২২ থেকে ২৪ অক্টোবর, রাশিয়া কাজানে ১৬তম বার্ষিক ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করে, যার থিম ছিল "ন্যায্য বৈশ্বিক উন্নয়ন ও নিরাপত্তার জন্য বহুপাক্ষিকতাকে শক্তিশালী করা।" রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের পাশাপাশি ৩৬টি দেশের নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এই ইভেন্টের সাফল্য গ্লোবাল সাউথের নেতৃত্বে বহুপাক্ষিকতাবাদে ক্রমবর্ধমান আগ্রহকে নির্দেশ করেছে। এই সাফল্য আফ্রিকা থেকে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক উন্নয়নশীল দেশগুলির গোষ্ঠীতে যোগদানের জন্য সারিবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রেও স্পষ্ট।
এতদিন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকাই ব্রিকসের একমাত্র আফ্রিকান সদস্য ছিল। যাই হোক, ২০২৩ সালে সর্বশেষ সম্প্রসারণের পরে মিশর ও ইথিওপিয়া সাম্প্রতিক ব্রিকস সম্মেলনে প্রথমবারের মতো সদস্য হিসাবে অংশগ্রহণ করেছে। শীর্ষ সম্মেলনের সময়, ব্রিকস জোট আনুষ্ঠানিকভাবে তিনটি আফ্রিকান দেশসহ — আলজেরিয়া, নাইজেরিয়া ও উগান্ডা — অংশীদার হিসাবে ১৩টি নতুন দেশকে যুক্ত করার কথা ঘোষণা করেছে।
ব্রিকস জোট আনুষ্ঠানিকভাবে তিনটি আফ্রিকান দেশসহ — আলজেরিয়া, নাইজেরিয়া ও উগান্ডা — অংশীদার দেশ হিসাবে ১৩টি নতুন দেশকে যুক্ত করার কথা ঘোষণা করেছে।
ব্রিকস-এ যোগদানের জন্য মহাদেশটির ক্রমবর্ধমান আগ্রহ নতুন বৈশ্বিক শক্তির উত্থান এবং বহুমুখী বিশ্বব্যবস্থার উপর আস্থা তুলে ধরে, যা আফ্রিকান দেশগুলির জন্য পশ্চিমী শক্তিগুলির উপর তাদের ঐতিহ্যগত নির্ভরতা কমিয়ে উদীয়মান অর্থনীতির সঙ্গে শক্তিশালী জোট গঠনের উল্লেখযোগ্য সুযোগ তৈরি করে। এই স্থানান্তরটি আফ্রিকান দেশগুলিকে তাদের বিশ্বব্যাপী সম্পৃক্ততাকে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করার সুযোগ দেয়। ২০২৪ সালের ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন শেষ হওয়ার পর এই নিবন্ধটি আফ্রিকান রাষ্ট্রগুলির এই সংগঠনে যোগদানের জন্য প্রেরণাগুলি পরীক্ষা করে৷
অর্থনৈতিক প্রভাব: আফ্রিকার অর্থনৈতিক মিত্র হিসাবে ব্রিকস
তাদের বর্তমান নিম্ন স্তরের উন্নয়নের সমস্যাকে স্বীকৃতি দিয়ে আফ্রিকান নেতারা তাঁদের ঐতিহ্যগত অংশীদার দেশগুলির দ্বারা অর্থনৈতিক শোষণ, পশ্চিমী নেতৃত্বাধীন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির নির্ধারিত কঠোর শর্তাবলী এবং বৈশ্বিক ব্যবস্থায় সামগ্রিকভাবে পশ্চিমী আধিপত্য নিয়ে তাদের হতাশা প্রকাশ করার পাশাপাশি বৈদেশিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে। শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্ব ব্যাঙ্কের মতো ঋণদাতাদের উপর নির্ভর না-করে অনেক আফ্রিকান দেশ ব্রিকসের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া শুরু করেছে।
উদাহরণস্বরূপ, আফ্রিকার বিভিন্ন জুন্টা-নেতৃত্বাধীন সরকার, যারা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় এসেছিল, তাদের আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাঙ্ক-এর কাছে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নতুন আর্থিক বিকল্প যেমন নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক (এনডিবি) মার্কিন ডলারের উপর তাদের নির্ভরতা এবং তাদের ঋণ ও নিষেধাজ্ঞার ভয়ঙ্কর বোঝা কমাতে এই দেশগুলির জন্য একটি কার্যকর বিকল্প উপস্থাপন করে।
আফ্রিকান রাষ্ট্রগুলি ব্রেটন উডস প্রতিষ্ঠানকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য বিকল্প অর্থনৈতিক ও শাসন কাঠামো তৈরি করার জন্য কাজ করলেও বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও আইএমএফ-এর এখনও আফ্রিকায় উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ব্রিকস সদস্য মিশর ও ইথিওপিয়া আইএমএফ অর্থায়নের উপর নির্ভর করে। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে মিশর সম্প্রতি 8 বিলিয়ন মার্কিন ডলার বেলআউট পেয়েছে, আর ইথিওপিয়া আর্থিক চাপ মোকাবিলায় সাহায্য করার জন্য ৩.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফেসিলিটি (ইসিএফ) পেয়েছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে ডলার নির্ভরতা এবং বিদ্যমান আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে সরে যাওয়া একটি দূরবর্তী লক্ষ্য রয়ে গেছে।
