বর্তমান অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বেশিরভাগ বাজেট ঘোষণায় শক্তি, বিশেষত শক্তি অতিক্রমণ (ট্রানজিশন), একটি ধারাবাহিক কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে থেকেছে। এ বছরও ‘শক্তি নিরাপত্তা’ ছিল বাজেটে চিহ্নিত নয়টি অগ্রাধিকার ক্ষেত্রের মধ্যে একটি। এটি গত বছরের থেকে কিছুটা ভিন্ন, যেখানে সবুজ শক্তি 'সবুজ বৃদ্ধির' বিস্তৃত স্তম্ভের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল। সবুজ থেকে এবার নিরাপত্তার দিকে মনোযোগ সরিয়ে আনা এই বাজেটের স্বয়ংসম্পূর্ণতার উপর বৃহত্তর মনোযোগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই বাজেটে জ্বালানি সংক্রান্ত ঘোষণাগুলো কিছু আকর্ষণীয় প্রবণতার দিকে ইঙ্গিত করে।
ভারত একটি সরকারি শক্তি অতিক্রমণ পথ (এনার্জি ট্রানজিশন পাথওয়ে) তৈরি করবে বলে ঘোষণাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগমন। যদি এই পথটি ভারতের শক্তির ভবিষ্যতের জন্য একটি স্থিতিশীল দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে, তাহলে এটি সবুজ শক্তি পরিসরে আগ্রহী ডেভেলপার ও বিনিয়োগকারীদের গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিতে পারে।
ভারত একটি সরকারি শক্তি অতিক্রমণ পথ (এনার্জি ট্রানজিশন পাথওয়ে) তৈরি করবে বলে ঘোষণাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগমন। যদি এই পথটি ভারতের শক্তির ভবিষ্যতের জন্য একটি স্থিতিশীল দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে, তাহলে এটি সবুজ শক্তি পরিসরে আগ্রহী ডেভেলপার ও বিনিয়োগকারীদের গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিতে পারে। জলবায়ু অর্থায়নের জন্য একটি সরকারি শ্রেণিবিন্যাস ঘোষণার পাশাপাশি, এটি ভারতে বৃহৎ আকারের বাহ্যিক সবুজ পুঁজির প্রবাহকে বাধা দেওয়ার মতো কিছু অনুভূত ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। যাই হোক, আগের শক্তি পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতিগুলির মতো, চ্যালেঞ্জ হবে প্রাপ্তির সুযোগ ও প্রাপ্তিযোগ্যতার মধ্যে টেকসই ভারসাম্য বজায় রাখা।
শক্তি সঞ্চয় ও পারমাণবিক শক্তি অগ্রাধিকার হিসাবে উঠে এসেছে
এই বাজেটের ঘোষণাগুলি বর্ধিত নীতি সমর্থন পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট প্রযুক্তিগুলিকে তুলে ধরে, যেখানে শক্তি সঞ্চয়স্থান (এনার্জি স্টোরেজ) একটি স্পষ্ট অগ্রাধিকার হিসাবে উঠে এসেছে। বাজেট বক্তৃতায় পাম্পড এনার্জি স্টোরেজ ত্বরান্বিত করার জন্য একটি নতুন নীতির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, যা ভারতে একটি নবজাত প্রযুক্তি। এতে অভিকর্ষের নীতিটি একটি জলাধার থেকে জল ছেড়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে ব্যবহৃত হয় এবং প্রাথমিকভাবে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস ব্যবহার করে পাম্প করা হয়৷ প্রায় ১০৩ গিগাওয়াট ক্ষমতাসহ পাম্পড স্টোরেজ দিতে পারে