Published on May 03, 2025 Updated 0 Hours ago
ম্প ২.০-এর অধীনে ইউরোপ: দীর্ঘস্থায়ী যন্ত্রণার অবসানের সন্ধানে

২০২৫ সালে ইউরোপ ‘ভাঙা অথবা গড়া’র এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে জটিলতা পরিধির ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অসংখ্য চ্যালেঞ্জ উঠে এসেছে। প্রায় ১০০ বছর আগে ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার যুগের পর ইউরোপ গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে ডুবে গিয়েছে, যা স্মৃতিকাতরতার সঙ্গে বেদনাদায়ক ভাবে সম্পৃক্ত। সমৃদ্ধির সেই সময় – যখন ইউরোপের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক আদর্শগুলি বিকশিত হয়েছিল - দ্রুত একটি অন্ধকা রূপান্তর দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। প্রুস্ত(১)-এইন সার্চ অফ লস্ট টাইম এবং স্পেংলার(২)-এর দ্য ডিক্লাইন অফ দ্য ওয়েস্ট-এ এই উত্থানকে একটি সাংস্কৃতিক স্বর্ণযুগের সমাপ্তি এবং পতনের পূর্বাভাস রূপে চিত্রিত করা হয়েছে। দ্য স্লিপওয়াকার্স: হাউ ইউরোপ ওয়েন্ট টু ওয়ার ইন ১৯১৪(৩)-এ এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে কী ভাবে ইউরোপের রাজনৈতিক অভিজাতরা আসন্ন বিপদকে আমল না দিয়ে প্রায় আচ্ছন্ন ভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রবেশ করেছিল। মাত্র কুড়ি বছর পরে স্টেফান জুইগ(৪)-এর পরিচিত বিশ্ব এক সম্মিলিত ধাক্কায় ভেঙে পড়ে এবং একসময় আশা ও উৎসাহে ভরা ভবিষ্য যুদ্ধ ও ধ্বংসের এক ভয়াবহ বাস্তবতা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। পুরনো স্থিতিশীলতা অপূরণীয় ভাবে হারিয়ে গিয়েছে এবং পৃথিবী চিরতরে বদলে গিয়েছে

জুইগ বর্ণিত ‘ওয়ার্ল্ড অফ ইয়েস্টারডে’-র সঙ্গে বর্তমান ইউরোপের একাধিক সাযুজ্য দেখা যাচ্ছে। তবে এটি যুদ্ধোত্তর দীর্ঘ শান্তির সময়কাল’ অর্থাৎ প্যাক্স আমেরিকানার পতনের চাইতেও সেই পশ্চিম দ্বারা চালিত, যার নেতৃত্বে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটি অর্থনৈতিক, জনসংখ্যাগত, শিল্পগত এবং প্রযুক্তিগত ভাবে ইউরোপের ধীর যন্ত্রণা ম্পর্কিত, যেমনটা দ্রাঘি তাঁ৪০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে স্পষ্ট ভাবে প্রকাশ করেছেন।(ক)(৫) একসময় উদ্‌যাপিত উদ্ভাবনগুলি - যেমন ইইউ-অভ্যন্তরে অভিন্ন সাধারণ প্রণোদনা বা অধুনা মীমাংসিত সমস্যা – এখন সেই বিষয়গুলিতে কল্পনার অভাবের কথা ক্রমশ প্রকাশ্যে আসছে। জার্মানিকে প্রায়শই ‘সিক ম্যান অফ ইউরোপ’ বা ‘ইউরোপের অসুস্থ অংশীদার’ হিসাবে উল্লেখ করা হচ্ছে(৬), যেখানে কোনও কিছুই সময় মতো বা প্রযুক্তিগত ভাবে কার্যকর নয়

২০২৫ সালে ইউরোপ ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক খণ্ডিতকরণ জনপ্রিয় আন্দোলনের উত্থানের সম্মুখীন হচ্ছে, যা ইইউ দেশগুলির মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) প্রতিষ্ঠান এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের উপর আস্থাকে আরও দুর্বল করতে পারে। ইভান ক্রাস্তেভ ইইউকে ‘অতি প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ এবং অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রিত হিসেবে বর্ণনা করেছেন(৭)। সেই ইইউ বহুমুখী, ক্রমবর্ধমান সঙ্কট মোকাবিলায় যুঝছে। জনসাধারণের আন্দোলনগুলি ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কারণ অনেক নাগরিক মনে করেন যে, প্রতিষ্ঠিত অভিজাতরা অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অক্ষম। এটি কেবল ইউরোপের ভবিষ্যতের উপর আস্থাকেই বিপন্ন করে না, বরং মহাদেশের রাজনৈতিক সংহতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে।            

অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যাগুলি অঙ্গাঙ্গী ভাবে সম্পৃক্ত এবং তা এমন একটি দুষ্টচক্র তৈরি করেছে, যাকে নির্মূল করা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে। দ্রাঘির প্রতিবেদন(৮)-এ ‘হারানো দশক’-এর একটি বিষণ্ণ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এবং দেখানো হয়েছে যে, শিল্প ও নিরাপত্তা দুর্বলতার সংমিশ্রণ মহাদেশের জন্য কী গুরুতর পরিণতি ডেকে আনে ইউক্রেনের অমীমাংসিত পরিস্থিতি, মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অস্থিরতার কারণের ফলে জনসংখ্যাগত পরিবর্তন, ক্রমবর্ধমান অভিবাসন সঙ্কট এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বিশ্বব্যাপী প্রাসঙ্গিকতার উল্লেখযোগ্য ক্ষতির দিকে চালিত করছে। ইউরোপ ক্ষমতার অলিন্দে আরও প্রান্তিক হয়ে পড়ছে, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভূ-রাজনৈতিক ভাবে পিছনের সারিতে চলে যাচ্ছে(৯)কারণ মহাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অভিজাতরা গভীর দ্বিধায় জর্জরিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন এবং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের নিরিখে ইউরোপের অভিজাতদের মধ্যে ঐকমত্যের অভাবের কারণে এই দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে পড়েছে।

নিম্নলিখিত ভূ-রাজনৈতিক তীব্র প্রবণতাগুলি বিশ্বে ইউরোপের ভূমিকার উপর গভীর প্রভাব ফেলে এবং মনে হচ্ছে, মহাদেশটির ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনার জন্য একটি স্পষ্ট কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি সুসঙ্গত কৌশলের অভাব রয়েছে।

ঠান্ডা লড়াই ২.০: আমেরিকা এবং ড্রাগনবিয়ার

২০২৫ সালে ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব তীব্রতর হবে কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ড্রাগনবিয়ার ব্লকের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা(১০) আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা ভেঙে দেবে এবং চি, রাশিয়া, ইরান এবং উত্তর কোরিয়ার ভূ-রাজনৈতিক ব্লকের সঙ্গে পশ্চিমের এক কেন্দ্রাতিগ শক্তি সম্পর্ক তৈরি করবে। ইউরোপ এই ভূ-রাজনৈতিক ব্লক ব্যবস্থার মধ্যে নিজের অবস্থান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিন উভয়ের সঙ্গেই নিজের সম্পর্ক পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিরাপত্তা, রাশিয়ার কাছ থেকে শক্তি এবং চিনের বাজার উৎপাদন সংক্রান্ত পুরনো নিয়ম দীর্ঘদিন আগেই তার প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে(১১) নতুন বাস্তবতা ক্রমবর্ধমান ভাবে ইউরোপকে তিনটি ক্ষেত্রেই আমেরিকার উপর ক্রমশ নির্ভর করে তুলেছে।

একই সময়ে, ইউরোপীয় শক্তিগুলি চিনের প্রতি তাদের ‘বিচ্ছিন্নকরণ’ পদ্ধতির ব্যর্থতার সম্মুখীন হচ্ছে এবং বেজিংয়ের প্রতি একটি বাস্তববাদী মনোভাব তৈরি করতে হবে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন সমস্যাযুক্তই থেকেছে, বিশেষ করে যখন তৃতীয় দেশগুলির মাধ্যমে রাশিয়ার কাঁচামাল আমদানির কথা উঠেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ট্রান্সআটলান্টিক অংশীদারিত্ব উল্লেখযোগ্যই থেকেছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন এবং রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনার আবর্তে জড়িয়ে পড়ছে ইউরোপ। একটি স্বাধীন ইউরোপীয় ভূ-রাজনৈতিক কর্মসূচি তৈরি করার বিষয়টি ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়েছে।

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ ইউরোপের জন্য তার প্রথম মেয়াদের চেয়ে আরও বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, বিশেষ করে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার দায়িত্বের ক্ষেত্রেকারণ ইইউ ন্যাটোর মতো প্রতিষ্ঠানের উপর মার্কিন আস্থা হ্রাস পেয়েছে। ইউরোপীয় দেশগুলিকে সম্ভবত তাদের জিডিপি-র কমপক্ষে ৩-৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা ব্যয়ে বিনিয়োগ করতে বাধ্য করা হবে(১২), ইউক্রেনকে সমর্থন করার জন্য উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে হবে এবং আর্কটিক, পূর্ব ইউরোপ ভূমধ্যসাগরে তাদের নিজস্ব প্রতিবেশীদের আরও কার্যকর ভাবে রক্ষা করতে হবে।

প্রক্সি দ্বন্দ্বের বৃদ্ধি: ট্রাম্প ২.০-র ভূ-রাজনৈতিক বিপর্যয় সংক্রান্ত শৃঙ্খল মার্কিন অংশগ্রহণের মাধ্যমে যুদ্ধ সংঘাতের অবসানের প্রতিশ্রুতি দেয়। ইউক্রেনের যুদ্ধ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমাধান হওয়ার কথা ছিল এবং ২০১৮ সালের হেলসিঙ্কিতে যেমনটা হয়েছিল, সে ভাবেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একটি নতুন শীর্ষ সম্মেলনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবুও, ভূ-রাজনৈতিক ভাবে আবহ বদলেছে বলে মনে করা হচ্ছে: ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের এখনও কোনও সমাধান দেখা যাচ্ছে না এবং ইয়েমেনে হুতি শাসনের কোনও অবসানের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

