উন্নয়নশীল দেশগুলি যে হানি ও ক্ষয়ক্ষতির (এলএন্ডডি) শিকার হয় তা নিয়ে আলোচনা এবং তার ক্ষতিপূরণের জন্য একটি তহবিল ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বিষয়টি তিন দশক ধরে লাইনচ্যুত করা হয়েছে। তারপর অবশেষ রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু আলোচনা একটি অতি–গুরুত্বপূর্ণ পরিণতিতে পৌঁছেছে। যাই হোক, জলবায়ু সক্রিয়তার দিকে এগিয়ে যাওয়ার দীর্ঘ পথে এখনও বিবাদাস্পদ কিছু প্রশ্ন রয়ে গেছে।
বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের দ্রুত ক্রমবর্ধমান প্রভাবের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও প্রশমন ও অভিযোজন সক্রিয়তা ধীর গতিতে এগিয়ে চলেছে। ফলস্বরূপ উন্নয়নশীল দেশগুলি, যাদের গ্রিনহাউজ গ্যাস বা জিএইচজি নির্গমনে অবদান খুবই কম, তারা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মারাত্মক হানি ও ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে ধ্বংস হওয়া বাড়িঘর ও পরিকাঠামো, নষ্ট ফসলি জমি ও জীবিকা, এবং হারিয়ে যাওয়া সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এগুলিকে এখন অর্থনৈতিক এবং অ–অর্থনৈতিক ক্ষতি হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। বৈশ্বিক দক্ষিণ (গ্লোবাল সাউথ)–এর হানি ও ক্ষয়ক্ষতির অর্থনৈতিক ব্যয় ২০৫০ সালের মধ্যে ১–১.৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উন্নয়নশীল দেশগুলি, যাদের গ্রিনহাউজ গ্যাস বা জিএইচজি নির্গমনে অবদান খুবই কম, তারা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মারাত্মক হানি ও ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
পাকিস্তানে সাম্প্রতিক বন্যার পর দেশটি আনুমানিক ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মোট ক্ষতি অনুমান করেছে, যা সরকারকে বিশ্বব্যাপী ঋণদাতাদের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন করতে বাধ্য করেছে। কেনিয়া, ইউরোপ ও দক্ষিণ চিন জুড়ে, বিধ্বংসী খরা ও তাপপ্রবাহ, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হারিকেন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে প্রশান্ত মহাসাগরীয় বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের বাধ্যবাধকতার প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী অনুরূপ প্রবণতা দেখা গিয়েছে। জলবায়ু–প্ররোচিত দুর্যোগের বিপদ ও তার সামনে দুর্বলতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অনেক উন্নয়নশীল দেশ একটি জলবায়ু অর্থব্যবস্থাকে সমর্থন করছে, যা স্বতন্ত্রভাবে হানি ও ক্ষয়ক্ষতির মোকাবিলা করবে। জলবায়ু অর্থায়ন অতীতে রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রবিন্দু ছিল, তবে হানি ও ক্ষয়ক্ষতির অর্থায়নের বিষয়টি মিশরের শার্ম আল–শেখ–এ ইউএনএফসিসিসি–র ২৭তম কনফারেন্স অফ পার্টিজ (কপ২৭)–এ প্রথমবারের জন্য একটি আনুষ্ঠানিক অ্যাজেন্ডা আইটেম হিসাবে গৃহীত হয়। এই কনভেনশন ও ২০১৫ প্যারিস চুক্তির আদেশের অধীনে হানি ও ক্ষয়ক্ষতি অর্থায়ন সংক্রান্ত আলোচনাকে বিশ্ব ব্যাপকভাবে স্বাগত জানালেও এই উদ্দেশ্যে একটি স্বতন্ত্র আর্থিক সুবিধা প্রতিষ্ঠা করা একটি বড় বিবাদের বিষয় হয়ে উঠেছে।
