বিশ্বব্যাপী জলবায়ু-প্ররোচিত স্থানচ্যুতির সংখ্যা এবং মাত্রা দুই-ই বৃদ্ধি পেয়েছে। অভ্যন্তরীণ স্থানচ্যুতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র বা ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টারের (আইডিএমসি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যার ফলে ২০২১ সালে ২৩.৭ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য তাপপ্রবাহ, খরা, হারিকেন, ভূমিকম্প, বন্যা, বনাঞ্চলে দাবানল এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো ধীরগতির পরিবর্তনজনিত বিপর্যয়ের তীব্রতা বেড়েছে। ইউএন ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ফর ডিজাস্টার রিডাকশন (ইউএনআইএসডিআর) বিপর্যয়কে কোনও বিপজ্জনক ঘটনা, মানুষের কার্যকলাপ, কিংবা কোনও বস্তু বা অবস্থা যা আঘাত, জীবনহানি, সম্পত্তির ক্ষতি ঘটাতে পারে বলে সংজ্ঞায়িত করেছে। দি ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অন মাইগ্রেশন (আইওএম) অনুমান করেছে যে, বিশ্বব্যাপী ২৫ মিলিয়ন থেকে ১ বিলিয়ন মানুষ ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত অবনতির কারণে তাঁদের বাসস্থান ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হবেন। দক্ষিণ এশিয়াও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রতি বছর দক্ষিণ এশিয়ায় বেশিরভাগ অভ্যন্তরীণ স্থানচ্যুতি ঘটছে বিপর্যয়ের কারণে এবং ২০২১ সালে প্রায় ৫.৩ মিলিয়ন দুর্যোগ-বাস্তুচ্যুতির খবর পাওয়া গিয়েছে। ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক সাউথ এশিয়া (সিএএনএসএ) রিপোর্ট করেছে যে, শুধুমাত্র ভারতেই আনুমানিক ৪৫ মিলিয়ন মানুষ জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে স্থানান্তরে যেতে বাধ্য হবেন, যা বর্তমান পরিসংখ্যানের তিনগুণ।
এই ধরনের উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান সত্ত্বেও জলবায়ু-প্ররোচিত স্থানচ্যুতিগুলি কীভাবে মোকাবিলা করা যায় সে বিষয়ে ঐকমত্যের অভাব রয়েছে। প্রায়শই ‘পরিবেশগত উদ্বাস্তু’, ‘জলবায়ু উদ্বাস্তু’, ‘জলবায়ু অভিবাসী’ এবং ‘পরিবেশগত অভিবাসী’র মতো শব্দবন্ধ একে অন্যের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়। এই প্রেক্ষাপটে এই নিবন্ধে ক) জলবায়ু পরিবর্তন / পরিবেশগত অবক্ষয় ও মানব অভিবাসনের মধ্যে সংযোগ এবং খ) কীভাবে আন্তর্জাতিক প্রশাসনগুলি জলবায়ু-প্ররোচিত বাস্তুচ্যুতি এবং সুরক্ষা ব্যবস্থাকে ব্যাখ্যা করে তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে৷
জলবায়ু অভিবাসী কারা?
