এটি ‘দ্য চায়না ক্রনিকলস’ সিরিজের ১৪৪তম নিবন্ধ।
চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এর অধীনে একটি ‘ফ্ল্যাগশিপ’ প্রকল্প চিন–পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি)–এর সূচনার ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বেজিং ও ইসলামাবাদের বিদেশমন্ত্রীদের সঙ্গে মিলিতভাবে তালিবান শাসিত ইসলামিক এমিরেট অফ আফগানিস্তান (আইইএ)–এর ভারপ্রাপ্ত বিদেশমন্ত্রী মাওলাভি আমির খান মুত্তাকি ‘বিআরআই–এর অধীনে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং আফগানিস্তানে যৌথভাবে সিপিইসি সম্প্রসারণের ‘ প্রতিশ্রুতি ‘পুনর্ব্যক্ত’ করেছেন। ৬ মে ২০২৩–এ অনুষ্ঠিত পঞ্চম চিন–পাকিস্তান–আফগানিস্তান বিদেশমন্ত্রীদের সংলাপের সময় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। আফগানিস্তানে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এটি প্রথম এই ধরনের বৈঠক।
যদিও এমন নয় যে এই প্রথমবার এই ধরনের অভিপ্রায়ের ঘোষণা সর্বজনীনভাবে করা হয়েছে, ঘটনাটি এই প্রকল্পে কাবুলের অন্তর্ভুক্তি বিবেচনা করার পিছনে চিন ও পাকিস্তানের কৌশলগত বাধ্যবাধকতাগুলিকে তুলে ধরে। কাবুলের শাসকদের জন্য সিদ্ধান্তটি একটি স্বাগত উন্নয়ন কারণ তারা দেশে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সংগ্রাম করছে। কিছু ভারতীয় সূত্র আফগানিস্তানে প্রকল্পটি সম্প্রসারণের উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, এবং যুক্তি দেখিয়েছেন যে বেজিং পাকিস্তান ও আফগানিস্তান উভয়ের কাছ থেকে যে ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চায় তা পাওয়া কঠিন হবে। পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের জন্য এর ফলাফল যাই হোক না কেন, কাবুলের সম্ভাব্য অন্তর্ভুক্তি নয়াদিল্লির সার্বভৌমত্ব ও কৌশলগত উদ্বেগ বাড়াবে।
কিছু ভারতীয় সূত্র আফগানিস্তানে প্রকল্পটি সম্প্রসারণের উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, এবং যুক্তি দেখিয়েছেন যে বেজিং পাকিস্তান ও আফগানিস্তান উভয়ের কাছ থেকে যে ধরণের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চায় তা পাওয়া কঠিন হবে।
সিপিইসি–র রাজনীতি
২০১৩ সালে সিপিইসি ধারণার উন্মেষ এবং এর উচ্চাভিলাষী প্রকল্পগুলিকে পাকিস্তানের পাশাপাশি সমগ্র অঞ্চলে একটি গেম চেঞ্জার হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল। ইসলামাবাদের অর্থনৈতিক যন্ত্রণাগুলিকে রূপান্তরিত করা এবং চিন ও পাকিস্তানের মধ্যে ‘সব–আবহাওয়ার বন্ধুত্বের’ একটি সুনির্দিষ্ট প্রমাণ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা সম্পর্কে বিপুল আশা ও আকাঙ্ক্ষা ছিল। করিডোরটি ইতিমধ্যে বিদ্যমান কারাকোরাম মহাসড়ককে কাজে লাগানো এবং পাকিস্তানের স্বল্পোন্নত অঞ্চলে একে কেন্দ্র করে নতুন বাণিজ্যপথ তৈরি করার জন্য পরিকল্পিত হয়েছিল, যার মাধ্যমে চিনের পশ্চিমাঞ্চলীয় উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল জিনজিয়াংকে বালুচিস্তানের আরব সাগর উপকূলের সঙ্গে সংযুক্ত করা যেত। এর উদ্দেশ্য ছিল ইসলামাবাদে পরিকাঠামোগত ঘাটতি পূরণ করা এবং শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা।
দশ বছর পরে, বেজিং ও ইসলামাবাদ প্রকল্পটিকে ‘বিআরআই–এর উজ্জ্বল উদাহরণ’ হিসাবে বর্ণনা করলেও বাস্তবের মাটিতে কখনও এর চেয়ে বেশি অন্ধকার ছিল না। যদিও প্রকল্পের ধারণাটি আসার আগেও পাকিস্তানের অর্থনীতিতে কাঠামোগত সমস্যাগুলি ছিল, প্রকল্পের অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তাগুলি এর অসুবিধাগুলিকে আরও বাড়িয়ে তোলে, আর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় হ্রাস পেতে থাকে এবং চলতি খাতের ঘাটতি বাড়তে থাকে। সমস্ত প্রদেশে ন্যায়সঙ্গত উন্নয়ন নিশ্চিত করা দূরের কথা, প্রকল্পটি বালুচিস্তান প্রদেশে অসন্তোষ তৈরি করে, এবং স্থানীয়রা অর্থনৈতিক লভ্যাংশ থেকে তাদের বাদ দেওয়ার প্রতিবাদ জানাতে থাকে। অনেক বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী চিনা শ্রমিকদের এবং প্রকল্পগুলি সুরক্ষিত করার জন্য উপস্থিত পাকিস্তানি আধাসামরিক জওয়ানদের লক্ষ্য করে আক্রমণ শানাতে থাকে।
