Author : Talal Rafi

Published on Mar 26, 2024 Updated 0 Hours ago

শ্রীলঙ্কার বাজেট ২০২৪- এমন উচ্চাভিলাষী প্রস্তাব রয়েছে, যা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেতবে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য দেশটিকে দীর্ঘ পথ হাঁটতে হবে।

বাজেট ২০২৪: শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথ?

সম্প্রতি পাস হওয়া ২০২৪ সালের বাজেটে অনেক প্রতিশ্রুতির কথা বললেও শ্রীলঙ্কার অতীত ঘেঁটে দেখলে বোঝা যাবে, বাজেটের মূল প্রস্তাবগুলির জন্য ব্যয় পূরণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় রাজস্ব সেই আখেরে কম পড়ে যায়। বাজেটটি শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমসিংহের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য দ্বিধার জন্ম দিয়েছে। তাঁকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) কর্মসূচির চাহিদার ভারসাম্য বজায় রাখতে হলে একই সময়ে অর্থাৎ ২০২৪ সালটি একটি নির্বাচনী বছর হওয়ার দরুন একটি জনপ্রিয় বাজেট তৈরি করার লক্ষ্যে তাঁকে জোটের চাপড়িয়ে যেতে হয়েছে। শ্রীলঙ্কা বর্তমানে তার ১৭তম আইএমএফ কর্মসূচির অধীনে রয়েছে এবং ১৯৬৫ সাল থেকে এই ধরনের বিভিন্ন কর্মসূচির অধীনে থাকলেও দ্বীপদেশটি মাত্র নটি কর্মসূচিই সম্পন্ন করেছে।

 

বাজেটের ইতিবাচক দিক

শ্রীলঙ্কার বাজেট ২০২৪-দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আকর্ষণীয় প্রস্তাব রয়েছে বাজেটে বলা হয়েছে যে, পাবলিক হাউজিং স্কিমে (জন আবাসন প্রকল্প) বসবাসকারী মানুষদের এ বার জমির মালিকানা দিতে হবে এবং এস্টেটে কর্মরত শ্রমিকদের জমি দিতে হবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে। যেহেতু শ্রীলঙ্কায় ৮২ শতাংশ জমির মালিকানা সরকারের, তাই এই পদক্ষেপ জমির মালিকানাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের যে কোনও উদ্যোগের অর্থায়নের জন্য জমিকে জামানত হিসাবে ব্যবহার করতে সক্ষম করে তুলবে।

 

সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অ্যাক্ট পাস করা হয়েছে এবং সেই আইনের মূল বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে অন্যতম হল কারেন্সি বোর্ড থেকে ট্রেজারি সেক্রেটারিকে অপসারণ করা, সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ককে প্রাথমিক বাজার থেকে সরাসরি ক্রয় করতে নিষেধ করা এবং এ হেন আইনের মূল্য উদ্দেশ্যই হল মূল্য স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।

 

