কোভিডের নতুন ভ্যারিয়ান্টগুলো যখন সামনে আসছে, সেই সময় ভারতের উচিত নিজের বয়স্ক জনসংখ্যার কথা মাথায় রাখা এবং তাঁদের বেঁচে থাকা নিশ্চিত করার জন্য সঠিক ভাবে নীতিগত পরিবর্তন ঘটানো।
ভারতে কোভিড–১৯ ভাইরাসের প্রথম তরঙ্গের সময় দেখা গিয়েছিল বয়স্ক জনসংখ্যার (৬০+ বছর) মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকিবেশি, বিশেষ করে যাঁদের আগে থেকেই অন্যান্য গুরুতর অসুখ (কোমরবিডিটি) ছিল। বিশ্বব্যাপী গবেষণা থেকেও জানা গিয়েছে ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বেশ কয়েকটি দেশের জাতীয় পর্যায়ের তথ্যেই এ কথা প্রতীয়মান যে হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর হার বয়স্ক মানুষদের মধ্যেই বেশি। কলম্বিয়া এবং চিলির মতোদেশগুলিতেবয়স্কদের মৃত্যু সার্বিক মৃত্যুর ৮৬ শতাংশের বেশি। পেরুতে মৃতদের সত্তর শতাংশের বয়স ৬০ বছর বা তার বেশি।
খুব কম রাজ্য বয়স অনুসারে তথ্য দিলেও ভারতেও একই প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২১ সালের ২৬ নভেম্বর পর্যন্তপশ্চিমবঙ্গেকোভিড আক্রান্ত মানুষের মধ্যে ৭৫+ বয়ঃসীমায় ৭.৪৫ শতাংশ এবং ৬০-৭৫ বছর বয়সী জনসংখ্যার মধ্যে ৩.৪১ শতাংশ মৃত্যুর হার দেখা গিয়েছে, যেখানে ৩১-৪৫ বছরের মধ্যে তা ছিল ০.৩২ শতাংশ এবং ৪৬-৬০ বছর বয়সীদের মধ্যে ১.২১ শতাংশ।কেরলেসমস্ত মৃত্যুর ৫৪ শতাংশই ৬০+ বয়সী প্রবীণ নাগরিকদের।নাগাল্যান্ডেওবেশি মৃত্যু ৪৬+ বছরের বন্ধনীতে ঘটেছে, যা সমস্ত মৃত্যুর প্রায় ৭০ শতাংশ। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস হল সবচেয়ে বেশি হন্তারক কোমরবিডিটি।
কেরলে সমস্ত মৃত্যুর ৫৪ শতাংশই ৬০+ বয়সী প্রবীণ নাগরিকদের। নাগাল্যান্ডেও বেশি মৃত্যু ৪৬+ বছরের বন্ধনীতে ঘটেছে, যা সমস্ত মৃত্যুর প্রায় ৭০ শতাংশ। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস হল সবচেয়ে বেশি হন্তারক কোমরবিডিটি।
জনসংখ্যা সম্পর্কিত টেকনিক্যাল গ্রুপেররিপোর্টেভারত এবং রাজ্যগুলির জন্য (২০১১-২০৩৬) তুলে ধরা ছবিতে বলা হয়েছে যে ভারতে প্রায় ১৩ কোটি ৮০ লক্ষ বয়স্ক মানুষ (৬০+ বছর) আছেন, যার মধ্যে ৭ কোটি ১০ লক্ষ মহিলা, এবং ৬ কোটি ৭০ লক্ষ পুরুষ। এই বয়সী জনগোষ্ঠীটি ৬০ বছরে দ্বিগুণ হয়ে ২০২১ সালে মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০.১ শতাংশে পৌঁছেছে, এবং ভবিষ্যতে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। বয়স্ক মানুষের সর্বাধিক অনুপাত পরিলক্ষিত হয়েছে কেরল (১৬.৪৯ শতাংশ), তামিলনাড়ু (১৩.৬৪ শতাংশ), ও হিমাচল প্রদেশে (১৩.০৪ শতাংশ)।
চিত্র ১: ভারতের রাজ্যগুলির বয়স-ভিত্তিক জনসংখ্যা (২০২১)
ভারতীয় রাজ্যগুলির বয়স-ভিত্তিক জনসংখ্যা (শতাংশ জনসংখ্যা): 2021 অনুমান
কেরলে আছে বয়স্ক (৬০+ বছর) জনসংখ্যার সর্বাধিক অনুপাত, আর মেঘালয়ে ১৮ বছরের কম জনসংখ্যার সর্বোচ্চ শতাংশ রয়েছে
অনন্য চাহিদা এবং লিঙ্গগত দুর্বলতা
