 Updated 0 Hours ago

সরকারকে শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের মতো ব্যবস্থাগুলিতে বিনিয়োগ করতে হবে যা কোনও সংকটের মুখে জনসাধারণকে আরও বেশি স্থিতিস্থাপক করে তুলতে পারে।

ভারতের নব দরিদ্র: স্থিতিস্থাপকতার কৌশল

এই প্রতিবেদনটি কোলাবা এডিট ২০২১ সিরিজ-এর অন্তর্ভুক্ত।


দারিদ্র্যের উপর কোভিড-১৯ অতিমারির প্রভাব এতটাই নজিরবিহীন ছিল যে, আলোচ্য বিষয়টিকে তা একটি স্বতন্ত্র পরিভাষা দিতে বাধ্য করেছে: নব দরিদ্র। সেই সব মানুষ নব দরিদ্র শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত যাঁরা অতিমারির আগে ২০২০ সালে (এবং তার পরবর্তী সময়ে) দারিদ্র্যসীমার উপরে থাকবেন বলে আশা করা গিয়েছিল, কিন্তু এখন তাঁদের অবস্থান দারিদ্র্যসীমার নিচেই হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতে যদি সেই মানুষদের দরিদ্র বলে সংজ্ঞায়িত করা হয় যাঁরা জাতীয় ন্যূনতম মজুরি (এন এম ডব্লিউ) সীমার নীচে রয়েছেন যেমনটা শতপথী কমিটির রিপোর্টে দেখানো হয়েছে, তা হলে অতিমারির ফলে যে সব শ্রমজীবী মানুষ দারিদ্র্যের আওতাভুক্ত হয়েছেন, তার সংখ্যা ২৩ কোটি। এর মধ্যে সেই সব মানুষও অন্তর্ভুক্ত যাঁরা নিজেদের জীবিকা হারিয়ে অথবা শ্রমজীবী দরিদ্র এবং নতুন করে বেকার হওয়া মানুষদের উপরে নির্ভরতার ফলে নব দরিদ্র শ্রেণিভুক্ত হয়েছেন। ফলে ২০২১ সালের মে মাসে ভারতে এ রকম নব দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ২৩ কোটির সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে এবং এর মধ্যে ৫ কোটি এমন মানুষও আছেন যাঁরা এন এম ডব্লিউ সীমারেখার উপরে চলে যেতে পারতেন, এবং বাকিরা এই সীমার উপরেই ছিলেন।

এর মধ্যে সেই সব মানুষও অন্তর্ভুক্ত যাঁরা নিজেদের জীবিকা হারিয়ে অথবা শ্রমজীবী দরিদ্র এবং নতুন করে বেকার হওয়া মানুষদের উপরে নির্ভরতার ফলে নব দরিদ্র শ্রেণিভুক্ত হয়েছেন। ফলে ২০২১ সালের মে মাসে ভারতে এ রকম নব দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ২৩ কোটির সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে

ভারতের নব দরিদ্রদের অবস্থা যদিও অনেক দিক থেকেই বিশ্বব্যাপী অন্যান্য দেশের একই অর্থনৈতিক স্তরের মানুষদের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে তবুও তাঁদের সঙ্গে ভারতের নব দরিদ্রদের এমন কিছু পার্থক্য বিদ্যমান যা ভারতীয় প্রেক্ষিতে নব দরিদ্রদের উত্থানের কারণ বিশ্লেষণে গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় এবং বিশ্বব্যাপী নব দরিদ্রদের সিংহভাগই শহরবাসী, মহিলা, যুবসম্প্রদায় (গড়ে যাঁদের বয়স ২০ থেকে ৩০-এর মধ্যে), অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত এবং এঁদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নির্মাণ ক্ষেত্রে কর্মরত। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে সদা দরিদ্র মানুষদের সঙ্গে নব দরিদ্র মানুষদের এই ফারাক ভারতেও বর্তমান।

বিশ্বব্যাপী সদা দরিদ্রদের মধ্যে ৩২ শতাংশ, ৬০ শতাংশ এবং ৩২ শতাংশ মানুষ যথাক্রমে বিদ্যুৎ, পরিশুদ্ধ জল এবং উন্নত নিকাশি ব্যবস্থার সুযোগ পান, সেখানে ভারতের নব দরিদ্রদের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ যথাক্রমে ৫১ শতাংশ, ৭৪ শতাংশ এবং ৪৫ শতাংশ। ভারতে আয় হ্রাসের পরিমাণ এতটাই গুরুতর ছিল যে, সদা দরিদ্র এবং নব দরিদ্র উভয় গোষ্ঠীর মানুষই তাঁদের খাদ্যের পরিমাণ কমিয়ে অতিমারির দিনগুলি অতিবাহিত করেছেন। বস্তুত, ২০২০ সালের এপ্রিল এবং মে মাসে ভারতের দরিদ্রতম ২০ শতাংশ পরিবার কোনও রকম আয়ের মুখ দেখেনি। এই দরিদ্র মানুষেরা ব্যক্তিগত স্তরে টাকা ধার নিয়ে খাদ্য, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ চালিয়েছেন। অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, বিদ্যুৎ, জল এবং নিকাশি ব্যবস্থা তাঁদের কাছে আর্থিক বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

