Published on Jun 19, 2023 Updated 0 Hours ago

একাধিক আণবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করে যে, কোভিড-১৯ টিকা মানুষের ডিএনএ-কে প্রভাবিত করতে পারবে না। তাই এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা নিতান্তই ক্ষীণ

কোভিড ভ্যাকসিন কি কোনও ব্যক্তির ডিএনএ ‘পরিবর্তন’ করতে পারে?

কোভিড-১৯ টিকার বিকাশের গতি এবং তাদের উৎপাদনের মাত্রা মানব ইতিহাসে নজিরবিহীন। বিরল হলেও কোভিড-১৯ টিকা সংক্রান্ত প্রতিকূল ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং তা টিকা গ্রহণের ব্যাপারে ও টিকা সংক্রান্ত দ্বিধা তৈরি করেছে। টিকা সংক্রান্ত বিতর্ক পরিস্থিতিকে আরও গুরুতর করে তোলে। কোভিড-১৯ টিকা – বিশেষত তুলনামূলকভাবে অভিনব এমআরএনএ টিকা – নিয়ে যেসব প্রশ্ন বারবার তোলা হয়, তার মধ্যে বিশেষ উদ্বেগজনক প্রশ্নটি হল এই সব টিকায় ব্যবহৃত এমআরএনএ অথবা সংক্রমিত ডিএনএ মানুষের জিনোমে প্রবেশ করতে এবং সেটির পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম কি না।

কিছু পরিমাণ বহিরাগত ডিএনএ ( যেমন যে জিনটি সার্স-কোভ-২-এর স্পাইক প্রোটিনের জন্য কোডের কাজ করে) কি টিকার শিশিতে উপস্থিত থাকতে পারে যা – টিকা তৈরিতে ব্যবহৃত প্রক্রিয়ার দূষক হিসাবে কিংবা এমআরএনএ নিজেই – মানব জিনোমে সমন্বিত হয় এবং একজন ব্যক্তিকে প্রভাবিত করে (তাদের হয়তো ক্যানসার-প্রবণ করে তোলে, বা মিউটেশন ঘটায়)? এমনটা হওয়ার জন্য ক্ষীণ সম্ভাবনাসম্পন্ন ঘটনার কম সংখ্যার নিরিখে আণবিক জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই উদ্বেগটি বিভ্রান্তিকর। এমআরএনএ টিকায় উপস্থিত সংক্রমিত ডিএনএ এবং এমআরএনএ সংক্রান্ত দু’টি ঘটনার কথা উল্লেখ করা যাক।

একটি সাম্প্রতিক পূর্বমুদ্রণে (একটি সমীক্ষা যা এখনও বিশেষজ্ঞ দ্বারা পর্যালোচিত নয়) মেয়াদোত্তীর্ণ এমআরএনএ টিকার শিশিগুলিতে প্রত্যাশার তুলনায় বেশি পরিমাণ ডিএনএ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু এই ফলাফল প্রাথমিক পর্যায়ের এবং এই দাবি তোলার জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলির যথার্থতা তর্কসাপেক্ষ।

সংক্রমিত ডিএনএ সম্ভবত এমআরএনএ টিকা তৈরিতে ব্যবহৃত প্রক্রিয়া থেকে বাহিত হতে পারে। এমআরএনএ টিকা থেকে এই ডিএনএ (একটি বৃত্তাকার প্লাজমিড, যা থেকে এমআরএনএ সংশ্লেষিত হয়) অপসারণের জন্য পরিশোধনকারী প্রক্রিয়া রয়েছে। সুতরাং, সংক্রমিত ডিএনএ-র পরিমাণ সম্ভাব্য ভাবে কম। একটি সাম্প্রতিক পূর্বমুদ্রণে (একটি সমীক্ষা যা এখনও বিশেষজ্ঞ দ্বারা পর্যালোচিত নয়) মেয়াদোত্তীর্ণ এমআরএনএ টিকার শিশিগুলিতে প্রত্যাশার তুলনায় বেশি পরিমাণ ডিএনএ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু এই ফলাফল প্রাথমিক পর্যায়ের এবং এই দাবি তোলার জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলির যথার্থতা তর্কসাপেক্ষ। যদিও মূল বিষয় হল যে সংক্রমিত ডিএনএর উপস্থিতি ঘটনাগুলির একটি দীর্ঘ শৃঙ্খলে শুধু মাত্র প্রথম ঘটনা।