মধ্যপ্রাচ্য এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে জটিল উত্তেজনার সমাধানও দ্রুত হবে না। বিশেষ করে, ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের পর গাজায় যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও লোহিত সাগর মধ্যপ্রাচ্য ২০২৫ সালে সবচেয়ে সহিংস অস্থিতিশীল অঞ্চলগুলির মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠতে পারে(১৩)। তবে ইউরোপীয় দেশগুলি প্রতিরোধের প্রস্তুতির পরিবর্তে কূটনীতি মধ্যস্থতার উপরই বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। সামরিক বিশেষজ্ঞ স্টেফান গ্যাডি যেমন বলেছেন: যারা কূটনীতির উপর খুব বেশি নির্ভর করে, তাদের গুরুত্ব সহকারে না নেওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।(১৪) গ্যাডি প্রসঙ্গতই ‘পরজীবী শান্তিবাদ’ (বা প্যারাসাইটিক প্যাসিফিজম) সম্পর্কে কথা বলেছেনকারণ ইউরোপ অন্যদের ছত্রছায়ায় আরামে নিজের সুখ ভোগ করছে।’

প্রক্সি যুদ্ধের বৃদ্ধি, বিশেষ করে ইউক্রেন, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, ২০২৫ সালে ইউরোপকেও প্রভাবিত করবে এবং ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যকে ইউরোপীয় দেশগুলি থেকে আরও দূরে সরিয়ে দেবে। এগুলি রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের মুখোমুখিও হচ্ছে, যেমন জার্মানিতে। ইউরোপীয় ন্যাটো সদস্যরা সামরিক সহায়তা বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে এই সংঘাতে ক্রমশ ফাঁদে পড়ছে। যদিও আমেরিকা ক্রমবর্ধমানভাবে তার ভূ-রাজনৈতিক অগ্রাধিকারগুলিকে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে স্থানান্তর করছে, ইউরোপ এখনও আমেরিকান নিরাপত্তা ছাতার উপর নির্ভরশীল। এই নির্ভরতা ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা নীতির দুর্বলতাগুলিকে তুলে ধরে এবং ২০২৫ সালে ইউরোপের জন্য একটি মৌলিক পরীক্ষা উপস্থাপন করতে পারে।

লোহিত সাগরে বিদ্যমান সঙ্কট (যদিও সাময়িক ভাবে তা স্থগিত রয়েছে), ন্যাটোর পূর্ব দিকে একটি নতুন লৌহবর্মের উত্থান এবং মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় ক্ষমতার পরিবর্তনশীলতা ইউরোপীয় অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি সংক্রান্ত চাপ বৃদ্ধি করেছে। প্রতিরক্ষা, সাইবার নিরাপত্তা অবকাঠামোতে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা ইউরোপীয় রাজনৈতিক অভিজাতদের জন্য যোগাযোগের কাজটিকে কঠিন করে তুলেছে

ভূ-অর্থনৈতিক বিভাজন: প্রযুক্তি, বাণিজ্য এবং আর্থিক যুদ্ধ

ক্রমবর্ধমান ভূ-অর্থনৈতিক বিভাজন ইউরোপকে তার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৈচিত্র্যময় করার জরুরি প্রয়োজনীয়তা দর্শিয়েছে। আমেরিকা এবং ড্রাগনবিয়ারের মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং ঠান্ডা লড়াই ২.০-র প্রেক্ষাপটটি বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলকে দুটি বিকল্প শৃঙ্খলে বিভক্ত করছে, যা ইউরোপকে তৃতীয় দেশগুলির সঙ্গে অংশীদারিত্ব খুঁজতে বাধ্য করছে। ড্রাগনবিয়ার অক্ষ পশ্চিমিদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করলেও, রাশিয়ার ভূমিকা জটিলই থেকেছে। উদাহরণস্বরূপ, চিনের সঙ্গে তার সাযুজ্য সত্ত্বেও রাশিয়া ভারত এবং বৃহত্তর উদারপন্থী ব্যবস্থার জন্য উপকারী থেকেছে। ভারত-রাশিয়া ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তির মতো উদ্যোগগুলি থেকেই তা স্পষ্ট, যা চিনের বিরুদ্ধে ফিলিপিন্সের প্রতিরক্ষা অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে এবং পরোক্ষ ভাবে বিশ্ব ব্যবস্থার স্থিতিশীলতায় অবদান রেখেছে।(১৫)

এই প্রেক্ষাপটে, চিনের সঙ্গে অর্থনৈতিক জটিলতা কাঁচামালের জন্য রাশিয়ার উপর নির্ভরতা ইউরোপের অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্বকে কী ভাবে শক্তিশালী করতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ইউরোপকে তার ভূ-অর্থনৈতিক অবস্থান সুনিশ্চিত করার জন্য উদীয়মান অর্থনীতির বাজারগুলিতে - বিশেষ করে আফ্রিকা, এশিয়া দক্ষিণ আমেরিকায় – ক্রমপ্রবেশ করতে হবে। একই সময়ে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় ইউরোপ শিল্প প্রতিযোগিতার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে(১৬), বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের তুলনায়। ক্রমবর্ধমান শ্রম ও জ্বালানি ব্যয়ের ফলে এই সমস্যা আরও তীব্র হয়েছে। এই উৎপাদনশীলতা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলি ইইউ-র উচ্চ জলবায়ু লক্ষ্যগুলির সঙ্গে বিরোধপূর্ণ, যা উচ্চাকাঙ্ক্ষী ডিকার্বনাইজেশন বা কার্বনমুক্তকরণের প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ইউরোপ কীভাবে তার প্রতিযোগিতামূলকতা বজায়  রাখতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মধ্যে প্রযুক্তি যুদ্ধ ২০২৫ সালে বিশ্ব বাণিজ্যনীতি শিল্পকে আকার দেবে। বিশেষ করে অর্ধপরিবাহী উৎপাদন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ডিজিটাল অবকাঠামো সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ইউরোপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে। চিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ক্রমবর্ধমান বিচ্ছিন্নকরণের সরাসরি প্রভাব পড়বে ইউরোপীয় দেশগুলির উপরে। ইউরোপীয় দেশগুলিকে কেবল এই গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলিতে তাদের প্রতিযোগিতামূলকতা নিশ্চিত করতে হবে তা নয়, বরং উভয় পরাশক্তির উপর তাদের নির্ভরতাও হ্রাস করতে হবে। ইইউ অর্ধপরিবাহী এবং ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ শুরু করা সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চিনের সঙ্গে ইইউ-র ব্যবধান উল্লেখযোগ্য। ইউরোপের জন্য চ্যালেঞ্জ হল দুই অগ্রণী দেশের মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় লিপ্ত না হয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিগত দৌড়ে একটি স্বাধীন ভূমিকা পালন করা