আফ্রিকা, একটি মহাদেশ যে ইতিমধ্যেই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত হানি ও ক্ষয়ক্ষতির শিকার, সেখানে কপ২৭–কে একটি ‘ইমপ্লিমেন্টেশন কপ’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তবে আশাবাদের সঙ্গে শেষ হলেও এখনও কিন্তু অনেক অমীমাংসিত সমস্যা থেকে গিয়েছে। বৈশ্বিক দক্ষিণ ইউএনএফসিসিসি–র আর্থিক ব্যবস্থার একটি অংশ হিসাবে একটি হানি ও ক্ষয়ক্ষতি তহবিল বা সুবিধা প্রতিষ্ঠায় অনড় রয়েছে, যা প্যারিস চুক্তির সঙ্গে সংযুক্ত এবং কনভেনশনের নির্দেশনার মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ নিশ্চিত করে।
একটি পর্যালোচনা
উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য হানি ও ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত অর্থসংগ্রহের ধারণাটি ১৯৯২ সালেও ছিল, কারণ তখনই অ্যালায়েন্স অফ স্মল আইল্যান্ড স্টেটস (এওএসআইএস) সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ক্ষতির মোকাবিলা করার জন্য একটি আর্থিক ব্যবস্থার পক্ষে কথা বলেছিল। যদিও প্রক্রিয়াটি তখন প্রতিষ্ঠিত হয়নি, কিন্তু তা হানি ও ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনার সূচনা করিয়ে দেয়। অতীতে ২০১৩ সালে হানি ও ক্ষয়ক্ষতির জন্য ওয়ারশ ইন্টারন্যাশনাল মেকানিজম (ডব্লিউআইএম) তৈরি করা সহ এই অর্থ জোগাড়ের জন্য বেশ কয়েকটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা হয়েছে। পদ্ধতিটি কপ–এর অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, কিন্তু সিএমএ–র অধীনে একে উন্নত ও শক্তিশালী করা হবে বলে আশা করা হয়েছিল, যা ডব্লিউআইএম—এর শাসনকাঠামো বিতর্কিত করে তোলে।
জলবায়ু অর্থায়ন অতীতে রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রবিন্দু ছিল, তবে হানি ও ক্ষয়ক্ষতির অর্থায়নের বিষয়টি মিশরের শার্ম আল–শেখ–এ ইউএনএফসিসিসি–র ২৭তম কনফারেন্স অফ পার্টিস (কপ২৭)–এ প্রথমবারের মতো একটি আনুষ্ঠানিক অ্যাজেন্ডা আইটেম হিসাবে গৃহীত হয়।
হানি ও ক্ষয়ক্ষতি তখন প্যারিস চুক্তির ৮ অনুচ্ছেদে একীভূত করা হয়েছিল, এবং সেখানে শুধু ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হানি ও ক্ষয়ক্ষতি রোধ করা, কমানো ও তার মোকাবিলা করার’ গুরুত্বই তুলে ধরা হয়নি, সেই সঙ্গেই ডিসিশন ৫২–র সেই বিতর্কিত উপাদানগুলিকেও বাদ দেওয়া হয় যেখানে পক্ষগুলি একমত হয়েছিল যে হানি ও ক্ষয়ক্ষতির জন্য কোনও আইনি ক্ষতিপূরণ দেওয়া বা দায় নেওয়ার প্রয়োজন নেই। মাদ্রিদে কপ২৫ চলাকালীন বৈশ্বিক দক্ষিণ ডব্লিউআইএম পরিচালনা করার জন্য শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার জন্য চাপ দেয়। এটি হানি ও ক্ষয়ক্ষতির জন্য সান্তিয়াগো নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার দিকে নিয়ে যায়, যা শেষ পর্যন্ত হানি ও ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত সক্রিয়তা ও সহায়তার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দল তৈরি করে। ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলি, ১৩৪টি উন্নয়নশীল দেশ, জি৭৭ ও চিন–সহ বৈশ্বিক দক্ষিণের বৃহত্তম আলোচনাকারী গোষ্ঠীগুলির কাছ থেকে একটি স্বতন্ত্র অর্থায়ন সুবিধার দাবি কপ২৬–এ ‘গ্লাসগো ডায়ালগ’ প্রতিষ্ঠার দিকে চালিত করে।
হানি ও ক্ষয়ক্ষতি অর্থায়নের ধারণা ও উপলব্ধি সবসময়ই উদ্বেগের বিষয়। হানি ও ক্ষয়ক্ষতির কোনও একক সংজ্ঞা, বা ইউএনএফসিসিসি–র অধীনে উন্নয়নশীল দেশগুলির হানি ও ক্ষয়ক্ষতি অর্থায়নের প্রয়োজনগুলি পদ্ধতিগতভাবে অনুসরণ করার কোনও ব্যবস্থা নেই। হানি ও ক্ষয়ক্ষতি অর্থায়নকে প্রাতিষ্ঠানিক করার ক্ষেত্রে কিছু নীতিগত বাধাও রয়েছে। যেমন জাতীয় পর্যায়ে হানি ও ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত তথ্য প্রতিবেদন করা এনডিসি–র বাধ্যতামূলক অংশ নয়। তার উপর জাতীয় পর্যায়ে অভিযোজন পরিকল্পনার জন্য তৈরি ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যান–গুলিও হানি ও ক্ষতির কোনও হিসাব রাখে না।
সীমিত সাফল্য
২৭তম কনফারেন্স অফ পার্টিজ (কপ২৭) গ্লাসগো সংলাপের মাধ্যমে হানি ও ক্ষয়ক্ষতির জন্য একটি তহবিল ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা এবং ডব্লিউআইএম–এর জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা চূড়ান্তকরণ সহ আরও নানা সমস্যার সমাধান দেবে বলে আশা করা হয়েছিল। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে সব সময়ই অর্থের বিষয়ে বিবাদ বাধে, এবং এই সম্মেলনেও পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল না। উন্নত দেশগুলি ‘সমাধানের মোজাইক’–এর অংশ হিসাবে ইউএনএফসিসিসি–র বাইরে অর্থায়ন ব্যবস্থার ভূমিকার উপর জোর দিয়ে চলেছে, আর তার ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলির দাবিমতো ইউএনএফসিসিসি–র অধীনে একটি অর্থায়ন ব্যবস্থা তৈরির বিষয়ে আলোচনা আরও বিলম্বিত হচ্ছে।
ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলি, ১৩৪টি উন্নয়নশীল দেশ, জি৭৭ ও চিন–সহ বৈশ্বিক দক্ষিণের বৃহত্তম আলোচনাকারী গোষ্ঠীগুলির কাছ থেকে একটি স্বতন্ত্র অর্থায়ন সুবিধার দাবি কপ২৬–এ ‘গ্লাসগো ডায়ালগ’ প্রতিষ্ঠার দিকে চালিত করে।
জি৭৭ ও চিন, এলডিসি–গুলি এবং এওএসআইএস–সহ বৈশ্বিক দক্ষিণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ডব্লিউআইএম–এর শাসনকে কপ–এর অধীনে অব্যাহত রাখার উপর জোর দিয়েছে, আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, কানাডা, জাপান ও ব্রিটেন সহ বৈশ্বিক উত্তর যুক্তি দিয়েছে যে অনুচ্ছেদ ৮ স্পষ্টতই ডব্লিউআইএম–কে বাধ্যতামূলকভাবে একমাত্র সিএমএ–র শাসনের অধীনে রেখেছে। শেষ পর্যন্ত কপ প্রেসিডেন্সি ডব্লিউআইএম–এর পরিচালন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতের কপ–এর জন্য পিছিয়ে দিয়েছে, এবং এইভাবে এ বিষয়ে পদক্ষেপ আরও বিলম্বিত করেছে।