এই উদ্বেগগুলি সত্ত্বেও চিন ও পাকিস্তান উভয়েই অন্তত ২০১৭ সাল থেকে, যখন তিনটি দেশের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বিন্যাস প্রথম শুরু হয়েছিল, আফগানিস্তানের সিপিইসি–তে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে আলোচনা করেছে। কাবুলে যখন ঘানি সরকারের পতন ঘটে এবং তালিবান ক্ষমতা দখল করে, তখন পাকিস্তান সিপিইসি–কে দুই পক্ষের মধ্যে অর্থনৈতিক যোগাযোগের একটি প্রধান মাধ্যম হিসাবে বিবেচনা করতে থাকে। ২০২২ সালে মুত্তাকি তৎকালীন চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সঙ্গে তাঁর প্রথম বৈঠকে সিপিইসি–তে কাবুলের সম্ভাব্য অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে টুইট করেছিলেন। এমনকি মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তান থেকে চূড়ান্ত ভাবে প্রত্যাহারের কয়েক মাস আগে আফগানিস্তানে সিপিইসি–র সম্প্রসারণকে শান্তি অর্জন ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় সহায়তার উপায় হিসাবে দেখা হয়েছিল।
যদিও প্রকল্পের ধারণাটি আসার আগেও পাকিস্তানের অর্থনীতিতে কাঠামোগত সমস্যাগুলি ছিল, প্রকল্পের অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তাগুলি এর অসুবিধাগুলিকে আরও বাড়িয়ে তোলে, আর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় হ্রাস পেতে থাকে এবং চলতি খাতের ঘাটতি বাড়তে থাকে।
তালিবানের একটি জয়
আফগানিস্তান বাদাখশান থেকে জিনজিয়াং পর্যন্ত বিস্তৃত সংকীর্ণ ওয়াখান করিডোরের মাধ্যমে চিনের সঙ্গে ৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে। যদিও করিডোরটিতে তিনটি গিরিপথ রয়েছে, তাদের বিপজ্জনক ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আফগানিস্তানকে সরাসরি বিআরআই–তে অন্তর্ভুক্ত করা স্বল্প থেকে মাঝারি মেয়াদে অসম্ভব বলে মনে করা হয়। বিদ্যমান কারাকোরাম মহাসড়কের উন্নয়ন, যা খুঞ্জেরাব পাসের মধ্য দিয়ে পেশোয়ারকে কাবুলের সঙ্গে সংযুক্ত করে, কাবুলকে সিপিইসি এবং শেষ পর্যন্ত চিনের সঙ্গে সংযুক্ত করার একটি সম্ভাব্য পথ বলে মনে করা হয়।
নগদ অর্থ ও প্রভাবের অভাবে ভুগতে থাকা তালিবান পরিকাঠামো ও আফগান অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনে বিনিয়োগের যে কোনও সুযোগকে স্বাগত জানায়। চিনের সঙ্গে বাণিজ্যের মাত্রা বাড়ানোর জন্য ওয়াখান করিডোরের মাধ্যমে ঐতিহাসিক সিল্ক রোড বাণিজ্য পথগুলি পুনরায় খোলার ধারণাটি তালিবানের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। তারা চিনের ‘দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সমর্থন’কে ইতিবাচকভাবে স্বাগত জানিয়েছে, এবং আশা করছে যে বেজিং দেশে তার বিনিয়োগ বাড়াবে। আইইএ–র অধীনে বিদেশ মন্ত্রক ও আফগানিস্তান চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট উভয়ই স্বীকার করে যে করিডোরে দেশটির অন্তর্ভুক্তি এটিকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ এনে দেবে এবং ‘‘লোহা ও শক্তি উৎপাদনকারী’ ক্ষেত্রকে সমর্থন করবে। বিষয়টি কাবুলকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সক্ষম করে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অন্যদের উপর নির্ভর করে না বলেও মনে করা হচ্ছে।
কিন্তু সম্ভাব্য রুটগুলির এই মূল্যায়ন বহু বছর ধরে বিতর্কিত, এবং সেখানে কোনও বাস্তব অগ্রগতি নেই৷ পাকিস্তানে সিপিইসি–র বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে মনে হচ্ছে পরিস্থিতিগত এবং ব্যবহারিক সমস্যার কারণে সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা অন্ধকারাচ্ছন্ন।
একজন দায়িত্বশীল আঞ্চলিক অংশীদার?