ব্যাটারি স্টোরেজের একটি সাশ্রয়ী বিকল্প, যা বিদ্যুতের গ্রিডে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির বৃহত্তর একীকরণ সক্ষম করে। ব্যাটারি শক্তি সঞ্চয় ব্যবস্থার বিকাশের জন্য কার্যকর ফাঁক পূরণে প্রথমবার সংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে, এবং ৯৬ কোটি ভারতীয় রুপি বরাদ্দ করে ব্যাটারি স্টোরেজ ক্ষমতা গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।
দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য ঘোষণাটি পারমাণবিক শক্তি সম্পর্কিত। তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর ভাষণে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারতের ভবিষ্যৎ শক্তির মিশ্রণে পারমাণবিক শক্তি 'খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা' পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তা ছাড়া, ছোট মডিউলার চুল্লি স্থাপনের পাশাপাশি নতুন ছোট মডিউলার পারমাণবিক প্রযুক্তির গবেষণা ও উন্নয়নে (আরঅ্যান্ডডি) সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ঘোষণার মাধ্যমে পারমাণবিক শক্তিতে বেসরকারি ক্ষেত্রকে নিযুক্ত করার নতুন ইচ্ছাও স্পষ্ট হয়েছে। গত বছর, ইউএনএফসিসিসি-তে ভারতের জমা দেওয়া দীর্ঘমেয়াদি স্বল্প-নির্গমন উন্নয়ন কৌশলে (এলটি- এলইডিএস) আগামী ১০ বছরে তিনগুণ পারমাণবিক শক্তির ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতিও রয়েছে। তাই মনে হচ্ছে, পারমাণবিক শক্তি এখন দৃঢ়ভাবে শক্তি অতিক্রমণের অ্যাজেন্ডায় রয়েছে।
দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য ঘোষণাটি পারমাণবিক শক্তি সম্পর্কিত। তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর ভাষণে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারতের ভবিষ্যৎ শক্তির মিশ্রণে পারমাণবিক শক্তি 'খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা' পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পারমাণবিক ও শক্তি সঞ্চয় প্রযুক্তি, উভয়েরই লক্ষ্য ভারতের শক্তি অতিক্রমণের একটি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা, যা হল পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যহত প্রকৃতি (ইন্টারমিটেন্ট নেচার)। ভারতে স্থাপিত ক্ষমতার ৪৫ শতাংশ পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি হওয়া সত্ত্বেও, এটি বর্তমানে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২৫ শতাংশের মতো অবদান রাখে। স্টোরেজ সমাধানগুলি গ্রিড অপারেটরদের গ্রিডে সৌর ও বায়ুশক্তিকে একীভূত করার ক্ষেত্রে আরও নমনীয়তা প্রদান করে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়াবে। এদিকে, বেসলোড শক্তির উৎস হিসাবে পারমাণবিক শক্তি কয়লাভিত্তিক তাপশক্তিকে প্রতিস্থাপিত করতে পারে, বিশেষত যখন সৌর বা বায়ুশক্তি অনুপলব্ধ হয়। তাই মনে হচ্ছে, শক্তির অতিক্রমণের পদ্ধতিটি কিছু পরিমাণে পরিবর্তিত হয়েছে, এবং শুধুমাত্র পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির স্থাপিত ক্ষমতা বাড়ানোর পরিবর্তে এখন এই শক্তির উৎসগুলি যাতে ভবিষ্যতে দেশের শক্তির চাহিদা আরও বেশি করে পূরণ করতে পারে তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
