Author : Samir Saran

Published on Dec 08, 2023 Updated 0 Hours ago
বিতর্ককে সরিয়ে রাখলে কপ২৮ আসলে গ্লোবাল সাউথকেই আলোচনার কেন্দ্রে এনেছে

২০২৩ সালে রেকর্ড হারে উষ্ণতম বছরের প্রভাবে বিশ্ব যখন হাঁসফাঁস করছে, তখন বিশ্ব সম্প্রদায়ের মনোযোগ জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য কপ২৮-এর অভিমুখে চালিত হয়েছে। ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর (ইউএনএফসিসিসি) আলোচনার আগের দশকগুলি কার্যকর ও ন্যায়সঙ্গত জলবায়ু পদক্ষেপ প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে এই বছরের সিওপি ফাঁপা প্রতিশ্রুতি থেকে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একটি অনন্য সুযোগ।

জলবায়ু নিয়ে বাস্তব পদক্ষেপের জন্য বাস্তববাদের প্রয়োজন। এটি গ্লোবাল সাউথের জ্বালানি-দরিদ্র দেশগুলির নির্দিষ্ট চাহিদাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেএ কথা স্বীকার করে নেওয়া যায় যে, বিশ্বের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জ্বালানির রূপান্তরটি আদতে হল এমন একটি রূপান্তর, যেখানে ঐতিহ্যগত জ্বালানিকে আরও কার্যকর এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানির উন্নয়নে অর্থায়নের জন্য ব্যবহার করা হবে। পশ্চিমী সিওপি সভাপতিত্ব শুধু বক্তৃতাই দিয়েছে, উন্নয়নশীল বিশ্বের মৌলিক চাহিদাগুলিকে তেমন বুঝতেই পারেনি।

একটি বৃহৎ জীবাশ্ম জ্বালানি সংস্থার প্রধানকেই প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করার দরুন কপ২৮ বেশ কিছু উদ্বেগের সৃষ্টি করলেও এই বাস্তবতা আশার কারণ হয়ে উঠতে পারেডক্টর সুলতান আল জাবের প্রকৃতপক্ষে আবু ধাবির জাতীয় তেল সংস্থা পরিচালনা করেন তিনি পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি জায়ান্ট মাসদারও প্রতিষ্ঠা করেন, যা একাধিক দেশ এবং ভৌগোলিক অঞ্চলে দূষণহীন পুঁজি বণ্টনের প্রচেষ্টার পথপ্রদর্শক। গ্লোবাল সাউথের জন্য একটি বাস্তবসম্মত জলবায়ু সমাধান একই ভাবে কর্মপ্রচেষ্টা, সমাধান এবং প্রযুক্তির বিস্তারকে অগ্রাধিকার দেবে।

পশ্চিমী সিওপি সভাপতিত্বের বক্তৃতার সারবত্তা উন্নয়নশীল বিশ্বের মৌলিক চাহিদাগুলিকে তেমন বুঝতেই পারেনি।

 

ডঃ আল জাবের এবং কপ২৮-এর সামনে এটি কঠিন কাজ নিঃসন্দেহে নানাবিধ অনুমান ইঙ্গিত দেয় যে, শুধু মাত্র দুটি ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সমস্ত উন্নত দেশ তাদের ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন বা জাতীয় স্তরে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) পূরণে উল্লেখযোগ্য রকমের পথভ্রষ্ট। এই প্রখর বিচ্যুতি প্যারিস জলবায়ু লক্ষ্য অর্জনের নিরিখে প্রাথমিক বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলবায়ু সঙ্কটের জন্য যারা সবচেয়ে বেশি দোষী, তারাই তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে চলেছে। জলবায়ু অর্থায়নের দায়িত্ব আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। উন্নয়নশীল অর্থনীতির নিঃসরণ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করতে বছরে প্রায় ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন হবে। এর সম্পূর্ণ বিপরীতে, বিশ্ব উন্নত বিশ্বের অর্থায়নের জন্য বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বাগবিতণ্ডায় ব্যস্ত। আমরা বর্তমানে আক্ষরিক অর্থেই মন্থরতা নিয়ে লড়াই করছি, যখন আশু প্রয়োজন হল গতিশীলতা।

সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সিওপি একটি নতুন পথ স্থাপনের জন্য ভাল ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, যার মনোযোগের কেন্দ্রে রয়েছে গ্লোবাল সাউথ এটি এমন এক সময়ে সংঘটিত হয়েছে, যখন গ্লোবাল সাউথের নেতৃত্বে বহুপাক্ষিক সহযোগিতাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই গতির সঞ্চার ঘটেছে। বিশেষ করে, ভারতীয় জি২০ সভাপতিত্ব ইতিমধ্যেই এমন একটি জলবায়ু কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঐকমত্য গড়ে তোলার ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। উল্লেখযোগ্য ভাবে, নয়াদিল্লি লিডারসডিক্লেয়ারেশন-এ গ্রিন ডেভেলপমেন্ট প্যাক্টের অন্তর্ভুক্তি স্থিতিশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃদ্ধির জন্য একটি অনুঘটক হিসাবে জলবায়ু কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে একটি সমন্বিত আখ্যান সৃষ্টি করেছে। ভারত কিছু অগ্রাধিকারমূলক কর্মক্ষেত্রের উপর আলোকপাত করেছে, যেগুলিকে আগামী বছর এগিয়ে নিতে যেতে হবে এবং কপ২৮ হল একটি আদর্শ সূচনাবিন্দু।

