এটি চায়না ক্রনিকলস সিরিজের ১৬৩ তম প্রবন্ধ।
২০২২ সালের এপ্রিলে বোয়াও ফোরাম ফর দ্য এশিয়া অ্যানুয়াল কনফারেন্সে তাঁর ভাষণে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং উচ্চাভিলাষী গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ (জিএসআই) ঘোষণা করেছিলেন। তিনি জিএসআই-কে বৈশ্বিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য একটি বিস্তৃত কাঠামো হিসাবে উপস্থাপন করেন, যার মধ্যে রয়েছে বিশ্বে নিরাপত্তা বজায় রাখা, আঞ্চলিক সংস্থাগুলির মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো, এবং ঐতিহ্যগত দ্বন্দ্ব থেকে জলবায়ু পরিবর্তন ও সাইবার নিরাপত্তা পর্যন্ত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা। চিন খুব কমই আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা উদ্যোগে অংশগ্রহণ করত; বরং দেশটি নিরপেক্ষ দর্শক হতে পছন্দ করত এবং বিভিন্ন বিকল্প খোলা রাখত। তাই, বৈশ্বিক নিরাপত্তা ইস্যুতে চিনের নতুন অবস্থান এবং এর প্রকৃত উদ্দেশ্য বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
২০২২ সালের এপ্রিলে বোয়াও ফোরাম ফর দ্য এশিয়া অ্যানুয়াল কনফারেন্সে তাঁর ভাষণে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং উচ্চাভিলাষী গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ (জিএসআই) ঘোষণা করেছিলেন।
তবুও, চিনের নিরাপত্তা দৃষ্টিভঙ্গি বিস্ময়কর মনে হওয়া উচিত নয়। বেজিং ২০১৩ সালে তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) ঘোষণা করার পর থেকে সীমিত সম্পৃক্ততার ঐতিহ্যগত পদ্ধতির বাইরে গিয়ে বিভিন্ন সংঘাতে আরও সক্রিয় পদক্ষেপ করতে শুরু করেছে, এবং একটি মধ্যস্থতাকারী হিসাবে আরও দৃঢ় ভূমিকা পালন করছে। বেজিংয়ের অর্থনৈতিক প্রভাব ক্রমাগত প্রসারিত হওয়ায় এটি দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলিতে আরও রাজনৈতিক প্রভাব অর্জনের চেষ্টা করছে। তাই, জিএসআই কার্যত নিরাপত্তা প্রদানকারী হিসাবে তার নেতৃত্বের ভূমিকাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য চিনের প্রচেষ্টার প্রতিনিধিত্ব করে। অন্য কথায়, এটি সেই লোভনীয় কূটনৈতিক প্রভাব অর্জনের দিকে বেজিংয়ের প্রথম পদক্ষেপ, যেখানে এটি বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সংঘাতে আলোচনার ফলাফলকে প্রভাবিত করতে আরও বেশি করে সক্ষম হবে। এলিজাবেথ সি ইকনমি তাঁর বই "দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাকর্ডিং টু চায়না "-এ মতামত দিয়েছেন যে, চিনের চূড়ান্ত লক্ষ্য শুধু বিদ্যমান বিশ্বব্যবস্থার পুনর্গঠনই নয়, বরং একে নতুন চিন-কেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা দিয়ে প্রতিস্থাপন করা।
এখনও অবধি, বেজিংয়ের বিরোধ মেটানোর পদ্ধতি প্রাথমিকভাবে তার নিজের অর্থনৈতিক ও সুরক্ষা স্বার্থ দ্বারা চালিত। এটি অংশগ্রহণ এবং সরাসরি সম্পৃক্ততা এড়ানো হিসাবে চিহ্নিত। যাই হোক, চিন এমন একটি নতুন কাঠামো তৈরি করতে গভীর সম্পৃক্ততার ভিত্তি তৈরি করছে যা চিনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) উত্থানে অবদান রাখবে। গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ (জিএসআই) হল চিনা পুনরুজ্জীবনের দিকে একটি নির্ণায়ক পদক্ষেপ, যা ' চিন স্বপ্ন' নামেও পরিচিত, এবং এর লক্ষ্য সেই বিকল্প নিরাপত্তা স্থাপত্য তৈরি।
