Published on May 24, 2023 Updated 0 Hours ago

ভুটান সরকার যুব প্রজন্মকে দক্ষ করতে, চাকরির বাজারে চাহিদা-সরবরাহের ব্যবধান দূর করতে এবং ভবিষ্যতে দেশের বুদ্ধিমত্তার পরিযান প্রতিরোধ করতে নানা সংস্কার করছে

ভুটানে অভিবাসনের গতিপ্রকৃতি এবং নীতিগুলির মূল্যায়ন

২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী জোর  দিয়ে বলেছিলেন যে, দেশে উর্বরতার হার হ্রাস পাচ্ছে এবং ‘আমরা ভুটানি-বিহীন কোনও ভুটান চাই না এবং আমরা এ-ও চাই না যে, এই কতিপয় ভুটানি অন্যত্র কাজ করুন।’ সম্প্রতি ভুটান এক নতুন চ্যালেঞ্জের সাক্ষী হচ্ছে এবং তা হল ব্যাপক বহির্গমন। গত দু’বছরে ১১০০০-এরও বেশি ভুটানি যুবক শুধু মাত্র অস্ট্রেলিয়া থেকে শিক্ষামূলক ভিসা পেয়েছে। বেশ কিছু অভিজ্ঞ এবং মধ্যস্তরীয় সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক, চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ এবং বেসরকারি ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরাও ভাল সুযোগের সন্ধানে দেশ ছেড়েছেন। আট লক্ষেরও কম জনসংখ্যার এই দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে জনবলের ঘাটতি অনুভূত হচ্ছে। জনসংখ্যাগত প্রতিবন্ধকতা, জনসংখ্যায় বৃদ্ধদের সংখ্যাবৃদ্ধি, ক্রমহ্রাসমান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং উৎপাদনশীলতার দরুন উদ্বেগ পার্লামেন্ট ও গণমাধ্যমগুলিতে উঠে আসছে। একাধিক টানাপড়েনের কারণে এই প্রতিবন্ধকতা গুরুতর হয়ে উঠেছে এবং ভুটান সরকার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সংস্কারের সূচনা করেছে। তবুও এই সংস্কারগুলি কীভাবে প্রভাব ফেলবে এবং দেশের ভবিষ্যৎ গঠন করবে, তা সময়ই বলবে।

বেশ কিছু অভিজ্ঞ এবং মধ্যস্তরীয় সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক, চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ এবং বেসরকারি ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরাও ভাল সুযোগের সন্ধানে দেশ ছেড়েছেন।

বহির্গমন: কর্মসংস্থান এবং শিক্ষার সন্ধানে

কঠিন ভূ-সংস্থানগত এবং জলবায়ু পরিস্থিতি-সহ একটি স্থলবেষ্টিত দেশ হওয়ায় ভুটান দীর্ঘ দিন ধরেই সীমিত অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং বেকারত্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আসছে। যদিও দেশের সর্বজনীন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নীতি দেশবাসীর মান উন্নত করেছে এবং শ্রমশক্তির বৃদ্ধি ঘটিয়েছে, সেখানে চাকরির বাজারের চাহিদা ও জোগানের মাঝে ব্যবধান রয়েছে। ভুটানের অর্থনীতি মূলত শ্রম-চালিত পুঁজি-নিবিড় বৃদ্ধি এবং জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল। এটি যুব সম্প্রদায়ের বেকারত্ব ও বেকারত্বের পরিস্থিতি সৃষ্টিতে গুরুতর ভূমিকা নিয়েছে। ২০১৩ সালে ৯.৬ শতাংশ থেকে ২০১৭ সালে ১২.৩ শতাংশ এবং তার পর ২০২১ সালে ২১ শতাংশ… ভুটানের যুব বেকারত্ব সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েই চলেছে।

পরবর্তী বছরগুলিতে সমস্যাটি ব্যাপক আকার ধারণ করায় ভুটান দেশের যুবকদের জন্য আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের দরজা খুলে দেয়। ২০১০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে সরকার অন্যান্য দেশের সঙ্গে নতুন মউ স্বাক্ষর করে এবং ভুটানি নাগরিকদের নিয়োগ করতে আগ্রহী সংস্থাগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আন্তঃসম্পর্ক গড়ে তোলে। এটি এই সংস্থাগুলিকে পরিকাঠামো ও প্রশিক্ষণের সুবিধা প্রদান করে এবং দেশের নাগরিকদের গৃহকর্মী ও ড্রাইভার হিসাবে কাজ করতে বাধা দেয়। অন্য দিকে তরুণ বেকার ভুটানিদের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়ার পাশাপাশি ভুটান কয়েকটি দেশে যাওয়ার জন্য সস্তায় ঋণ দিতে শুরু করে। দেশের যুবকরা একটি স্থায়ী চাকরি সুনিশ্চিত করতে সক্ষম হলে ভুটান সরকার তার অভিবাসন নীতি সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল করতেও ইচ্ছুক।

২০১৫ সালে ভুটান তাইল্যান্ডের সঙ্গে একটি মউ স্বাক্ষর করে, যা আনুষ্ঠানিক ভাবে ১২০০০ ভুটানি কর্মীকে নিয়োগ করার সম্মতি প্রদান করে। একই বছরে ভুটান সরকার ১০০ জন ভুটানি শ্রমিককে প্রথম পর্যায়ে কুয়েতে পাঠায়। ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ায় যুবকদের চাকরির সুযোগ খুঁজে পেতে সাহায্য করার জন্য সরকার নতুন ঋণ প্রকল্পও শুরু করে। সেই বছরই ভুটানিদের প্রাথমিক দলকে একটি শিক্ষা এবং উপার্জন সংক্রান্ত কর্মসূচির জন্য জাপানে পাঠানো হয়েছিল। ২০১৯ সালে ভুটান সরকার জাপানের সঙ্গে টেকনিক্যাল ইন্টার্নশিপ ট্রেনিং প্রোগ্রাম নামে আর একটি কর্মসংস্থান কর্মসূচিতেও সম্মত হয়। কোভিড পরিস্থিতির সময়ে তরুণ ভুটানিরা মূলত ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি (ইউএই), কুয়েত, কাতার, তাইল্যান্ড, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়াতে কাজ করছিলেন