বিশ্বজনীন প্রেক্ষিতে কৃষি ক্ষেত্রে নব দরিদ্র মানুষের সংখ্যা সদা দরিদ্র মানুষদের তুলনায় কম। যদিও ভারতে কৃষি ক্ষেত্রে অসংগঠিত কর্মিদলকে কাজে লাগানো একটি প্রচলিত পন্থা। এই কর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে সেই মানুষদের জন্য, যাঁরা কাজ হারানোর ফলে প্রাথমিক ভাবে স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করেছেন এবং তার পরে অস্থায়ী কাজ খুঁজেছেন এবং সব শেষে বাধ্য হয়ে অসংগঠিত ক্ষেত্রে সবেতন চাকরিতে রাজি হয়েছেন। যদিও পৃথিবীব্যাপী নব দরিদ্রদের শিক্ষার মান সদা দরিদ্রদের চেয়ে অনেকটাই বেশি বলে আশা করা হয়, ভারতের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা তেমন নয়। এ দেশে এই দুই গোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে শিক্ষাগত স্তরে কোনও তারতম্য চোখে পড়ে না।

এই দরিদ্র মানুষেরা ব্যক্তিগত স্তরে টাকা ধার নিয়ে খাদ্য, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ চালিয়েছেন। অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, বিদ্যুৎ, জল এবং নিকাশি ব্যবস্থা তাঁদের কাছে আর্থিক বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

অতিমারি পরবর্তী সময়ে ভারতে দারিদ্র‍্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া অবাক করার মতো ঘটনা নয়। অতিমারিকৃত দারিদ্র্য টালমাটাল ভারতকে আঘাত করেছে। দারিদ্র্য অতিক্রমকারী এমন একটি উল্লেখযোগ্য অংশের মানুষ — বিশেষত যাঁরা দারিদ্র্যসীমার ঠিক উপরেই আছেন — অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এই দুর্বলতার অনেকগুলি দিক রয়েছে: নিম্নমানের কর্মসংস্থান, অনিশ্চিত আয়, ন্যূনতম সঞ্চয়, সম্পদের অভাব, সামাজিক নিরাপত্তার অনুপস্থিতি, অপ্রতুল বাসস্থান, দক্ষতা ও শিক্ষার অভাব এবং রাজনৈতিক কণ্ঠস্বরের অভাব। ভারতে দারিদ্র্য হ্রাসের পরিসংখ্যানটিকে সাফল্যের নজির হিসেবে দেখানো হচ্ছে। ফলে নীতি নির্ধারণের সময়ে অসংরক্ষিত মানুষদের কথা গণ্য করা হচ্ছে না। অধিকতর অনিশ্চয়তা শুধু মাত্র রোগ সংক্রমণের সম্ভাবনাই বাড়ায় না, তা বিপর্যয়ও ডেকে আনে। একই সঙ্গে অনিশ্চয়তা এই মানুষদের কাছ থেকে বিপর্যয়ের সময়ে প্রতিরোধের ক্ষমতা কেড়ে নেয়।

স্থিতিস্থাপকতার উৎস

দারিদ্র্য দূরীকরণের সুপ্রভাব ধরে রাখা যাবে না যতক্ষণ না এর ফলে উপকৃত মানুষদের আরও বেশি স্থিতিস্থাপক করে তোলা হচ্ছে যাতে তাঁরা ফের দারিদ্র্যের ফাঁদে পা না দেন। স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলার কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হল পর্যাপ্ত আর্থিক সঞ্চয়, জমি বা বাড়ি রূপে সম্পদ, শিক্ষা এবং দক্ষতার উচ্চ মান, বিমা এবং ডিজিটাল দুনিয়ায় বিশেষত ডিজিটাল পাবলিক গুডস ব্যবহারের সামর্থ্য। এটা কোনও কাকতালীয় ঘটনা নয় যে, স্থিতিস্থাপকতার এই উৎসগুলি কোভিড-১৯ অতিমারির ধাক্কার সঙ্গে যুঝতে প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাবে। স্থিতিস্থাপকতার সঙ্গে সঙ্গে আসে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে উন্নতির ক্ষমতা এবং সংকটের মুখে মানিয়ে নেওয়ার শক্তি।