এই পটভূমিতে, ব্রিকস+-এর মধ্যে চি রাশিয়া দ্বারা পরিচালিত বিদ্যমান ডি-ডলারাইজেশন (বা অ-ডলারিকরণ) প্রবণতা(১৭) ইউরোপকে তার আর্থিক অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন করার বিষয়টি ভাবতে বাধ্য করবে। কিছু ব্রিকস দেশ মার্কিন ডলারের বিকল্প অনুসন্ধান করলেও ভারত আরও বাস্তববাদী অবস্থান বজায় রেখেছে এবং সরাসরি ডি-ডলারাইজেশনের পরিবর্তে স্থিতিশীলতার উপর জোর দিয়েছে, যেমনটি বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের মতো কর্মকর্তারা পুনরাবৃত্তি করেছেন(১৮)ব্রিকস+ দেশগুলির একটি সম্ভাব্য মুদ্রা ভাণ্ডার এখন আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে, বিশেষ করে ২০২৫ সালে ট্রাম্পের প্রত্যাশিত নীতির প্রেক্ষিতে(১৯)। ইউরোপের জন্য এর অর্থ কেবল আর্থিক ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার অংশীদারিত্ব পুনর্নিশ্চিত করা নয়, বরং একটি বহুমুখী আর্থিক ব্যবস্থা গঠনে আরও সক্রিয় ভাবে জড়িত হওয়া। উদীয়মান বাজারগুলির সঙ্গে গভীর সহযোগিতা বৃদ্ধি করে এবং আরও বৈচিত্র্যময় মুদ্রার পরিসরকে সমর্থন করে ইউরোপ ব্রিকস কর্মসূচিকে অতিরঞ্জিত না করে বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতার লক্ষ্যে কাজ করতে পারে।

ইউরোপের ভূ-রাজনৈতিক এবং ভূ-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি

ইউরোপ একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে: হয় মহাদেশটি শিল্প, কার্বনমুক্তকরণ এবং নিরাপত্তার ভারসাম্য বজায় রাখতে সফল হবে, অথবা দীর্ঘমেয়াদে এটি তার ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব হারাবে। যাই হোক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য এআই, অর্ধপরিবাহী ও প্রতিরক্ষায় একই সাথে বিনিয়োগের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এই সমস্যা তীব্রতর হচ্ছে যখন ইউরোপীয় শিল্প আরও সবুজ বা দূষণহীনতার লক্ষ্যে হাঁটছে। এই লক্ষ্য কি আদৌ বাস্তবসম্মত?

একটি সম্ভাব্য দৃশ্যপট হতে পারে দুর্বল ভিত্তির উপরেই ইউরোপকে শিল্পের নিরিখে বৃহৎ শক্তি করে তোলা এবং নিরাপত্তা কার্বনমুক্তকরণের বিনিময়ে শিল্প প্রতিযোগিতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপ তার শিল্প ভিত্তির উপর মনোযোগ দেয়, যা ইইউ প্রতিষ্ঠানগুলি দ্বারা সমর্থিত। এর পাশাপাশি ডিজিটালকরণ, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, সাইবার নিরাপত্তা এবং এআই-তেও সুবিশাল বিনিয়ো অব্যাহত রাখতে হবে। তবে, ইউরোপ নিরাপত্তা ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে উঠবে। ট্রাম্প ইইউ-সঙ্গে বাণিজ্য বিষয়ে কঠোর ভাবে আলোচনা করবেন তবে ইউক্রেনে ছাড়ের জন্য ইউরোপীয়দের চাপ দিয়ে এবং কার্বনমুক্তকরণের মূল্যে আরও মার্কিন এলএনজি আমদানি করে সমন্বয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেন। তবে মার্কিন আলোচনার মধ্যস্থতায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হলে রাশিয়া ইউরোপের বিরুদ্ধে তার হাইব্রিড যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারে এবং ধীরে ধীরে ইউরোপীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিতে পারে। বেশ কয়েকটি দেশকে নিয়ে সম্পৃক্ত বাল্টিক সাগরে সাম্প্রতিক নাশকতামূলক অভিযান দর্শায় যে, ভবিষ্যতে পরিস্থিতি কী হতে পারে(২০)