যাই হোক, পারমাণবিক শক্তি বা স্টোরেজ সলিউশন (পাম্প এবং ব্যাটারি) উভয়ের বৃদ্ধিই দুটি মূল কারণের উপর নির্ভর করবে। প্রথমত, স্থানীয় উৎপাদনের জন্য প্রযুক্তির প্রাপ্তিযোগ্যতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সরকারের উল্লেখযোগ্য বিদেশি নির্ভরতার পথে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। দ্বিতীয়ত, বেসরকারি ক্ষেত্রের বৃহত্তর সম্পৃক্ততার জন্য সঠিক পরিস্থিতি তৈরি করা, যা এই সমাধানগুলিকে বড় আয়তনে ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হবে। এখন দেখার বিষয় যে এই বাজেটের ভরগতি বাস্তবে বছরজুড়ে কার্যকর নীতিতে রূপান্তরিত হতে পারে কি না।
শক্তি অতিক্রমণের সঙ্গে জড়িত মন্ত্রকগুলির জন্য বাজেট বরাদ্দ
বিভিন্ন মন্ত্রকের জন্য বাজেট বরাদ্দ কিছু আকর্ষণীয় প্রবণতা প্রকাশ করে। বৈদ্যুতিক যানবাহন (ইভি), আগে যা এই সরকারের জন্য একটি প্রধান অগ্রাধিকার ক্ষেত্র ছিল, এবারের বাজেট বক্তৃতায় তার উল্লেখই নেই। অনেকেই ফেম প্রকল্পের পরবর্তী ধাপের বিষয়ে একটি ঘোষণা প্রত্যাশা করেছিলেন, কারণ বর্তমান প্রকল্পটি এই বছর শেষ হচ্ছে৷ কিন্তু বাজেট বক্তৃতায় ফেম-কে সম্বোধন করা হয়নি। যদিও ফেম-এর জন্য বাজেটে এখনও ২,৬৭১ কোটি ভারতীয় রুপি বরাদ্দ রয়েছে, তা গত বছরের ৪,৮০৭ কোটি ভারতীয় রুপি বরাদ্দের চেয়ে অনেক কম। অন্যদিকে, অটোমোবাইল ও উপাদানগুলির উপর পিএলআই প্রকল্পের জন্য ও ব্যাটারি স্টোরেজের জন্য বরাদ্দ অনেক বেড়ে যথাক্রমে ৩,৫০০ কোটি ভারতীয় রুপি ও ২৫০ কোটি ভারতীয় রুপি হয়েছে৷ এটি ইভির জন্য গুরুত্বপূর্ণ লিথিয়াম ও অন্য খনিজগুলির উপর শুল্ক সহজ করার সঙ্গে মিলিত ফেম প্রকল্পের বিপরীতে, যা চাহিদা ভর্তুকিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছিল, ইভিগুলির সরবরাহের দিকে একটি শক্তিশালী মনোযোগ নির্দেশ করে।
ইভি ক্ষেত্রের জন্য এখন বড় প্রশ্ন হল ইভি ক্রয়ের উপর ভর্তুকি হ্রাসের প্রভাব৷ সরকার সম্ভবত বিশ্বাস করে যে কিছু অংশে, বিশেষ করে দুই ও তিন চাকার গাড়িতে, ইভিগুলি ইতিমধ্যেই তাদের জীবাশ্ম জ্বালানির সমতুল্য হিসাবে সাশ্রয়ী মূল্যের। যাই হোক, এই অনুমানটি অকালপ্রসূত হতে পারে, কারণ এমন কোনও প্রমাণ নেই যে ভোক্তারা বর্তমানে খরচ সমতা উপলব্ধি করে। প্রকৃতপক্ষে, গত বছর যখন ফেম ভর্তুকি হ্রাস করা হয়েছিল, তখন সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য হলেও ইভি বিক্রিতে একটি বড় হ্রাস লক্ষ্য করা গিয়েছিল। সরকারকে অবশ্যই প্রণোদনার দাবিতে নিজের দৃষ্টিভঙ্গিতে নমনীয় হতে হবে, কারণ ইভি বিক্রিতে একটি বড় হ্রাসও শেষ পর্যন্ত পিএলআই প্রকল্পের সাফল্যকে প্রভাবিত করবে। তা ছাড়া, মাঝারি ও ভারী মালবাহী যানবাহনের ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক বিকল্পগুলির দাম এখনও ডিজেল চালিতগুলির তুলনায় অনেক বেশি। সরকারকে এই অংশগুলির জন্য চাহিদা প্রণোদনা সম্পর্কেও ভাবতে হবে, এবং সম্ভবত বর্তমান বাজেটের বরাদ্দ পর্যাপ্ত নাও হতে পারে।