আইওএম জলবায়ু অভিবাসীদের এই বলে সংজ্ঞায়িত করেছে যে, ‘…ব্যক্তি বা ব্যক্তির গোষ্ঠী, মূলত পরিবেশের আকস্মিক বা ক্রমশ পরিবর্তনের কারণে যাঁদের জীবন বা জীবনযাত্রার অবস্থা বিরূপ ভাবে প্রভাবিত হয়েছে এবং যাঁরা তাঁদের চিরাচরিত বাসস্থান ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন, অথবা স্থায়ী কিংবা সাময়িক ভাবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নিজেদের দেশের অন্যত্র বা বিদেশে চলে গিয়েছেন।’ বৃহৎ মাত্রার আন্তঃসীমান্ত (আন্তঃদেশীয়) অভিবাসনের তুলনায় জলবায়ু-প্ররোচিত বাস্তুচ্যুতি সাধারণত ক্ষুদ্র মাত্রায় এবং অভ্যন্তরীণ প্রকৃতির (একটি দেশের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে) হয়ে থাকে।
জলবায়ু পরিবর্তনের আন্তঃসরকার প্যানেল বা ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) উল্লেখ করেছে যে, কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় প্রভাবগুলির মধ্যে একটি ‘মানব অভিবাসন’ হতে পারে। বেশির ভাগ অভিবাসনের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক কারণ থেকে পরিবেশগত এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলিকে পৃথক করা কঠিন। এই জটিল পরিস্থিতিতে পরিবেশগত এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণগুলি কীভাবে মানুষ স্থানান্তরিত হয় তা নির্ধারণে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
নারী ও শিশুদের বিপন্নতা
এর পাশাপাশি এ কথাও আশ্চর্যের কিছু নয় যে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং তার ফলস্বরূপ বিপন্নতা আমাদের সমাজের সবচেয়ে প্রান্তিক অংশ অর্থাৎ নারী এবং শিশুদের উপর অসামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে বোঝা চাপিয়ে দেয়। রাষ্ট্রপুঞ্জ দাবি করেছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হওয়া প্রায় ৮০ শতাংশ বাস্তুচ্যুতদের ক্ষেত্রে নারীরাও অন্তর্ভুক্ত। গ্লোবাল ইন্টারন্যাশনাল মাইগ্রেন্ট স্টকে নারী অভিবাসীদের বর্তমান অংশ ৪৮ শতাংশ থেকে ৫২ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। কারণ তাঁরা নারী, অরক্ষিত শ্রমিক এবং অভিবাসী হিসেবে তাঁদের অবস্থানের কারণে প্রায়শই ‘ত্রিস্তরীয় বৈষম্য’র সম্মুখীন হন। ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার এবং প্রশান্ত মহাসাগরের কয়েকটি ছোট দ্বীপ দেশগুলির মতো উন্নয়নশীল দেশে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত নারীরা হিংসা, মানব পাচার এবং সশস্ত্র সংঘাতের ফলে আরও ঝুঁকির মুখে পড়েন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সিয়েরা ক্লাবের (২০১৮) একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছে যে, কীভাবে মায়ানমারে ঘূর্ণিঝড় নার্গিস দ্বারা প্রভাবিত নারীদের ক্ষেত্রে ‘যৌন ও গার্হস্থ্য নির্যাতন, বলপূর্বক পতিতাবৃত্তি এবং যৌন ও শ্রম পাচারের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।’
পরিভাষা নিয়ে বিতর্ক
