Author : Niranjan Sahoo

Published on Dec 17, 2021 Updated 0 Hours ago

নতুন শিক্ষানীতি (‌এনইপি)‌ কার্যকর করার সঠিক পথে আছে অনেক রকম বাধা;‌ সেগুলো অতিক্রম করতে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলোকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।

পাঁচটি চ্যালেঞ্জ যা নতুন শিক্ষানীতি ২০২০–র ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে

গত বছরের জুলাই মাসে ভারত একবিংশ শতাব্দীর প্রথম ও সব থেকে বিস্তারিত শিক্ষা নীতি সামনে নিয়ে এল। ১৯৮৬–র পর প্রথম নীতি–সংকলন হিসেবে নতুন শিক্ষানীতি (এনইপি)‌ ২০২০–র সামনে আছে ভারতের শিক্ষাব্যবস্থার নানা সঙ্কট মোকাবিলার গুরুভার। ‌এনইপি–র প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপনের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘‘‌আমরা স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে প্রবেশ করছি। একদিক থেকে এনইপি রূপায়ণ এই উপলক্ষের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে উঠেছে। এটি নতুন ভারত ও ভবিষ্যতের–জন্য–তৈরি যুবসম্প্রদায় গড়তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।’‌’‌ শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, এনইপি ২০২০–কে বর্ণনা করেন একবিংশ শতাব্দীর এক দূরদর্শী শিক্ষানীতি হিসেবে যার মাধ্যমে ভারত প্রতিটি পড়ুয়ার সক্ষমতা কাজে লাগাচ্ছে, শিক্ষাকে সর্বজনীন করছে, সক্ষমতা তৈরি করছে, এবং দেশের শিক্ষার দৃশ্যপট পুরোপুরি বদলে দিচ্ছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‌এনইপি শিক্ষাকে সামগ্রিকতা দেবে, সামর্থ্য ও পৌঁছের মধ্যে নিয়ে আসবে, এবং ন্যায্যতা দেবে। কিন্তু এখনও অবধি এ কাজে কতটা অগ্রগতি হয়েছে?‌ এনইপি কি ঠিক পথে চলছে?‌ আগামী দশকগুলোতে এই মেগা শিক্ষানীতির সামনে বড়সড় চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?‌

গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকগুলো

ঘটনাবহুল সূচনার পর গত ১৬ মাসে বিশ্বব্যাপী অতিমারির বিরাট সমস্যার মধ্যেও কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছোঁয়ার পথে এনইপি অনেকটা এগোতে পেরেছে। শুরুতেই বলা যায়, বিভিন্ন অংশীদারের মধ্যে এনইপি–র উদ্দেশ্য ও দূরপ্রসারী কর্মপন্থা সম্পর্কে সচেতনতা ও আগ্রহ তৈরির ক্ষেত্রে সরকার ভালই কাজ করেছে। এই বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়েছে ১০ দিনের এক শিক্ষক পর্বে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী ও অন্য গুরুত্বপূর্ণ অফিসারদের নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে অনেকগুলো অনুষ্ঠান হয়েছিল। তারপরে অভিপ্রায় আরও স্পষ্ট করার জন্য সরকার মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের নাম পরিবর্তন করে করল শিক্ষামন্ত্রক। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকটিতে শক্তি ও গতিশীলতা আনা সম্ভব হয়েছে ধর্মেন্দ্র প্রধানকে নিয়ে এসে, যিনি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি মন্ত্রকে অনেক পরিবর্তন ঘটিয়েছিলেন। প্রধানের প্রমাণিত রূপায়ণগত দক্ষতা ও কূটনৈতিক আলোচনার নৈপুণ্য কাজে লাগবে এই বিশাল কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিয়ে যেতে, যা বিরোধী–শাসিত রাজ্যগুলোতে বিরোধের সম্মুখীন হবে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে।

শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান ‌এনইপি ২০২০–কে বর্ণনা করেন একাদশ শতাব্দীর এক দূরদর্শী শিক্ষানীতি হিসেবে যার মাধ্যমে ভারত প্রতিটি পড়ুয়ার সক্ষমতা কাজে লাগাচ্ছে, শিক্ষাকে সর্বজনীন করছে, সক্ষমতা তৈরি করছে, এবং দেশের শিক্ষার দৃশ্যপট পুরোপুরি বদলে দিচ্ছে।

