পৃথিবীর অবস্থার অবনতি নিয়ে পরিবেশবাদীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তি পৃথিবীর তাপমাত্রার ডেটা বিশ্লেষণ, যা ১৮৮০ থেকে ২০২২ সময়কালে পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রায় ১.১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের মতে, ভবিষ্যতে তাপমাত্রার আরও বৃদ্ধি বড় সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সমস্যা তৈরি করবে। এই নিবন্ধটি জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী চিন্তাভাবনা এবং ভারতে সবুজ শক্তি উদ্যোগের অগ্রগতি বর্ণনা করে। পরিবর্তিত জলবায়ু পরিস্থিতি সম্পর্কিত খবর এখন আরও ঘন ঘন আসছে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে উল্লিখিত কিছু সমস্যা হল খরা, বনের দাবানল, বরফ গলে যাওয়া, মহাসমুদ্র/সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি, বন্যা এবং বিপর্যয়কর ঝড়/ঘূর্ণিঝড়ের ঘন ঘন ঘটনা। এগুলোর প্রতিটিই মানুষের জীবনকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করছে।
বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের মতে, ভবিষ্যতে তাপমাত্রার আরও বৃদ্ধি বড় সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সমস্যা তৈরি করবে।
বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন সুন্দরবন এলাকায় জলস্তর বৃদ্ধি, লবণাক্ত জলের অনুপ্রবেশ এবং উপকূলীয় ক্ষয়, কৃষক ও মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের স্থানান্তরে গমনের (মাইগ্রেশন) দিকে চালিত করেছে। স্থানান্তর জনগোষ্ঠীকে তাদের জীবিকা থেকে বঞ্চিত করে এবং তাদেরকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেয়। একইভাবে, ২০২৩ সালের জুলাই–আগস্টে গ্রিসে একাধিক দাবানলে অনেক লোকের মৃত্যু হয়, অনেকে আহত হন, এবং নির্মিত কাঠামো ও পরিকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চিন ২০২৩ সালের আগস্টে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত এবং বিধ্বংসী বন্যার সম্মুখীন হয়েছিল, যার ফলে দশ লক্ষেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হন। অপ্রত্যাশিত ঘটনার বৃদ্ধি বিবেচনা করে জলবায়ু উদ্বাস্তু ভবিষ্যতে বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উদ্ভূত অন্যান্য প্রক্ষিপ্ত সামাজিক ও অর্থনৈতিক উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে কৃষি উৎপাদন হ্রাস, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ব্যাপক দারিদ্র্য, রোগের বিস্তার, জলের ঘাটতি, সীমিত সম্পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব ও কর্মক্ষেত্রে কম উৎপাদনশীলতা। জলবায়ু সমস্যা হওয়ার দুটি প্রধান কারণ বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় চিহ্নিত করেছে: প্রথমত, পৃথিবীতে পৌঁছনো সৌর শক্তির তীব্রতার পরিবর্তন ও আগ্নেয়গিরির ক্রিয়াকলাপ; এবং দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন উদ্দেশ্যে মানুষের জীবাশ্ম জ্বালানি (যেমন কয়লা, তেল এবং গ্যাস) পোড়ানো। অতি সম্প্রতি, বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন যে জলবায়ু পরিবর্তনে সূর্যের ভূমিকা বছরের পর বছর ধরে হ্রাস পেয়েছে, এবং বিংশ শতকের মাঝামাঝি থেকে বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার এবং সেইসঙ্গে অন্যান্য পরিবেশ–অবান্ধব মানব ক্রিয়াকলাপ। এগুলি পরিবহণ (মোটর গাড়ি), শিল্প (বিদ্যুৎ কেন্দ্র), পরিকাঠামো (রাস্তা, জল, স্যানিটেশন), আবাসিক (বিল্ডিং গরম করা এবং ঠান্ডা করা) খাতে শক্তির ব্যবহার, এবং বন উজাড় ও ভূপৃষ্ঠের জলাশয়ের দূষণের ফলে পরিবেশের ক্ষতির সঙ্গে সম্পর্কিত।