এরপর এই ডিএনএটিকে ইঞ্জেকশন প্রয়োগের স্থান থেকে কোষ পর্যন্ত পৌঁছতে হয়। ফলে স্বভাবতই এই কম পরিমাণ ডিএনএ-র প্রক্রিয়াটিতে আরও তরলীকৃত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং একাধিক কোষে ব্যাপক পরিমাণে সংক্রমিত ডিএনএ পৌঁছনোর ঘটনা প্রায় অসম্ভব।

এর পরে ডিএনএকে কোষের পর্দা অতিক্রম করতে হবে, কোষ/সাইটোসলের মধ্যে প্রবেশ করতে হবে এবং তার পর কোষের সাইটোসল থেকে নিউক্লিয়াসে যেতে হবে – যা ডিএনএ এবং সংশ্লিষ্ট প্রোটিনের জন্য একটি পৃথক আধার – এটি আসলে একটি দুর্গে প্রবেশ করার মতোই। এমনটা করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে ডিএনএ থাকতে হবে, যা কোনও ভাবেই নষ্ট হয়নি (ডাবল-স্ট্র্যান্ডেড এবং তার প্রান্তগুলি কোন না কোনও ভাবে সুরক্ষিত, যেমনটা প্লাজমিডের বৃত্তাকার ডিএনএ-তে দেখা যায়)। এ কথা আশ্চর্যের নয় যে, এই পরিযানে অনেক ডিএনএ-র হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এটি আসলে এমন একটি চ্যালেঞ্জ, যা ডিএনএ টিকাকে অতিক্রম করতে হবে। এই অতিরিক্ত ধাপটি (সাইটোসল থেকে নিউক্লিয়াস অতিক্রম করার জন্য একটি অতিরিক্ত পর্দা) আসলে সেই কারণ, যার জন্য ডিএনএ টিকাগুলি এমআরএনএ টিকার তুলনায় কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদান করে।

নিউক্লিয়াসে এক বার ঢুকলে ডিএনএ-র এই টুকরোটিকে অবশ্যই অক্ষত থাকতে হবে এবং একটি কোষের নানা উপাদানকে বিপর্যস্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্যগুলি বিদ্যমান থাকা জরুরি – কোষটিকে অবশ্যই বিভাজনক্ষম হতে হবে (একটি বিভাজন ক্ষমতাবিহীন কোষ এই প্রক্রিয়াকে স্তব্ধ করে দেবে) এবং ডিএনএ ক্ষতি রোধ করার জন্য সমস্ত চেকপয়েন্টকে এড়িয়ে ডিএনএ-র মধ্যে সমন্বিত হতে হবে। এটি সেই একই প্রক্রিয়া, যা টিউমার কোষগুলিকে প্রতি বার নিজের একটি প্রতিলিপিকরণে বাধা দেয়।