আফ্রিকান রাষ্ট্রগুলি ব্রেটন উডস প্রতিষ্ঠানকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য বিকল্প অর্থনৈতিক ও শাসন কাঠামো তৈরি করার জন্য কাজ করলেও বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও আইএমএফ-এর এখনও আফ্রিকায় উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে।
তা সত্ত্বেও, আফ্রিকার দেশগুলি ব্রিকস এনডিবি-র মাধ্যমে রেয়াতি ঋণ ও তহবিল জোগাড় করার বিষয়ে আশাবাদী। এনডিবি-র লক্ষ্য হল ব্রিকস প্লাসের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব জোরদার করা, বিভিন্ন বাজারে প্রবেশাধিকার উন্নত করা, এবং উদীয়মান অর্থনীতিতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধি করা। ২৯-৩১ আগস্ট ২০২৪-এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় তার নবম বার্ষিক বোর্ড সভায় এনডিবি ব্রিকস সদস্য ও অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলির দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন লক্ষ্যগুলির সঙ্গে আরও ভালভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও নমনীয় অর্থায়ন পদ্ধতির প্রতি তার প্রতিশ্রুতির উপর জোর দিয়েছে। উপরন্তু, নতুন আর্থিক পেমেন্ট সিস্টেম চালু করার জন্য ব্রিকস-এর উদ্যোগগুলি, যা ডি-ডলারাইজেশনের দিকে কাজ করে, তা গ্লোবাল সাউথের অনেক উন্নয়নশীল দেশের প্রশংসা পেয়েছে। যদিও অল্প দিনের মধ্যে একটি সাধারণ মুদ্রা চালু করার সম্ভাবনা অপরিণত বলে মনে হয়, ভারত ও চিনের মতো দেশগুলি স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্যের প্রচার শুরু করেছে। এটি আফ্রিকাকে ডলারের ওঠানামার সঙ্গে সম্পর্কিত অনিশ্চয়তা এড়াতে সাহায্য করবে, তাদের আরও বিকল্প দেবে, এবং তাদের সম্পূর্ণ সম্ভাবনা উন্মুক্ত করবে।
ব্রিকস ও আফ্রিকার নিরাপত্তা ভূচিত্র
যদিও আফ্রিকান দেশগুলি বহু-সারিবদ্ধতা কৌশল অনুসরণ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য প্রধান শক্তি উভয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার অন্তর্নিহিত চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতার পরিবর্তনের সঙ্গে আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং অন্য পৃথক আফ্রিকান দেশগুলি শান্তি ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্রিকস-এর সঙ্গে পুনরায় সারিবদ্ধ হতে চায়। দক্ষিণ সুদানে শান্তি প্রক্রিয়ার প্রচারে, এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক (সিএআর) ও মোজাম্বিকের নিরাপত্তা হুমকির মোকাবিলায় সাউথ আফ্রিকান ডেভলপমেন্ট কমিউনিটি (এসএডিসি)-র মতো আঞ্চলিক সংস্থাগুলির জন্য এইউ-এর উদ্যোগের প্রতি ব্রিকস-এর সমর্থন বুঝিয়ে দেয় যে, ব্রিকস অভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় সমষ্টিগতভাবে আফ্রিকান পদ্ধতিকে অনুমোদন করে। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা প্রচারে আফ্রিকার ভূমিকাকে তুলে ধরে এমন দেশীয় সমাধানগুলির এই অনুমোদনের ফলে মহাদেশের জন্য সম্পদ বৃদ্ধি করতে পারে। অধিকন্তু, আফ্রিকার শান্তি উদ্যোগের জন্য ব্রিকস-এর সমর্থন ব্রিকস দেশগুলির মধ্যে বৃহত্তর সহযোগিতাকে উৎসাহিত করতে পারে, এবং শেষ পর্যন্ত আফ্রিকাকে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তার জন্য উন্নত সংস্থান প্রদান করে।
নেতৃত্বের জন্য ব্রিকস এবং আফ্রিকার অনুসন্ধান
আফ্রিকা একটি নতুন ব্র্যান্ডের নেতৃত্বের সন্ধান করে, যার জন্য তার এমন রাষ্ট্রনায়কদের প্রয়োজন যাঁরা ভবিষ্যতের বৈশ্বিক সহযোগিতার জন্য, বিশেষ করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, মৌলিক বিষয়গুলি বোঝেন। অনেক আফ্রিকান দেশ ভারত, চিন এবং অন্যান্য ব্রিকস সদস্যের নেতৃত্বকে গ্লোবাল সাউথের জন্য উদাহরণ হিসাবে অনুকরণ করার লক্ষ্য রাখে, যাঁরা রাজনৈতিক সমতা, সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান এবং সহযোগিতার ন্যায্যতা প্রচার করেন।