 

ভারতীয় জি২০ সভাপতিত্ব ইতিমধ্যেই এমন একটি জলবায়ু কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঐকমত্য গড়ে তোলার ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে।

প্রথমত, উন্নয়নশীল বিশ্বে দূষণহীন মূলধনের খরচ হ্রাস করা অত্যন্ত  গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি ওইসিডি দেশগুলির তুলনায় প্রায় সাত গুণ বেশি হতে পারে। আইএমএফ অনুমান করে যে, উদীয়মান এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতি (ইএমডিই) ২০০৮ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধির ৮০ শতাংশের জন্য দায়ী। তবে জলবায়ু অর্থায়নের মাত্র ২৫ শতাংশ এই ভৌগোলিক অঞ্চলে প্রবাহিত হয়েছে। সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমান আন্তর্জাতিক আর্থিক স্থাপত্য বৃদ্ধিকে দূষণহীন হয়ে উঠতে বাধা দান করে। প্রতিটি প্রকল্প একই খরচে মূলধন লাভ করতে পারে, এ হেন গ্যারান্টি-সহ দূষণহীন প্রকল্পের একটি আন্তর্জাতিক তালিকা তৈরি করা অপরিহার্য। এই গ্যারান্টি মাল্টিল্যাটেরাল ইনভেস্টমেন্ট গ্যারান্টি এজেন্সির (এমআইজিএ) অনুরূপ একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সহজতর করা যেতে পারে। আমাদের গ্রহের সঙ্কটের নিরিখে অনুভূত প্রতিক্রিয়া রাজনৈতিক ঝুঁকি দ্বারা আপস করা উচিত নয় দ্বিতীয়ত, কপ২৮-কে ভারতীয় জি২০ সভাপতিত্ব চলাকালীন এমডিবি সংস্কারমূলক কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অবশ্যই বহুপাক্ষিক উন্নয়নমূলক ব্যাঙ্কগুলির জন্য একটি সুস্পষ্ট প্রবিধান হিসাবে জলবায়ু কর্মসূচিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার দিকে নজর দিতে হবে। সম্প্রতি সম্প্রসারিত ব্রিকস গোষ্ঠীকেও সংস্কারমূলক কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে লাগানো যেতে পারে। গোষ্ঠীটির নতুন পুঁজি-সমৃদ্ধ সদস্যদের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের মধ্যে গ্রিন ট্রানজিশনের জন্য তহবিলের একটি শৃঙ্খল তৈরি করতে উদ্বুদ্ধ করা জরুরিএটি একটি বুটিক মডেল হিসাবে কাজ করতে পারে, যা পশ্চিম-নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলির উপর তাদের প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করার জন্য চাপ বৃদ্ধি করতে সক্ষম

তৃতীয়ত, বিভিন্ন অঞ্চলের স্বতন্ত্র অভিযোজনমূলক আর্থিক চাহিদা মেটাতে, বিশেষ করে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়ের জন্য সুদৃঢ় ব্যবস্থা শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে গ্লোবাল গোল অন অ্যাডাপটেশন-এর (জিজিএ) ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধন করা জরুরি। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও লিঙ্গের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলিকে তুলে ধরার জন্য জিজিএ-র একটি এমন মঞ্চ হিসাবে কাজ করা উচিত, যা এই আন্তঃসংযুক্ত সঙ্কটগুলি মোকাবিলা করার লক্ষ্যে সমন্বিত কৌশলগুলিকে চিহ্নিত করে ক্ষয় এবং ক্ষতির তহবিলকেও উন্নত বিশ্বের কাছ থেকে সুদৃঢ় অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে চালু করতে হবে।

 

বিভিন্ন অঞ্চলের স্বতন্ত্র অভিযোজনমূলক আর্থিক চাহিদা মেটাতে, বিশেষ করে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়ের জন্য সুদৃঢ় ব্যবস্থা শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে গ্লোবাল গোল অন অ্যাডাপটেশন-এর (জিজিএ) ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধন করা জরুরি।

 

চতুর্থত, গ্লোবাল সাউথের জলবায়ু প্রযুক্তিতে উদ্ভাবনকে উৎসাহ জোগাতে হবে। বিশেষ করে, দূষণহীন স্টার্টআপগুলিকে ইউএনএফসিসিসি-র মধ্যে কার্যকর জ্ঞান ভাগ করে নেওয়ার ব্যবস্থা তৈরি করার মাধ্যমে এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দূষণহীন প্রকল্পগুলিকে সমর্থন করার জন্য একটি সামাজিক প্রভাব তহবিল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এমনটা করা উচিত।

পরিশেষে, দূষণহীন প্রযুক্তির মান শৃঙ্খলে বৈচিত্র্য আনা এবং সকলের জন্য তা সহজলভ্য করে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে দূষণহীন শক্তির জন্য অত্যাবশ্যক কাঁচামাল এবং প্রযুক্তির উপর চিনের অসম নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এই একাধিপত্য থেকে মুক্ত হওয়া এবং বেজিং যাতে আমাদের দূষণহীন ভবিষ্যতের উপর ভেটো প্রয়োগ না করতে পারে, তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া-য়।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Samir Saran

Samir Saran

Samir Saran is the President of the Observer Research Foundation (ORF), India’s premier think tank, headquartered in New Delhi with affiliates in North America and ...

Read More +