Published on Aug 06, 2022 Updated 0 Hours ago

গত পাঁচ বছরে জি এস টি ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রীয় সহযোগিতার ক্ষেত্রে উদ্ভূত ফাটলগুলিকেই তুলে ধরেছে।

জি এস টি-র পাঁচ বছর: ভারতের ফিসকাল ফেডেরালিজমের উপর প্রভাব

২০১৭ সালের জুলাই মাসে কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা পণ্য ও পরিষেবা কর (জি এস টি) চালু করাকে ভারতের কর ব্যবস্থা সমন্বিত করার লক্ষ্যে একটি রূপান্তরমূলক সংস্কার রূপে চিহ্নিত করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রীয় সহযোগিতার এক দুর্লভ মুহূর্তে রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে রাজ্যগুলি জি এস টি সংক্রান্ত কেন্দ্রের পদক্ষেপকে সমর্থন জুগিয়েছিল, যা সংস্কারটির বাস্তবায়ন সহজতর করে তোলে। তারপর পাঁচ বছর কেটে গেছে এবং জি এস টি ব্যবস্থা শক্তি এবং দুর্বলতা উভয়ই প্রদর্শন করেছে। এর জোরালো প্রভাব পড়েছে ভারতের আর্থিক ফেডেরালিজমের উপর।

যুক্তরাষ্ট্রীয় সহযোগিতা

কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে রাজনৈতিক অনাস্থা এবং মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও জি এস টি-র বাস্তবায়ন যুক্তরাষ্ট্রীয় সহযোগিতার মূল সুরকেই প্রতিধ্বনিত করে। সব রাজ্যই স্বেচ্ছায় তাদের অধিকাংশ কর আরোপের ক্ষমতা ত্যাগ করে এবং জি এস টি প্রবিধানের আওতায় বিদ্যমান একাধিক কর সমর্পণ করতে সম্মত হয়। এর ফল  স্বরূপ, সংবিধানের শিডিউল ৭-এর আওতায় থাকা রাজ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত একাধিক ধারা অকার্যকর হয়ে পড়ে এবং রাজ্য বিধানসভাগুলি পেট্রোলিয়াম এবং মদের মতো কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া পণ্য ক্রয় এবং বিক্রয় সংক্রান্ত কোনও আইন পাশ করার ক্ষমতা হারায়। ২০১৭ সালের জি এস টি আইন অনুসারে রাজ্যগুলির স্টেট জি এস টি (এস জি এস টি) এবং ইন্টিগ্রেটেড জি এস টি-র (আই জি এস টি) একটি অংশ পাওয়ার কথা। এ ছাড়া এটি স্বীকার করা হয়েছিল যে নতুন পরোক্ষ কর ব্যবস্থায় রূপান্তরের প্রক্রিয়ার ফলে রাজ্যগুলির জন্য রাজস্বের ঘাটতি হতে পারে এবং তাই সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, রাজ্যগুলির ক্ষতিপূরণের জন্য প্রথম পাঁচ বছর জি এস টি ক্ষতিপূরণ তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এই বছরের জুন মাসে সেই সময়কাল শেষ হয়েছে।

সব রাজ্যই স্বেচ্ছায় তাদের অধিকাংশ কর আরোপের ক্ষমতা ত্যাগ করে এবং জি এস টি প্রবিধানের আওতায় বিদ্যমান একাধিক কর সমর্পণ করতে সম্মত হয়।

এর পাশাপাশি জি এস টি আইনের ২৭৯এ ধারা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী এবং প্রতিটি রাজ্য সরকারের অর্থমন্ত্রীদের নিয়ে জি এস টি কাউন্সিল গঠন করা হয়েছিল। সেটির উদ্দেশ্য ছিল ধার্য করা করের হার, মডেল জি এস টি আইন এবং জি এস টি-র আওতায় কোন কোন পণ্য ও পরিষেবা আনা হবে সে সম্পর্কে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির কাছে সম্মিলিত ভাবে সুপারিশ করা। সুতরাং জি এস টি সংস্কারকে ফলপ্রসূ করার ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছিল সম্পদ বণ্টনের পাশাপাশি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও  যুক্তরাষ্ট্রীয় সহযোগিতা এবং আলাপ-আলোচনার মৌলিক অপরিহার্যতা।

