Author : Vikrom Mathur

Published on Jan 02, 2025 Updated 0 Hours ago

বাকুতে সাম্প্রতিক কপ২৯ উন্নত উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে বিভাজনকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। কারণ ধনী দেশগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য আর্থিক দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করছে।

কপ২৯: আরও এক বার দায়ভার ঝেড়ে ফেলার সম্মেলন

২৯তম রাষ্ট্রপুঞ্জের (ইউএন) জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত পার্টির সম্মেলনে (কপ২৯) ভারতের তরফে আলোচনাকারী চাঁদনি রায়না বলেছেন, এই নথিটি [এনসিকিউজি রেজোলিউশন] একটি মরীচিকা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের মতে, এটি আমাদের সম্মুখে উপস্থিত চ্যালেঞ্জের বিশালতার সমাধান করবে না। অতএব, আমরা এই নথি মেনে নিতে অস্বীকার করছি।’ নাইজেরিয়ার প্রতিনিধি দলও এই রেজোলিউশনকে তামাশা বলে উল্লেখ করেছে।

কপ২৯-, ‘ফিন্যান্স সিওপিনামে পরিচিত জলবায়ু অর্থায়নকে আলোচনার কেন্দ্রে তুলে ধরা হয়েছে এবং প্রাথমিক ভাবে প্রশমন অভিযোজনের জন্য নিউ কালেক্টিভ কোয়ান্টিফাইড গোল (এনসিকিউজি) জলবায়ু তহবিলের মীমাংসা করার জন্য এমনটা করা হয়েছেদূষণহীন রূপান্তর লক্ষ্যমাত্রা, অভিযোজনের প্রয়োজনীয়তা এবং উপলব্ধ অর্থায়নের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ব্যবধানের পরিপ্রেক্ষিতে উন্নয়নশীল দেশগুলি বার্ষিক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের দাবি করেছে। যাই হোক, গৃহীত রেজোলিউশনে বলা হয়েছে যে, ২০৩৫ সাল পর্যন্ত উন্নত দেশগুলির তরফে বছরে মাত্র ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়া হবে।

এই এনসিকিউজি-এর প্রধান প্রয়োজন ছিল জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য পর্যাপ্ত, স্পষ্ট ভাবে বরাদ্দকৃত তহবিল সরবরাহ করা, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সম্মত হওয়া তহবিলগুলির পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার থেকে হাস্যকর রকমের কম। আরও খারাপ বিষয় হল, জলবায়ু পরিবর্তনের অপূরণীয় প্রভাবগুলির সঙ্গে নির্দিষ্ট অভিযোজন সৃষ্ট ক্ষতি ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

দূষণহীন রূপান্তর লক্ষ্যমাত্রা, অভিযোজনের প্রয়োজনীয়তা এবং উপলব্ধ অর্থায়নের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ব্যবধানের পরিপ্রেক্ষিতে উন্নয়নশীল দেশগুলি বার্ষিক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের দাবি করেছে।

কপ২৯ এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত যে, উন্নত দেশগুলি ইউএন ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসি) দ্বারা নির্ধারিত সাধারণ কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব এবং নিজ নিজ ক্ষমতা’র নীতিকে সম্মান করতে চায় না। উন্নয়নশীল বিশ্বজলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা বহন করে এবং তাদের চিরাচরিত ও বিদ্যমান নির্গমন দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতিপূরণের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য উন্নত দেশগুলির উপর নির্ভর করতে পারে না। জলবায়ু পরিবর্তনের অর্থায়নের ক্ষেত্রে যখন এই ধরনের একটি এনসিকিউজি গৃহীত হয়েছিল, তখন আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সীমাবদ্ধতার উপর জোর দেওয়া হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজন, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে সৃষ্ট অপরিবর্তনীয় ক্ষয় ও ক্ষতি জন্য এই অত্যন্ত কম তহবিলকে অবশ্যই অর্থ প্রদান করতে হবে, যা প্রধানত স্বল্পোন্নত দেশগুলিকে প্রভাবিত করে এবং যারা আসলে এই ক্ষতির জন্য দায়বদ্ধ নয়।

কার কাছ থেকে এবং কতটা পরিমাণে?