২০২৩ সালের জুলাই–আগস্টে গ্রিসে একাধিক দাবানলে অনেক লোকের মৃত্যু হয়, অনেকে আহত হন, এবং নির্মিত কাঠামো ও পরিকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এই বিষয়ে এটি উল্লেখ্য যে বেশিরভাগ দেশ উন্নয়নের জন্য কার্বন–নিবিড় পন্থা অনুসরণ করছে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ক্রমাগত ব্যবহার কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড ও মিথেনের মতো গ্রিনহাউস গ্যাস তৈরি করছে, যা বায়ুমণ্ডলে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এই অবস্থায় সূর্য থেকে প্রাপ্ত শক্তি/তাপ পর্যাপ্তভাবে মহাকাশে প্রতিফলিত হয় না। পরিবর্তে, বায়ুমণ্ডলে গ্যাসগুলি (জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে উৎপাদিত) বেশিরভাগ তাপ শোষণ করে এবং পৃথিবীর সমস্ত দিকে বিকিরণ করে, যার ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন ঘটে।
জলবায়ু সংকটের প্রধান কারণ
শক্তি ক্ষেত্র গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের একটি প্রধান উৎস। এইভাবে, শক্তির প্রচলিত উৎসের (যেমন জীবাশ্ম জ্বালানি, ইউরেনিয়াম) উপর নির্ভরতা হ্রাস এবং শক্তি বা সবুজ শক্তির পরিবেশবান্ধব উৎসগুলিতে যাওয়ার বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সির মতে, সবুজ শক্তি হল বায়ু, সূর্য, জৈব পদার্থ (যা উদ্ভিদ/প্রাণী থেকে আসে), ভূ–তাপীয় বা জিওথার্মাল (পৃথিবীর অভ্যন্তরে তাপ), বায়োগ্যাস (ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা উদ্ভিদ/প্রাণীর দেহাবশেষ পচনের ফলে উৎপাদিত গ্যাস), এবং কম–প্রভাবযুক্ত ছোট জলবিদ্যুৎ প্রকল্প (বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে চলমান জলের প্রাকৃতিক প্রবাহের ব্যবহার)।
এটি উল্লেখ্য যে বেশিরভাগ দেশ উন্নয়নের জন্য কার্বন–নিবিড় পন্থা অনুসরণ করছে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ক্রমাগত ব্যবহার কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড ও মিথেনের মতো গ্রিনহাউস গ্যাস তৈরি করছে, যা বায়ুমণ্ডলে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
তাছাড়া, পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতিতে মানবিক কার্যক্রম পরিচালনার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। পরিবহণ ক্ষেত্রের জন্য সুপারিশগুলির মধ্যে রয়েছে গণ–পরিবহণ, ভাগ করা যানবাহন, বৈদ্যুতিক যানবাহন এবং অ–মোটরচালিত পরিবহণের ব্যবহার। বাড়ি/কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রদত্ত বিকল্পগুলি নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসে (বায়ু/সৌর) এবং শক্তিদক্ষ ইলেকট্রনিক গ্যাজেটগুলিতে স্থানান্তরিত হচ্ছে। এর পরে, কেনাকাটা একটি জনপ্রিয় কার্যকলাপ, এবং এই বিষয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য ক্রয় (যেমন জামাকাপড়) নিরুৎসাহিত করা হয়, কারণ সে সবের উৎপাদনে শক্তি ব্যবহার করা হয়। আমিষ খাবার (বিশেষ করে রেড মিট) খাওয়াও উদ্বেগের বিষয়, কারণ এতে প্রাণী পালনের জন্য সম্পদের (জল, জমি) ব্যবহার জড়িত। পণ্য এবং সম্পদের (জল, তরল এবং কঠিন বর্জ্য) হ্রাস/পুনর্ব্যবহার/মেরামত/পুনর্চক্রীকরণকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়। জনসম্প্রদায়গুলির উপলব্ধ বিকল্পগুলি গ্রহণ করার ক্রমবর্ধমান প্রমাণ রয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ (ইউএন) ২০৩০ সালের মধ্যে নির্গমন কমাতে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে নেট শূন্যে (অর্থাৎ শূন্য নির্গমনের কাছাকাছি) পৌঁছনোর জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। অধিকন্তু, শিল্পোন্নত দেশগুলিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রশমন ও অভিযোজন, এবং স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলিকে জলবায়ু অর্থায়ন হিসাবে বছরে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিতে বলা হয়েছে। যদিও বেশিরভাগ দেশ এই প্রস্তাবগুলি রূপায়ণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আজ অবধি শুধুমাত্র কয়েকটি দেশ আংশিকভাবে তা মেনে চলেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ ক্রমশ বেশি করে উদ্বিগ্ন, কারণ কিছু দেশ (যেমন ব্রিটেন) তাদের জলবায়ু লক্ষ্য থেকে পিছিয়ে যেতে শুরু করেছে, এবং তার কারণ হল তারা নেট শূন্যে পৌঁছনোর পরিবর্তে শক্তি নিরাপত্তা (উপলব্ধ সম্পদ থেকে) পছন্দ করছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘‘বর্ষার বৃষ্টিতে শিশুরা ভেসে যাচ্ছে, পরিবারগুলি অগ্নিশিখা থেকে বাঁচতে ছুটছে, শ্রমিকরা প্রচণ্ড গরমে ভেঙে পড়ছে, বাতাস অসহ্য, এবং তাপ অসহ্য।’’
কার্বন নিঃসরণ রোধে ভারতের ভূমিকা
ভারত, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ, অনেকগুলি সবুজ উদ্যোগ শুরু করেছে এবং এর নির্গমন র্যাঙ্কিং উন্নত করার লক্ষ্য রেখেছে। এটি বর্তমানে চিন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পরে চতুর্থ বৃহত্তম বৈশ্বিক নির্গমনকারী, এবং লক্ষ্য হল ২০৩০ সালের মধ্যে অ–জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক শক্তি সংস্থান থেকে ৫০ শতাংশ শক্তি অর্জন করা এবং ২০৭০ সালের মধ্যে নেট শূন্যে পৌঁছনো।
রাষ্ট্রপুঞ্জ ক্রমশ বেশি করে উদ্বিগ্ন, কারণ কিছু দেশ (যেমন ব্রিটেন) তাদের জলবায়ু লক্ষ্য থেকে পিছিয়ে যেতে শুরু করেছে, এবং তার কারণ হল তারা নেট শূন্যে পৌঁছনোর পরিবর্তে শক্তি নিরাপত্তা (উপলব্ধ সম্পদ থেকে) পছন্দ করছে।
২০১০ সালে জাতীয় সৌর মিশন চালু করা হয়েছিল যার মধ্যে সৌর পার্ক (বড় জমিতে সৌর পরিকাঠামো উন্নয়ন), মেগা সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প, কিষাণ উর্জা সুরক্ষা (কৃষকদের সৌর সেচ পাম্প বসানোর জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়), ছাতে সৌর প্রকল্প, এবং সবুজ শক্তি করিডোরের (আন্তঃরাজ্য ট্রান্সমিশন লাইন এবং সৌর শক্তি দ্বারা চার্জ করা সাবস্টেশন স্থাপন) মতো প্রকল্পগুলির দেশব্যাপী বাস্তবায়ন অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০২২ সালের শেষ অবধি, ভারতে ৬৩.৩০ গিগাওয়াট (জিডব্লিউ) ক্ষমতার সৌর শক্তি solar power স্থাপন (ইনস্টল) করা হয়েছে, এবং রাজস্থান, গুজরাট ও কর্ণাটক রাজ্যগুলি ভাল অগ্রগতি দেখিয়েছে। ২০২২ সালে, বায়োমাস (যেমন কৃষির অবশিষ্টাংশ, কাঠ, তালপাতা, কোকোর খোসা, ভুসি এবং কঠিন বর্জ্য) থেকে শক্তি পুনরুদ্ধার করার জন্য জাতীয় জৈব শক্তি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সারা দেশে ৮০০টিরও বেশি জৈববস্তু প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে (মহারাষ্ট্র, উত্তর প্রদেশ, কর্ণাটক ইত্যাদি রাজ্যে), এবং এই উৎসটির অবদান দাঁড়িয়েছে ১০.৭৩ গিগাওয়াট প্রতিষ্ঠিত উৎপাদন ক্ষমতা (ইনস্টলড ক্যাপাসিটি)। ন্যাশনাল গ্রিন হাইড্রোজেন মিশন হল একটি সাম্প্রতিক (২০২৩) উদ্যোগ, যার অধীনে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি বছর প্রায় ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতা তৈরি করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অন্য গুরুত্বপূর্ণ চলতি উদ্যোগগুলি হল বায়ু, বায়ু–সৌর হাইব্রিড, এবং ছোট জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে শক্তি উৎপাদন। এই প্রকল্পগুলি একত্রে ৪৬.৮৭ গিগাওয়াট প্রতিষ্ঠিত ক্ষমতা তৈরি করবে। ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ পর্যন্ত ভারতে বিভিন্ন অ–জীবাশ্ম জ্বালানি উৎস থেকে মোট প্রতিষ্ঠিত ক্ষমতা ছিল ১৬৭.৭৫ গিগাওয়াট। এছাড়াও ৭৮.৭৫ গিগাওয়াট ক্ষমতার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, এবং ৩২.