জি৭ ও ভি২০ ইতিমধ্যে গ্লোবাল শিল্ডও চালু করেছে, যা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিল সমাধান প্রয়াসে জল ঢেলে দেওয়ার চেষ্টা হিসাবে, কারণ তা বিমার উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। যখন সমস্ত উন্নয়নশীল দেশ সর্বসম্মতভাবে অর্থায়নের সুবিধার দাবি করছে, সেই সময় এমন একটি উদ্যোগে বিনিয়োগের প্রচেষ্টা যা সমস্ত উন্নয়নশীল ও অরক্ষিত দেশগুলিকে বা জলবায়ুর প্রভাবগুলির পুরো পরিসীমাটি বিবেচনার মধ্যে রাখে না, তা স্থিতিশীল সমাধান খোঁজার পরিবর্তে নিছক বিভ্রান্তির মতো মনে হয়েছে৷ হানি ও ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসের সমাধান হিসাবে বিমার উপর নির্ভর করা বিপর্যয়কর হতে পারে, কারণ এটি বৈশ্বিক উত্তরকে অরক্ষিত ও দরিদ্রতম জনসম্প্রদায়ের মূল্যে আরও লাভের সুযোগ করে দেয়।
দ্রুত ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং হানি ও ক্ষয়ক্ষতির মূল্য যখন স্পষ্ট হয়ে ওঠে, তখন ২০২০–র জন্য নির্ধারিত ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের লক্ষ্য ক্রমবর্ধমান অভিযোজন ও প্রশমনের জন্য অপ্রতুল বলে মনে করা হয়েছিল। ফলস্বরূপ, বৈশ্বিক দক্ষিণ জলবায়ু অর্থায়ন সংক্রান্ত নিউ কালেক্টিভ কোয়ান্টিফায়েড গোল (এনসিকিউজি)–এর মধ্যে হানি ও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলার বিষয়টিকে একটি তৃতীয় স্তম্ভ হিসাবে অন্তর্ভুক্তির উপর জোর দিয়েছে। এটি ইউএনএফসিসিসি–র অধীনে ইক্যুইটি নীতি এবং সমস্ত দেশের অভিন্ন কিন্তু পৃথগীকৃত দায়িত্বের (সিবিডিআর) সঙ্গে হানি ও ক্ষয়ক্ষতি অর্থায়নের প্রতিশ্রুতিগুলিকে সমঞ্জস করবে। বৈশ্বিক উত্তর এই প্রচেষ্টার তীব্র বিরোধিতা করেছিল, যার ফলে প্রশমন ও অভিযোজনের বাইরে এনসিকিউজি–র ম্যান্ডেট সম্প্রসারণের বিষয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
একটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসাবে কপ২৭ উন্নয়নশীল দেশগুলির হানি ও ক্ষয়ক্ষতির প্রতি দৃষ্টি দিতে এবং তা মোকাবিলায় সহায়তা করার জন্য একটি হানি ও ক্ষয়ক্ষতি তহবিল প্রতিষ্ঠার বিষয়টি অনুমোদনের সঙ্গে সমাপ্ত হয়েছে। এটি সঠিক দিকে একটি পদক্ষেপ হতে পারে, যা পশ্চিমের দৃঢ় আপত্তির মধ্যেও উন্নয়নশীল দেশগুলির ক্রমাগত আলোচনা ও অধ্যবসায়ের কারণে সম্ভব হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য–সহ একটি ২৪ সদস্যের ট্রানজিশনাল কমিটিও তৈরি করা হয়েছে, যেটি অর্থায়ন সুবিধা কার্যকর করার পদ্ধতি নিয়ে কাজ করবে। কমিটি যৌথভাবে কপ ও সিএমএ দ্বারা পরিচালিত হবে। তার উপরে জি৭৭ ও চিনের মূল দাবি পূরণ করে সান্তিয়াগো নেটওয়ার্ককে কার্যকর করার পদ্ধতি নিয়েও ঐকমত্য হয়েছে। অধিকন্তু, অনেক উন্নত দেশ ক্ষয়ক্ষতির জন্য এককালীন অর্থায়নের অঙ্গীকার করেছে। জার্মানি ১৭৫ মিলিয়ন, বেলজিয়াম ২.