একটি বিকল্প পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় নিরাপত্তার পক্ষে সাইবার নিরাপত্তা, মহাকাশ প্রতিরক্ষার মতো নতুন ইউরোপীয় শিল্পগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হতে পারে এবং ডিকার্বনাইজেশনের বিনিময়ে এমনটা করা কখনওই উচিত নয়। ট্রাম্প ২.০-র চাপে ইউরোপ প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ৩ শতাংশ বৃদ্ধি করতে পারে, বিশেষ করে ইউরোপীয় ন্যাটো সদস্য রাষ্ট্রগুলির ক্ষেত্রে। ইউরোপ তার বহিরাগত সীমান্ত রক্ষার উপর মনোনিবেশ করবে এবং অতিরিক্ত সুরক্ষা কাজ গ্রহণ করবে, যাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক এবং চিনের দিকে আরও মনোযোগ দিতে পারে এবং উচ্চ প্রযুক্তির অস্ত্র, সাইবার নিরাপত্তা মহাকাশ সক্ষমতায় বিনিয়োগ করতে পারে। এই পরিস্থিতি ইউরোপকে তার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করতে এবং একটি বিভক্ত বিশ্ব অর্থনীতিতে তার বাণিজ্য সম্পর্ককে বৈচিত্র্যময় করতে সহায়তা করতে পারে।

বৃহৎ সুযোগ: ভূ-রাজনৈতিক জোট, উচ্চাভিলাষী অবকাঠামো প্রকল্প এবং পূর্বমুখী সম্প্রসারণ

ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ইউরোপের কাছেও তার বৈশ্বিক ভূমিকা সুদৃঢ় করার সুযোগ রয়েছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলির সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব জোরদার করা, বিশেষ করে আফ্রিকা, এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকার দেশগুলির সঙ্গে। দক্ষিণ আমেরিকার বাণিজ্য ব্লক মার্কোসুরের মতো, ইইউ-র উচিত ভারত, উপসাগরীয় রাষ্ট্র, আসিয়ান এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের মতো দেশ অঞ্চলগুলির সাথে নতুন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করা। এর ফলে চুক্তিগুলি ইউরোপকে নতুন বাজারে প্রবেশাধিকার প্রদান করতে পারে এবং আন্তর্জাতিক মুক্ত বাণিজ্য বহুপাক্ষিকতাবাদকে উন্নত করতে পারে।

ইউরোপের ভবিষ্যতের জন্য আর কটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হল কৌশলগত অবকাঠামো এবং থ্রি সিজ ইনিশিয়েটিভ (থ্রিএসআইI)(২১) আইএমইসি(২২) (ইন্ডিয়া-মিডল ইস্ট-ইউরোপ ইকোনমিক করিডোর) মতো মাল্টিমোডাল করিডোর প্রকল্পের উন্নয়ন। এই উদ্যোগগুলি ইউরোপকে উদীয়মান অর্থনীতির সঙ্গে তার অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও গভীর করতে, ভূ-রাজনৈতিক বিভাজন কাটিয়ে উঠতে এবং নতুন বাণিজ্য পথ সরবরাহ শৃঙ্খল স্থাপন করতে সহায়তা করতে পারে। এই প্রকল্পগুলি ইউরোপকে তার অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক তাৎপর্য পুনর্নির্ধারণ করতে এবং উদীয়মান বাজারগুলিতে বৃহত্তর প্রবেশাধিকার অর্জনের সুযোগ করে দেবে একই সাথে ইইউ-র তেরোটি থ্রিএসআই সদস্যের মধ্যে অনুপস্থিত নর্থ-সাউথ অবকাঠামো তৈরি করতে সাহায্য করবে

বিশাল বপুর দ্রাঘি রিপোর্টে বর্তমানে যে বিষয়টি অনুপস্থিত, তা হল মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের দৃষ্টিভঙ্গি। পোল্যান্ড, রোমানিয়া ক্রোয়েশিয়ার মতো দেশগুলি শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। বিশেষ করে পরিবহণ, জ্বালানির মতো অবকাঠামো এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়া থেকে মধ্য, পূর্ব দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত ডিজিটাল করিডোর তৈরি করা প্রয়োজন। উত্তর-দক্ষিণ সংযোগ ক্রমবর্ধমান ভাবে পূর্ব-পশ্চিম অবকাঠামোকে প্রতিস্থাপন করবে। সংযোগের জন্য  প্রাক্তন ইইউ রাষ্ট্রদূত রোমানা ভ্লাহুতিন জানেন, কী ভাবে ইইউ কৌশল গ্লোবাল গেটওয়ে’কে - রাস্তা, রেল, বন্দর এবং ডেটা কেবলের মতো নতুন অবকাঠামো প্রকল্প নির্মাণের জন্য একটি উদ্যোগ - সাফল্যের আখ্যানে পরিণত করতে পারে। তিনি উন্নয়ন সহায়তায় ৬০ বিলিয়ন ইউরো এবং রফতানি ঋণ সহায়তায় ৪০ বিলিয়ন ইউরো একত্রিত করা এবং ১:৪ বা ১:৫ অনুপাতে বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণ করে এমন একটি তহবিল তৈরি করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এটি ৪০০ থেকে ৫০০ বিলিয়ন ইউরো বার্ষিক লাভ সৃষ্টি করতে পারে এবং দশ বছরের মধ্যে উচ্চাকাঙ্ক্ষী অবকাঠামো প্রকল্পগুলিকে উৎসাহিত করে থেকে ট্রিলিয়ন ইউরো মূল্যের বিনিয়োগ সক্ষম করতে পারে(২৩)