আফ্রিকায় চিনের বিরোধ মেটানোর বিভিন্ন নীতি
গত কয়েক বছরে চিন অবিচলিতভাবে বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রদানকারী হিসাবে, বিশেষ করে আফ্রিকায়, তার প্রোফাইল তৈরি করেছে। জিএসআই ঘোষণার এক মাস আগে, ২০২২ সালের মার্চ মাসে, চিন ইথিওপিয়া ও হর্ন অফ আফ্রিকাতে চিনা নেতৃত্বাধীন শান্তি প্রক্রিয়ায় গতি আনতে "আফ্রিকার হর্নে শান্তি ও উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গি" প্রস্তাব করেছিল। আফ্রিকার জন্য জিএসআই-এর সম্ভাব্য প্রভাব এবং এর পদ্ধতিকে ঘিরে বিতর্ক চলছে।
প্রকৃতপক্ষে, বছরের পর বছর ধরে, আফ্রিকার সঙ্গে জড়িত থাকার সময় চিন অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ না-করার নীতি অনুসরণ করে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দিকগুলিতে মনোনিবেশ করেছে। এই নীতির মূলে রয়েছে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতি, যা ১৯৫৪ সালে ঝাও এন লাই ঘোষণা করেছিলেন। তবে ইথিওপিয়া, মালি, সোমালিয়া এবং এখন নাইজার-সহ আফ্রিকার বিভিন্ন অংশে বেজিংয়ের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা তার সংঘাতপূর্ণ এলাকায় সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার অভিপ্রায় প্রকাশ করে। কিছু পণ্ডিত একে অ-হস্তক্ষেপ থেকে সৃজনশীল সম্পৃক্ততায় পরিবর্তন হিসাবে অভিহিত করেছেন। প্রকৃতপক্ষে, এই বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি, চিনা বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে অ-হস্তক্ষেপ, চিনা বৈদেশিক নীতিনির্ধারকদের হস্তক্ষেপের স্তরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুমতি দেয়, এবং কঠোর অ-হস্তক্ষেপ থেকে দূরে সরে যায়।
চিন তার দ্বন্দ্ব সমাধানের প্রক্রিয়া, হস্তক্ষেপ, প্রভাব ও মধ্যবর্তিতার সতর্ক মিশ্রণের বিষয়ে একটি কৌশলগত অস্পষ্টতা বজায় রাখে। অধিকন্তু, চিন ক্ষেত্রভিত্তিক মূল্যায়ন পরিচালনা এবং কোন সংঘাতে জড়িত হবে তা নির্বাচনের মাধ্যমে, আর সেইসঙ্গে তার নিজস্ব স্বার্থ, অগ্রাধিকার ও সীমাবদ্ধতার উপর ভিত্তি করে তার দ্বন্দ্ব সমাধানের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে, নিজের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন ধরে রাখতে চায়।
চিন তার দ্বন্দ্ব সমাধানের প্রক্রিয়া, হস্তক্ষেপ, প্রভাব ও মধ্যবর্তিতার সতর্ক মিশ্রণের বিষয়ে একটি কৌশলগত অস্পষ্টতা বজায় রাখে।
বর্তমানে, আফ্রিকায় চিন প্রধানত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এর মাধ্যমে বা অন্যভাবে করা তার বিনিয়োগগুলিকে সুরক্ষিত করতে এবং সেইসঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। প্রকৃতপক্ষে, আফ্রিকা চিনকে অনেক প্রয়োজনীয় সম্পদ প্রদান করে, যা যেমন তার শক্তি নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই তা শিল্প কার্যক্রমের নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে থাকা নিশ্চিত করে। চিন যে দেশগুলিতে বিনিয়োগ করেছে সেখানে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে তার আগ্রহ রয়েছে, ঠিক যেমন যে দেশগুলির বিনিয়োগের প্রয়োজন তাদের চিনের সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখার আগ্রহ রয়েছে। এইভাবে, আফ্রিকায় সংঘাতের সমাধানে চিনের সম্পৃক্ততা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মঞ্চে একটি কার্যকর মধ্যস্থতাকারী হিসাবে উঠে আসার ইচ্ছা দ্বারা চালিত।