যুক্তরাষ্ট্রীয়তায় ক্রমবর্ধমান ফাটল

জি এস টি-র রূপান্তরমূলক সম্ভাবনার নিরিখে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে প্রাথমিক ভাবে ঐকমত্য ও আশাবাদের সঞ্চার হলেও জি এস টি ক্ষতিপূরণ এবং জি এস টি কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাঠামোর বিষয়ে ক্রমবর্ধমান বিচ্যুতি এবং অবিশ্বাস লক্ষ করা গিয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ২০১৯ সালে রাজ্যগুলির বকেয়া জি এস টি ক্ষতিপূরণের বিষয়টি ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে এলেও কোভিড-১৯ সঙ্কটের সময়ে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে। অতিমারির শীর্ষে এক দিকে স্বাস্থ্য সংকটজনিত অর্থনৈতিক মন্দা রাজ্যগুলির রাজস্বকে মারাত্মক ভাবে ক্ষতির মুখে ঠেলে দেয়। অন্য দিকে, রাজ্য সরকারগুলিকেই প্রাথমিক ভাবে কোভিড-১৯ ভয়াবহতার তৃণমূল স্তরীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছিল। এমন জরুরি অবস্থায় কেন্দ্রের তরফে রাজ্যগুলিকে জি এস টি ক্ষতিপূরণ দেওয়া নিয়ে টালবাহানা সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রীয় বিরোধ প্রকাশ্যে উঠে আসে। বহু বিরোধীশাসিত রাজ্য কেন্দ্রকে তাদের বকেয়া প্রদান না করার দায়ে অভিযুক্ত করেছে, কারণ এর ফলে স্বাস্থ্য সঙ্কট মোকাবিলা এবং অতিমারি-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য রাজ্যগুলির প্রচেষ্টা গুরুতর বাধার সম্মুখীন হয়েছে। বরং অতিমারি চলাকালীন কেন্দ্র রাজ্যগুলিকে জি এস টি রাজস্বের ঘাটতি পূরণের জন্য ঋণ নেওয়ার দু’টি বিকল্প পন্থার পরামর্শ দিয়েছিল, যা রাজ্যগুলির তরফে বিক্ষোভের তীব্রতা বৃদ্ধি করে এবং রাজ্যগুলি দাবি জানায় যে, কেন্দ্র তাদের প্রতিশ্রুত রাজস্ব দেওয়ার পরিবর্তে ঋণ নিতে বাধ্য করছে।

অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ২০১৯ সালে রাজ্যগুলির বকেয়া জি এস টি ক্ষতিপূরণের বিষয়টি ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে এলেও কোভিড-১৯ সঙ্কটের সময়ে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে।

অবশ্য অতিমারি সঙ্কট প্রশমিত হওয়ায় এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের কিছু লক্ষণ দেখা দেওয়ায় এই বছরের মে মাসের শেষে কেন্দ্র জানিয়েছিল যে, তারা রাজ্যগুলির জি এস টি ক্ষতিপূরণের সমস্ত বকেয়া পরিশোধ করেছে। জি এস টি ক্ষতিপূরণের পাঁচ বছরের মেয়াদ সম্প্রতি শেষ হলেও অনেক রাজ্য অতিমারি-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রকে এর মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করছে। যদিও কেন্দ্রের তরফে বলা হয়েছে যে, রাজ্যগুলির আর কোনও ক্ষতিপূরণের প্রয়োজন হবে না। কারণ রাজ্যগুলির জন্য জি এস টি রাজস্ব সংগ্রহ বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তাই জি এস টি ক্ষতিপূরণের বিষয়টি ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রীয় সংঘাতের আর একটি পর্বের সূচনা করতে পারে।

