Published on Nov 07, 2021 Updated 0 Hours ago

এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার দিন আসন্ন, আর সেইটাই বাংলাদেশ ও ভারতের জন্য নদীর জলের প্রবাহ সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত করার উপযুক্ত পদ্ধতি অন্বেষণের সুযোগ।

সময়ের সঙ্গে এগিয়ে চলা:‌ ফরাক্কা জলচুক্তি

ফরাক্কায় গঙ্গার জল বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের চুক্তির মেয়াদের ছয় ভাগের পাঁচ ভাগই শেষ হয়ে গিয়েছে। মেয়াদ ফুরোবে ২০২৬ সালের ১২ ডিসেম্বর। ১৯৭৫ সালে ফরাক্কা ব্যারেজ তৈরি হয়ে যাওয়ার পর এই চুক্তি করার প্রয়োজন পড়েছিল, কারণ দৃশ্যত কলকাতা বন্দরের নাব্যতা বজায় রাখার জন্য গঙ্গা থেকে মৃতপ্রায় হুগলি নদীতে জল টেনে নেওয়ার জন্যই এই ব্যারেজ তৈরি হয়েছিল। তখন থেকেই কার কতটা জল পাওয়া উচিত তা নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।

১৯৯৬ সালে ফরাক্কায় গঙ্গার জল বণ্টনের চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল এই মতপার্থক্যের অবসান ঘটানো। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারত কতটা জল ছাড়বে তার পরিমাণ নির্দিষ্ট করা। আগেকার ১৯৭৭ সালের পাঁচ বছরের জন্য চুক্তিটাও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে পৃথক কিছু ছিল না, শুধু সেখানে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে–র মধ্যে আগের মুক্ত প্রবাহের জায়গায় প্রতি দশ দিনের জল ভাগাভাগির একটা সূত্র বার করা হয়েছিল। তা ছাড়া ওই চুক্তিতে ১১ মার্চ থেকে ১০ মে–র মধ্যে পর্যায়ক্রমে প্রতি দশদিন বাদে বাদে তিন বার পরের দশদিন যাতে দুই দেশই ৩৫ হাজার কিউসেক করে জল পায় তা নিশ্চিত করা হয়েছিল।

১৯৯৬ সালে ফরাক্কায় গঙ্গার জল বণ্টনের চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল এই মতপার্থক্যের অবসান ঘটানো। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারত কতটা জল ছাড়বে তার পরিমাণ নির্দিষ্ট করা।

চিত্তাকর্ষক ঘটনা হল, প্রথম ব্যবস্থাপনা যখন ১৯৭৭ সালের ৫ নভেম্বর স্বাক্ষরিত হয়েছিল তখন দুই দেশের নেতৃত্বই ছিল আপেক্ষিক ভাবে নতুন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই শপথ নিয়েছিলেন ১৯৭৭–এর ২৪ মার্চ, আর তার এক মাস পরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে এসেছিলেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। দ্বিতীয় চুক্তি স্বাক্ষরের সময়, ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর, দুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও এইচ ডি দেব গৌড়া তাঁদের পদে মাত্র ছ’‌মাস পুরনো ছিলেন। এটা কি শুধুই সমাপতন যে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়া সম্ভব হয় অস্থির সরকারের অনিশ্চিত নেতৃত্বের হাতে?‌ নাকি সদিচ্ছাসম্পন্ন, বিচক্ষণ কূটনীতিকেরা রাজনৈতিক নেতৃত্ব সুস্থিত হওয়ার আগে পর্যন্ত নিজেদের নির্ধারিত পথে এগিয়ে যেতে পারেন?‌

এখন দু’‌দেশেই রাজনৈতিক নেতৃত্ব জাঁকিয়ে বসেছেন। চুক্তিটি কি এখন পারস্পরিক সম্মতিতে পুনর্নবীকৃত হবে, নাকি আমরা এখনকার ব্যবস্থার থেকে উন্নততর কিছু আশা করতে পারি, এমন কিছু যার মধ্যে জল–প্রশাসনের অগ্রগতি প্রতিফলিত হবে এবং এখনকার দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তনের দিকটিও হিসেবের মধ্যে ধরা হবে?‌ এখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাঁচ বছর পরে থাকতে পারে বা না–থাকতেও পারে, কিন্তু ২০২৬–এর পরেকার ব্যবস্থাপনার কথা ভাবার সময় এসে গিয়েছে। এখন যে ব্যবস্থা আছে তাকে শেষ হয়ে যেতে দেওয়াই উচিত। এর মেয়াদ শেষ আসন্ন হওয়ার ঘটনাটি নদীর জলের প্রবাহ সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত করার উপযুক্ত পদ্ধতি অন্বেষণের সুযোগ এনে দিয়েছে।

বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, চুক্তি–পরবর্তী সময়ে (১৯৯৭-২০১৬) বাংলাদেশ সঙ্কটজনক শুখা মরসুমে মোটের উপর ৬৫ শতাংশ সময়ে প্রতিশ্রুত জল পায়নি। যাই হোক, শুধু জলের পরিমাপের উপর নির্ভরশীল বণ্টন–ব্যবস্থা অনেক সময়েই জলপ্রবাহের বহুমাত্রিকতার হিসাব রাখে না। পুরো বিষয়টাকে সহজ–সরল করে দেখার পরিপ্রেক্ষিত প্রবাহকে পরিমাপ করে একটা নির্দিষ্ট সময়ের এককে কতটা জল একটা নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে প্রবাহিত হল তার ভিত্তিতে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট জায়গাটি হল ফরাক্কা। এই দৃষ্টিভঙ্গির ফলে গঙ্গার প্রবাহের বাস্তুতন্ত্রগত পরিষেবার দিকটি বিপন্ন হয়।

গঙ্গার প্রবাহ বাস্তুতন্ত্রের যত পরিষেবা দে্য় তা রক্ষা করতে হলে প্রবাহের জটিলতাকে বুঝতে হবে জলের, শক্তির, জৈববৈচিত্র‌্যের ও পলির সূক্ষ্ম ধারাবাহিকতার অঙ্ক হিসেবে। এগুলোকেই অধ্যাপক জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় সুন্দর ভাবে বর্ণনা করেছেন ওয়েব্‌স (WEBS)‌ হিসেবে। “জলের, শক্তির, ও পলির সমন্বয় হল জলপ্রবাহের মৌলিক ও ঘনিষ্ঠ ভাবে সমন্বিত পরিচিতি, এবং এর কোনও একটির অবস্থার পরিবর্তন সরাসরি অন্য দুটির উপর প্রভাব ফেলে। তাদের সামগ্রিক সংযোগ অববাহিকার বিভিন্ন আবাস ও সম্পর্কিত জৈববৈচিত্র‌্যকে পুষ্ট করে।”

জলের পরিমাপের ওপর নির্ভরশীল বণ্টন অনেক সময়েই জলপ্রবাহের বহুমাত্রিকতার হিসাব রাখে না। পুরো বিষয়টাকে সহজসরল করে দেখার পরিপ্রেক্ষিত প্রবাহকে পরিমাপ করে একটা নির্দিষ্ট সময়ের এককে কতটা জল একটা নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে প্রবাহিত হল তার ভিত্তিতে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট জায়গাটি হল ফরাক্কা।

জৈববৈচিত্র‌্য যে হেতু জলের প্রবাহের উপর নির্ভরশীল, তাই একে জল–প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখা দরকার, বিশেষ করে যে হেতু দুই দেশ যৌথ ভাবে পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপের জিম্মাদার। এই বদ্বীপ ঘন জনবসতিপূর্ণ হলেও এর জৈববৈচিত্র‌্য অনন্য, এবং তা বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিকর ভাবে প্রভাবিত হচ্ছে।

জৈববৈচিত্র‌্যের নানা আবাস, যা বহু জনের বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করে, তাকে সংরক্ষণ করতে হলে ভারত ও বাংলাদেশকে বুঝতে হবে প্রবাহ কী, ভূতাত্ত্বিক অতীত থেকে তা কী ভূমিকা পালন করছে এবং দ্রুত–পরিবর্তনশীল বিশ্বে তার উপর কী প্রভাব পড়তে পারে;‌ আর এই বোধের ভিত্তিতে দু’‌দেশের পরবর্তী সমঝোতা তৈরি করতে হবে।

বাংলাদেশ ও ভারতের এখনকার চুক্তির নবম অনুচ্ছেদের মতো দু’‌দেশের মধ্যে দিয়ে বয়ে–যাওয়া নদীগুলির জল–ভাগাভাগির ব্যবস্থা বা চুক্তি না করে খতিয়ে দেখা উচিত কী ভাবে পুরো অববাহিকা জুড়ে এমন সমঝোতা গড়ে তোলা যায় যা সুন্দরবনকে, এবং তার উজানের সব কিছুকে, নিরাপদ রাখবে। তা হবে সময়ের নিরিখে আরও কার্যকর, বাস্তুতন্ত্রগত ভাবে আরও ভাল, এবং তা ভারতের সব তটবর্তী রাজ্যের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেবে।


প্রবন্ধের ইংরেজী সংস্করণ আগে দা টেলিগ্রাফ পত্রিকায় প্রকাশিত (২০ অক্টোবর ২০২১)।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Anamitra Anurag Danda

Anamitra Anurag Danda

Anamitra Anurag Danda is Senior Visiting Fellow with ORF’s Energy and Climate Change Programme. His research interests include: sustainability and stewardship, collective action and institution ...

Read More +