দক্ষিণ সুদানে শান্তি প্রক্রিয়ার প্রচারে, এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক (সিএআর) ও মোজাম্বিকের নিরাপত্তা হুমকির মোকাবিলায় সাউথ আফ্রিকান ডেভলপমেন্ট কমিউনিটি (এসএডিসি)-র মতো আঞ্চলিক সংস্থাগুলির জন্য এইউ-এর উদ্যোগের প্রতি ব্রিকস-এর সমর্থন বুঝিয়ে দেয় যে, ব্রিকস অভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় সমষ্টিগতভাবে আফ্রিকান পদ্ধতিকে অনুমোদন করে।
যাই হোক, প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ হিসাবে ইথিওপিয়া ও মিশরের অবস্থান ব্রিকসের আফ্রিকান সদস্যদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সংহতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার নিয়ে মিশর ও ইথিওপিয়ার মধ্যে বিরোধের কারণে ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে ব্রিকস বিদেশমন্ত্রীদের হঠাৎ করে নিউইয়র্কে একটি বৈঠক শেষ করে দেওয়ার সময় এটি স্পষ্ট হয়েছিল।
ব্রিকস এবং আফ্রিকার শস্য বিনিময়
জলবায়ু পরিবর্তন, খণ্ডিত বাজার, এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ব্রিকস গ্রেন এক্সচেঞ্জ আফ্রিকাতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কৃষি বিনিয়োগের জন্য একটি গেম চেঞ্জার হতে পারে। শস্য বিনিময় ব্যবস্থা তৈরি হলে তা শস্যের দাম স্থিতিশীল করে আফ্রিকার কৃষি ভূচিত্রে বিপ্লব ঘটাতে পারে। ব্রিকস আরও সুগঠিত বাজারের সুবিধা দিলে উৎপাদক ও ভোক্তাদের জন্য মূল্যের অস্থিরতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। একটি ব্রিকস-সমর্থিত বিনিময় বাজার আফ্রিকাকে তার রপ্তানি পোর্টফোলিওকে বৈচিত্র্যময় করতে সাহায্য করবে, এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয় বৃদ্ধি করবে।
সামনের পথ
ব্রিকস আফ্রিকার জন্য বৈশ্বিক শাসন ও উন্নয়নে তার ভূমিকা বাড়ানোর একটি উল্লেখযোগ্য সুযোগ তুলে ধরে। ব্রিকস ইয়ুথ সামিট এবং একটি ব্রিকস ইয়ুথ কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা আফ্রিকান যুবকদের সম্পৃক্ততার জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপায় উপস্থাপন করে। আন্তঃসংসদীয় সহযোগিতার ব্রিকস প্রকল্প আফ্রিকান দেশগুলিকে শাসন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং নীতিনির্ধারণের বিষয়ে উদীয়মান অর্থনীতির সঙ্গে সংযোগ করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে। ধারণার এই আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত আফ্রিকার রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালী করা এবং উন্নত শাসন চর্চার প্রচার করার সম্ভাবনা রয়েছে।
ব্রিকস আরও সুগঠিত বাজারের সুবিধা দিলে উৎপাদক ও ভোক্তাদের জন্য মূল্যের অস্থিরতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।
যাইহোক, ব্রিকস-এ যোগদানের আগে আফ্রিকার দেশগুলিকে অবশ্যই তাদের অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা মোকাবিলা করতে হবে এবং তাদের নীতি অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হবে। সমান্তরালভাবে, সংখ্যার দিক থেকে বর্তমান গোষ্ঠীকে প্রসারিত করার জন্য তাড়াহুড়ো করার পরিবর্তে তাদের ভিত্তিমূলক উপকরণগুলি পর্যালোচনা করার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। নিঃসন্দেহে, এর সদস্যদের মধ্যে বিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক স্বার্থ গোষ্ঠীটিকে তার লক্ষ্যে পৌঁছতে বাধা দেবে। স্পষ্টতই, ব্রিকস-এর প্রতি ক্রমবর্ধমান আগ্রহ সত্ত্বেও, ব্যবহারিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এইউ সম্মিলিতভাবে এই চ্যালেঞ্জগুলিকে কীভাবে মোকাবিলা করবে, তা শেষ পর্যন্ত এর সাফল্য নির্ধারণ করবে।
সমীর ভট্টাচার্য অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.