ভারতে দক্ষিণ-পশ্চিমী বর্ষা খরা এবং বন্যার সম্মিলিত উদ্বেগ সঙ্গে নিয়ে আসে। বিদর্ভ (মহারাষ্ট্র), বুন্দেলখন্ড (উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশ), পুরুলিয়া (পশ্চিমবঙ্গ) এবং কর্ণাটকের উত্তর অংশগুলি প্রায়ই দীর্ঘস্থায়ী খরার সম্মুখীন হলেও ব্রহ্মপুত্র এবং গঙ্গা নদীর অববাহিকা বরাবর অঞ্চলগুলি বন্যাকবলিত হয়। এই আকস্মিক ও ধীর গতিতে শুরু হওয়া জলবায়ু অসামঞ্জস্যতাকে পরিবেশগত সমস্যা হিসাবে দেখা হয়, যা মানুষের নানা কার্যকলাপের দরুন বৃদ্ধি পায়।
সমস্যাগুলি পরিবেশগত হলেও তাদের প্রভাবের একাধিক মাত্রা রয়েছে। দ্য লেপ্রসি মিশন ট্রাস্ট ইন্ডিয়া সম্প্রতি অনেকগুলি রাজ্য জুড়ে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করেছে যাতে জনসংখ্যার উপর খরা ও বন্যার মতো জলবায়ু বৈষম্যের প্রভাব বোঝা যায়। সেগুলি ইতিমধ্যে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য, চরম আবহাওয়ার সম্মুখীন হওয়া এবং তাতে প্রভাবিত হওয়ার উচ্চ সম্ভাব্যতা ও দুর্বল আর্থ-সামাজিক সূচকগুলির কথা তুলে ধরেছে।
সমীক্ষাটি পুনরায় নিশ্চিত করেছে যে, জলবায়ু বৈষম্য কেবল চিরাচরিত জীবিকার বিকল্পগুলিতে (কৃষি) দীর্ঘমেয়াদি ব্যাঘাত ঘটায় না এবং বিদ্যমান বহুমাত্রিক দারিদ্র্যকেই আরও বাড়িয়ে তোলে না, বরং পুষ্টি, বিশুদ্ধ জল এবং বর্জ্য জলনিষ্কাশন ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও মানুষের অধিকারকে খর্ব করে।
সমীক্ষাটি পুনরায় নিশ্চিত করেছে যে, জলবায়ু বৈষম্য কেবল চিরাচরিত জীবিকার বিকল্পগুলিতে (কৃষি) দীর্ঘমেয়াদি ব্যাঘাত ঘটায় না এবং বিদ্যমান বহুমাত্রিক দারিদ্র্যকেই আরও বাড়িয়ে তোলে না, বরং পুষ্টি, বিশুদ্ধ জল এবং বর্জ্য জলনিষ্কাশন ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও মানুষের অধিকারকে খর্ব করে এবং এই সব কিছুই বেশ কিছু অবহেলিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ (এনটিডি) প্রতিরোধের পূর্বশর্ত।
চরম জলবায়ু এবং রোগ বিস্তারের পারস্পরিক সম্পর্ক
এমন বৈজ্ঞানিক প্রমাণও রয়েছে যে পুষ্টির ঘাটতি, যেমন প্রোটিন-এনার্জি অপুষ্টি আসলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস এবং কুষ্ঠ রোগের আক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত। এটি এমন এক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ যা প্রতি বছর ভারতে এক লক্ষেরও বেশি মানুষকে প্রভাবিত করে। এটি সংক্রামক রোগগুলির ফলে অক্ষম হয়ে পড়ার একটি প্রধান কারণ। একই ভাবে, কিছু গবেষণায় কুষ্ঠরোগের সংক্রমণের জন্য দায়ী করা হয়েছে ‘পরিচ্ছন্নতা ও সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাব, জলের দুর্বল ও অপ্রতুল সরবরাহ’।