এর পাশাপাশি, জি এস টি কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াটিতে কেন্দ্রেরই প্রাধান্য রয়েছে বলে বিরোধীশাসিত রাজ্যগুলি মনে করে। যেহেতু কেন্দ্রের হাতে কাউন্সিলের ৩৩টি ভোটের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ ভোট দানের ক্ষমতা রয়েছে, তাই ২২টি ভোট ৩১টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের (ইউ টি) মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে, যেখানে প্রতিটি রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের গড় ভোট দানের ক্ষমতা ০.৭০৯। জি এস টি কাউন্সিলের যে কোনও সিদ্ধান্তের জন্য তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা বা ন্যূনতম ২৫টি ভোট প্রয়োজন। এ ছাড়াও মোট ভোটের এক-তৃতীয়াংশের অধিকারী হওয়ার দরুন কেন্দ্র  একটি ভেটো প্রয়োগ করার ক্ষমতা রাখে। এর পাশাপাশি, অধিকাংশ রাজ্যে বিজেপি-নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট ক্ষমতায় থাকায় বিরোধীশাসিত রাজ্যগুলি জি এস টি কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাঠামোতে কেন্দ্রের আধিপত্যের আশঙ্কা করেছিল। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া বনাম মোহিত মিনারেলস মামলায় জানিয়েছে যে, জি এস টি কাউন্সিলের সুপারিশ রাজ্যগুলির জন্য বাধ্যতামূলক নয় এবং রাজ্যগুলি ১০১তম সংবিধান সংশোধনী আইনের ২৪৬এ ধারার অধীনে জি এস টি-র আওতায় আইন প্রণয়নের জন্য তাদের স্বাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে।

জি এস টি ক্ষতিপূরণের পাঁচ বছরের মেয়াদ সম্প্রতি শেষ হলেও অনেক রাজ্য অতিমারি-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রকে এর মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করছে।

উপসংহার

বিশেষ করে ভারতের মতো একটি গভীর বৈচিত্র্যময় রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রীয়তার টিকে থাকা এবং বেড়ে ওঠা আলাপ-আলোচনা ও দর কষাকষির জন্য এক স্বাস্থ্যকর পরিবেশের উপর নির্ভরশীল। গভীর রাজনৈতিক বিভাজন এবং পক্ষপাতমূলক অবিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও শাসনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্য গড়ে তোলার মাধ্যমে মতপার্থক্য ও মতবিরোধ কমিয়ে আনার প্রচেষ্টায় ব্রতী হতে হবে। জি এস টি সংস্কার এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র যা যুক্তরাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বড় রকমের দর কষাকষি এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অনেকাংশেই সম্ভব হয়েছিল। তবে বিশেষ করে আর্থিক যুক্তরাষ্ট্রীয়তাকে গভীরতর করে তোলার জন্য আরও পরামর্শমূলক এবং ঐকমত্য-নির্মাণকারী কাঠামোর প্রয়োজন। যেহেতু ভারত জি এস টি সংস্কারের পাঁচ বছরের গুরুত্বপূর্ণ মেয়াদ সম্পূর্ণ করেছে, বিশেষ করে সম্পদ বণ্টন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো বিষয়গুলির নিরিখে কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলির মধ্যে আরও উন্মুক্ত এবং জোরালো আলোচনার মনোভাব জি এস টি সংস্কারকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। অবশেষে এ কথা বলা যায় যে, ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা হাতে থাকার ফলে যুক্তরাষ্ট্রীয় গতিশীলতাকে শক্তিশালী করে তোলার জন্য কেন্দ্রের উপরে আরও বেশি দায় বর্তায়।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Ambar Kumar Ghosh

Ambar Kumar Ghosh

Ambar Kumar Ghosh is an Associate Fellow under the Political Reforms and Governance Initiative at ORF Kolkata. His primary areas of research interest include studying ...

Read More +