এনইপি–র মূল কাজকর্ম এগিয়ে নিয়ে যেতে স্কুলগুলোর পাঠক্রম পরিবর্তন করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (‌এআই)‌ ও অর্থনৈতিক বিষয় ঢোকানো হয়েছে। এনইপি–তে যে হেতু মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষাগুলো প্রাথমিক গুরুত্ব পেয়েছে, তাই ইতিমধ্যেই অনেক রাজ্যে তা চালু করা হয়েছে, যদিও পাইলট ভিত্তিতে। তা ছাড়া মন্ত্রক চালু করেছে বহুকথিত অ্যাকাডেমিক ব্যাঙ্ক অফ ক্রেডিট, একটি কার্যক্রম যার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষায় পড়ুয়াদের অনেক বার প্রবেশ ও নিষ্ক্রমণের সুযোগ দেওয়া হবে। এগুলো ছাড়াও আছে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ:‌ যেমন নিপুণ ভারত মিশন, যার মাধ্যমে গ্রেড থ্রি–এর শেষে শিশুদের পড়া, লেখা ও অঙ্কের দক্ষতা বাড়িয়ে শেখার যোগ্যতা বাড়ানো হবে;‌ বিদ্যা প্রবেশ, যা গ্রেড ওয়ান–এর শিশুদের জন্য তিন মাসের স্কুল প্রেপারেশন মডিউল;‌ দীক্ষা, যা কিনা ই–কনটেন্ট শেখানো ও শেখার আধার;‌ এবং নিষ্ঠা, মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। রাজ্যগুলিতে এনইপি চালু হওয়ার প্রসঙ্গে বলা যায়, অল্প কয়েকটি রাজ্য যারা মূলত শাসক দলের অধীন, তারাই এটি গ্রহণ করেছে। কর্ণাটক দেশের প্রথম রাজ্য হিসেবে এনইপি গ্রহণ করেছে ২৪ আগস্ট তারিখে। সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশ ও হিমাচল প্রদেশ একগুচ্ছ এনইপি উদ্যোগ শুরু করেছে, এবং তার ফলে এই মেগা শিক্ষানীতির অতি–প্রয়োজনীয় অগ্রগতি হয়েছে। সব মিলিয়ে এনইপি গতি পেতে শুরু করেছে।

পাঁচটি বড় চ্যালেঞ্জ

এনইপি যদিও মোটের উপর ভাল গতি পেতে শুরু করেছে, একে সাকার করার পথে কিন্তু আছে অসংখ্য বাধা। প্রথমত, ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রের বিরাট আয়তন এবং বৈচিত্র কাজটাকে করে তোলে দুরূহ। যেমন ধরা যাক স্কুলশিক্ষার পরিসর। ১৫ লক্ষেরও বেশি স্কুল, ২৫ কোটি ছাত্রছাত্রী, আর ৮৯ লক্ষ শিক্ষক–শিক্ষিকা নিয়ে ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা হল পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম। উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার আয়তনও বিশাল। এআইএসএইচই–র ২০১৯ রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে আছে প্রায় ১ হাজার বিশ্ববিদ্যালয়, ৩.‌৭৪ কোটি পড়ুয়া, ৩৯,৯৩১ কলেজ, এবং ১০,৭২৫ নিজস্ব ধরনের প্রতিষ্ঠান। কাজেই এই মেগা শিক্ষানীতি দেশজুড়ে রূপায়ণ একটা বিশাল বড় কাজ, যার অংশীদারেরা আছে রাজ্য, জেলা, উপজেলা ও ব্লক স্তরে। এবং সেই সঙ্গে রাজ্য ও জেলাস্তরের অসাধারণ বৈচিত্র‌ সত্ত্বেও সকলের মধ্যে দায়িত্বভার ভাগ করে নেওয়া এবং বেসরকারি ক্ষেত্রসহ সব অংশীদারকে স্বত্বাধিকারী করে তোলার কাজটাই হতে চলেছে শিক্ষায় নেতৃত্বের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।

দ্বিতীয়ত, এনইপি শেষ পর্যন্ত কতটা রূপায়িত হবে তার সঙ্গে মূলগত ভাবে জড়িয়ে আছে রাজ্যের সক্ষমতার বিষয়টি। কে কস্তুরীরঙ্গনের নেতৃত্বাধীন এনইপি ড্রাফটিং কমিটি সঠিক ভাবেই বলেছিল ভারতের শিক্ষাব্যবস্থায় যথেষ্ট অর্থ নেই, তা চূড়ান্ত আমলাতান্ত্রিক, এবং তার উদ্ভাবনী ক্ষমতা বা আরও দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার ক্ষমতা নেই। এনইপি–তে যে বিরাট পরিবর্তনের কথা ভাবা হয়েছে তা এগিয়ে নিয়ে চলার ক্ষমতা শিক্ষা মন্ত্রকগুলির (‌কেন্দ্র ও রাজ্যের)‌ বা অন্যান্য নিয়ামক সংস্থার অভ্যন্তরে নেই। যেমন, ধরাবাঁধা বিষয়বস্তু–নির্ভর মুখস্থবিদ্যার বদলে পরীক্ষামূলক শিক্ষণ ও গুরুত্বপূর্ণ চিন্তনের পথে যাওয়ার জন্য শিক্ষক, ছাত্র ও বাবা–মায়েদের কথা বাদ রেখেও, যাঁরা শিক্ষাব্যবস্থা চালাচ্ছেন তাঁদের ভাবনাচিন্তারও বৈপ্লবিক পরিবর্তন প্রয়োজন।