পরিশেষে, পশ্চিম বলকান এবং পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে অভ্যন্তরীণ বাজারের ইউরোপীয় সম্প্রসারণ আর কটি গুরুত্বপূর্ণ ভূ-অর্থনৈতিক সুযোগের প্রতিনিধিত্ব করে। এই দেশগুলির ভৌগোলিক ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান - যা ইইউ, এশিয়া, আফ্রিকা মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে - ইউরোপকে ভূ-রাজনৈতিক ভাবে শক্তিশালী করে তুলতে পারে। এই দেশগুলিকে অভ্যন্তরীণ বাজারে সমন্বিত করা কেবল ইইউ-র মধ্যে অর্থনৈতিক সংযোগ বাণিজ্যকে উৎসাহিত করবে না, বরং এই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান রুশ এবং চিনা উপস্থিতির বিরুদ্ধে একটি প্রতিরক্ষা হিসেবেও কাজ করবে। একটি স্থিতিশীল পশ্চিম বলকান পূর্ব ইউরোপের অর্থনৈতিক সমন্বিতকরণ ইউরোপের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও দৃঢ় করতে পারে এবং অর্থনৈতিক সমন্বয়ে অবদান রাখতে পারে।

সুপারিশ উপসংহার

বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ দর্শায় যে, কাঠামোগত এবং পদ্ধতিগত পরিবর্তনের কারণে ইউরোপ আগামী ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে বৈশ্বিক গুরুত্ব হারানোর ঝুঁকির সম্মুখীন। চিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় শিল্প শক্তি হিসেবে প্রতিযোগিতা চালিয়ে যেতে হলে ইউরোপকে জরুরি ভাবে একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি আন্তঃসংযুক্ত সমস্যা সমাধান করতে হবে। প্রথমত, ইউরোপে জন্মহার হ্রাস বয়স্ক জনসংখ্যার সমস্যা অভিবাসন, পারিবারিক নীতি, শিক্ষা উৎপাদনশীলতা সংক্রান্ত নির্দিষ্ট ব্যবস্থার মাধ্যমে মোকাবিলা করতে হবে। সর্বোপরি, ইউরোপকে তার জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং অন্যান্য দেশের উপর নির্ভরতা কমাতে অভ্যন্তরীণ জ্বালানি উৎপাদন জোরদার করতে হবে। বিশেষ করে ইউরোপের আর কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজি, চিনের বিরল খনিজ পদার্থ ও প্রযুক্তি এবং রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভর করা উচিত নয়। পরিবর্তে, পারমাণবিক শক্তি, অভ্যন্তরীণ গ্যাস উৎপাদন, তৃতীয় কোনও দেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি গ্যাস চুক্তি এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির সম্প্রসারণের মতো বিকল্প শক্তির উৎসের উপর মনোনিবেশ করা উচিত। সর্বোপরি, ইউরোপকে তার দক্ষিণ পূর্ব প্রতিবেশ অঞ্চলে আন্তঃসংযুক্ত সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল এবং উত্তরে চিন ও রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের কারণে উদ্ভূত নিরাপত্তা হুমকির সমাধান হতে হবে। স্পষ্টতই, দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হিসেবে কার্বন নির্গমন কমানোর বিষয়টি সাময়িক হলেও রাজনৈতিক ভাবে ধাক্কা খাবে এবং স্থগিত থাকবে।

এই প্রেক্ষিতে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল:

  • ক্ষমতার অলিন্দে ইউরোপ আরও প্রান্তিক হয়ে পড়ছে। ফলে আন্তর্জাতিক বিষয়ের প্রেক্ষিতে ভূ-রাজনৈতিক ভাবে পিছনের সারিতে চলে যাচ্ছে। অন্য দিকে মহাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অভিজাতরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন এবং রাশিয়ার সঙ্গে কী ভাবে যোগাযোগ স্থাপন করা যায় সে সম্পর্কে দূরদর্শিতার অভাবের কারণে গভীর দ্বিধাগ্রস্ত।
  • জনসংখ্যাগত সঙ্কট থেকে শুরু করে জ্বালানি সরবরাহ সুনিশ্চিত করা এবং বৈশ্বিক পরাশক্তির উপর নির্ভরতা হ্রাস করা ইউরোপকে জরুরি ভাবে একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি আন্তঃসংযুক্ত বিষয়ের মোকাবিলা করতে হবে।
  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চিনের মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় জড়িয়ে না পড়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতায় স্বাধীন ভূমিকা পালন করাও ইউরোপের জন্য চ্যালেঞ্জ

পরিশেষে, ২০২৫ সালে ইউরোপ তার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলির সম্মুখীন হয়েছে। মহাদেশের ভূ-রাজনৈতিক ভূ-অর্থনৈতিক অভিমুখ সম্পর্কে ইউরোপকে একটি পদ্ধতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যা ট্রাম্প ২.০-র অধীনে ক্রমবর্ধমান ভাবে বিভক্ত বিশ্ব ব্যবস্থায় মহাদেশটির ভবিষ্য ভূমিকা নির্ধারণ করবে। দ্বিখণ্ডিত বিশ্বে ইউরোপ নিজেকে একটি বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সফল হবে না কি ভূ-রাজনৈতিক শক্তিগুলি দ্বারা প্রভাবিত হবে… তা আগামী কয়েক দশক ধরে ভূ-রাজনৈতিক ভূ-অর্থনৈতিক প্রেক্ষিত নির্ধারণে সহায়তা করবে।