প্রধান বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবিলার উদ্যোগ গ্রহণকারী একটি দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার সাম্প্রতিক প্রচেষ্টার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চিন আফগানিস্তানে সিপিইসি সম্প্রসারণে উন্নয়ন ও পুনর্গঠনের সম্ভাবনার উপর জোর দিয়েছে। এমনকি ইসলামাবাদও করিডোরটিকে আঞ্চলিক সংযোগের জন্য একটি শক্তি গুণক হিসাবে, এবং ভূ–রাজনৈতিক থেকে ভূ–অর্থনৈতিক বৈদেশিক নীতিতে স্থানান্তরকে ত্বরান্বিত করার একটি উপায় হিসাবে, বিবেচনা করে। তবে উন্নয়নমূলক দিক (যদি থাকে) ছাড়াও বেজিং ও ইসলামাবাদ উভয়েরই এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করার জন্য কিছু কৌশলগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কাবুলের পতনের পর থেকে চিন তালিবানের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে যোগাযোগ রেখে চলেছে, এবং এই সম্পৃক্ততা অনেকটাই জমানাটিকে বাস্তবিক ক্ষেত্রে স্বীকৃতি দেওয়ার সামিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রেখে যাওয়া শূন্যতা চিনকে আফগানিস্তানে তার প্রভাব বিস্তার করার জন্য সময় ও স্থান দিলেও সেখানে মার্কিন নিরাপত্তা ছাতার অনুপস্থিতি আফগানিস্তানের সঙ্গে তার সীমান্ত থেকে পশ্চিম জিনজিয়াং অঞ্চলে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই ভয় বেজিংয়ের দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারিত করেছে, যদিও তালিবান জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রেখে যাওয়া শূন্যতা চিনকে আফগানিস্তানে তার প্রভাব বিস্তার করার জন্য সময় ও স্থান দিলেও সেখানে মার্কিন নিরাপত্তা ছাতার অনুপস্থিতি আফগানিস্তানের সঙ্গে তার সীমান্ত থেকে পশ্চিম জিনজিয়াং অঞ্চলে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
নিরাপত্তা উদ্বেগের বাইরে, আফগানিস্তানের অব্যবহৃত খনিজ সম্পদ ব্যবহারের সুযোগও বেজিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চিন তার ‘ইউরেশিয়ার ভরকেন্দ্র’ হয়ে ওঠা ত্বরান্বিত করতে দেশটিকে ব্যবহার করতে চায়, যেমনটি তার বিআরআই–এর অবিচ্ছেদ্য অঞ্চল জিয়ানে শীর্ষ সম্মেলনে মধ্য এশীয় প্রজাতন্ত্রগুলিতে সাম্প্রতিক সংযোগের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে। পাকিস্তানে চিনা কর্মীদের উপর হামলাকে কেউ কেউ বেজিংয়ের বিনিয়োগ সীমিত করার জন্য যথেষ্ট কারণ হিসাবে দেখলেও দেশটিতে তার উপস্থিতি আরও জোরদার করার জন্য তা চিনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তালিবানের প্রত্যাবর্তনের পর দেশটিতে কৌশলগত গভীরতা ধরে রাখার পাকিস্তানি আশা ভেঙ্গে যায়। তেহরিক–ই–তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিপর্যয়পূর্ণ হয়েছে, যা পাকিস্তানের আইনশৃঙ্খলাকে মারাত্মকভাবে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। এই প্রেক্ষাপটে বেজিংয়ের জন্য দুই প্রতিবেশীর সীমান্তে কিছুটা স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা তার নিজের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য।
ভারতের জন্য প্রভাব: কৌশলগত এবং সার্বভৌমত্বের উদ্বেগ