রাজ্য ও জেলাস্তরের অসাধারণ বৈচিত্র‌ সত্ত্বেও সকলের মধ্যে দায়িত্বভার ভাগ করে নেওয়া এবং বেসরকারি ক্ষেত্রসহ সব অংশীদারকে স্বত্বাধিকারী করে তোলার কাজটাই হতে চলেছে শিক্ষায় নেতৃত্বের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।

এর অর্থ হল হাজার হাজার স্কুল ও কলেজে সক্ষমতা তৈরি করা, এবং অনেক ধরনের পরীক্ষামূলক লক্ষ্য নিয়ে তৈরি এই মেগা শিক্ষানীতি কার্যকর করার উপযোগী নতুন ধ্যানধারণা গড়ে তোলা। সংক্ষেপে, মন্ত্রকগুলোর এখনকার সাংগঠনিক কাঠামো ও তার বাস্তুতন্ত্রকে বিরাট ভাবে বদলে ফেলতে হবে। আশার কথা হল, এনইপি নথিতেই এখনকার নিয়ামক ব্যবস্থায় ব্যাপক বদলের বিস্তারিত রোডম্যাপ দেওয়া আছে। শিক্ষা মন্ত্রক এখন একটি ভারতীয় উচ্চ শিক্ষা কমিশন (যা ইউজিসি, এআইসিটিই বা ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার্স এজুকেশন–এর মতো নিয়ামক সংস্থাগুলিকে প্রতিস্থাপিত করবে)‌ গড়ার জন্য আইনের খসড়া তৈরি করছে। এই সব আইনের মধ্যে দিয়ে কী ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক স্থাপত্য গড়ে উঠবে, এখন তার প্রতীক্ষায় থাকতে হবে।

তৃতীয়ত, এনইপি অনেকটাই নির্ভর করবে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলোর সহযোগিতার ওপর। যদিও এনইপি–র খসড়া তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার (‌রাজ্যগুলো–সহ বিভিন্ন অংশীদারদের সঙ্গে কথা বলে)‌, এর রূপায়ণ নির্ভর করবে রাজ্যগুলোর সক্রিয় সহযোগিতার উপর। কারণ, অধিকাংশ পরিষেবা–সম্পর্কিত শিক্ষার ব্যবস্থা করে থাকে রাজ্য সরকারগুলো। এক কথায়, গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াসগুলো কার্যকর করার সময় কেন্দ্রকে সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ও বিকেন্দ্রীকরণের নীতিগুলিকে সুচারু ভাবে ব্যবহার করতে হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে ভাবে রাজনৈতিক মেরুকরণ তীব্র হয়েছে এবং কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে আস্থার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে, তাতে কাজটা সহজ নয়। অনেক বিরোধী–শাসিত রাজ্য এনইপি–র কিছু মূল ব্যবস্থা, ও যে ভাবে এই নীতিকে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, সে সবের কড়া বিরোধিতা করেছে। আরও উদ্বেগের কথা হল সম্প্রতি তামিলনাড়ু এনইপি রূপায়ণ না–করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আরও নানা বিরোধী–শাসিত রাজ্য সেই পথের শরিক হতে পারে। কাজেই এনইপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রীয় অঙ্কটা ঠিক ভাবে কষে নিতে পারাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

অনেক বিরোধী–শাসিত রাজ্য এনইপি–র কিছু মূল ব্যবস্থা, ও যে ভাবে এই নীতিকে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, সে সবের কড়া বিরোধিতা করেছে।

চতুর্থত, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এনইপি–র অন্তর্ভুক্তিকরণের প্রয়াস সফল করতে বেসরকারি ক্ষেত্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। একথা উল্লেখ করা যেতে পারে যে ৭০ শতাংশ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান (‌কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়)‌ চালায় বেসরকারি সংস্থা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে পড়ুয়াদের ৬৫–৭০ শতাংশ বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ে। তা ছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অতি–প্রয়োজনীয় আর্থিক সম্পদ ও উদ্ভাবনের ব্যবস্থা করতে পারে। সরকার ও নিয়ামক সংস্থাগুলির আবশ্যিক ভাবে বেসরকারি ক্ষেত্রের আরও অংশগ্রহণের উপযোগী কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে, এবং এনইপি–প্রক্রিয়ায় তাদের সমান অংশীদার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।