ইভি ক্ষেত্রের জন্য এখন বড় প্রশ্ন হল ইভি ক্রয়ের উপর ভর্তুকি হ্রাসের প্রভাব৷ সরকার সম্ভবত বিশ্বাস করে যে কিছু অংশে, বিশেষ করে দুই ও তিন চাকার গাড়িতে, ইভিগুলি ইতিমধ্যেই তাদের জীবাশ্ম জ্বালানির সমতুল্য হিসাবে সাশ্রয়ী মূল্যের।
পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের জন্য বরাদ্দ থেকে কিছু আকর্ষণীয় অন্তর্দৃষ্টিও সংগ্রহ করা যেতে পারে। সংকুচিত (কমপ্রেসড) বায়োগ্যাস এই বছর একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখেছে, কারণ শহুরে গ্যাস বিতরণ নেটওয়ার্কগুলিতে সংকুচিত বায়োগ্যাস ইনজেকশনের জন্য পাইপলাইন পরিকাঠামো বিকাশে সরকার প্রথমবার ৪৯৮ কোটি ভারতীয় রুপি বরাদ্দ করেছে৷ সংকুচিত বায়োগ্যাস সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাসের একটি কার্যকর বিকল্প হিসাবে কাজ করতে পারে, আর তার পাশাপাশি মূল্য তৈরি করে, এবং কৃষি ও পৌরসভার বর্জ্য থেকে দূষণ কমাতে পারে।
উপরন্তু, বায়োমাস সংগ্রহের উন্নতির একটি প্রকল্পের জন্য ১৫০ কোটি ভারতীয় রুপি বরাদ্দ করা হয়েছে। এই দীর্ঘপ্রতীক্ষিত পদক্ষেপটি কৃষি বর্জ্য থেকে প্রাপ্ত জৈব জ্বালানির জন্য ফিডস্টকের প্রাপ্যতাকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করতে পারে, এবং এমন একটি জৈব জ্বালানি পথকে সমর্থন করে যা খাদ্যশস্যের উপর নির্ভরতা এড়ায় এবং খাদ্য নিরাপত্তা উদ্বেগ প্রশমিত করে।
এছাড়াও প্রথমবারের মতো ৩৩২ কোটি ভারতীয় রুপি এবং ৩৮৮ কোটি ভারতীয় রুপি বরাদ্দ করা হয়েছে যথাক্রমে মিশন অন্বেষণ এবং ভারতের বর্ধিত কন্টিনেন্টাল শেল্ফ অঞ্চলগুলির মূল্যায়নের জন্য। এটি আগামী দশকে ব্যবহার বৃদ্ধির প্রত্যাশায় ভারতের বিদ্যমান তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ সম্প্রসারণের জন্য একটি বর্ধিত জরুরি তৎপরতার ইঙ্গিতবাহী।
সামগ্রিকভাবে, এই বাজেট প্রস্তাব করে যে এই বছরটি ভারতের শক্তি অতিক্রমণের জন্য নতুন অগ্রাধিকার ও বিদ্যমানগুলির পুনর্নির্মাণ নিয়ে আসবে। শক্তি সঞ্চয়স্থান ও পারমাণবিক শক্তির উপর নজর প্রশংসনীয়, এবং তার লক্ষ্য ভারতে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় ব্যবধানকে পূরণ করা। বর্জ্যভিত্তিক জৈব জ্বালানির উপর গুরুত্ব আরোপও স্বাগত, এবং সম্ভবত বাজেট বক্তৃতায় এর আরও বেশি প্রাধান্য পাওয়া উচিত ছিল। যাই হোক, এই বছরটি ভারতের ইভি ক্ষেত্রের জন্য একটি নির্ধারক বছর হবে, এবং সরকারকে অবশ্যই নমনীয় হতে হবে যাতে এই ক্ষেত্রটির ভরবেগ নষ্ট না হয়।
যাঁরা ভারতে শক্তি ক্ষেত্রটিতে আগ্রহী তাঁদের জন্য এই বছরটি খুবই আকর্ষণীয় হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
প্রমিত মুখার্জি অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.