 

ক) ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং ইউরোপের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ মারিও দ্রাঘিকে ইউরোপীয় কমিশন ইউরোপীয় প্রতিযোগিতার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তাঁর ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে একটি প্রতিবেদন লেখার দায়িত্ব দিয়েছিল। এটি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত হয়েছিল।

খ) ড্রাগনবিয়ার ধারণাটি এমন একটি কাঠামো, যা চিত্রিত করে যে কী ভাবে চি রাশিয়া পদ্ধতিগত ভাবে প্রাসঙ্গিক বিস্তৃত পরিসরে কৌশলগত ভাবে সমন্বয় করে এবং এই পরিসরটি পণ্য, অর্থনীতি বাণিজ্য থেকে শুরু করে প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা মহাকাশ ক্ষেত্র পর্যন্ত প্রসারিত। এটি কোনও আনুষ্ঠানিক কৌশলগত জোট বা সামরিক চুক্তিকে নির্দেশ করে না, বরং একটি মোডাস অপারেন্ডিকেই দর্শায়, যার মাধ্যমে উভয় দেশ একাধিক ক্ষেত্রে তাদের স্বার্থ যৌথ পদক্ষেপগুলিকে সাযুজ্যপূর্ণ করে তুলেছে

) হেলসিঙ্কি শীর্ষ সম্মেলনে ট্রাম্প এবং পুতিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্ক উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং সন্ত্রাসবাদ, সাইবার নিরাপত্তা সিরিয়ার সংঘাতের মতো বিষয়গুলিতে একসঙ্গে কাজ করার জন্য সম্মত হন। পুতিন ঘোষণা করেছিলেন যে, ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসান হয়েছেউভয় নেতা জোর দিয়েছিলেন যে, শীর্ষ সম্মেলনটি দুটি দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ, আরও উৎপাদনশীল আলোচনার লক্ষ্যে গৃহীত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক পদক্ষেপ

 

পাদটিকা

১) মার্শেল প্রুস্ত, ইন সার্চ অফ লস্ট টাইম, ভলিউম ৬, আন্দ্রে মেয়র, চার্লস কেনেথ সক্ট-মনক্রিফ, টেরেন্স কলমার্টিন এবং ডেনিস জোসেফ এনরাইটের অনুবাদ (লন্ডন – ভিনটেজ, ১৯৯৬)

২) অসওয়াল্ড স্পেঙ্গলার, দ্য ডিক্লাইন অফ দি ওয়েস্ট, ভলিউম ১ – ফর্ম অ্যান্ড অ্যাকচুয়ালিটি (নিউ ইউর্ক – আলফ্রেড এ নফ, ১৯২৬)

৩) ক্রিস্টোফার ক্লার্ক, দ্য স্লিপওয়াকারস – হাউ ইউরোপ ওয়েন্ট টু ওয়ার ইন ১৯১৪ (ইউনাইটেড কিংডম – পেঙ্গুইন বুকস, ২০১২)

৪) স্টেফান জুইগ, দ্য ওয়ার্ল্ড অফ ইয়েস্টারডে – অ্যান অটোবায়োগ্রাফি, অ্যানথিয়া বেলের অনুবাদ (নিউ ইয়র্ক – দ্য ভাইকিং প্রেস, ১৯৪৩)

৫) ইউরোপিয়ান কমিশন, দ্য দ্রাঘি রিপোর্ট অন ইইউ কম্পিটিটিভনেস, ব্রাসেলস, ইউরোপিয়ান কমিশন, ২০২০, https://commission.europa.eu/topics/eu-competitiveness/draghi-report_en#paragraph_47059.

৬) ইজ জার্মানি ওয়ান্স এগেন দ্য সিক ম্যান অফ ইউরোপ?, দি ইকোনমিস্ট, অগস্ট ১৭, ২০২৩, https://www.economist.com/leaders/2023/08/17/is-germany-once-again-the-sick-man-of-europe.

৭) সাশা লেনার্ৎজ, ভির লেবেন হিউট ইন আইনার গেসেলস্যাফট দের নুল-লয়্যালিত্যাট, ডাই ভেল্ট, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪, https://www.welt.de/politik/ausland/plus254974120/Ivan-Krastev-Wir-leben-heute-in-einer- Gesellschaft-der-Null-Loyalitaet.html.

৮) ইউরোপিয়ান কমিশন, দ্য দ্রাঘি রিপোর্ট অন ইইউ কম্পিটিটিভনেস

৯) ভেলিনা চাকারোভা, ইউরোপ অন দ্য ভার্জ – জাইটেনভেন্দে অর দ্য ওয়ার্ল্ড অফ ইয়েস্টারডে? অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, মার্চ ২, ২০২৩, https://www.orfonline.org/expert-speak/europe-on-the-verge.