পঞ্চমত, মূল উদ্যোগসমূহের সার্থক রূপায়ণের জন্য প্রয়োজন দশকের পর দশক ধরে পর্যাপ্ত অর্থের সংস্থান। এই পরিপ্রেক্ষিতে এনইপি–তে বলা হয়েছে যে নতুন নীতির লক্ষ্যগুলো পূরণ করতে শিক্ষার জন্য সরকারি খরচ জিডিপি–র ৬ শতাংশে নিয়ে যেতে হবে। কাজটা খুব কঠিন, বিশেষ করে যদি আমরা অতীতের প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবতার ছবিটা ভাবি। যেমন ১৯৬৮ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতেও শিক্ষার জন্য সরকারি খরচ জিডিপি–র ৬ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু এত দশক পরেও শিক্ষার জন্য সরকারি খরচ জিডিপি–র ৩ শতাংশের উপরে যায়নি। দুর্ভাগ্যক্রমে এনইপি শুরুর বছরেই শিক্ষায় কেন্দ্রীয় বাজেট বরাদ্দ কমে গেল। ২০২০–২১–এর ৯৯,৩১১ কোটি টাকার থেকে ৬ শতাংশ কমিয়ে ২০২১–২২–এ তা করা হয়েছে ৯৩,২২৪ কোটি টাকা। তবে এর কারণ বোঝা যায়, যে হেতু সরকারের সামনে অগ্রাধিকার ছিল কোভিড–১৯ অতিমারি ও বিরাট অংশের মানুষের আর্থিক দুর্দশার মোকাবিলা করা। কিন্তু এনইপি–র জন্য যে বিরাট পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তা কী ভাবে জোগাড় করা সম্ভব, তার কোনও স্পষ্ট রোডম্যাপ নেই।

এনইপি–তে বলা হয়েছে যে নতুন নীতির লক্ষ্যগুলো পূরণ করতে শিক্ষার জন্য সরকারি খরচ জিডিপি–র ৬ শতাংশে নিয়ে যেতে হবে।

সব মিলিয়ে এনইপি ২০২০ সত্যিসত্যিই সর্বার্থে এক যুগান্তকারী নথি। অন্য নানা বিষয়ের পাশাপাশি এই নথিতে একবিংশ শতাব্দীর ভারতের চাহিদা মেটানোর জন্য পড়ুয়াদের তৈরি করার পাশাপাশি শিক্ষাবিদ্যা সংক্রান্ত বিষয়, কাঠামোগত অসাম্য, ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছনোর সমস্যাগুলির সমাধান খোঁজা হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষার নানাবিধ সঙ্কটের সমাধান খোঁজার মতো কঠিন কাজটি রয়েছে এনইপি–র সামনে। ভারত যদি জনসংখ্যার লাভ তুলতে চায়, যদি দ্রুত প্রসারমান জ্ঞান–অর্থনীতির সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চায়, তবে এনইপি–র কার্যকর রূপায়ণ অতি আবশ্যক। এর মধ্যে রূপান্তর ঘটানোর যে সম্ভাবনা আছে তা মাথায় রেখে অতিমারির মধ্যেও বেশ কিছু উদ্যোগের সূচনা করে কেন্দ্র বিষয়টি নিয়ে দ্রুত এগনোর ইচ্ছা ও নীতিটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতনতার প্রমাণ রেখেছে। বেশ কিছু রাজ্য সরকারি ভাবে এই শিক্ষানীতি প্রচলিত করেছে, এবং আরও অনেকে তা করার পথে এগোচ্ছে। তা হলেও এনইপি–র সামনের পথটি অতি দীর্ঘ। এর আয়তন, এবং রাজ্য, জেলা ও বেসরকারি ক্ষেত্রের মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতার বিষয়টি–সহ এর রূপায়ণের বিরাট জটিলতা মাথায় রেখে বলতেই হবে যে এ এক অতি কঠিন কাজ। তা ছাড়া আছে রাজ্যগুলির সক্ষমতার অভাব, আর্থিক সংস্থানের অভাব, এবং এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল নতুন ধ্যানধারণা ও উদ্ভাবনকে পিছু–টেনে–ধরা শিক্ষাব্যবস্থা। কিন্তু সবচেয়ে কঠিন কাজটি হল ঐকমত্য তৈরি করা এবং ১৯৮৬–র পরের প্রথম সার্বিক ওই কর্মসূচিতে রাজ্যগুলিকে শরিক করা। এক কথায়, এনইপি–র সাফল্য নির্ভর করবে সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয়তা ও সংস্কারকে রাজ্যগুলির আপন করে নেওয়ার উপর।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.