গোয়ায় সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকের ফাঁকে ভারতের বিদেশমন্ত্রী, ডঃ এস জয়শঙ্কর সিপিইসি নিয়ে ভারতের নীতিগত বিরোধিতা আবার তুলে ধরেছেন, এবং জোর দিয়ে বলেছেন সংযোগ কোনও একটি দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতা বা সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করতে পারে না। সাধারণভাবে সিপিইসি নিয়ে ভারতের বিরোধিতা, আফগানিস্তানে এর সম্প্রসারণ নির্বিশেষে, দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে: কৌশলগত ও সার্বভৌম। কৌশলগতভাবে, খুঞ্জেরাব পাস এলাকায় চিনা উপস্থিতি ভারতের কৌশলগত স্থান হ্রাস করবে, এবং এই অঞ্চলটির বাজারজাত মূল্য আহরণের প্রয়াস জোরদার করবে। সিপিইসি পাকিস্তান–অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্য দিয়েও যায়, যে কারণে ভারত এই প্রকল্পটিকে ‘বেআইনি, অবৈধ ও অ–গ্রহণযোগ্য’ বলে মনে করে।
গত কয়েক বছরে ভারত–চিন সম্পর্কের দ্রুত অবনতি হয়েছে। একটি অত্যন্ত সন্দেহজনক সম্পর্কের পটভূমিতে, এই অঞ্চলে চিনের উপস্থিতি বাড়ানোর যে কোনও প্রচেষ্টা ভারতের পক্ষে অস্বস্তিজনক। মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর তালিবানের সঙ্গে চিনের সম্পৃক্ততা ইতিমধ্যেই নয়াদিল্লিকে এমন একটি দেশে পিছনে ফেলে দিয়েছে যেখানে এটি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। চিনের বর্ধিত উপস্থিতি থেকে তালিবান শাসনের অর্থনৈতিকভাবে লাভের সম্ভাবনা কার্যত দেশটির উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়িয়ে দেবে, এবং ভারতের জন্য বিপদের সম্ভাবনাকে আরও জোরদার করবে। নয়াদিল্লির জন্য এমনকি একটি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতায়িত পাকিস্তান, যেটি একটি ‘চিন কেন্দ্রিক ভূ–অর্থনীতির স্থান‘–এর সঙ্গে আরও গভীরভাবে সমন্বিত, মোটেই ভাল খবর নয়। তবে ভারতের বিআরআই–এর বিরোধিতা করার কৌশল দেশটির আঞ্চলিক পরিকাঠামো উন্নয়নকে রূপ দেওয়ার সম্ভাবনাকেও সীমিত করেছে। এর ‘কানেক্ট সেন্ট্রাল এশিয়া’ নীতি কোনও বড় লভ্যাংশ তুলতে ব্যর্থ হয়েছে, কিন্তু চিন ধীরে ধীরে মধ্য এশিয়ার প্রজাতন্ত্রগুলিতে তার পদচিহ্ন প্রসারিত করছে।
চিনের বর্ধিত উপস্থিতি থেকে তালিবান শাসনের অর্থনৈতিকভাবে লাভের সম্ভাবনা কার্যত দেশটির উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়িয়ে দেবে, এবং ভারতের জন্য বিপদের সম্ভাবনাকে আরও জোরদার করবে।
সামনের পথ
যদিও তালিবানের শাসন ব্যবস্থা নিয়ে বেজিং ও কাবুলের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে, উভয় পক্ষ সরাসরি উড়ান পুনরায় চালু করে এবং আফগান নাগরিকদের জন্য ভিসার উপর চিনের বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে যোগাযোগের মাত্রা বাড়িয়েছে। তা সত্ত্বেও, সিপিইসি আফগানিস্তানে সম্প্রসারিত হলে চিনের জন্য কোনও বাস্তব অর্থনৈতিক সুবিধা হবে বলে ভাবা এখনও কঠিন। কিন্তু এই অর্থনৈতিক সুবিধার অভাবই ইঙ্গিত করে যে বেজিংয়ের জন্য কৌশলগত প্রয়োজনীয়তাগুলি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানের জন্য অবশ্য আফগানিস্তান অর্থনৈতিক সংযোগের শস্তা আঞ্চলিক দর–কষাকষির ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে।
পাকিস্তান–আফগানিস্তান উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক স্থিতিশীল করার জন্য চিনের প্রচেষ্টা সফল হবে না। তালিবান যেভাবে আফগানিস্তান থেকে এখনও পাকিস্তানে টিটিপি জঙ্গিদের প্রবেশের বিষয়টিতে সাড়া দিয়েছে, তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রীর সাম্প্রতিক মন্তব্য উভয়ের মধ্যে আস্থার ঘাটতির মাত্রা নির্দেশ করে। দেশটিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে স্থিতিশীলতা আনার জন্য বেজিংয়ের প্রচেষ্টা হিতে বিপরীতের কারণ হতে পারে, কারণ প্রথমত স্থিতিশীলতার অনুপস্থিতিই তার বিনিয়োগ পরিকল্পনাগুলিকে লাইনচ্যুত করতে পারে।
শিবম শেখাওয়াত অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের একজন রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.