শিক্ষা খাতে জি ডি পি-র ব্যয় করা অংশের পরিমাণ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি সরকারকে অবশ্যই এই সব খরচ একটি উন্নত, ফলাফলভিত্তিক জনশিক্ষা এবং দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা নির্মাণে সুনিশ্চিত করতে হবে। এর ফলে জীবিকা ক্ষেত্রে উন্নত আর্থিক স্তরে ঊর্ধ্বমুখী গমন এবং সংকটের মুখে অভিযোজন সহজতর হবে।

স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলার কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হল পর্যাপ্ত আর্থিক সঞ্চয়, জমি বা বাড়ি রূপে সম্পদ, শিক্ষা এবং দক্ষতার উচ্চ মান, বিমা এবং ডিজিটাল দুনিয়ায় বিশেষত ডিজিটাল পাবলিক গুডস ব্যবহারের সামর্থ্য।

সার্বিক চিকিৎসা বিমার নিরাপত্তা জনস্বাস্থ্যের অবনতি ঘটানো স্বাস্থ্য সংকটের মুখে অসংরক্ষিত মানুষের ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়া এবং তার অব্যবহিত পরে দারিদ্র্যের ফাঁদে পড়া থেকে সুরক্ষা সুনিশ্চিত করবে। জনস্বাস্থ্য পরিষেবার গুণমানের ঘাটতিগুলি সংশোধন করতে হবে এবং পাশাপাশি এই সব পরিষেবা সুলভ মূল্যে উপলব্ধ করতে হবে যাতে স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ কমিয়ে আনা যায়।

স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলার একটি মৌলিক উপাদান হল কর্মসংস্থান। যে কোনও যথাযথ কাজ নিশ্চিত এবং পর্যাপ্ত উপার্জন সুনিশ্চিত করে এবং কোনও না কোনও রূপে চাকরি এবং সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করে। সংগঠিত ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগের শ্লথ গতির ধারাবাহিক রীতিকে পালটে দিতে সরকারের প্রয়োজন বিদ্যমান বাস্তুতন্ত্রের পুনর্নির্মাণ। এটি সরকারি বিনিয়োগ, প্রশাসন, আনুষ্ঠানিক বিনিয়োগ ও বাজারের সুবিধা, ভর্তুকি এবং উৎসাহ ও বিভিন্ন সম্মতি প্রোটোকলের দ্বারা সংজ্ঞায়িত। বেসরকারি ক্ষেত্রগুলিও এই সূচকগুলি দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত। এই পুনর্নির্মাণের জন্য প্রয়োজন বিদ্যমান এম এস এম ই ও অন্য উদ্যোগগুলির পরিবর্ধন নিশ্চিত করা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রে ভৌগোলিক সমতা সুনিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে নতুন উদ্যোগগুলির গড়ে উঠতে বিশেষ সহায়তা করা।

যথাযথ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি মানুষকে সঞ্চয়ের মনোভাবে উৎসাহিত করে তোলার উদ্যোগও প্রয়োজন। কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রে ভৌগোলিক সমতার দিকটির পরিপূরক হিসেবে বাড়ির মালিকানা দেওয়া সম্ভব না হলেও অন্তত পক্ষে সরকারি মালিকানাধীন সুলভ মূল্যে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ‘পে অ্যাজ ইউ গো’ মডেল থাকা জরুরি।

এই সব পরিষেবা সুলভ মূল্যে উপলব্ধ করতে হবে যাতে স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ কমিয়ে আনা যায়।

অতিমারির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ উল্লেখযোগ্য ভাবেই মানুষের ডিজিটাল জীবনযাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার উপরে নির্ভরশীল থেকেছে। এই ধরনের অভিযোজনই আগামী ভবিষ্যতে সর্বোৎকৃষ্ট অভিযোজন পদ্ধতি হয়ে উঠতে পারে। ডিজিটাল পদ্ধতিগুলি হাতে থাকলে স্থিতিস্থাপকতার মাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে।

উপসংহারে বলা যায়, নীতি নির্ধারণের সময়ে দারিদ্র্য দূরীকরণের ঊর্ধ্বেও লক্ষ রাখা এবং অনিশ্চয়তায় ভোগা মানুষদের স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলার উপরে বিশেষ নজর দেওয়ার ক্ষেত্রে বার বার জোর দেওয়া প্রয়োজন।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.