একথা ঠিক যে অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় ভারতে বয়স্কদের অনুপাত তুলনামূলক ভাবে কম; কিন্তু কাঠামোগত ত্রুটি ও দুর্বল সামাজিক সুরক্ষা–ব্যবস্থা তাঁদের অরক্ষিত করে রেখেছে। বয়স্কদের যত্নের জন্য অপেক্ষাকৃত কম আর্থিক সহায়তা বরাদ্দ করা হয়, বয়স্কদের জন্য স্বাস্থ্য পরিকাঠামো সীমিত, এবং তাঁদের কাছে পৌঁছনোর কার্যক্রমের অভাব আছে। ২০১৭-১৮–র এনএসএস–এর বিশ্লেষণ অনুসারে প্রায়৭০ শতাংশ বয়স্ক মানুষতাঁদের দৈনন্দিন প্রয়োজনের জন্য অন্যদের উপর নির্ভরশীল। কোভিড–১৯ অতিমারির মতো সঙ্কটের সময় তাঁরা তাদের প্রাপ্য সামাজিক সংযোগ ও মনোযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, বিশেষ করে যাঁদের খুব বেশি করে অন্যদের সেবার উপর নির্ভর করতে হয়।। তাঁদের মানসিক চাপ আরও অনেক বেড়ে যায় ডিজিটাল সরঞ্জামগুলিতে তাঁদের সীমিত সাবলীলতার কারণে।
দ্রুত পতনশীল জন্মহারের পাশাপাশি চিকিৎসার অগ্রগতি ও ওষুধের ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তি এসে পড়ায় বিশ্বব্যাপী বয়স্ক জনসংখ্যা বাড়ছে। এই জনসংখ্যাগত ও অতিমারি সংক্রান্ত পরিবর্তন পুরো ছবিটাকেই বদলে দিচ্ছে। এই পরিবর্তন দেশের রোগের বোঝা তুলে দিচ্ছে বয়স্ক ব্যক্তিদের কাঁধে, এবং সেই সঙ্গেই লিঙ্গভিত্তিক প্রভাব ফেলছে। মহিলারাদীর্ঘজীবীহয়ে থাকেন, এবং আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকা জনসংখ্যার মধ্যে তাঁদের অনুপাত অনেক বেশি হয়। কাজের জায়গায় তাঁদের ঐতিহাসিক ভাবে কম প্রতিনিধিত্ব, এবং তাঁদের কাজের বছরগুলোতে আর্থিক সম্পদের উপর দুর্বল নিয়ন্ত্রণের কারণে তাঁরা পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি অন্যের উপর নির্ভরশীল হন।
মহিলারা দীর্ঘজীবী হয়ে থাকেন, এবং আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকা জনসংখ্যার মধ্যে তাঁদের অনুপাত অনেক বেশি হয়।
বয়স্ক মহিলাদের মধ্যে গ্রামীণ এলাকার মাত্র ১০ শতাংশ এবং শহরের মাত্র ১১ শতাংশ অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী৷ বিপরীতে, শহর ও গ্রাম উভয় ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছিল মোটের উপর ৫০-৫৫ শতাংশ বয়স্ক পুরুষ আর্থিক ভাবে সক্ষম। ২০১৮-১৯ সালের পর্যায়ক্রমিক শ্রমশক্তি সমীক্ষাতেও দেখা গিয়েছিল ৬০-৬৪ বছর বয়সীদের মধ্যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে পার্থক্য প্রায় ৪৭ শতাংশ। লকডাউনের প্রথম দিকে (২০২০ সালের জুন মাসে) হেল্পএজ ইন্ডিয়ারসমীক্ষায়এটাও দেখা গেছে যে ৬৫ শতাংশ বয়স্ক মানুষের জীবিকার ক্ষতি হয়েছে, এবং তাঁদের পারিবারিক সহায়তা–ব্যবস্থার উপরেও চাপ পড়েছে। শুধু তাই নয়, অবৈতনিক ঘরোয়া কাজ এবং যত্নের দায়িত্বের ক্ষেত্রেও ৬০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের অবদান প্রায় দ্বিগুণ (১১২ মিনিটের তুলনায় ২৪৫ মিনিট)।