শ্রীলঙ্কার জিডিপি-র ৫২ শতাংশ অবদানকারী ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ক্ষেত্রকেও বেশ ছাড় দেওয়া হয়েছে। এটি এই উদ্যোগগুলির বেশির ভাগকে বাস্তবে টিকে থাকতে সাহায্য করতে পারে কারণ তাদের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রই এখন ভেঙে পড়ার মুখে দাঁড়িয়ে। ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের মূলধন উন্নয়নে ৪৫০ বিলিয়ন ভারতীয় টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এবং দুটি বৃহত্তম সরকারি ব্যাঙ্কের ২০ শতাংশ শেয়ার বেসরকারিকরণ করা হবে। যেহেতু রাষ্ট্রীয় ব্যাঙ্কগুলি সরকারকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে - যা কিনা আবার বৃহৎ রাজস্ব ঘাটতির অনুমতি দিয়েছে - তাই রাষ্ট্রীয় ব্যাঙ্কগুলির বেসরকারিকরণ দায়বদ্ধতা এবং স্বচ্ছতা আনার কাজটিকে সহজতর করবে। সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অ্যাক্ট পাস করা হয়েছে এবং সেই আইনের মূল বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে অন্যতম হল কারেন্সি বোর্ড থেকে ট্রেজারি সেক্রেটারিকে অপসারণ করা, সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ককে প্রাথমিক বাজার থেকে সরাসরি ক্রয় করতে নিষেধ করা এবং এ হেন আইনের মূল উদ্দেশ্যই হল মূল্য স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। এর ফলে আর্থিক শৃঙ্খলা আরও বেশি জোরদার হবে কারণ সরকার অর্থগত অর্থায়নের উপর নির্ভর করতে পারে না। আন্তর্জাতিক পুঁজি বাজার থেকে শ্রীলঙ্কা প্রবেশাধিকার বন্ধ হয়ে যাওয়ার অর্থ হল একমাত্র বিকল্প রাষ্ট্রীয় ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়া কারণ তাদের পুনঃপুঁজিকরণ অত্যন্ত জরুরি। সেগুলির আংশিক বেসরকারিকরণের ফলে বৃহত্তর আর্থিক শৃঙ্খলা তৈরি হবে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বিষয়েও সরকার বাজেট প্রস্তাব করেছে। শ্রীলঙ্কা বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত অর্থনীতির মধ্যে অন্যতম হয়েই রয়ে গিয়েছে, যেখানে অ-বাণিজ্যযোগ্য খাতের একটি সুবিশাল অংশ রয়েছে। অ-শুল্ক আমদানি কর পর্যায় ক্রমে প্রত্যাহার করা হবে। এর ফলে রাজস্বের হ্রাস ঘটলেও তা কিন্তু আখেরে উৎপাদনে সাহায্য করবে কারণ আমদানির ৮০ শতাংশই মধ্যবর্তী উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনী পণ্য। সীমান্ত ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলির জন্য একটি একক জানালা স্থাপন করতে হবে। শুল্ক আইনের আধুনিকীকরণ এবং নতুন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি যথেষ্ট ইতিবাচক অগ্রগতি। রাস্তা এবং নগর উন্নয়নে বিস্ময়কর ৩৭৫ বিলিয়ন ভারতীয় টাকার মূলধন ব্যয়ের উপরও একটি বৃহত্তর মনোযোগ দেওয়া হয়েছে, যা শ্রীলঙ্কার অবকাঠামোগত ঘাটতিগুলি সমাধান করার চেষ্টা করবে। এটি আর্থিক ভারসাম্যের উপর চাপ সৃষ্টি করলেও সরকার এটিকে সঠিক পরিকাঠামোর সঙ্গে বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে করছে।

 

রাস্তা এবং নগর উন্নয়নে বিস্ময়কর ৩৭৫ বিলিয়ন ভারতীয় টাকার মূলধন ব্যয়ের উপরও একটি বৃহত্তর মনোযোগ দেওয়া হয়েছে, যা শ্রীলঙ্কার অবকাঠামোগত ঘাটতিগুলি সমাধান করার চেষ্টা করবে।

 

সরকার নতুন রাষ্ট্রীয় ও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছে এবং মানব পুঁজিকে উন্নীত করার জন্য সুদমুক্ত ছাত্র ঋণের বিকল্পের উপর নজর দিয়েছে। এর অর্থ হল অনেক শিক্ষার্থী রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থার বাইরে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে

 

বাজেট সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা

এই বাজেটে অবশ্য বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতাও বিদ্যমান। এ কথা সত্যি যে, সরকারের জন্য খুবই কঠিন অবস্থান থেকে এই বাজেট তৈরি করা হয়েছে। শ্রীলঙ্কায় বসবাসকারী দরিদ্রের সংখ্যা ২০১৯ সালে মিলিয়ন থেকে বেড়ে এখন ৭ মিলিয়ন হয়েছে। ২০২২ সালে অর্থনীতি ৭.৮ শতাংশ এবং ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে ৭.৯ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছিল মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এলেও গত বছরের উচ্চ মূল্যস্ফীতি ৭০ শতাংশ ইতিমধ্যেই শ্রীলঙ্কার ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করেছে

এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আইএমএফ কর্মসূচিটি মূলত একটি রাজস্বভিত্তিক রাজস্ব সমন্বিতকরণের উপরেই জোর দিয়েছে। কারণ শ্রীলঙ্কায় বিশ্বের সর্বনিম্ন সরকারি রাজস্ব জিডিপি অনুপাত রয়েছে। যেহেতু কর রাজস্বের প্রায় ৬০ শতাংশ পণ্য ও পরিষেবা কর থেকে আসে, তাই অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়ে পড়ার কারণে প্রয়োজনীয় রাজস্ব বৃদ্ধির কাজটি বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে। সরকার বাজেটের হাত ধরে বছরে ৪৭ শতাংশ কর বৃদ্ধির আশা করলেও গত বছরের তুলনায় একমাত্র বড় করের পরিবর্তন হল মূল্য সংযোজন করের হার ১৫ শতাংশ থেকে ১৮ শতাংশে বৃদ্ধি করা। এটি অবশ্যই একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে। কারণ ২০০০ সাল থেকে শ্রীলঙ্কা তার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি।

