শক্তিশালী নাগরিক সক্রিয়তা–বিশিষ্ট শহরের তালিকায় পুনে শীর্ষে রয়েছে। তাঁদের শহরকে সাহায্য করতে ইচ্ছুক নাগরিকেরা এমন বেশ কয়েকটি সংস্থার অধীনে নিজেদের একত্র করেছেন যেগুলির প্রতিটি তাদের আগ্রহের একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে নিবেদিত। পর্যবেক্ষণ, তথ্য ও অধ্যয়নের উপর ভিত্তি করে তাঁরা সমস্যাগুলি এবং উন্নতির ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করেছেন, এবং কীভাবে সেগুলি অর্জন করা যায় সে সম্পর্কে কৌশল তৈরি করেছেন। এই ধরনের তথ্যের বলে বলীয়ান হয়ে তাঁরা স্থানীয় সরকার ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এটি করার জন্য তাঁরা প্রেশার গ্রুপ হিসাবে সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি জনসাধারণের জন্য সহযোগী হিসাবে কাজ করেন। এই উদ্যোগগুলির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ফলাফলের মধ্যে রয়েছে পুনের নাগরিক অংশগ্রহণমূলক বাজেট, যা অংশগ্রহণমূলক বাজেটিং হিসাবেও উল্লেখিত হয়।
সম্প্রতি, পুনে প্ল্যাটফর্ম ফর কোলাবোরেটিভ রেসপন্স (পিপিসিআর), একটি নাগরিক ফোরাম, শহরের ট্রাফিক নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এই সমীক্ষাটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’ ব্যবহার করে পরিচালিত হয়েছিল। শহরের ট্র্যাফিকের বিষয়ে নাগরিকদের অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণ, ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর শেয়ার করা খুব এলাকা–নির্দিষ্ট তথ্যের টুকরো—সবই অমূল্য ডেটা দিয়েছে। মন্তব্যে সম্ভাব্য সমাধান এবং সুপারিশও রয়েছে। ফোরাম এই তথ্য স্নিপেটগুলিকে একত্র করেছে, এবং একটি প্রতিবেদনে পদ্ধতিগতভাবে সেগুলিকে উপস্থাপিত করেছে৷ এটি আনুষ্ঠানিকভাবে পর্যালোচনা করা এবং ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুনে সিটি ট্রাফিক পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল।
শহরের ট্র্যাফিকের বিষয়ে নাগরিকদের অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণ, ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর শেয়ার করা খুব এলাকা–নির্দিষ্ট তথ্যের টুকরো—সবই অমূল্য ডেটা দিয়েছে।
যানজট শহরগুলির একটি দ্রুত ক্রমবর্ধমান সমস্যা। পুনেতে পরিস্থিতি বেশি রকম খারাপ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে, এবং এটি অবশ্যই পিপিসিআর–এর মতো গোষ্ঠীগুলির দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। পুনের ট্র্যাফিক পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই টমটম–এ নথিভুক্ত করা হয়েছে, যা একটি প্রধান ভূ–অবস্থান প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। এটি ভ্রমণের সময় দিয়ে বিশ্বজুড়ে শহরগুলির পরিমাপ করে। টমটম ট্র্যাফিক ইনডেক্স ২০২২–এ মোট ৩৯০টি শহর এবং ৫৬টি দেশ অন্তর্ভুক্ত ছিল, এবং তাতে পুনেকে বিশ্বের ষষ্ঠ সর্বাধিক ঘনবসতিপূর্ণ শহর এবং বেঙ্গালুরুর পরে ভারতে দ্বিতীয় সর্বাধিক যানজটপূর্ণ শহর হিসাবে স্থান দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি এখন আরও খারাপ হয়েছে, এবং রিপোর্ট অনুসারে গত বছর থেকে শহরে ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে গড়ে আরও এক মিনিট দশ সেকেন্ড বাড়তি সময় লাগছে৷ ভিড়ের সময় শহরের গড় গতি ১৯ কিমি/ঘণ্টা। যেহেতু নাগরিকদের প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়, তাই তাঁরা সরাসরি ট্রাফিক সমস্যার পরিণতি বহন করেন। শহরের উৎপাদনশীলতা, ব্যক্তিগত সুবিধা, স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ক্ষেত্রে বিষয়টি অত্যন্ত কেন্দ্রীয় ভূমিকায় থাকে। সুতরাং, পিপিসিআর–এর প্রতিবেদনটি নাগরিকদের দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য