কোভিড–১৯-এর কুফলের ক্ষেত্রে এই ধরনের অসম, অন্যায্য কাঠামো বয়স্ক মহিলাদের আরও অরক্ষিত করে তোলে। যদিও সারা বিশ্বের দেশগুলির মৃত্যুহার পুরুষদের জন্য অধিকতর মৃত্যুর ইঙ্গিত দেয়, ইউনাইটেড নেশন’স পপুলেশন ফান্ড (ইউএনএফপিএ)–এর হিসাব অনুযায়ী মহিলাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়িয়ে দেয়পুষ্টিরঘাটতি, লিঙ্গ-ভিত্তিক হিংসা, সাক্ষরতার সুযোগের ঘাটতি, ডিজিটাল সরঞ্জাম ব্যবহারে পিছিয়ে থাকা এবং দারিদ্র্যের সামনে অরক্ষিত হয়ে থাকা। তাঁদের উচ্চ রক্তচাপ, হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের অসুখ, চেতনা হ্রাস, আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘকালস্থায়ী অসুখে ভোগার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। একজন মহিলার রক্তাল্পতা যেমন সারা জীবন ধরে চলতে থাকে।এনএফএইচএস-৫অনুসারে, ১৫-৪৯ বছর বয়সী জনসংখ্যার মধ্যে যেখানে ৫৭ শতাংশ মহিলা রক্তাল্পতায় ভুগছিলেন, সেখানে মাত্র ২৫ শতাংশ পুরুষের সেই সমস্যা ছিল। ৬০+ জনসংখ্যার মধ্যেও লিঙ্গানুসার পার্থক্য ক্রমাগত ভাবে দৃশ্যমান: এক্ষেত্রে ৩.১ শতাংশ পুরুষের বিপরীতে ৫.৯ শতাংশ মহিলা রক্তাল্পতায় ভোগেন। ডায়াবেটিস মেলিটাসের প্রকোপ অনেকটাই বেশি, ১৪ শতাংশের মতো, এবং কেরল, গোয়া, দিল্লি ও তামিলনাড়ুর মতো উন্নত রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে তা আরও বেশি।
লকডাউনের প্রথম দিকে (২০২০ সালের জুন মাসে) হেল্পএজ ইন্ডিয়ার সমীক্ষায় এটাও দেখা গেছে যে ৬৫ শতাংশ বয়স্ক মানুষের জীবিকার ক্ষতি হয়েছে, এবং তাঁদের পারিবারিক সহায়তা–ব্যবস্থার উপরেও চাপ পড়েছে।
চিত্র ২: ৬০+ বছরের মানুষের মধ্যে কোভিড–১৯ টিকার গতিপথ
৬০+ মানুষের মধ্যে এনজাইনা পেক্টোরিসের প্রাদুর্ভাবের হার (হৃদযন্ত্রে অক্সিজেনের অপ্রতুল সরবরাহের কারণে ইস্কিমিক হার্টের রোগীদের জন্য একটি পরিচিত বিপদের কারণ) পুরুষদের (৫ শতাংশ) তুলনায় মহিলাদের মধ্যে (৭ শতাংশ) বেশি। তার উপরে, নির্ণীত হৃদযন্ত্রের অসুখের তুলনায় অ্যানজাইনা এই বয়সের মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। লংগিচিউডিনাল এজিং স্টাডি ইন ইন্ডিয়া (এলএএসআই)দেখিয়ে দিয়েছেযে এই প্রবণতা কিন্তু পুরুষ এবং সাধারণ জনসংখ্যার মধ্যে একেবারে বিপরীত। উপরন্তু, উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপও ওই বয়সের পুরুষদের (৩৪ শতাংশ) তুলনায় মহিলাদের (৩৮ শতাংশ) বেশি। সুতরাং, এই বিষয়টিও স্পষ্ট যে অ–নির্ণীত হৃদরোগের বোঝাও ভারতে অসঙ্গত ভাবে মহিলাদেরই বেশি বহন করতে হয়। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল এই যে গুরুতর কোনও একটি বা অনেক ধরনের অসুস্থতাও বয়সের সঙ্গে বাড়তে থাকে।
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে অল্পবয়সী মহিলাদের তুলনায় মধ্যবয়সী এবং বয়স্ক মহিলাদের উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ এবং ইনভেসিভ মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনের (আইএমভি) প্রয়োজনবেশিথাকে৷ এর ফলে প্রাণহানির ঝুঁকিও বেড়ে যায়। প্রথম দিককার কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল পুরুষদের তুলনায় মধ্যবয়সী মহিলাদের কোভিড থেকে স্বাস্থ্যের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি। কারণ বয়স্ক মহিলাদের ক্ষেত্রে (৫০ এর বেশি) লং–কোভিড অসুখেরঝুঁকিবিপজ্জনক ভাবে বেশি। এটি তাঁদের পরবর্তী জীবনের স্বাস্থ্যের গুণমানকে ব্যাহত করতে পারে।
