Author : Soumya Bhowmick

Published on Aug 16, 2024 Updated 0 Hours ago

২০২৪ সালের বাজেট অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক উভয় অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ভারতের মানব পুঁজি বাড়ানোর জন্য একটি ব্যাপক পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে

বাজেট @ ২০২৪: ভারতের যুব পুঁজি উন্মুক্ত করা

আনুমানিক ১.৪ বিলিয়ন জনসংখ্যার সঙ্গে ভারত ২০২৩ সালে চিনকে ছাড়িয়ে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হয়েছে। এর মধ্যে মোটের উপর ৬৫ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ৬৪ বছরের মধ্যে, যা এক বৃহৎ কর্মক্ষম জনসংখ্যার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে ভারতকে এক অনন্য অবস্থান দিয়েছে। এই জনসংখ্যাগত সুবিধা থাকা সত্ত্বেও ভারত বেকারত্বের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে তার যুবকদের মধ্যে, উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এই সমস্যাটির সমাধানের জন্য চাকরি সৃষ্টির লক্ষ্যে নীতিগত ব্যবস্থার একটি স্বতন্ত্র সেট প্রয়োজন। একই সঙ্গে, কর্মরত জনসংখ্যাকে আরও বেশি উৎপাদনশীল করে তোলার জন্য তাদের পর্যাপ্ত সংস্থান, প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রয়োজন।


কেন্দ্রীয় বাজেট ২০২৪ থেকে প্রত্যাশা ছিল প্রাথমিকভাবে ভারতের তরুণ জনসংখ্যার এই উল্লেখযোগ্য অনুপাতকে, যা ভারতের বৃদ্ধির কাহিনীকে সংজ্ঞায়িত করে, তার দিকে নজর দেওয়া হবে।



কেন্দ্রীয় বাজেট ২০২৪ থেকে প্রত্যাশা ছিল প্রাথমিকভাবে ভারতের তরুণ জনসংখ্যার এই উল্লেখযোগ্য অনুপাতকে, যা ভারতের বৃদ্ধির কাহিনীকে সংজ্ঞায়িত করে, তার দিকে নজর দেওয়া হবে। তুলনামূলকভাবে অল্পবয়সী জনসংখ্যার (মিডিয়ান বয়স ২৮.৪ বছর) ভারত শুধুমাত্র কর্মশক্তির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জন করে না, বরং একটি তরুণ জনসংখ্যার উপভোগের শক্তি উন্মোচন করার সুযোগও তার রয়েছে, যা ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে চালিত করে।

চিত্র ১: মোট জনসংখ্যা থেকে কর্মক্ষম বয়সের জনসংখ্যার অনুপাত – ভারত ও চিন




সূত্র:
ইওয়াই ইন্ডিয়া

প্রকৃতপক্ষে, ভারতীয় উপভোক্তারা, বিশেষ করে যুবকেরা, ঋণ-চালিত উপভোগকে ক্রমবর্ধমানভাবে গ্রহণ করছে, যা নির্ধারিত বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক থেকে ক্রমবর্ধমান ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়।
২০১৬-১৭ থেকে ২০২১-২২,  পর্যন্ত, এই ব্যাঙ্কগুলির থেকে বকেয়া ব্যক্তিগত ঋণ দ্বিগুণেরও বেশি, ১৬.২ ট্রিলিয়ন ভারতীয় রুপি থেকে বেড়ে ৩৩.৮৫ ট্রিলিয়ন ভারতীয় রুপি, হয়েছে৷ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ও বিনিয়োগের প্রসার থেকে শুরু করে ডিজিটাল অর্থপ্রদানের পরিকাঠামোর উন্নয়ন পর্যন্ত আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য সরকারের জোরালো চাপের দ্বারা এই প্রবণতাকে শক্তিশালী করা হয়েছে। আর্থিক পরিষেবা ক্ষেত্র এই সমাধানগুলিকে বিকশিত ও প্রসারিত করার সাথে সাথে পরিবারের ঋণের প্রাপ্যতা সম্ভবত বৃদ্ধি পাবে, যা উপভোগ বৃদ্ধিকে আরও চালিত করবে।

যুব পুঁজি বৃদ্ধির দিকে

অর্থনৈতিক তত্ত্বগুলি এ কথাই তুলে ধরে যে একটি অর্থনীতিতে শ্রম বাজারের পরিমাপ করা হয় নিযুক্ত ব্যক্তির সংখ্যা, শ্রমের দিন বা ঘণ্টার মাধ্যমে, এবং তারপর মজুরির হার দ্বারা গুণিত হয়। কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা প্রায়শই উপেক্ষা করা হয় তা হল, শ্রম সরবরাহ সহজাতভাবে প্রোডাকটিভিটি কোশেন্ট (‌উৎপাদন মূল্যকে ইনপুট বা উপকরণ মূল্য দিয়ে ভাগ করলে যা পাওয়া যায়)‌-‌এর সঙ্গে যুক্ত — যা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য-‌সহ বিভিন্ন কারণের পরিণতি। যদিও সংখ্যাগুলি ভারতের জন্য চিত্তাকর্ষক, তবে শ্রম উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন রয়েছে। এই বছরের ভারতীয় সাধারণ নির্বাচনের পর ভারতের বাজেট ২০২৪-এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।