১০) ভেলিনা চাকারোভা, কোল্ড ওয়ার ২.০ – দ্য ইউএস-ড্রাগনবিয়ার স্ট্যান্ডঅফ ইন আ বাইফারকেটেড গ্লোবাল সিস্টেম, অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৪, https://www.orfonline.org/expert-speak/cold-war-2-0-the-us-dragonbear-standoff-in-a-bifurcatedglobal- system.

১১) ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ – ইউরোপ – ইট ক্যান ডাই। আ নিউ প্যারাডাইম অ্যাট দ্য সর্বোর্ন, জিওপলিটিক, এপ্রিল ২৬, ২০২৪, https://geopolitique.eu/en/2024/04/26/macron-europe-it-can-die-a-new-paradigm-at-thesorbonne/.

১২) ট্রাম্প সেজ ন্যাটো মেম্বারস শুড স্পেন্ড ৫% অফ জিডিপি অন ডিফেন্স, ইউর‍্যাকটিভ, জানুয়ারি ৮, ২০২৫, https://www.euractiv.com/section/politics/news/trump-says-nato-members-should-spend-5-ofgdp- on-defence/.

১৩) আলি হার্ব, ট্রাম্পস রোল ইন গাজা সিজফায়ার ফুয়েলস আরব আমেরিকান অ্যাঙ্গার উইথ বাইডেন, আল জাজিরা, জানুয়ারি ১৭, ২০২৫, https://www.aljazeera.com/news/2025/1/17/trumps-role-in-gaza-ceasefire-fuels-arab-americananger- with-biden.

১৪) ডেভিড নেস, ইউরোপা স্টেক্ট ইন ডের ফালে ডেস পারাসিটারেন পাগিফিসমুস, ক্লেইন জাইটুং, নভেম্বর ২৬, ২০২৪, https://www.kleinezeitung.at/home/19112989/europa-steckt-in-der-falle-des-parasitaerenpazifismus.

১৫) দিনাকর পেরি, ইন্ডিয়া ডেলিভারস ফার্স্ট ব্যাচ অফ ব্রহ্মস টু ফিলিপিন্স, দ্য হিন্দু, এপ্রিল ২০, ২০২৪, https://www.thehindu.com/news/national/india-delivers-first-batch-of-brahmos-to-philippines/ article68084161.ece

১৬) ইউরোপিয়ান কমিশন, অ্যান ইইউ কম্পাস টু রিগেইন কম্পিটিটিভনেস অ্যান্ড সিকিওর সাস্টেনেবল প্রসপারিটি’, ইউরোপিয়ান কমিশন প্রেস কর্নার, জানুয়ারি ২৯, ২০২৫, https://ec.europa.eu/commission/presscorner/detail/en/ip_25_339.

১৭) ডি-ডলারাইজেশন – মোর ব্রিকস ইন দ্য ওয়াল, আইএনজি, অক্টোবর ২৩, ২০২৪, https://think.ing.com/articles/de-dollarisation-more-brics-in-the-wall/.

১৮) জয়ন্ত জ্যাকব, ডি-ডলারাইজেশন নট আওয়ার পলিসি অর স্ট্র্যাটেজি – ইন্ডিয়া আফটার ইয়েট অ্যানাদার ট্রাম্প থ্রেট টু ব্রিকস’, দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, জানুয়ারি ৩১, ২০২৫, https://www.newindianexpress.com/nation/2025/Jan/31/de-dollarisation-not-our-policy-or-strategyindia- after-yet-another-trump-threat-to-brics

১৯) ট্রাম্প থ্রেটেনস ব্রিকস উইথ ট্যারিফস ইফ দে রিপ্লেস ইউএস ডলার, ডাস ভেল (ডিডব্লিউ), জানুয়ারি ৩১, ২০২৫, https://www.dw.com/en/trump-threatens-brics-with-tariffs-if-they-replace-us-dollar/a-71464802.

২০) হেনরিক প্রিজার লিবেল এবং লিনসে চুটেল, নরওয়ে সিজেস রাশিয়ান-ক্রিউড শিপ সাসপেক্টেড অফ কাটিং অ্যান আন্ডারসি কেবল’, নিউ ইয়র্ক টাইমস, জানুয়ারি ৩১, ২০২৫, https://www.nytimes.com/2025/01/31/world/europe/norway-russia-ship-baltic-undersea-cable.html.

২১) থ্রি সিজ সামিট ভিলনিয়াস ২০২৪, থ্রি সিজ ইনিশিয়েটিভ, এপ্রিল ১১, ২০২৪, https://3seas.eu/.

২২) নবদীপ সুরি প্রমুখ, ইন্ডিয়া-মিডল ইস্ট-ইউরোপ ইকোনমিক করিডোর – টুওয়ার্ডস আ নিউ ডিসকোর্স ইন গ্লোবাল কানেক্টিভিটি, অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, এপ্রিল ৯, ২০২৪, https://www.orfonline.org/research/india-middle-east-europe-economic-corridor-towards-a-newdiscourse- in-global-connectivity.

২৩) রোমানা ভ্লাহুতিন, ইউরোপা এন্টভিকলুংশিলফে ব্রুখট এইনে নিউসরিচতুং, হ্যাল্ডেলসব্লাট, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪, https://www.handelsblatt.com/meinung/gastbeitraege/gastkommentar-europas-entwicklungshilfebraucht- eine-neuausrichtung-02/100096372.html.

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Velina Tchakarova

Velina Tchakarova

Read More +