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে অল্পবয়সী মহিলাদের তুলনায় মধ্যবয়সী এবং বয়স্ক মহিলাদের উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ এবং ইনভেসিভ মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনের (আইএমভি) প্রয়োজন বেশি থাকে৷
প্রবীণ নাগরিকদের জন্য একটি জাতীয় স্তরের টিকাকরণ কর্মসূচি ২০২১ সালের মার্চের প্রথম দিকে শুরু হয়েছিল। প্রথম দুই মাসে এটা দ্রুত প্রসারিত হচ্ছিল, মূলত শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে। কিন্তু, সরবরাহের সীমাবদ্ধতা এবং ১৮-৪৪ বছর বয়সীদের টিকা দেওয়ার দিকে সরকারের মনোযোগ ঘুরে যাওয়ার কারণে ২০২১ সালের মে মাসে তা ব্যাপক ভাবে হ্রাস পায়। এই বিশাল উদ্যোগের গোড়ার দিকের কিছু গোলযোগের কারণ ছিলভুল তথ্য, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়, দুর্বল স্মার্টফোন-ইন্টারনেট যোগাযোগ এবং যাতায়াতের সমস্যা। এই বাধাগুলোর প্রভাব কতটা তা বোঝা গেল ২০২১ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে, যখন ব্যাপক প্রয়াস সত্ত্বেও সংখ্যাগুলো আর প্রথম দিককার শিখরে পৌঁছল না (নীচে দেখুন)।
চিত্র ৩: বয়স অনুসারে প্রবীণদের মধ্যে স্বঘোষিত নির্ণীত প্রধান দীর্ঘস্থায়ী অসুখের বিস্তার, ভারত, ২০১৭-১৮
৩০ নভেম্বর ২০২১ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে বারো কোটি মানুষ সময়মতো তাঁদের টিকার দ্বিতীয় ডোজনেননি। এঁদের বেশিরভাগই হলেন উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও রাজস্থানের। উচ্চ-ঝুঁকির মানুষ ও বয়স্কদের জন্য নয় মাসেরও বেশি সময় ধরে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে টিকা দেওয়া সত্ত্বেও ভারতের ৬০+ বছরের জনসংখ্যার মাত্র৫৮ শতাংশেরসম্পূর্ণ টিকাকরণ হয়েছে। ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ পর্যন্তপ্রতি ১,০০০ বয়স্ক জনসংখ্যার জন্য মাত্র ১,০৪৯ এবং ১,০৫৪ ডোজব্যবহার করে ঝাড়খণ্ড এবং তামিলনাড়ু কভারেজের শেষ দুটি স্থানে রয়েছে। এই রাজ্যগুলিতে বয়স্ক জনসংখ্যার অনুপাত যে অনেকটা বেশি সে কথা মাথায় রাখলে বিপদের ছবিটা আরও ভাল ভাবে বোঝা যায়।
যখন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকা মানুষ অরক্ষিত থাকেন, তখন তৃতীয় এবং পর পর আরও তরঙ্গের আশঙ্কা কখনই চলে যায় না।