তথ্য যা প্রকাশ্যে এসেছে তা হল, প্রশস্ত রাস্তার অভাব শহরের যানজটের একটি প্রধান কারণ। পুনের মোট সড়ক নেটওয়ার্কের ৬২ শতাংশ বা প্রায় দুই–তৃতীয়াংশ নয় মিটারের চেয়েও সরু। এটি শহরের যানজটের জন্য প্রাথমিকভাবে দায়ী। মৌলিক পরিকাঠামোর বড় ঘাটতি, যেমন মহাসড়ক বরাবর ডেডিকেটেড সার্ভিস রোডের অভাব এবং অপ্রতুল স্টর্মওয়াটার ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। রিপোর্ট অনুসারে, পুনেতে ৩৭৫টি প্রধান চৌরাস্তায় ট্রাফিক সিগন্যালগুলিকে অ–কার্যকর বলে মনে করা হয়, যার ফলে পুলিশের হস্তক্ষেপ বাড়ানো প্রয়োজন৷
গড়পড়তা যাত্রীরাও খুব উচ্চ মাত্রার ট্রাফিক শৃঙ্খলাহীনতা তৈরি করেন, যা শহরের ট্রাফিককে মোটেই সাহায্য করে না। শহরে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন ব্যাপক ঘটনা। সিগন্যাল ভাঙা, ভুল দিক দিয়ে গাড়ি চালানো, লেন ভাঙা, জেব্রা ক্রসিংয়ে যানবাহন পার্কিং, অবৈধ পার্কিং, এবং পার্কিংয়ের জন্য সেতু ব্যবহার করা শহরের যানজটের প্রধান উদ্বেগ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পিপিসিআর সদস্যরা নগর পুলিশের ট্রাফিক প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করে প্রতিবেদনটি নিয়ে আলোচনা করেন। পুলিশ প্রধান আবার ট্রাফিক পুলিশ দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষার তথ্য শেয়ার করেছেন। ফোরাম সদস্যদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে পুলিশ ফোরামটির সাথে কাজ করবে, এবং রিপোর্টের সুপারিশের ভিত্তিতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুনের ট্র্যাফিক পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই টমটম –এ নথিভুক্ত করা হয়েছে, যা একটি প্রধান ভূ–অবস্থান প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। এটি ভ্রমণের সময় দিয়ে বিশ্বজুড়ে শহরগুলির পরিমাপ করে।
সামগ্রিক তথ্যের একটি অংশ যা উদ্বেগজনক ছিল তা হল যে, গত তিন বছরে ২৫০ কোটি টাকার বকেয়া ট্রাফিক লঙ্ঘন জরিমানা অপরিশোধিত রয়ে গিয়েছে। এটি স্পষ্টভাবে পেনাল্টি পেমেন্টের প্রতি যাত্রীদের উদাসীনতা নির্দেশ করে। দ্রুত জরিমানা প্রদান এবং বৃহত্তর ট্রাফিক শৃঙ্খলার একটি উপকরণ হিসাবে ‘ই–চালান’ ব্যবহার বিপরীত ফলদায়ক প্রমাণিত হচ্ছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই টু–হুইলারের সঙ্গে সম্পর্কিত, এবং এদের আইন লঙ্ঘনের মধ্যে ছিল ভুল দিক দিয়ে চালানো, সিগন্যাল অবহেলা করা এবং লেন ভাঙা। ঘটনাক্রমে, পুনে মোটরবাইকের শীর্ষ ব্যবহারকারীদের মধ্যে রয়েছে, যার সংখ্যা বর্তমানে শহরে ৩.২ মিলিয়নেরও বেশি। পুনেতে মোট যানবাহনের সংখ্যা ৮ মিলিয়নেরও বেশি।
ডেটা থেকে আরও জানা যাচ্ছে যে, সাইকেল চালক ও পথচারীরা মারাত্মক ট্র্যাফিক দুর্ঘটনার শিকারের ৯২ শতাংশ। এটাও বেদনাদায়ক যে গত বছর যে টু–হুইলার চালকদের দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু হয়েছিল, তাঁদের সকলেই হেলমেট পরে ছিলেন। ভুল দিকে গাড়ি চালানোর বিপদজনক অনুশীলনের চোখে পড়ার মতো বৃদ্ধি একটি উল্লেখযোগ্য উদ্বেগ ছিল। এটি মারাঠা চেম্বার অফ কমার্সের প্রাক্তন সভাপতি নিজেই তুলে ধরেছিলেন, এবং নাগরিকদের মধ্যে আইন প্রয়োগের ক্রমহ্রাসমান ভয় নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। আদালতে সরাসরি বিচারসহ কঠোর আইন বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট প্রয়োজন ছিল।
