প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক সপ্তাহ পরে কারাগারে বন্দি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিন তাঁর সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছেন। এর কারণ হিসাবে তিনি উল্লেখ করেছেন, মুইজ্জু তাঁর পরামর্শদাতার সঙ্গে ইচ্ছে করেই যোগাযোগ রাখতে চাইছেন না। ইয়ামিন - যিনি এর আগে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম সোলি-র পূর্বতন প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘ইন্ডিয়া/মিলিটারি আউট’ প্রচার শুরু করেছিলেন - পিপলস ন্যাশনাল ফ্রন্ট (পিএনএফ) নামের একটি নতুন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেই দলটি প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছেন তাঁর ছেলে জইন আবদুল্লা।
ইয়ামিন - যিনি এর আগে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম সোলি-র পূর্বতন প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘ইন্ডিয়া/মিলিটারি আউট’ প্রচার শুরু করেছিলেন - পিপলস ন্যাশনাল ফ্রন্ট (পিএনএফ) নামের একটি নতুন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেই দলটি প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছেন তাঁর ছেলে জইন আবদুল্লা।
এই প্রেক্ষিতেই যে অব্যবহিত প্রশ্ন উঠে আসে তা হল, ইয়ামিনের সরে যাওয়া কি প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুকে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখার অনিচ্ছা দূর করতে এবং দূরবর্তী দ্বীপ থেকে জরুরি ভিত্তিতে অধিবাসীদের সরিয়ে আনা ও মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধে আকাশপথে নজরদারি করার জন্য ৭৫ জন পাইলট ও দু’জন প্রযুক্তিবিদ অর্থাৎ ৭৭ জন সামরিক কর্মীকে প্রত্যাহারের জন্য তাঁর ক্রমাগত দাবির ‘বাস্তব সমাধান’ খুঁজে পেতে উত্সাহিত করতে পারে?
অথবা অন্ততপক্ষে এটি মুইজ্জুর সঙ্গে আর্থ সায়েন্সেস মিনিস্টার কিরেন রিজিজুর আলোচনা থেকে উঠে এসেছে। রিজিজু মুইজ্জুর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন এবং সেই অনুষ্ঠানেই মুইজ্জু এ বিষয়ে তাঁর পরিচিত অবস্থানই পুনর্ব্যক্ত করেন। সামাজিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে যে, ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দ্বীপদেশটির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ বলে বর্ণনা করেছেন। জয়শঙ্করের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মলদ্বীপের বিদেশমন্ত্রী মুসা জমির বলেন যে, ‘দুই দেশের পারস্পরিক অভিন্ন সাধারণ স্বার্থরক্ষায় একসঙ্গে কাজ করা’র বিষয়ে তিনি উৎসুক।
অবিলম্বেই ‘গাইয়ুম পরিবার’কেন্দ্রিক মলদ্বীপের রাজনীতি একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ করেছে। ২০০৮ সালে ক্ষমতা হারানোর পর ইয়ামিনের সৎ ভাই এবং ৩০ বছর ধরে দ্বীপদেশটিতে বহাল থাকা প্রেসিডেন্ট মামুন আব্দুল গাইয়ুম প্রোগ্রেসিভ পার্টি অব মলদ্বীপ (পিপিএম) প্রতিষ্ঠা করার জন্য পূর্বে প্রতিষ্ঠিত ধিভেহি রায়থুঞ্জ পার্টি (ডিআরপি) ত্যাগ করেছিলেন। আদালতের রায়ের পর তিনি ইয়ামিনের কাছে দলের ক্ষমতা হারান এবং মামুন রিফর্মস মুভমেন্ট (এমআরএম) চালু করেন। যদিও ন্যূনতম ৩,০০০ জন সদস্য থাকার বাধ্যতামূলক শর্ত পূরণ না করতে পারার দরুন নির্বাচন কমিশন এমআরএম-এর নিবন্ধন খারিজ করে দেয়।
২০১৯ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগে গাইয়ুম শিবিরের কাছে পিপিএম হারানোর ভয়ে প্রেসিডেন্ট পদ হারানোর কয়েক মাস পরেই ইয়ামিন পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি) গঠন করেন এবং পিপিএম-পিএনসি জোটের সাধারণ প্রধান পদে আসীন ছিলেন। এই অনন্য ব্যবস্থাটি এই বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে পর্যন্তও অব্যাহত ছিল, যখন সুপ্রিম কোর্ট ফৌজদারি আদালতের আদেশে ১১ বছরের কারাদণ্ড মুলতুবি করাকালীন ইয়ামিনের প্রেসিডেন্ট পদের মনোনয়ন সংক্রান্ত ইসি-র প্রত্যাখ্যানকে বহাল রাখে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়কালে ইয়ামিনের আপিলের শুনানির পর হাইকোর্ট সেই রায়টি প্রত্যাহার করে।
এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই মুইজ্জু ইয়ামিনের পিএনসি-এ ‘সেনেট’ পেয়েছিলেন, যাতে তাঁকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসাবে মনোনীত করা সম্ভব হয় এবং প্রেসিডেন্ট পদে জয়লাভ করে মঙ্গলের জন্য মুইজ্জু দলের অধিকার ‘গ্রহণ’ করেন। এর পর ইয়ামিন তাঁর গৃহবন্দি দশা থেকে পিপিএম নেতৃত্ব পরিবর্তন করার চেষ্টা করেন। পরে অবশ্য হাল ছেড়ে দেন।
দু’দিকেই মনোযোগ
আন্তঃমৈত্রীয় রাজনীতি সত্ত্বেও মুইজ্জুর রাষ্ট্রপতিত্বে মূলত অর্থনীতি ও বিদেশনীতির উপর মনোযোগ দেওয়া হয়েছে এবং দুই ক্ষেত্রেই মূলত ভারতীয় প্রতিবেশকে কেন্দ্রে রেখে এমনটা করা হয়েছে। তাঁদের বৈঠকের সময় মুইজ্জু এবং রিজিজু সারা দেশে ভারত দ্বারা অর্থায়িত উন্নয়ন প্রকল্পগুলির অবস্থা নিয়েও আলোচনা করেন। পরে মুইজ্জুর মুখপাত্র বলেন যে, পূর্ববর্তী সরকারের অধীনে ভারত দ্বারা অর্থায়িত ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের গৌরবময় থিলামলে সমুদ্র সেতু প্রকল্পের ৭৭ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৭ শতাংশই সম্পন্ন হয়েছে।
পরে মুইজ্জুর মুখপাত্র বলেন যে, পূর্ববর্তী সরকারের অধীনে ভারত দ্বারা অর্থায়িত ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের গৌরবময় থিলামলে সমুদ্র সেতু প্রকল্পের ৭৭ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৭ শতাংশই সম্পন্ন হয়েছে।
আবাসন ও অবকাঠামো মন্ত্রী হিসাবে সাত বছরের অভিজ্ঞতা-সহ স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পিএইচ ডি-ধারী মুইজ্জু ক্ষমতায় আসার পরে তাঁর প্রথম কাজগুলির মধ্যে সেতুর কাজ পরিদর্শন করেন। অবকাঠামো মন্ত্রী ডঃ আবদুল্লাহ মুতালিব ঘোষণা করেছেন যে, এই প্রকল্পটি আপাতত অন্য কোনও সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার কোনও ইচ্ছা তাঁদের নেই।
অর্থনীতির সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে একই কথা বলা যায় না। দায়িত্ব গ্রহণের চতুর্থ দিনে পার্লামেন্টে বাজেট কমিটির মিটিংয়ে উপস্থিত থেকে নতুন অর্থমন্ত্রী শফিক বলেন যে, মুইজ্জুর নীতির ফলে এ বছরের ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং পূর্ববর্তী সরকারের অনুমান অনুযায়ী পরবর্তী বছরের ৫৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের বৈদেশিক অর্থ-সহায়তা অর্জনের ব্যর্থতা দ্বীপদেশটির জন্য এক প্রকারের ‘অর্থনৈতিক ধাক্কা’ হতে পারে। তিনি বলেন, তার চেয়েও খারাপ ব্যাপার হল এই যে, চলতি বছরের আনুমানিক ত্রাণের ৮০ শতাংশই এখনও পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি।
এই লক্ষ্যেই মুইজ্জু প্রেসিডেন্ট হিসাবে সৌদি আরব সফরের পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু আরব এই সফরের জন্য আরও কিছুটা সময় চাওয়ার দরুন তা একেবারে শেষ মুহূর্তে ঘটে। মুইজ্জু তুর্কিয়েতে একটি সরকারি সফর সেরে সৌদি আরব যান। তুর্কিয়েতে তিনি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের সঙ্গে দেখা করেন। তুর্কিয়েই একমাত্র দেশ, যারা মুইজ্জু প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে শুধু মাত্র মালের সিটি মেয়র থাকাকালীনই তাঁকে সে দেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। যাই হোক, তুর্কিয়ের তরফে কোনও অব্যবহিত অর্থনৈতিক সহযোগিতা বা ত্রাণের খবর নেই। প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের পরবর্তী সময়ে প্রতিপক্ষ ইয়ামিন-সহ বহুদলীয় গণতন্ত্রের আবির্ভাবের পর থেকে মলদ্বীপের প্রেসিডেন্টরা সাধারণত পদে আসীন হওয়ার পর নয়াদিল্লিতেই প্রথম বৈদেশিক সফরে আসেন।