অর্থনৈতিক তত্ত্বগুলি এ কথাই তুলে ধরে যে একটি অর্থনীতিতে শ্রম বাজারের পরিমাপ করা হয় নিযুক্ত ব্যক্তির সংখ্যা, শ্রমের দিন বা ঘণ্টার মাধ্যমে, এবং তারপর মজুরির হার দ্বারা গুণিত হয়। 



এর মূল উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে একটি হিসাবে এই বাজেটের লক্ষ্য ভারতের মানব পুঁজিকে শক্তিশালী করা, যার ফলে দেশের বৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য আরও স্পষ্ট পথ তৈরি করা যাবে। মানব পুঁজি বাড়ানোর সঙ্গে শুধুমাত্র দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধিই নয়, বরং তাদের উৎপাদনশীলতা বিশ্বমানে তুলে নিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করাও জড়িত। এর জন্য শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও সুস্থতার উপর কৌশলগত মনোযোগ প্রয়োজন।

সারণি ১: ২০২৪ সালের বাজেটে মূল উদ্যোগ
 

উদ্যোগ

সক্রিয়তা পরিকল্পনা

উৎপাদনশীলতার উপর প্রভাব

সংশ্লিষ্ট পরিসরে বিদ্যমান প্রকল্প

 অনুমিত চ্যালেঞ্জ

দক্ষতায়্ণ উদ্যোগ

শীর্ষ ভারতীয় কোম্পানিগুলিতে ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জনে ১০ মিলিয়ন যুবাকে সহায়তা করার পরিকল্পনা।

কর্মক্ষম বয়সের জনসংখ্যার নিয়োগযোগ্যতা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা বাড়ায়, অ্যাকাডেমিয়া ও শিল্পের মধ্যে ব্যবধান দূর করে।

প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা (পিএমকেভিওয়াই), জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন মিশন

প্রশিক্ষণের মান নিশ্চিত করা এবং শিল্পের চাহিদার সঙ্গে ইন্টার্নশিপ মেলানো; কোম্পানি ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মধ্যে বড় মাপের সমন্বয় পরিচালনা করা।


শিক্ষা ও কর্মসংস্থান

যুব বেকারত্ব মোকাবিলায় শিক্ষার পরিকাঠামো বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মনোযোগ ।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আধুনি্কীকরণ করে, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রবর্তন করে, এবং শিল্পের প্রয়োজনের সঙ্গে পাঠ্যক্রম সারিবদ্ধ করে যুব বেকারত্ব হ্রাস করে।

সমগ্র শিক্ষা, রাষ্ট্রীয় উচ্চতর শিক্ষা অভিযান (রুসা)

দ্রুত পরিবর্তনশীল শিল্প চাহিদার সঙ্গে শিক্ষার সমন্বয় করা; গ্রামীণ এলাকায় পরিকাঠামোগত ও সম্পদের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করা।

আর্থিক সহায়তা

যুবকদের মধ্যে উদ্যোক্তা সত্তাকে সমর্থন এবং আর্থিক সাক্ষরতা উন্নত করার ব্যবস্থা।

উদ্ভাবন ও স্বনির্ভরতাকে উৎসাহিত করে, তরুণ উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করে, কাজ সৃষ্টিতে উৎসাহিত করে।

স্টার্টআপ ইন্ডিয়া, মুদ্রা যোজনা

সমস্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোক্তার জন্য তহবিলের প্রাপ্তিযোগ্যতা; উদ্যোক্তা সুযোগ এবং সহায়তা ব্যবস্থায় আঞ্চলিক বৈষম্য মোকাবিলা করা।



পরিকাঠামো উন্নয়ন

সংযোগ ও ডিজিটাল দক্ষতার সুযোগ বাড়াতে ডিজিটাল পরিকাঠামোতে বিনিয়োগ।


গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেট প্রাপ্তিযোগ্যতা প্রসারিত করে, ডিজিটাল সাক্ষরতার উন্নতি করে, এবং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে প্রযুক্তিকে একীভূত করে।

ভারতনেট, ডিজিটাল ইন্ডিয়া

প্রত্যন্ত অঞ্চলে সংযোগ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা; ব্যাপক ডিজিটাল সাক্ষরতা এবং ডিজিটাল সরঞ্জামগুলি ব্যবহারের সুযোগ নিশ্চিত করা।

 

স্বাস্থ্য ও মঙ্গল

যুবাদের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা উন্নত করার ব্যবস্থা।

স্বাস্থ্যসেবা পরিকাঠামো উন্নত করে স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলিকে আরও প্রাপ্তিযোগ্য করে তোলে এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি সক্রিয়ভাবে মোকাবিলা করে, যা একটি স্বাস্থ্যকর কর্মশক্তির দিকে চালিত করে।