টিকা নিয়ে দ্বিধা ভারতে একটি সুদূরপ্রসারী উদ্বেগের কারণ, বিশেষ করে বয়স্কদের মধ্যে। তামিলনাড়ুতে টিকা নিতে অনাগ্রহঐতিহাসিক। জনস্বাস্থ্য বিভাগ ২০২১ সালের জুলাই মাসে রাজ্যে একটি ভ্যাকসিন সমীক্ষা করেছিল, যেখানে দেখা গিয়েছিল ৬০+ জনসংখ্যার মধ্যে ২৭.৬ শতাংশ টিকা নিতে দ্বিধাগ্রস্ত। লিঙ্গ অনুসারে দেখলে এই দ্বিধা পুরুষদের মধ্যে বেশি ছিল। দ্বিধা এবং ভুল তথ্যে জর্জরিত আর একটি রাজ্য নাগাল্যান্ডে দেশের সর্বনিম্ন প্রথম ডোজ কভারেজ হয়েছে (৩ ডিসেম্বর, ২০২১–এ ৫৬ শতাংশ)। উচ্চ–নিরক্ষরতার জেলাগুলিতে যেমন, তেমনই ভ্যাকসিন নিতে অনাগ্রহ তরুণদের থেকে ৪৫+ বছর বয়সের বন্ধনীতে আরও স্পষ্ট। এভাবে যখন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকা মানুষ অরক্ষিত থাকেন, তখন তৃতীয় এবং পর পর আরও তরঙ্গের আশঙ্কা কখনই চলে যায় না। টিকাকরণের ধীরগতির পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকারহরঘরদস্তক প্রচারাভিযান এবংবাড়ির কাছাকাছিটিকাদান কেন্দ্র চালু করেছে। তবে বাকি সব বাধার কথা মাথায় রেখে বলা যায় এর সাফল্য এখনও অনিশ্চিত।
উপসংহার
ডেল্টা এবং ওমিক্রনের মতো আরও বেশি সংক্রামক ভ্যারিয়্যান্ট আবিষ্কৃত হওয়ার পর আমাদের অরক্ষিত বয়স্ক মানুষদের রক্ষা করা আরও বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। নীতি ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রবীণ নাগরিকদের অগ্রাধিকার দিলে তা যে সব মৃত্যু এড়ানো সম্ভব সেইগুলি রোধের সহায়ক হবে। এই ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসার পথ সুগম করার উপায় হল হস্তক্ষেপমূলক কর্মসূচিগুলোর বয়সভিত্তিক নকশা তৈরি করা এবং এই জনগোষ্ঠীর বিভিন্নতাগুলো চিহ্নিত করার জন্য ডেটা সিস্টেমগুলিকে শক্তিশালী করা। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৭৫ শতাংশেরও বেশিদেশেস্বাস্থ্যকর বার্ধক্য সম্পর্কে তথ্য অপ্রতুল, বা আদৌ কোনও তথ্য নেই। দ্বিতীয়ত, ইন্দিরা গান্ধী পেনশন স্কিম–এর মতো স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্পগুলির গ্রামীণ এলাকায় আরও বেশি করে পৌঁছনোর জন্য ব্যবস্থা করতে হবে, যেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সুবিধাভোগী বসবাস করেন। কোভিড-১৯ হল অনেকগুলি নতুন রোগের মধ্যে একটি যা বয়স্কদের ক্ষতি করে, তবে এটি অবশ্যই শেষতম নয়। যখন চিকিৎসার সংস্থান দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছিল সেই সময় অতিমারি নিষ্ঠুর বয়সভিত্তিক বৈষম্য উন্মোচিত করেছিল। প্রবীণ নাগরিকদের চাহিদাকে তুচ্ছ করে দেখা হচ্ছে এবং তার অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। কিন্তু, তরুণদের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ বলে ধরে নিয়ে কোনও জীবনের বিরুদ্ধে বৈষম্যমানবাধিকার লঙ্ঘনেরচেয়ে কম কিছু নয়। আন্তঃ-প্রজন্ম সহায়তা ও সামাজিক নিরাপত্তা প্রসারিত করা এবং বিশ্বব্যাপী বয়স্কদের সংখ্যাবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা প্রয়োজন, যাতে বয়স্ক লোকদের আপন করে নেওয়া যায়, ভালবাসা যায় এবং তরুণদেরও বেড়ে–চলা বয়স নিয়ে দুশ্চিন্তার শিকার হতে না হয়।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Mona is a Junior Fellow with the Health Initiative at Observer Research Foundation’s Delhi office. Her research expertise and interests lie broadly at the intersection ...