এর মধ্যে পার্লামেন্টের তরফে ৬.৫ বিলিয়ন এমভিআর মূল্যের অপেক্ষাকৃত উচ্চ সম্পূরক বাজেটের পক্ষে মতদান করা হয়, যা ২০২৩ অর্থবর্ষের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪২.৮ বিলিয়ন এমভিআর-কে ৪৯.৩ বিলিয়ন এমভিআর-এ উন্নীত করে। ৩.১ বিলিয়ন এমভিআর-এর সম্পূরক প্রবিধান-সহ আগামী বছরের পুনরাবৃত্ত ব্যয় বর্তমানে অস্থিতিশীল ভাবে উচ্চ হারে প্রায় ৩১.৭ বিলিয়নে এমভিআর-এ এসে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর অন্তর্বর্তীকালীন দলের সঙ্গে পরামর্শ করে বিদায়ী সরকার ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া অর্থবর্ষের বাজেট হিসেবে ৪৯.৭ বিলিয়ন এমভিআর-এর বাজেট পেশ করেছে।
এই প্রেক্ষিতে ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স মিনিস্টার মোহাম্মদ সঈদ গণমাধ্যমকে বলেছেন যে, নতুন সরকার পর্যটন খাতে আয়ের অঙ্ক ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি করে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য রাখে, যা আসলে দ্বীপদেশটির মোট অর্থনীতির সমান এবং প্রেসিডেন্ট স্বল্পমেয়াদে তা অর্জন করার লক্ষ্যে আসীন। প্রেসিডেন্ট পর্যটন খাতে বৈচিত্র্য আনতে, স্থিতিশীল রাজস্ব প্রবাহ ও নগদ প্রবাহ সুনিশ্চিত করতে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে জনগণকে ভাল পরিষেবা প্রদানের জন্য মন্ত্রী সঈদের সভাপতিত্বে একটি ভিজিটর ইকোনমিক কাউন্সিল নিয়োগ করেছেন।
নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি
মুইজ্জুর নির্বাচনের প্রায় পনেরো দিন পর হংকংভিত্তিক ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি ফিচ মলদ্বীপকে ‘বি-’-এ ‘নেগেটিভ আউটলুক’ বা ‘নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি’ রেটিং দিয়েছে। এক বছর আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং বিশ্বব্যাঙ্ক দ্বারা ভবিষ্যদ্বাণী করা তথ্যভিত্তিক ফিচের পুনরুক্তি দর্শায় যে, আগামী বছরগুলিতে বহিরাগত ঋণ-পরিষেবার ক্ষেত্রে আরও বেশি খরচ হবে অর্থাৎ ২০২৪ সালে ২৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২৫ সালে ৩৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০২৬ সালে তা সর্বোচ্চ অর্থাৎ ৮৮৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে। এর ‘সুকুক’ পরিশোধের জন্য দ্বীপদেশটিকে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিতে হবে, যা কিনা পাওনাদারকে বিক্রি করা ইজারা-সমর্থিত সম্পদ। মুইজ্জু বিদেশি সরকার এবং সংস্থাগুলির সঙ্গে অতীতের সমস্ত চুক্তির প্রেক্ষিতে তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন কি না, তা দেখার বিষয়।
উপলব্ধ পরিসংখ্যান দর্শিয়েছে যে, সরকারের কাছে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রদেয় পাবলিক গ্যারান্টেড অবলিগেশন বা সরকারি আর্থিক বাধ্যবাধকতার পরিমাণ ২৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ফিচ ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে, ‘কারেন্সি-পেগ’কে সমর্থন করার জন্য মলদ্বীপিয়ান মনিটরি অথরিটির (এমএমএ) ঘন ঘন হস্তক্ষেপের কারণে এবং জ্বালানি ও খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বৈদেশিক ভাণ্ডার ও রিজার্ভ বাফার ‘যথেষ্ট চাপের মধ্যে’ থাকবে। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক এমএমএ একটি আসন্ন সঙ্কটের বিষয়ে সতর্ক করেছে এবং ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (আরবিআই) সঙ্গে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের মুদ্রা-বিনিময়ের অর্থ থেকে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তুলে নিয়েছে। ফলে মোট বৈদেশিক ভাণ্ডার ১৬.৬ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ২০২৩ সালের ৬৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। এবং এর পাশাপাশি ফরেক্স কভারেজ প্রত্যাশিত ৩.৫ মাসের তুলনায় অনেকটাই হ্রাস পেয়ে ১.১ মাসে এসে দাঁড়িয়েছে। মুইজ্জু এবং সোলি-র নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির যে কোনও অব্যবহিত বাস্তবায়ন সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে।
প্রাণবন্ত গণতন্ত্র
