সদ্য সমাপ্ত কপ২৭ বৈঠকে দুটি বড় ঘোষণা ছিল। প্রথমটি ছিল, শুধু কয়লা নয়, সমস্ত জীবাশ্ম জ্বালানির থেকে রূপান্তরের বিষয়টি। ভারত এই প্রস্তাব দিয়েছিল, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ সহ প্রায় ৮০টি দেশের সমর্থন পেয়েছিল। কিন্তু এই বিষয়টির মধ্যে তেল ও গ্যাসের অন্তর্ভুক্তি বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছিল।
দ্বিতীয়টি ছিল জলবায়ু ক্ষতিপূরণের জন্য একটি নতুন ‘হানি ও ক্ষয়ক্ষতি’ তহবিল (লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড) গঠনের ঘোষণা।
এই প্রস্তাবিত তহবিল জলবায়ু–সংশ্লিষ্ট বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে অরক্ষিত দেশগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে। কে এই তহবিল পরিচালনা করবে, কে কতটা অবদান রাখবে, কীভাবে অবদানের অংশ ভাগ করা হবে, বড় উন্নয়নশীল দেশগুলি থেকে অবদান প্রত্যাশিত কিনা, এবং অবদানকারীদের ন্যায্য অংশ কী হবে, এ সবই একটি ‘ট্রানজিশনাল কমিটির’ উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী বছর সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে অনুষ্ঠিতব্য রাষ্ট্রপুঞ্জের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ–এর পরবর্তী কনফারেন্স অফ দ্য পার্টিজ (কপ)–এ এই তহবিল যাতে কার্যকর হতে পারে, তার জন্য এই কমিটি বিভিন্ন সুপারিশ করবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ‘হানি ও ক্ষয়ক্ষতি’ হিসাবে কী ধরা উচিত, তা নিয়ে এখনও কোনও ঐকমত্য নেই। তবে এর মধ্যে থাকতে পারে ক্ষতিগ্রস্ত পরিকাঠামো ও সম্পত্তি, এবং সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র বা সাংস্কৃতিক সম্পদ, যার মূল্যায়ন করা অনেক বেশি কঠিন। ৫৫টি অরক্ষিত দেশের একটি প্রতিবেদনে হিসাব করা হয়েছে যে গত দুই দশকে তাদের সম্মিলিত জলবায়ু–সংশ্লিষ্ট ক্ষতির পরিমাণ মোট ৫২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা তাদের যৌথ মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) ২০ শতাংশ।
প্রস্তাবিত নতুন তহবিলের ক্ষেত্রে মূল্যায়নের চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে রয়েছে জলবায়ু প্রভাব নির্ধারণ ও পরিমাপ করার মাপদণ্ড তৈরি করা, এবং এই জাতীয় সমস্ত ডেটা বা দাবি যাচাইকরণের পদ্ধতি।
একটি অতি–গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, প্রস্তাবিত নতুন তহবিলের ক্ষেত্রে মূল্যায়নের চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে রয়েছে জলবায়ু প্রভাব নির্ধারণ ও পরিমাপ করার মাপদণ্ড তৈরি করা, এবং এই জাতীয় সমস্ত ডেটা বা দাবির যাচাইকরণের পদ্ধতি। এর জন্য প্রয়োজন একটি দাবিদার ও একটি যাচাইকারীর ধারণা, যাদের মধ্যে বোঝাপড়ার ভিত্তি হবে বিশ্বাস ও দায়বদ্ধতা৷ তহবিলটির আওতায় ক্ষতিপূরণের দাবির মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিকাঠামো ও সম্পত্তি, এবং প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র, সামাজিক সম্পদ বা সাংস্কৃতিক ভরণপোষণের মতো যেসব বিষয়ের মূল্যায়ন করা কঠিন তা অন্তর্ভুক্ত হবে কি না তা এখনও স্থির হয়নি।