গৃহীত হওয়া সত্ত্বেও এনসিকিউজি-এর সমস্ত প্রেক্ষিত নিয়েই বিতর্ক রয়েছেপ্রথমটি হল উন্নয়নশীল দেশগুলির কাছে উন্নত দেশগুলির প্রাপ্য অর্থের পরিমাণএনসিকিউজি আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়নের প্রকৃতি উত্সগুলিকে কেন্দ্র করে তিন দশকের আলোচনার উত্তরসূরি অতীতের লক্ষ্যগুলিকে স্বেচ্ছায়, সময়ানুবর্তিতায় বা আন্তরিক ভাবে পূরণ করা হয়নি জলবায়ু অর্থায়নে ২০০৯ সালে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল যা ২০২০ সালের মধ্যে অর্জিত হওয়ার কথা এবং ২০২৫ সালে এর মেয়াদ শেষ হচ্ছে২০২২ সালের সময়সীমার মাত্র দুবছর আগেই লক্ষ্য পূরণ করা হয়েছিল এবং কিছু প্রতিবেদন দর্শায় যে, এটি সম্ভব হয়েছে জলবায়ু তহবিল হিসেবে বিদ্যমান উন্নয়ন সহায়তার নাম পরিবর্তনের চালাকির  ফলে

বাকু সম্মেলনের একটি অগ্রাধিকার ছিল উন্নয়নশীল দেশগুলির বাস্তব বিশ্বের চাহিদার ভিত্তিতে জলবায়ু তহবিল উপলব্ধ করা। জলবায়ু পরিবর্তন ত্বরান্বিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বব্যাপী বিপর্যয় রোধে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ তার বাস্তবায়ন ক্রম জরুরি হয়ে পড়ছে। উন্নয়নশীল দেশগুলির ট্রিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হয় এবং বাকুতে তাদের চাহিদা বার্ষিক ১.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়। স্বীকৃত পরিমাণের অর্ধেকও যেখানে যথেষ্ট নয়, সেখানে ধনী দেশগুলি এক চতুর্থাংশ অংশকে যথেষ্ট বলে চালানোর চেষ্টা করছে।

দুই পক্ষের মধ্যে — উন্নয়নশীল দেশগুলি যাদের তহবিল গ্রহণ করতে হবে এবং উন্নত দেশগুলি যারা তা প্রদান করবে বলে আশা করা হচ্ছে — কাদের অবদান রাখা উচিত, কতটা রাখা উচিত এবং কী ধরনের অর্থায়ন হওয়া উচিত সেই প্রশ্নে ঐকমত্যে পৌঁছনো যায়নি। উন্নয়নশীল দেশগুলি যুক্তি দেয় যে, এই জলবায়ু বিনিয়োগগুলি সরকারি তহবিল, অনুদান এবং রেয়াতি ঋণ থেকে আসা উচিত। অন্য উত্সগুলির ক্ষেত্রে এর একটি প্রাথমিক সমস্যা হল এই যে, সেগুলি কেবল মাত্র অর্থায়নের ন্যায্য এবং উপযুক্ত আকারের নয়। অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশ বিদ্যমান আন্তর্জাতিক ঋণ পরিশোধের জন্য সংগ্রাম করলেও ছাড়হীন ঋণের উচ্চ সুদের হার রয়েছে। সর্বোপরি, সেগুলি ব্যবহার করা কঠিন, অ-স্বচ্ছ এবং সেগুলি প্রাপ্তির জন্য কঠোর যোগ্যতার প্রয়োজনীয়তা থাকতে পারে। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে তাদের চিরাচরিত অবদানের পরিপ্রেক্ষিতে, উন্নত দেশগুলি উন্নয়নশীল দেশগুলিকে জলবায়ু প্রশমন অভিযোজন তহবিল প্রদানের জন্য নৈতিক দায়িত্ব বহন করে।

অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশ বিদ্যমান আন্তর্জাতিক ঋণ পরিশোধের জন্য সংগ্রাম করলেও ছাড়হীন ঋণের উচ্চ সুদের হার রয়েছে।

বাকুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (ইউএস) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যুক্তি দিয়েছিল যে, চিনের মতো উদীয়মান অর্থনীতির এখন অবদান রাখা উচিত। যাই হোক, মাথাপিছু চিরাচরিত নির্গমন এবং আয় পরিমাপ করে বর্তমান অবদানকারীদের (সংযোজন ২-এর দেশগুলি) সঙ্গে তুলনা করলে, চিন এখনও তাদের মধ্যে যে কোনও দেশের চেয়ে অনেক নীচে রয়েছে। ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউটের (ডব্লিউআরআই) মতে, নিঃসরণ এবং অর্থনৈতিক পরামিতির সংমিশ্রণে প্রায় প্রতিটি পরিস্থিতিই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে জলবায়ু অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দায়বদ্ধ করে তোলে।’ তা সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্রমাগতভাবে তার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে এবং ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচপ্রতিশ্রুত জলবায়ু অর্থায়ন ঘাটতির হুমকি দিয়েছে।

উন্নত দেশগুলি যুক্তি দিয়েছিল যে, লক্ষ্যগুলি বাস্তববাদীহওয়া উচিতকারণ তারা দাবি করে যে তারা এর আগে বিলিয়ন-ডলারের পরিমিত লক্ষ্য পূরণের জন্য সংগ্রাম করেছিল, যার ফলস্বরূপ কপ২৯-এর তুচ্ছ ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগ উন্নয়নশীল দেশগুলির স্বেচ্ছায় অবদানের মতো নানাবিধ উৎস থেকে ১.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহ করার ‘দুর্বল আহ্বান’-এর সম্মুখীন হয়েছে। চূড়ান্ত অপ্রতুল হওয়ার পাশাপাশি এই অভিযোজন সংক্রান্ত ইচ্ছাকৃত পদ্ধতিগুলিও উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে বিভাজন রেখাকে আরও গভীর করে তুলেছে।