১৯৫১ রিফিউজি কনভেনশনের অনুচ্ছেদ ১ক (২) তিনটি পূর্বশর্ত উল্লেখ করেছে, যার ভিত্তিতে কোনও মানুষকে শরণার্থী বলে চিহ্নিত করা যায়: ধর্ম, জাতি, জাতীয়তা ইত্যাদির ভিত্তিতে নিপীড়নের মুখোমুখি হওয়ার সুনির্দিষ্ট ভয় পাওয়া; বর্তমানে তাঁদের মূল দেশের বাইরে অবস্থান করা; এবং এর ফলে নিজের জন্মভূমি দ্বারা সুরক্ষা পেতে আগ্রহী নন। এই প্রেক্ষিতে একজন ‘জলবায়ু উদ্বাস্তু’কে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি যদি নিজের মূল দেশে ফিরে যেতে চান, তাহলে তাঁর নিপীড়নের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে এবং তা কনভেনশন দ্বারা পূর্বোল্লিখিত শর্তের ভিত্তিতে। ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট (ওডিআই) একটি ভাষ্যে তুলে ধরেছে যে, কীভাবে গণহারে বাস্তুচ্যুত মানুষদের প্রায়শই ভুলভাবে ‘জলবায়ু পরিবর্তন উদ্বাস্তু’ হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া হয়। যদি তাই হয়, তাহলে তাত্ত্বিকভাবে ‘জলবায়ু উদ্বাস্তু’রা অন্য দেশে সুরক্ষার জন্য সীমান্ত অতিক্রম করতে বাধ্য হবেন। বাস্তব পরিস্থিতি কিন্তু অন্যরকম এবং তা তুলনামূলক ভাবে জটিলতর ও বিপজ্জনকও।
এটি লক্ষণীয় যে, রাষ্ট্রপুঞ্জের শরণার্থী হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) এই ধরনের মানুষদের ‘পরিবেশগত অভিবাসী’ হিসাবে স্বীকৃতি দেয় এবং তাদের শরণার্থীর মর্যাদা দিতে অস্বীকার করে। একই ভাবে, রাষ্ট্রপুঞ্জের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বিশ্বাস করে যে প্যারিস চুক্তি, স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এবং সেন্ডাই ফ্রেমওয়ার্ক ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন (এসএফডিআরআর) সংক্রান্ত তাদের প্রতিশ্রুতিগুলির বিষয়ে সরকার যদি গুরুত্ব দিতে চায়, তবে ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে অভিবাসন’-এর সঙ্গে সম্পর্কিত সুযোগগুলি কার্যকর করা অপরিহার্য হয়ে উঠবে। মানব গতিশীলতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যে জটিল সম্পর্কের উপর একটি ইউএনডিপি-ওডিআই রিপোর্ট দ্বারা এই সংযোগটি আরও খতিয়ে দেখা হয়েছে।
এই ধরনের আখ্যানগুলি জলবায়ু স্থানান্তরের ধারণার একটি বিস্তৃত ভাবনাকেই দর্শায়। এটি দেখায় যে, কীভাবে এই ধরনের পরিযান ধীরগতির ঘটনাপ্রবাহ বা আকস্মিক ঘটনাপ্রবাহের কারণে এবং / অথবা অন্যান্য জটিল আকারে স্থায়ী বা অস্থায়ী, স্বতন্ত্র বা সমষ্টিগত হতে পারে। অক্সফাম রিপোর্ট দর্শিয়েছে যে, কীভাবে জলবায়ু-প্ররোচিত বিপর্যয়গুলি বর্তমানে সারা বিশ্বে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির বৃহত্তম চালিকাশক্তি হিসেবে উঠে এসেছে। এর পাশাপাশি আইডিএমসি থেকে প্রাপ্ত তথ্য দেখিয়েছে যে, কীভাবে গত এক দশকে চরম জলবায়ু বিপর্যয়ের সংখ্যা পাঁচগুণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
চিত্র ১: প্রতি বছর জলবায়ু সম্পর্কিত দুর্যোগের সংখ্যা যা অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির সৃষ্টি করে
সূত্র: অক্সফাম মিডিয়া ব্রিফিং
নিউ ইয়র্ক ঘোষণা এবং তার বৈশ্বিক প্রভাব
নিউ ইয়র্ক ঘোষণা (২০১৬) আন্তর্জাতিক অভিবাসনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা শুরু করার জন্য দেশগুলিকে একটি সূচনাবিন্দু প্রদান করেছে। এটি ২০১৮ সালে নিরাপদ, সুশৃঙ্খল এবং নিয়মিত পরিযানের জন্য গ্লোবাল কমপ্যাক্ট (জিসিএম) গ্রহণ বাধ্যতামূলক করেছে এবং প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক অভিবাসনের বিস্তৃত ধারণার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন-প্ররোচিত অভিবাসনের ধারণাকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য একটি ব্যাপক কাঠামো নির্মাণ করেছে। ঘোষণাটি ওই একই বছরে শরণার্থীদের উপর একটি গ্লোবাল কমপ্যাক্ট (জিসিআর) গ্রহণের পথও প্রশস্ত করেছিল। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাস্তুচ্যুতদের চাহিদা মেটাতে শরণার্থী আইনের একটি সম্প্রসারণ সত্যিই এই মানবিক উদ্বেগের কোনও সমাধান করে না।