গত ২৩ বছর ধরে শ্রীলঙ্কা তার বাজেটে নির্ধারিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। শ্রীলঙ্কা সরকার ২০২৪ সালের বাজেটের হাত ধরে ৪৫ শতাংশ রাজস্ব বাড়ানোর লক্ষ্য ধারণ করলেও ২০২৩ সালের প্রথম মাসে রাজস্বের পরিমাণ ২৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এই অক্ষমতাও আইএমএফ থেকে শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ধাপে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্বের একটি প্রধান কারণ

 

এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আইএমএফ কর্মসূচিটি মূলত একটি রাজস্বভিত্তিক রাজস্ব সমন্বিতকরণের উপরেই জোর দিয়েছে। কারণ শ্রীলঙ্কায় বিশ্বের সর্বনিম্ন সরকারি রাজস্ব জিডিপি অনুপাত রয়েছে।

 

সরকারকে আরও রাজস্ব বৃদ্ধি করতে ভ্যাটের ভিত্তি বাড়াতে হবে বা ভ্যাট থ্রেশহোল্ড কমাতে হবে। ২২ মিলিয়ন জনসংখ্যাসম্পন্ন একটি দেশে তিন লক্ষের কম মানুষের ব্যক্তিগত আয়কর ফাইল রয়েছে এবং সেখান থেকে ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী ষাট হাজারেরও কম মানুষ আয়কর প্রদান করেছে। বাজেটে ব্যক্তিগত আয়করের ভিত্তি বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। একটি ব্যাঙ্ক কারেন্ট অ্যাকাউন্ট খুলতে বা গাড়ির বার্ষিক লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করার জন্য একটি ব্যক্তিগত আয়কর নম্বর প্রয়োজন। সরকার এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে করের ভিত্তি বৃদ্ধি করতে পারবে বলে আশা করছে।

কিন্তু সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল বাস্তবায়ন ও দায়বদ্ধতা। আইএমএফ বৃহত্তর আর্থিক স্বচ্ছতাকেও প্রয়োজনীয় বলে অভিহিত করেছে। ভেরাইট রিসার্চ অনুসারে, ৯৭ শতাংশ তহবিল ব্যবহার করা প্রস্তাবগুলির অগ্রগতি এখনও অজানা। বাস্তবায়নের অভাব একটি বৃহত্তর উদ্বেগের বিষয়। কারণ কিছু প্রস্তাব অতীতে নানাবিধ বাজেটে থাকলেও কখনও বাস্তবায়িত হয়নি। তাই এই প্রস্তাবগুলি বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা কতটা, তা নিয়ে নানাবিধ প্রশ্ন উঠেছে।

 

সামনের পথ

অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য শ্রীলঙ্কাকে দীর্ঘ পথ হাঁটতে হবে। বর্তমানে সরকারি ঋণ জিডিপি-১২৮ শতাংশ জুড়ে রয়েছে এবং আইএমএফ-এর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ২০৩২ সালের মধ্যে শ্রীলঙ্কাকে এই পরিমাণ কমিয়ে ৯৫ শতাংশে নিয়ে আসতে হবে। চ্যালেঞ্জটি রাজস্ব সংগ্রহের মধ্যে আটকে রয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার সামনের পথটি নিঃসন্দেহে দুরূহ। আর্থিক স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা এবং বাস্তবায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বেসরকারিকরণ এবং বর্ধিত মূলধন ব্যয় উন্নত করার উপর মনোযোগ শ্রীলঙ্কার দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অবশ্যই ইতিবাচকআসন্ন নির্বাচন এবং সেই সংক্রান্ত রাজনীতির উপর অনেক কিছু নির্ভর করে, যা শ্রীলঙ্কার সামনের পথ নির্ধারণ করবে কারণ দ্বীপদেশটি এই মুহূর্তে এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

 


তালাল রফি একজন অর্থনীতিবিদ এবং ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বিশেষজ্ঞ সদস্য।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.