৫ মিলিয়ন, অস্ট্রিয়া ও স্কটল্যান্ড যথাক্রমে ৫০ মিলিয়ন ও ৫ মিলিয়ন, এবং নিউজিল্যান্ড ১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। তবে এই অঙ্গীকারগুলির বেশিরভাগই গ্লোবাল শিল্ডের প্রতি, কোনও স্বতন্ত্র হানি ও ক্ষয়ক্ষতি সুবিধা নয়।
উন্নয়নশীল দেশগুলির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য–সহ একটি ২৪ সদস্যের ট্রানজিশনাল কমিটিও তৈরি করা হয়েছে, যেটি অর্থায়ন সুবিধা কার্যকর করার পদ্ধতি নিয়ে কাজ করবে।
হানি ও ক্ষয়ক্ষতি তহবিল প্রতিষ্ঠা একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হয়েছে, এবং হানি ও ক্ষয়ক্ষতির সমস্যা মোকাবিলার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য আরও একটি পথ তৈরি করেছে। তবে আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে এই নতুন পদক্ষেপগুলি যেন আমাদের জলবায়ু সক্রিয়তার বৃহত্তর স্তরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। তহবিলের সুযোগের ব্যবহারযোগ্যতা ও জবাবদিহিতা সম্পর্কে বিতর্কিত প্রশ্নগুলি এখনও রয়ে গেছে। নতুন তহবিলকে সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করার জন্য দেশগুলিকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যার জন্য সম্মেলনের ভিতরে ও বাইরে উভয় পক্ষের প্রচেষ্টার প্রয়োজন হবে।
এই বছরের কপ–এর ফলাফল আংশিক সাফল্য এবং কয়েকটি হারানো সুযোগ মিলিয়ে ভাল–মন্দয় মিশ্র ছিল। বিলম্বিত পদক্ষেপের খরচ অনেক বেশি; অভিযোজন এবং হানি ও ক্ষয়ক্ষতি উভয় চাহিদা মেটাতে এখনও অর্থের জোগানের পরিমাণ বাড়াতে হবে। যুদ্ধ, শক্তির নিরাপত্তাহীনতা এবং অতিমারির অর্থনৈতিক প্রভাবের পটভূমিতে জলবায়ু অর্থ প্রদানে উন্নত দেশগুলির ট্র্যাক রেকর্ড খুবই দুর্বল, এবং তা প্রান্তিক ও অরক্ষিত জনসম্প্রদায়ের মধ্যে অনাস্থার কারণ হয়েছে। আস্থা পুনরুদ্ধার করার জন্য ধনী দেশগুলির জন্য দায়ভার গ্রহণ করা, সমতা নিশ্চিত করা এবং ইউএনএফসিসিসি–র আওতায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করা অপরিহার্য হবে। যে সব ব্যবস্থার অধীনে তহবিলটি বাস্তবায়িত হবে সেই সান্তিয়াগো নেটওয়ার্ক ও ডব্লিউআইএম নির্দেশিকাগুলিকে কার্যকর করারও জরুরি প্রয়োজন রয়েছে। জলবায়ু সক্রিয়তার খণ্ডিত অংশগুলি জোড়ার ক্ষেত্রে এখনও প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে, এবং প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হবে না যদি না প্রশমন, অভিযোজন এবং হানি ও ক্ষয়ক্ষতির তিনটি খণ্ডাংশ একত্রে চালনা করা যায়। নতুন প্রতিষ্ঠিত তহবিলটি জলবায়ু ন্যায়বিচারের সিঁড়ি হিসাবে, এবং নেট–জিরো উত্তরণে আরোহণের ক্ষেত্রে, একটি বিপ্লবী কিন্তু ছোট পদক্ষেপ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.