আয়ুষ্মান ভারত, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য প্রোগ্রাম (এনএমএইচপি)

স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবাগুলির প্রাপ্তিযোগ্যতা ও ক্রয়ক্ষমতা নিশ্চিত করা; মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির সঙ্গে যুক্ত কলঙ্কের সমাধান করা।

 সূত্র: লেখকের নিজস্ব, বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য

(ডিসক্লেমার: জিপিটি-৪ও ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের সংক্ষিপ্তসার তৈরিতে সাহায্য করার জন্য। তারপর তথ্যটি সম্পাদনা করা হয়েছে এবং লেখকের দ্বারা সংজ্ঞায়িত প্রাসঙ্গিক কলাম বিভাগে রাখা হয়েছে।)

 

শ্রম গতিশীলতা এবং বিশ্বব্যাপী দৃষ্টিভঙ্গি

বৈশ্বিক কর্মশক্তি বিকশিত হওয়ার সময়
অনুমানগুলি ইঙ্গিত দেয় যে নিম্ন আয়ের দেশগুলিতে ২০৫০ সালের মধ্যে দুই বিলিয়ন নতুন কর্মক্ষম-বয়সী মানুষের আগমন ঘটবে। শ্রম গতিশীলতা এই সম্ভাব্য শ্রমশক্তি এবং সম্ভাব্য নিয়োগকর্তাদের মধ্যে ব্যবধান পূরণ করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া হিসাবে আবির্ভূত হয়, এবং এইভাবে বিশ্বব্যাপী ন্যায্যতা ও উৎপাদনশীলতা উন্নত করে। শ্রমের গতিশীলতার সুবিধা উল্লেখযোগ্যভাবে দারিদ্র্য দূর করতে পারে, কারণ ধনী দেশে গিয়ে অভিবাসী শ্রমিকেরা তাদের আয় ছয় থেকে ১৫ গুণ বৃদ্ধি করতে পারে।


যাই হোক, ভারতের এই গতিশীলতা থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য দেশটিকে অবশ্যই তার শ্রমশক্তির গুণমানকে বৈশ্বিক মানে তুলে নিয়ে যেতে হবে। এই বিবর্তনটি পারস্পরিকভাবে উপকারী ফলাফল, যেমন আয়োজক দেশগুলিতে উচ্চ উৎপাদন এবং ভারতে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। জনসাধারণের নেতিবাচক ধারণা এবং শ্রমের চাহিদা ও সরবরাহের অসঙ্গতির মতো বাধা অতিক্রম করে প্রয়োজনীয় আয়তন কার্যকরভাবে পরিচালনা করার জন্য বর্তমান শ্রম গতিশীলতা ব্যবস্থাগুলিকে সংশোধন করতে হবে।


যাই হোক, ভারতের এই গতিশীলতা থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য দেশটিকে অবশ্যই তার শ্রমশক্তির গুণমানকে বৈশ্বিক মানে তুলে নিয়ে যেতে হবে। এই বিবর্তনটি পারস্পরিকভাবে উপকারী ফলাফল, যেমন আয়োজক দেশগুলিতে উচ্চ উৎপাদন এবং ভারতে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।



"বিশ্ব গুরু" (বৈশ্বিক শিক্ষক) থেকে "বিশ্ববন্ধু" (বৈশ্বিক অংশীদার)-‌তে ভারতের রূপান্তর শ্রমবাজারের চাহিদা মোকাবিলায় অন্যান্য দেশের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করার অভিপ্রায়কে নির্দেশ করে। বিশ্বব্যাপী চাহিদার সঙ্গে তার কর্মশক্তি উন্নয়ন কৌশলগুলি সারিবদ্ধ করে, ভারত আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ২০২৪ সালের বাজেটে বর্ণিত উদ্যোগগুলি এক্ষেত্রে সহায়ক। দক্ষতা, শিক্ষা, আর্থিক সহায়তা, পরিকাঠামো উন্নয়ন, এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার উপর বাজেটের মনোযোগের লক্ষ্য এমন একটি কর্মী বাহিনী তৈরি করা যা শুধু বড়ই নয়, অত্যন্ত দক্ষ ও উৎপাদনশীল, যা বৈশ্বিক মান ও চাহিদা মেটাতে সক্ষম।

উপসংহারে, বাজেট ২০২৪ অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক উভয় অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ভারতের মানব পুঁজি বাড়ানোর জন্য একটি ব্যাপক পরিকল্পনা উপস্থাপন করে। এই কৌশলগত পদ্ধতির লক্ষ্য শুধুমাত্র ভারতের জনসংখ্যাগত সুবিধাকে কাজে লাগানোই নয়, বরং দেশটিকে বিশ্ব শ্রমবাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে স্থান দেওয়া এবং স্থিতিশীল অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করা।



সৌম্য ভৌমিক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সহযোগী ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.