জিসিএম-এর মূল পদক্ষেপগুলি দেখায় যে, এটি ধীরগতিতে শুরু হওয়া পরিবেশগত অবক্ষয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগকে সমসাময়িক অভিবাসনের কারণ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। এটি পরিবেশগত অভিবাসনের প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলায় গবেষণার দিকে আরও বেশি করে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তি, সেন্ডাই ফ্রেমওয়ার্ক ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন এবং ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন টু কমব্যাট ডেজার্টিফিকেশন-এর (ইউএনসিসিডি) মতো গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন কর্মসূচির উপর নির্ভর করে। প্রথম পরিযানকেন্দ্রিক বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা হওয়া সত্ত্বেও এর আইনের নমনীয় প্রকৃতি এটির পক্ষের দেশগুলির দ্বারা সম্ভাব্য অসম্মতির উদ্বেগের জন্ম দেয়।
জিসিএম-এর জিরো ড্রাফ্ট-এ দর্শানো হয়েছে যে, কীভাবে এটি অভিবাসনের কারণগুলির প্রতি দায়বদ্ধ দেশগুলির অভিন্ন দায়িত্ব নির্ধারণ করে এবং দেখায় যে, কীভাবে জিসিএম তার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য পূরণের জন্য নৈতিক দায়িত্ববোধসম্পন্ন দেশগুলির উপর নির্ভর করে৷ কম্প্যাক্টের প্রস্তাবনার অনুচ্ছেদ ৭ দেখায়, কীভাবে এটি অংশগ্রহণকারী সকল রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে অক্ষুণ্ণ রাখে এবং জিসিএম কীভাবে একটি নথি হিসাবে সীমাবদ্ধ, যা প্রযুক্তিগতভাবে বাধ্যতামূলক নয় এবং অংশগ্রহণকারী দেশগুলি দ্বারা তা লঙ্ঘন করাও সম্ভব।
কপ২৭ এবং জলবায়ু অভিবাসন
২০২২ সালের কনফারেন্স অফ দ্য পার্টিজ (কপ২৭) শীর্ষ সম্মেলনকে এমন একটি মঞ্চ হিসাবে দেখা হয়েছিল, যা জলবায়ু অভিবাসনের ধারণাকে দৃশ্যমানতা দেবে। বিশেষ করে কীভাবে সম্মিলিত চাহিদা ও সমাধানগুলিকে চিহ্নিত করার জন্য গ্লোবাল গোল অন অ্যাডাপ্টেশনকে (জিজিএ) সংজ্ঞায়িত করার উদ্দেশ্যে একটি কর্মসূচি এবং ইতিমধ্যে বিশ্বের অনেক দেশের উপর প্রভাব বিস্তারকারী বিদ্যমান জলবায়ু সঙ্কটের আলোকে সমাধান প্রদান করবে, যা ২০২১ সালের কপ২৬ শীর্ষ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অতীতে কপ-এ জলবায়ু-প্ররোচিত বাস্তুচ্যুতির কথা বলা হয়েছে এবং কপ১৬-তে কানকুন অ্যাডাপ্টেশন ফ্রেমওয়ার্ক গ্রহণ এবং কপ২১-এ বাস্তুচ্যুতি সংক্রান্ত একটি টাস্ক ফোর্স গঠনের মাধ্যমে এর গুরুত্ব স্বীকার করা হয়েছে।
কপ২৭-এ জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা করার জন্য নীতিনির্ধারকরা সম্মিলিত হওয়ার সময় জলবায়ু অভিবাসীদের জন্য সহায়তা বিষয়ক অগ্রগতি আজ পর্যন্ত অপ্রতুল থেকেছে। এবং সেটি শুধুমাত্র সদিচ্ছার ইঙ্গিতেই সীমাবদ্ধ থেকেছে।