একটি সম্ভাব্য ক্ষয়িষ্ণু গণতন্ত্র সংক্রান্ত সব ভবিষ্যদ্বাণীই দর্শিয়েছে যে, মলদ্বীপ খুব সহজে ও স্বচ্ছন্দেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও সংশ্লিষ্ট রূপান্তরের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গিয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের ১৫ বছরের ইতিহাসে ষষ্ঠ নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হলেন মুইজ্জু। ৪৫ বছর বয়সে তিনিই প্রথম ‘নতুন প্রজন্মের’ প্রেসিডেন্ট, যিনি উভয় পক্ষের ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলন’-এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত নন।
পাঁচজন প্রবীণ নেতার মধ্যে মুইজ্জুর এক সময়ের দলীয় নেতা এবং ছোটবেলার বন্ধু পূর্বসূরি সোলি, মোহাম্মদ ‘আন্নি’ নাশিদ ও তাঁর উত্তরসূরি ডক্টর মোহাম্মদ ওয়াহেদ হাসান মানিক ১৭ নভেম্বর মুইজ্জুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এ হেন ‘গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতি সুশীল সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না’… এই কারণ দর্শিয়ে ইয়ামিন সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠান থেকে দূরেই থেকেছেন। কিন্তু পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ দর্শিয়েছে যে, বাস্তব পরিস্থিতি এতটা সরল নয়।
সম্পূর্ণ রূপে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রথমেই মনে হতে পারে যে, সোলি-র নির্বাচনী বন্ধু, পূর্ববর্তী জোটের হাউসের নেতা, নতুন পার্লামেন্ট স্পিকার মোহাম্মদ আসলামের পূর্ণ সহযোগিতার নিশ্চয়তা নিয়েই মুইজ্জু তাঁর প্রেসিডেন্ট পদে যাত্রা শুরু করেছেন। কিন্তু আসল সত্যি হল এই যে, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সোলি-র বিরোধী এমডিপি - যাঁর হাউসে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে – কোনও সমস্যা ছাড়াই মুইজ্জুর অপেক্ষাকৃত বৃহৎ ২২ মন্ত্রীর মন্ত্রিসভা এবং আইনি ও প্রশাসনিক উদ্যোগগুলিকে খর্ব করে দিতে পারেন।
প্রযুক্তিগত কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠ এমডিপি-প্রবর্তিত অনাস্থা ভোট পিছিয়ে দেওয়া উচিত নয় বলে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর শেষ মুহূর্তে ক্ষমতাসীন নাশিদ পদত্যাগ করার পর আসলাম স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত হন। যদি মুইজ্জু আগা্মী এপ্রিল মাসের সংসদীয় নির্বাচনের আগে পূর্ববর্তী সরকারের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের বিষয়ে তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করতে শুরু করেন, তা হলে আসলামের নিশ্চয়তা মুইজ্জুকে কত দূর নিয়ে যেতে পারে, তা দেখার বিষয়। তবে, সংসদীয় প্যানেল রোজার মাস পেরিয়ে এই নির্বাচনের তারিখ স্থির করার চেষ্টা করেছে।
ইয়ামিন সমীকরণ
মুইজ্জু নিজের জন্য ১৭২টি কাজের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছেন, যা একশো দিনে সম্পন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু পূর্বসূরিদের থেকে ভিন্ন পথে হেঁটে তিনি প্রথম ১৪ সপ্তাহে সাপ্তাহিক সরকারি ছুটি অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আপাতত, তিনি দেশের অভ্যন্তরে এবং তাঁর দল/জোট উভয়ের অভ্যন্তরীণ বিভাজন কাটিয়ে উঠেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে (আরও) অনেকটাই নির্ভর করছে অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত বৈদেশিক নীতির উপর, বা অন্য ভাবে দেখলে বর্ধিত ভাবে স্বল্প, মাঝারি এবং দীর্ঘ মেয়াদে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উপর। তাঁর সরকার ভারতীয় ঋণের পুনঃনির্ধারণ এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উন্নয়নমূলক তহবিল অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছে বলে জানা গিয়েছে এবং এমনটা মনে করা হচ্ছে যে, অতীতের মতোই তিনি বাজেট সহায়তার প্রত্যাশা করছেন। ভারতের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের সমীকরণ অন্য ত্রাণপ্রদানকারী দেশগুলিও গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।
এন সত্য মূর্তি চেন্নাইভিত্তিক নীতি বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.