সুতরাং, জিনোমে ডিএনএ-র এই ধরনের সংযোজন যে বিরল, তা সুনিশ্চিত করার জন্য একাধিক আণবিক প্রতিরোধ রয়েছে। এ কথা বলা হলেও বেশ কিছু ডিএনএ ভাইরাস এবং এইচআইভি-র মতো ভাইরাস এমনটা করতে সক্ষম। তাই এমনটা হওয়া সম্পূর্ণ রূপে অসম্ভব নয়। সমন্বয় ঘটলেও এ হেন পন্থা খুবই অসম্ভাব্য এবং মানবকোষের নিউক্লিয়াসের মধ্যে এই ডিএনএ-টিকে নিজের প্রতিলিপি নির্মাণের জন্য আরও একটি ধাপ পেরোতে হবে অর্থাৎ তা হল প্রতিলিপি সক্ষমতা। বেশির ভাগ কোভিড-১৯ টিকাই অ-প্রতিলিপিক্ষম ভেক্টরের উপর ভিত্তি করে তৈরি; অর্থাৎ তারা একটি মানবকোষে প্রবেশ করলেও অব্যবহিত পর্যায়ে নিজেদের প্রতিলিপি তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় ক্রম নেই।

সমন্বয় ঘটলেও এ হেন পন্থা খুবই অসম্ভাব্য এবং মানবকোষের নিউক্লিয়াসের মধ্যে এই ডিএনএ-টিকে নিজের প্রতিলিপি নির্মাণের জন্য আরও একটি ধাপ পেরোতে হবে অর্থাৎ তা হল প্রতিলিপি সক্ষমতা।

ধরে নেওয়া যাক, খুব কম মাত্রায় এই সমন্বয়/মিউটেশন ঘটল; তবে সেটাই যথেষ্ট নয়। এটি এমন এক অঞ্চলে ঘটতে হবে যেগুলি কার্যক্ষম প্রোটিনগুলিকে সঠিক ভাবে ব্যাহত করার জন্য কোড করে। জিনোমের মধ্যে এমন সুবিশাল অংশ রয়েছে, যা কোনও কিছুর জন্য কোড করে না; হয়তো এগুলির কাজ বহিরাগত ডিএনএ-র সংশ্লিষ্ট আঘাতের বিরুদ্ধে বাফার হিসেবে কাজ করা, যে ক্ষমতা হাজার হাজার বছরের বিবর্তনের ফলে সৃষ্ট হয়েছে। এমনকি বহিরাগত ডিএনএ একটি কোষের অন্তর্গত জিনোমের কেন্দ্রস্থলেও পৌঁছে গেলেও এই পরিবর্তনটি সম্ভবত কোষের সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়ে যাবে। কারণ শরীরের বেশির ভাগ কোষগুলি পৃথগীকৃত কোষ এবং তাদের জীবনকাল খুব স্বল্প। প্রকৃত ক্ষতি করার জন্য এই জাতীয় ডিএনএকে স্টেম সেলের একটি জিনের মধ্যে সমন্বিত হতে হবে, যা শরীরের যথেষ্ট সুরক্ষিত উপকোষ্ঠে থাকে।

সুতরাং সামগ্রিক ভাবে, টিকায় উপস্থিত দূষিত ডিএনএ-র পক্ষে মানব জিনোমকে প্রভাবিত করার সম্ভাবনা আকাশ-কুসুম কল্পনাসম।

টিকায় উপস্থিত এমআরএনএ-র উচ্চ মাত্রার প্রভাব কী?