পদ্ধতিগত এবং প্রচার সংক্রান্ত বিতর্ক

সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে আজারবাইজানের সভাপতিত্বের সমালোচনা করা হয়েছিলকারণ দেশটি গত তিন বছরে তৃতীয় পেট্রোস্টেট’ (তৈলরাষ্ট্র) হোস্ট ছিল, যার সরকারি রাজস্ব ব্যাপক ভাবে জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরশীল। দুবাইতে কপ২৮-এ একটি বাঁকবদলকারী বিন্দু উদ্‌যাপিত হওয়া ‘জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে উত্তরণ’-এর কোনো উল্লেখ না থাকার কারণে এই সমালোচনা আরও জোরদার হয়েছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্মেলনের আলোচনা কোনও দিকেই গড়ায়নি এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রাক্তন মহাসচিব বান কি-মুন একটি খোলা চিঠিতে এই প্রক্রিয়াটিকে উদ্দেশ্যের জন্য অনুপযুক্ত’ বলে অভিহিত করেছিলেন। শুক্রবারের আলোচনা শনিবার পর্যন্ত গড়ালে দুটি উন্নয়নশীল দেশের জোট, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) অ্যালায়েন্স অফ স্মল আইল্যান্ড স্টেটস (এওএসআইএস) প্রস্তাবিত এনসিকিউজি ছেড়ে বেরিয়ে যায় এবং দাবি করে যে আলোচনাগুলি গ্রহণযোগ্য ছিল না। ভারত আজারবাইজানের রাষ্ট্রপতিত্ব এবং ইউএন ক্লাইমেট চেঞ্জ সেক্রেটারিয়েটকে এনসিকিউজি-এর রেজোলিউশনের ‘কোনও মতে কাজ সারা’র জন্য নিন্দা করেছে এবং অনেক উন্নয়নশীল দেশই ভারতের আবেগকে প্রতিধ্বনিত করেছে, যা পূর্ণাঙ্গ প্রক্রিয়াটিকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

সমস্ত দেশকে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলিকে ২০২৫ সালের শুরুর দিকে তাদের জাতীয় ভাবে নির্ধারিত অবদান সুনিশ্চিত করার জন্য কাজ শুরু করতে হবে।

আগুনে আরও উস্কে দিয়ে যখন উন্নয়নশীল দেশগুলি আলোচনার প্রতিবাদ করেছে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ভাঙন নিয়ে সরব হয়েছে, তখন উন্নত দেশগুলি বিপরীত দাবি করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এটিকে একটি ঐতিহাসিক ফলাফলবলে অভিহিত করেছেন এবং ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ডের লেইন দাবি করেছেন যে, বাকু চুক্তি জলবায়ু সহযোগিতা ও অর্থায়নের জন্য একটি নতুন যুগের’ সুচনা করেছে। যাই হোক, যদি এটি একটি নতুন যুগ হয়, তা হলে তা সহযোগিতা থেকে শত হস্ত দূরে। ব্রাজিলের বেলেমে হতে চলা কপ৩০-কে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে এবং দুর্বল কূটনৈতিক সম্পর্কগুলিকে অর্থপূর্ণ সঙ্কল্পে রূপান্তরিত করার জন্য অনেকটাই যুঝতে হবে।

সমস্ত দেশকে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলিকে ২০২৫ সালের শুরুর দিকে তাদের জাতীয় ভাবে নির্ধারিত অবদান সুনিশ্চিত করার জন্য কাজ শুরু করতে হবে। তাদের অবশ্যই প্রজন্মের অর্থায়নের জন্য নিজেদের প্রচেষ্টার উপর মনোযোগ দিতে হবে, তা বেসরকারি, অভ্যন্তরীণ বা বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাঙ্কের (এমডিবি) মাধ্যমে হোক না কেনএবং এর লক্ষ্য হবে উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের সঙ্গে অভিযোজিত হওয়া।

কপ২৯-এর উচিত ছিল গ্রহের সবচেয়ে ধনী দেশগুলির ঋণের বিষয়টি সুনিশ্চিত করে ইতিহাস গড়ে তোলা এবং পৃথিবী যে জগাখিচুড়ি পরিস্থিতিতে রয়েছে তার জন্য সবচেয়ে কম দায়বদ্ধ এমন দেশগুলির জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল সুনিশ্চিত করা। যত দিন না ধনী দেশগুলি প্রয়োজনীয় অর্থ পরিশোধ করছে, তত দিন সব দেশই ক্ষতির সঙ্গে যুঝবে।

 


বিক্রম মাথুর অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.