কপ২৭ জিজিএ অর্জনের জন্য একটি কাঠামো নির্মাণ করলেও (যা সম্ভবত ২০২৩ সালে কপ২৮-এ গৃহীত হবে) জলবায়ু অভিবাসীদের সুরক্ষা এবং সহায়তা করার দিকে এর অগ্রগতি স্থবির অবস্থায় রয়েছে। ইসিডিএম-এর একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে, মূল সমস্যাটি হল কীভাবে বাস্তুচ্যুতি সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্স জলবায়ু-প্ররোচিত গতিশীলতাকে ‘ক্ষয় এবং ক্ষতি’র উদ্বেগ হিসাবে তুলে ধরেছে। এর ফলে এই ধারণাটি উত্থাপন করা হয়েছে যে, এই ধরনের মানুষের গতিশীলতা একটি ব্যর্থ অভিযোজন কৌশল হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
জলবায়ু অভিবাসীদের বিষয়ে যে কোনও দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে এটি একটি বাধা হিসাবে উঠে এসেছে এবং অবিলম্বে এর প্রতিকার করা উচিত। কপ২৭-এ জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা করার জন্য নীতি নির্ধারকরা সম্মিলিত হওয়ার সময় জলবায়ু অভিবাসীদের জন্য সহায়তা বিষয়ক অগ্রগতি আজ পর্যন্ত অপ্রতুল থেকেছে। এবং সেটি শুধু মাত্র সদিচ্ছার ইঙ্গিতেই সীমাবদ্ধ থেকেছে।
সংশ্লিষ্ট আলোচনায় ভারতের অবস্থান
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত, চিন এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো জি২০ সদস্য দেশগুলিতে বিপর্যয়ের কারণে প্রায় ৮.৫ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার পরেও জি২০ দেশগুলি দ্বারা জলবায়ু অভিবাসনের কারণটি খতিয়ে না-দেখার বিষয়টি নজরে পড়ার মতো। জি২০ বালি লিডারস ডিক্লেয়ারেশন-এর অনুচ্ছেদ ৪০ অনিয়মিত অভিবাসন প্রবাহ রোধ, অভিবাসীদের পাচার এবং ভবিষ্যতের জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে এই ধরনের আলোচনার আয়োজন করার কথা বলে। কিন্তু ‘জলবায়ু অভিবাসন’ শব্দবন্ধটি তাঁদের আলোচনায় অনুপস্থিতই থেকেছে।
ভারত জলবায়ু কর্মসূচির জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে চায় এবং তার দায়বদ্ধতা ইউএনএফসিসিসি-র অংশীদার হওয়ার মধ্যে প্রতিফলিত হতে পারে।
জি২০ দেশগুলি এবং ইউনাইটেড নেশনস নেটওয়ার্ক অন মাইগ্রেশন-এর (ইউএনএনএম) মতো বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি জোট গঠন করা অপরিহার্য, যার লক্ষ্য হবে সেন্ডাই ফ্রেমওয়ার্ক ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন, প্যারিস চুক্তি, স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের উপর রাষ্ট্রপুঞ্জের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন-এর (ইউএনএফসিসিসি) উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে শক্তিশালী সমন্বয় গড়ে তোলা।
ভারত জলবায়ু কর্মসূচির জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে চায় এবং তার দায়বদ্ধতা ইউএনএফসিসিসি এবং তার বিভিন্ন অঙ্গ যেমন কিয়োটো প্রোটোকল এবং প্যারিস চুক্তির অংশীদার হওয়ার মধ্যে প্রতিফলিত হতে পারে। ভারতের সভাপতিত্ব জি২০ দেশগুলিকে অভিবাসন এবং বাস্তুচ্যুতি উভয় আকারেই মানুষের গতিশীলতার ক্রমবর্ধমান উদ্বেগগুলি মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করার জন্য একটি মঞ্চ দিতে পারে। এ ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত অবক্ষয়ের কারণে মানুষের গতিশীলতার সঙ্গে সম্পর্কিত জ্ঞানের ঘাটতি ভারতের সভাপতিত্বে জি২০ মঞ্চে অনুষ্ঠিতব্য আন্তঃসরকারি সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে।
এই প্রতিবেদনটির জন্য লেখকদ্বয় ওআরএফ, কলকাতার ইন্টার্ন সৌমী বিশ্বাসের কাছে কৃতজ্ঞ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.