৬০ গিগাওয়াট ক্ষমতার প্রকল্প নিলাম প্রক্রিয়ার অধীনে রয়েছে। কাজ শেষ হলে ২৮০ গিগাওয়াট পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত ক্ষমতা উপলব্ধ হবে। উৎস অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত ক্ষমতার উপরোক্ত তথ্যগুলি প্রকাশ করে যে, বর্তমানে সৌর বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের অবদান সবচেয়ে বেশি, যার পরে আছে বায়ু, বায়ো–এনার্জি ও ছোট জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ভারতের সবুজ শক্তি ক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য নতুন ও নবায়নযোগ্য শক্তি মন্ত্রক (এমএনআরই) ২০২৩–২৪ সালের জন্য ১০২.২২ বিলিয়ন ভারতীয় রুপি বরাদ্দ করেছে। জৈব শক্তি, হাইড্রোজেন এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলির তুলনায় সৌর ও বায়ু শক্তি প্রকল্পগুলি সর্বাধিক বরাদ্দ পেয়েছে। কিছু পরিমাণ অর্থ মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং গবেষণা ও উন্নয়নের জন্যও রাখা হয়েছে।
কোয়ম্বাটোর এবং সালেমে, বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সোলার রুফটপ অবকাঠামো স্থাপন করা হয়েছে।
স্মার্ট সিটি মিশনের অধীনেও কিছু সবুজ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। কোয়েম্বাটোর ও সালেমে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সোলার রুফটপ পরিকাঠামো স্থাপন করা হয়েছে। উৎপাদিত সবুজ বিদ্যুৎ নাগরিকদের সাশ্রয়ী ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুতের সরবরাহ প্রাপ্যতার সুযোগ উন্নত করেছে, এবং সরবরাহকারী সংস্থাগুলিও প্রচলিত তাপ শক্তি ও তহবিল সঞ্চয়ের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে। একইভাবে, চণ্ডীগড়ের ওয়াটারওয়ার্কসে ভাসমান সৌর প্ল্যান্ট থেকে উৎপন্ন শক্তি বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে এবং বিদ্যুৎ বিল কমাতে সাহায্য করছে। অন্যদিকে, ইন্দোর একটি বায়ো–সিএনজি প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে যা পৃথগীকৃত ভেজা বর্জ্য পরিশোধন করে। উৎপাদিত বায়োগ্যাস শহরে পরিবহণের জন্য বাস চালাতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও, ভারতের বিভিন্ন অংশে গৃহস্থালি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সবুজ শক্তি উৎপাদনের (প্রধানত সৌরশক্তি) অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। সবুজ শক্তি উৎপাদনে ভারতের অগ্রগতির পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় কিছুটা এগনো সম্ভব হয়েছে। ২০২২ সালের শেষে সরকার পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎস থেকে ১৬৮ গিগাওয়াট বা ৪০ শতাংশ শক্তি উৎপাদনের প্রতিষ্ঠিত ক্ষমতা তৈরির গুরুত্ব স্বীকার করেছে। কিন্তু জীবাশ্ম জ্বালানি এখনও শক্তি খরচে প্রাধান্য পায় এবং তা প্রতিষ্ঠিত ক্ষমতার প্রায় ৬০ শতাংশ। প্রতি বছর প্রায় ৮৫ শতাংশ তেল এবং ৪৫ শতাংশ গ্যাস আমদানি করা হয়। নগরায়ণ, পরিবহণ পরিকাঠামোর সম্প্রসারণ এবং শিল্প উৎপাদনের ফলে উদ্ভূত ক্রমবর্ধমান শক্তির চাহিদা মেটানোর চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ভবিষ্যৎ জনসংখ্যার শক্তির চাহিদা যদি দায়িত্বশীলভাবে মেটাতে হয়, ভারতকে অবশ্যই অ–নবায়নযোগ্য সম্পদের উপর নির্ভরতা কমাতে হবে, এবং সবুজ শক্তি উৎপাদনে স্বনির্ভর হতে হবে। এই পদ্ধতির জন্য অংশীদারদের সহযোগিতা, সবুজ উদ্যোগের আরও ভাল বাস্তবায়ন, নির্মিত সবুজ সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ, জনগণের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের এবং দক্ষ বিকল্পের সুযোগ এনে দেওয়া, এবং মানুষের অভ্যাস ও মনোভাবের পরিবর্তন প্রয়োজন।
রুমি আইজাজ অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন সিনিয়র ফেলো
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.