চিন বৈশ্বিক ক্ষমতার সিঁড়িতে আরোহণ করার সময় তার দশক-পুরনো অ-হস্তক্ষেপ নীতি পুনর্বিবেচনা করতে শুরু করেছে। প্রকৃতপক্ষে, চিনা বৈশিষ্ট্যযুক্ত মধ্যস্থতা গত বছরে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে স্পষ্ট ছিল। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে চিন সফলভাবে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে একটি সমঝোতার মধ্যস্থতা করেছিল। এছাড়াও, একই মাসে, চিনের জননিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ওয়াং জিয়াওহং মায়ানমারের অভ্যুত্থানের নেতা মিন অং লাইং-এর সঙ্গে দেখা করতে যান। একই সময়ে শি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে মস্কো যান। অবশেষে, বৈশ্বিক শান্তিরক্ষকের ভূমিকা পালনে বেজিংয়ের নতুন আগ্রহের প্রতিফলন ঘটায় প্যালেস্তাইন-ইজরায়েল বিরোধের সমাধানে তার পজিশন পেপার, এবং প্যালেস্তাইনি শান্তি চুক্তি সম্পাদনে তার সাফল্য, যেখানে যুদ্ধরত প্যালেস্তাইনি দল হামাস ও ফাতাহ দখলকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক ও গাজার জন্য একটি অন্তর্বর্তী "জাতীয় পুনর্মিলন সরকার" গঠনে সম্মত হয়েছে। তালিবান, হামাস ও হিজবুল্লার মতো বিভিন্ন অ-রাষ্ট্রীয় খেলোয়াড়দের সঙ্গে চিনের যোগাযোগ তার মধ্যস্থতা কূটনীতিকে মার্কিন বা পশ্চিম-নেতৃত্বাধীন দ্বন্দ্ব সমাধানের পদ্ধতির থেকে আলাদা করার অভিপ্রায় প্রকাশ করে। এই সাফল্যগুলি চিনকে আফ্রিকায় আরও দৃঢ় হতে এবং আফ্রিকার নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ গভীর করে চিনের স্বার্থের উপযোগী চুক্তির দিকে তাঁদের টেনে আনতে উৎসাহিত করবে ।
উপসংহার
গত বছর একটি ফোন কলের সময় শি তাইওয়ানের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে বলেছিলেন: "যারা আগুন নিয়ে খেলে তারা পুড়ে যায়।" বেজিং নিজের এবং অন্যদের "অ-হস্তক্ষেপ" নিয়ে বড়াই করে। তবুও, তারা আফ্রিকায় প্রকাশ্যে হস্তক্ষেপ শুরু করেছে।
গত বছর একটি ফোন কলের সময় শি তাইওয়ানের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে বলেছিলেন: "যারা আগুন নিয়ে খেলে তারা পুড়ে যায়।" বেজিং নিজের এবং অন্যদের "অ-হস্তক্ষেপ" নিয়ে বড়াই করে। তবুও, তারা আফ্রিকায় প্রকাশ্যে হস্তক্ষেপ শুরু করেছে।
এ যাবত বিরোধের মধ্যস্থতায় বেজিং হোস্ট-গভর্নমেন্ট পরামর্শের ক্ষেত্রে নরম্যাটিভ ডিস্টিংশনের উপর নির্ভর করেছে। যাই হোক, যদি এমন কোনও সংঘাতের উদ্ভব হয় যা চিনের অর্থনৈতিক বা নিরাপত্তা স্বার্থকে হুমকির মুখে ফেলে, তবে দেশটি তার ঐতিহ্যগত পথ ছেড়ে আরও সরাসরি জড়িত হতে পারে। আফ্রিকার উপর চিনের সম্পদ-নির্ভরতার পরিপ্রেক্ষিতে এই বিষয়টি আফ্রিকাতেই সবচেয়ে স্পষ্টভাবে দেখা যাবে। আফ্রিকা অবশ্যই চিনা পুনরুজ্জীবনের ঘটনা লক্ষ্য করেছে, তবে মহাদেশটিকে এমন এক নতুন চিনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে যে তার স্বার্থের ভিত্তিতে মহাদেশের সংঘাত সমাধানে ক্রমবর্ধমানভাবে অংশ নেবে।
সমীর ভট্টাচার্য অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.