যতক্ষণ না এই সব বিষয়ে ঐকমত্য হয়, ততক্ষণ এই তহবিলের নিছক ঘোষণা গণ্য হবে তহবিল দাতাদের কাছ থেকে কোনও নগদ অর্থের প্রবাহ ছাড়াই জলবায়ু সক্রিয়তাকে আরও একটি বছর পিছিয়ে দেওয়ার একটি সান্ত্বনা কৌশল হিসাবে। এগ্রিমেন্টটি অর্থ প্রদানের জন্য ধনী দেশগুলির উপর নির্ভর না–করে অস্পষ্টভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান সহ বিদ্যমান বিভিন্ন উৎস থেকে তহবিল জোগাড়ের আহ্বান জানিয়েছে।
একটি নতুন সূত্র প্রস্তাব
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হানি ও ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করার জন্য এখনও পর্যন্ত কোনও সূত্র নেই। একটি ন্যায্য আর্থিক হিসাবে, একেবারে শুরুতেই, আয়ের ক্ষতি ও মূলধনের ক্ষতির মূল্যায়ন অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ।
মূলধনের বিষয়টি এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং তা হওয়া উচিৎ ইউএনইপি দ্বারা ডিজাইন করা ইনক্লুসিভ ওয়েলথ বা অন্তর্ভুক্তিমূলক সম্পদ পদ্ধতির ভিত্তিতে। এতে কমপক্ষে তিনটি ধরনের মূলধনের মূল্যায়ন করা হবে: (১) ভৌত পুঁজি (পরিকাঠামো), (২) মানব পুঁজি এবং (৩) প্রাকৃতিক মূলধন।
এখানে প্রাকৃতিক পুঁজির প্রদত্ত বাস্তুতন্ত্র পরিষেবাগুলির মূল্য বিবেচনা করা প্রয়োজন। উন্নয়নশীল ও অনুন্নত অঞ্চলে বাস্তুতন্ত্র পরিষেবার মান হিসাব করার বইপত্রের অভাব নেই, এবং জরুরিভাবে সেগুলি বিবেচনা করা প্রয়োজন। কিন্তু এই মূল্যায়ন সংক্রান্ত ব্যাখ্যায় বিরোধ বাধলে কে সালিশি করবে তা একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয় হবে।
উন্নয়নশীল ও অনুন্নত অঞ্চল বাস্তুতন্ত্র পরিষেবার মান হিসাব করার বইপত্রের অভাব নেই, এবং জরুরিভাবে সেগুলি বিবেচনা করা প্রয়োজন।
অন্তর্ভুক্তিমূলক সম্পদ হিসাব করতে হলে একজনকে তিন ধরনের মূলধনের মান যোগ করতে হবে। এখানে ক্ষতির পরিমাপ করতে হবে ভিত্তি–সময়কাল ও জলবায়ু–সম্পর্কিত ঘটনাগুলি ক্ষয়ক্ষতি ও হানি ঘটানোর পরেকার বর্তমান–সময়কালের মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক সম্পদের মানের পার্থক্য হিসাবে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে ক্ষয়ক্ষতি শুধুমাত্র দুটি ডেটা পয়েন্টের পার্থক্য নয়, কারণ ভবিষ্যতের সময়কাল জুড়ে এর ক্রমবিস্তৃত প্রভাব পড়বে। এর ফলে এই যুক্তি শক্তিশালী হয় যে হানি ও ক্ষয়ক্ষতির সমীকরণটির মধ্যে ভবিষ্যতের সুযোগের হানির বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে।
সেক্ষেত্রে বর্তমান মূল্যের মানই ক্ষতিপূরণের ভিত্তি হওয়া উচিৎ, এবং বর্তমান মূল্য অন্তত ২৫ বছরের সময়সীমায় উপযুক্ত প্রিমিয়ামের হার যুক্ত করে বিবেচনা করা প্রয়োজন। আর সময়–দিগন্ত ও ডিসকাউন্টের হার নির্ধারণ করা প্রয়োজন যথাক্রমে ব্যবস্থার স্থিতিস্থাপকতা ও বিদ্যমান বাজারের হারের ভিত্তিতে ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.