বৈঠকে এই চ্যালেঞ্জগুলিকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার জন্য একটি ব্যাপক নাগরিক সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান শুরু করার জরুরি প্রয়োজনের উপর জোর দেওয়া হয়। ক্যাম্পেনের লক্ষ্য নাগরিকদের মধ্যে দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলা এবং ট্রাফিক আইন সম্পর্কে তাঁদের শিক্ষিত করা। সোশ্যাল মিডিয়া ও কমিউনিটি আউটরিচের মতো বিভিন্ন মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পিপিসিআর ও ট্রাফিক পুলিশ যৌথভাবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রচার করতে, এবং ব্যাপক জনসাধারণের সহযোগিতা অর্জনের জন্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত হওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
ক্যাম্পেনের লক্ষ্য নাগরিকদের মধ্যে দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলা এবং ট্রাফিক আইন সম্পর্কে তাঁদের শিক্ষিত করা।
যদিও এগুলি সবই প্রশংসনীয় পদক্ষেপ, তবে এ কথা অবশ্যই উল্লেখ করা উচিত যে, বাস্তব পরিস্থিতি জটিল এবং অনেক সমস্যা সমাধানের পরামর্শগুলি কার্যকর করা কঠিন হতে পারে। রাস্তার পরিসরের ক্ষেত্রে শহরের বড় ঘাটতিটি সমাধান করা কঠিন, কারণ রাস্তার উভয় পাশের জমির বেশিরভাগেই ইতিমধ্যেই নির্মিত কাঠামো আছে। যদিও তাত্ত্বিকভাবে রাস্তাগুলি এখনও জমি ও ভবন অধিগ্রহণের মাধ্যমে প্রশস্ত করা যেতে পারে, নতুন ভূমি অধিগ্রহণ আইনে মালিকদের যে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে তা বিশাল। ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন এবং পুনর্স্থাপন আইন, ২০১৩ (আরএফসিটিএলএআরআর)–এ ন্যায্য ক্ষতিপূরণ ও স্বচ্ছতার অধিকার শহরাঞ্চলে পরিশোধ করা বার্ষিক রেডি রেকনার হারের দ্বিগুণ নির্ধারিত হয়েছে। এত বিপুল পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া পুনে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের (পিএমসি) ক্ষমতার বাইরে। এর অর্থ হল পিপিসিআর রিপোর্টে যানজটের প্রাথমিক কারণ হিসাবে রাস্তার জায়গার স্বল্পতা চিহ্নিত করার বিষয়টি অনেকাংশে অমীমাংসিত থেকে যাচ্ছে।
পিপিসিআর রিপোর্টে নির্দেশিত পরিকাঠামোগত ঘাটতি, তাত্ত্বিকভাবে, পিএমসি পরিপূরণ করতে পারে। যাই হোক, ফ্লাইওভার, ব্রিজ, আন্ডারপাস, গ্রেড সেপারেটর ও সিগন্যালিং সিস্টেমের মতো পরিবহণ পরিকাঠামো তৈরি করতে অনেক টাকা খরচ হয়। ভারতের শহুরে স্থানীয় সংস্থাগুলির (ইউএলবি) আর্থিক দুর্বলতার পরিপ্রেক্ষিতে এটি কল্পনা করা কঠিন যে, এমনকি তুলনায় সক্ষম সংস্থাগুলিও পরিবহণের একটি ক্ষেত্রের জন্য এত টাকা দিতে সক্ষম হবেন, যখন কিনা তাদের একাধিক বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে হয়। যাই হোক, পিপিসিআরকে এই বিষয়গুলি পিএমসি–র কাছে নিয়ে যেতে হবে, কারণ এগুলি সিটি পুলিশের আওতায় পড়ে না।
ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন রোধ করা–সহ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ট্রাফিক পুলিশের কাজের মধ্যে পড়ে। শহরের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং ক্রমান্বয়ে আরও জংশন ও মোড় সমস্যাসঙ্কুল হতে থাকায় জনবলের ঘাটতির কারণে পুলিশ বাধাগ্রস্ত হয়। তাঁদের হাতে সর্বোচ্চ ৭৫০ জন পুলিশ রয়েছেন, যা তাঁরা যে কোনও নির্দিষ্ট দিনে ট্রাফিক ডিউটিতে মোতায়েন করতে পারেন। মসৃণ ট্র্যাফিক চলাচলের মধ্যেও একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে, কারণ জরিমানা করার জন্য গাড়ির প্রবাহ থেকে গাড়ি ও দু–চাকার গাড়িগুলিকে বার করে আনার ঘটনাটি ট্র্যাফিক ব্যাঘাত ঘটায়। আগেই বলা হয়েছে, ডিজিটালাইজড জরিমানা সংগ্রহ সমস্যাযুক্ত প্রমাণিত হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে, যানজট মোকাবিলা করার জন্য শাসন ব্যবস্থার ক্ষমতা সীমিত বলে মনে হচ্ছে, এবং শহরগুলিকে আগামী দিনে আরও বেশি পরিমাণে যানজটের মধ্যে পড়তে হবে।
রমানাথ ঝা অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডিস্টিংগুইশড ফেলো
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.