এমআরএনএ-র ক্ষেত্রে এটি দূষিত ডিএনএ-র চাইতে বেশি পরিমাণে উপস্থিত থাকলেও একাধিক পরিবর্তন এ কথা সুনিশ্চিত করে যে, এটি কোষের সাইটোপ্লাজমে থাকবে এবং নিউক্লিয়াসে প্রবেশ করবে না। এমআরএনএ-কে ডিএনএ-তে সমন্বিত হওয়ার জন্য আরএনএ-কে রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেজ নামক বিশেষ উৎসেচক দ্বারা ডিএনএ-তে রূপান্তরিত হতে হবে। এই সম্পূর্ণ আণবিক পথটিকে সক্রিয় করা দরকার এবং এমআরএনএ ক্ষয় হওয়ার আগেই তা কার্যকরী হয়ে উঠতে হবে। কৃত্রিম ভাবে কালচার করা যকৃৎ কোষে (যা কোনও ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ কোষ থেকে একেবারেই আলাদা) গবেষকরা দেখিয়েছেন যে, এমআরএনএ টি্কা থেকে প্রাপ্ত এমআরএনএ-গুলি ডিএনএ-তে বিপরীত ভাবে প্রতিলিপিকৃত হতে পারে। যাই হোক এই ফলাফলগুলি ভিট্রো সেল কালচার সিস্টেমের মধ্যে সীমাবদ্ধ, যা শরীরের অভ্যন্তরের একটি কোষের সকল বাধা এবং সুরক্ষা প্রদান করে না। এর পাশাপাশি একটি সুস্থ কোষে মুক্ত-ভাসমান বহিরাগত আরএনএ এবং ডিএনএ-র বিরুদ্ধে কোষীয় প্রতিরক্ষা সম্ভবত সক্রিয় হয়, যা এমআরএনএ টিকার সফল বিপরীত প্রতিলিপিকরণকে বিরল করে তোলে। উপরে বর্ণিত দূষিত ডিএনএ-র প্রক্রিয়াটির মতো কোষটি নিজেই স্বাভাবিক মৃত্যু বা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আক্রমণের সম্মুখীন হতে পারে (যেমন এটি এমআরএনএ টিকা দ্বারা কোড করা সার্স-কোভ-২ স্পাইককে প্রকাশ করবে) এবং সমন্বয়ের প্রক্রিয়া ঘটা বা নিজেকে প্রকাশ করার সুযোগ না দিয়েই শরীর থেকে নিষ্কাশিত হতে পারে। তাই এমনটা প্রায় অসম্ভব যে এমআরএনএ টিকার অন্তর্গত এমআরএনএ এক জন  ব্যক্তির ডিএনএ-র পরিবর্তন ঘটাবে।

এর পাশাপাশি একটি সুস্থ কোষে মুক্ত-ভাসমান বহিরাগত আরএনএ এবং ডিএনএ-র বিরুদ্ধে কোষীয় প্রতিরক্ষা সম্ভবত সক্রিয় হয়, যা এমআরএনএ টিকার সফল বিপরীত প্রতিলিপিকরণকে বিরল করে তোলে।

এই ভাষ্যটি ‘অসম্ভব’-এর পরিবর্তে ‘অসম্ভাব্য’ এবং ‘কম সম্ভাবনাময়’ শব্দবন্ধগুলি ব্যবহার করেছে যেহেতু ভাইরাসের মতো জীবগুলি বিবর্তনের দৌড়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের আশ্রয়দাতা কোষের সকল নিয়মকে ভাঙতে শিখে গেছে। তাই টিকার শিশিতে কতটা দূষিত প্লাজমিড রয়েছে তা থেকে শুরু করে; কোষে পৌঁছনোর জন্য লোড যথেষ্ট বেশি কি না; কত কোষ ডিএনএ গ্রহণ করে; এটি আদৌ নিউক্লিয়াসে পৌঁছয় কি না; এটা সেখানে টিকে থাকে কি না; টিকা থেকে এমআরএনএ শরীরের মধ্যে ডিএনএ-তে রূপান্তরিত হয় কি না; বিভিন্ন ধরনের কোষে এটি কখন প্রবেশাধিকার পায় ইত্যাদির মতো প্রক্রিয়াটির বিভিন্ন দিক নিয়ে নিবিড় ভাবে এবং একাধিক ব্যবস্থায় গবেষণা চালাতে হবে, বিশেষ করে সেই সময়ে, যখন আমরা আরও অধিক সংখ্যক রোগের জন্য এই টিকা প্রযুক্তিগুলি ব্যবহার করতে প্রস্তুত হচ্ছি। বর্তমানে কোভিড-১৯ টিকার ‘সমন্বয়’ এবং ‘দূষিত ডিএনএ’র মতো বিপদসঙ্কেতের প্রচারকারী বিভিন্ন গবেষণা এই সকল দিকগুলি সম্পর্কে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত প্রমাণ সরবরাহ করে না।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.