ওড়িশার দু’টি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা অর্থাৎ নবরংপুর এবং নুয়াপড়া বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের উচ্চ হার, চরম জলবায়ু সংক্রান্ত দুর্বলতা এবং উচ্চ হারের কুষ্ঠরোগের ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। ওড়িশা রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের করা মাল্টি-হ্যাজার্ড ম্যাপিং অনুসারে, নবরংপুর এবং নুয়াপড়ায় খরার খুব বেশি ঝুঁকি রয়েছে। এই দু’টি অঞ্চলে কুষ্ঠরোগের জন্য বার্ষিক নতুন রোগী শনাক্তকরণের হার (এএনসিডিআর) খুব বেশি। নবরংপুরে প্রতি এক লক্ষ মানুষের মধ্যে এএনসিডিআর-এর হার ১৯.৫ এবং নুয়াপড়ায় এই হার এক লক্ষ মানুষের মধ্যে ৪৭, যা কিনা ২০২১-২০২২ সালের জাতীয় গড় অর্থাৎ এক লক্ষ মানুষ প্রতি ৫.০৯-এর তুলনায় দশ গুণ বেশি। এই জেলাগুলিতে দীর্ঘস্থায়ী এবং পুনরাবৃত্ত খরার বৃদ্ধি পুষ্টি নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে, যা সম্ভাব্য ভাবে সম্প্রদায়ের মধ্যে কুষ্ঠ সংক্রমণের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
ওড়িশার দু’টি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা অর্থাৎ নবরংপুর এবং নুয়াপড়া বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের উচ্চ হার, চরম জলবায়ু সংক্রান্ত দুর্বলতা এবং উচ্চ হারের কুষ্ঠরোগের ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলা খরার জন্য অপরিচিত নয়। যাই হোক, গত দুই দশকে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ও অনিয়মিত বৃষ্টিপাত এই অঞ্চলকে সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল করে তুলেছে, যার ফলে কৃষি উৎপাদন ৬৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং অপুষ্টিও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেশী বাঁকুড়া জেলার মতো পুরুলিয়াতেও লাল মাটি রয়েছে, যা সাধারণত বছরে একটি ফসল উৎপাদনেই সক্ষম এবং এই ফসল উৎপাদন থেকে পরিবারগুলি ছ’মাসের খাদ্য পেয়ে থাকে। বছরের বাকি ছ’মাস অনিশ্চিত। বর্তমানে খরা একক ফসল উৎপাদনের কাজটিকেও কঠিন করে তুলছে, যা খাদ্যের প্রাপ্যতা এবং লভ্যতাকে প্রভাবিত করেছে। পুরুলিয়ার ২০টি ব্লকেই - এমন একটি জেলা যেখানে জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশ বহুমাত্রিক ভাবে দরিদ্র – কুষ্ঠ সংক্রান্ত এএনসিডিআর-এর পরিমাণ প্রতি এক লক্ষ জনে ১৭ এবং এর সর্বোচ্চ মাত্রা হল প্রতি এক লক্ষে ৩৭.৮৩। এই মাত্রা জাতীয় গড়ের থেকে প্রায় ৮০০ শতাংশ বেশি।
মহারাষ্ট্রে এই একই ঘটনার প্রতিফলন দেখা যায়। উত্তর-পশ্চিম মহারাষ্ট্রের নন্দুরবার জেলায় সাম্প্রতিক অতীতে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এটি কেবল কৃষকদেরই প্রভাবিত করে না, জেলার খাদ্য নিরাপত্তার উপরও সরাসরি প্রভাব ফেলে, যা ইতিমধ্যেই অপুষ্টিতে ভুগছে। দেশে পাঁচ বছরের কম ওজনের শিশুর সংখ্যা নন্দুরবারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (৫৭.২ শতাংশ)। এখানে রাজ্যের গড় (৯.৩ শতাংশ) থেকে জনজাতীয় জনসংখ্যার অনেক বেশি শতাংশ (৬৯.৩ শতাংশ) রয়েছে। এই অঞ্চলটি চরম জলবায়ুর দরুন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এখানকার মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরশীল। তাই এই জেলায় কুষ্ঠরোগের সংখ্যাও বেশি।
রাজ্য
|
মোট জেলা
|
চরম ও অতি চরম জলবায়ু সংবেদনশীল জেলা (শতাংশে)
|
বহুমাত্রিক ভাবে দরিদ্র জনসংখ্যার শতাংশ
|
২০১৯-২০ সালে চিহ্নিত হওয়া কুষ্ঠ রোগের ঘটনা
|
বিহার
|
৩৮
|
৩৮ (১০০%)
|
৫১.৯১
|
১৬৫৯৫
|
ছত্তিশগড়
|
১৮
|
৩ (১৬.৬৭%)
|
২৯.৯১
|
৮৯০৫
|
ঝাড়খন্ড
|
২৪
|
২৩ (৯৬%)
|
৪২.১৬
|
৬১৬০
|
ওড়িশা
|
৩০
|
১৯ (৬৩%)
|
২৯.৩৫
|
১০০৭৭
|
উত্তরপ্রদেশ
|
৭০
|
৪৮ (৬৯%)
|
৩৭.৭৯
|
১৫৪৮৪
|
পশ্চিমবঙ্গ
|
১৯
|
১৪ (৭৪%)
|
২১.৪৩
|
৬২০৮
|
মহারাষ্ট্র
|
৩৫
|
১৯ (৫৪%)
|
১৪.৮৫
|
১৬৫৭২
|
মোট
|
২৩৪
|
১৬৪ (৭০%)
|
|
৮০০০১
|
সূত্র – সেন্ট্রাল লেপ্রসি ডিভিশন, নীতি আয়োগ এমপিআই এবং ক্লাইমেট ভালনারেবিলিটি অ্যাসেসমেন্ট ফর অ্যাডাপটেশন প্ল্যানিং ইন ইন্ডিয়া ইউজিং আ কমন ফ্রেমওয়ার্ক
২০২২ সালের বর্ষার মাসগুলিতে উত্তর প্রদেশের ২৩.৩২ মিলিয়নেরও বেশি কৃষক ‘খরা এবং বন্যার দুমুখো সমস্যার সঙ্গে যুঝছিলেন’। শ্রাবস্তী এবং বহরাইচের পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলির বাসিন্দারা জানেন যে, খরা এবং বন্যার দোলাচলে বাস করার অর্থ ঠিক কী। তাঁদের ফসলের ফলন এবং ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তাঁদের গবাদিপশুর উপরেও এর প্রভাব পড়েছে। এই জেলাগুলিতে কুষ্ঠরোগ, কালাজ্বর, ফাইলেরিয়া এবং চিকুনগুনিয়ার মতো অবহেলিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগের (এনটিডি) উচ্চ প্রকোপ রয়েছে। তাঁদের মধ্যে একটি উদ্বেগজনকভাবে উচ্চ বহুমাত্রিক দারিদ্র্য রয়েছে: শ্রাবস্তীর জনসংখ্যার ৭৪ শতাংশ এবং বহরাইচের জনসংখ্যার ৭১.৮ শতাংশ।
শ্রাবস্তী এবং বহরাইচের পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলির বাসিন্দারা জানেন যে, খরা এবং বন্যার মধ্যে দোলাচলে বাস করার অর্থ ঠিক কী। তাঁদের ফসলের ফলন এবং ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তাঁদের গবাদিপশুর উপরেও এর প্রভাব পড়েছে।
এই ধরনের পরিস্থিতিতে জলবায়ু বৈষম্যের প্রতি ভারতের স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলার জন্য আমাদের আরও বেশি করে উদ্যোগী হওয়া দরকার। এটিকে কেবল পরিবেশগত বিপদ হিসাবে না-দেখে বরং জলবায়ু বৈষম্য ও স্বাস্থ্যের মধ্যে সংযোগের উপর জোর দিয়েই এমনটা অর্জন করা সম্ভব। পরবর্তী কালে, একাধিক অংশীদারকে সম্পৃক্ত করতে, আরও অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ তথ্যভাণ্ডার এবং নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে, ঝুঁকি এবং প্রভাবগুলির সামগ্রিক সমাধান চিহ্নিত করতে এবং সম্প্রদায়কে এই প্রক্রিয়াতে আরও মনোযোগী হতে সক্ষম করে তোলা দরকার। আমাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সামাজিক নির্ধারকগুলির মধ্যে ব্যবধান পূরণ করা এবং রোগ প্রতিরোধের কৌশলগুলিকে শক্তিশালী করার একটি সুযোগ হিসাবে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা ব্যবস্থার বিকাশের দিকে নজর দিতে হবে।
শুভজিৎ গোস্বামী দ্য লেপ্রসি মিশন ট্রাস্ট ইন্ডিয়ার সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার।
নিকিতা সারা দ্য লেপ্রসি মিশন ট্রাস্ট ইন্ডিয়ার হেড অফ অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড কমিউনিকেশনস।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.