দেশের যুবকরা একটি স্থায়ী চাকরি সুনিশ্চিত করতে সক্ষম হলে ভুটান সরকার তার অভিবাসন নীতি সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল করতেও ইচ্ছুক।

যেহেতু কোভিড-১৯ এবং কঠোর লকডাউন ভুটানে অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি করলেও ভুটানি নাগরিকরা ভাল উপার্জন করছে এবং অন্যান্য দেশে তাদের উন্নত জীবনধারা একটি আকর্ষক টান হিসাবে কাজ করেছে। ভুটানে বেতন সংক্রান্ত হতাশা, পেশাগত উন্নয়নের অভাব, কাজের খারাপ পরিবেশ, সুযোগের অভাব ও কাজের চাপ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষার পদ্ধতিগত সমস্যাগুলির পাশাপাশি চাকরির নিরাপত্তাহীনতার ভয়, বিদেশে কাজের সময়ের নমনীয়তা, এবং আন্তর্জাতিক সীমান্তগুলি পুনরায় খুলে যাওয়া ব্যাপক গণপরিযানের সূচনা করে। ছাত্র, বেকার যুবক এবং পেশাজীবীরা বর্তমানে একটি উন্নত জীবনধারা এবং চাকরির সন্ধানে ব্যাপক হারে দেশ ছাড়তে শুরু করেছেন।

পরিযান বিন্যাসের মূল্যায়ন

বিভিন্ন ভুটানি দূতাবাস এবং মিশনে নিবন্ধিত ব্যক্তিদের নিরিখে মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড এক্সটার্নাল ট্রেড (এমওএফএইটি) প্রকাশ করেছে যে, ৩২২৫৮ জনেরও বেশি ভুটানি ১১৩টি দেশে বসবাস করছেন। যদিও সীমিত তথ্য সংগ্রহ এবং নিবন্ধনের দরুন এর প্রকৃত প্রকৃতি অজানা থেকে যায়। এমওএফএইটি-এর তথ্য অনুযায়ী সারণি ১ ভুটানি নাগরিকদের শীর্ষ গন্তব্যগুলিকে নির্দেশ করে৷ অন্যান্য দেশের তথ্যের সঙ্গে এই অনুমানের একটি নিবিড় মূল্যায়ন ইঙ্গিত করে যে, ভুটান থেকে অভিবাসন প্রাথমিক ভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ দ্বারা চালিত হয় এবং শিক্ষার সুযোগ দ্বারা অনুসৃত হয়।

সারণি ১: ভুটানি নাগরিকের প্রধান গন্তব্য

দেশ অস্ট্রেলিয়া ভারত কুয়েত তাইল্যান্ড আমেরিকা সংযুক্ত আরব আমিরশাহি কাতার
ভুটানি নাগরিকের সংখ্যা ১০,৯১১ ৯৫১৯ ৩১৮৪ ১৩৫৬ ১৩২৭ ৮২৮ ৮২২

উৎস: দ্য ভুটানিজ

জীবনযাত্রার উন্নত মান, অর্থনৈতিক সুযোগ, স্বস্তিদায়ক কর্মসময় এবং অস্ট্রেলিয়ায় শিক্ষার সুযোগ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বহু ভুটানিকে আকৃষ্ট করেছে। ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ার আদমসুমারি দর্শিয়েছে যে, ১২০০০-এরও বেশি ভুটানি অস্ট্রেলিয়ায় রয়ে গিয়েছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের জন্য ভুটানের দরজা খুলে দেওয়ার প্রচেষ্টার পাশাপাশি অভিবাসনের প্রবণতা অনেকাংশে বেড়েছে। ২০০১-২০১০-এর মধ্যে ১৫৭৯ জনেরও বেশি ভুটানি অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন। এই পরিসংখ্যান ২০১১-২০১৫-এর মধ্যে ৩২৯০ এবং তার পর ২০১৬-২০২১-এর মধ্যে ৬৯৯৩-এ বেড়েছে। এই অভিবাসীদের মধ্যে ৬৭ শতাংশেরও বেশি কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেননি, যা আদতে তাঁদের কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দেওয়ারই ইঙ্গিত করে। শিক্ষার ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া ধীরে ধীরে ভুটানিদের প্রিয় গন্তব্য হিসাবে ভারতকে প্রতিস্থাপন করেছে। ২০০২-২০২০-এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ৫৮০৩ জনেরও বেশি ভুটানি ছাত্রকে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছে। ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অধ্যয়নরত ভুটানি ছাত্রদের সংখ্যা ২৬৫৯ থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ৪১৫১-এ এসে দাঁড়িয়েছে।

ছাত্র, বেকার যুবক এবং পেশাজীবীরা বর্তমানে একটি উন্নত জীবনধারা এবং চাকরির সন্ধানে ব্যাপক হারে দেশ ছাড়তে শুরু করেছেন।

অর্থনৈতিক সুযোগ, ন্যূনতম ভিসা সীমাবদ্ধতা, নিয়মিত প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচি, শিক্ষার সুযোগ এবং বৌদ্ধ পর্যটন  শিক্ষা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ভারত ও ভুটানের জনগণের সম্পর্ককে শক্তিশালী করেছে। এমওএফএইটি থেকে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান পাওয়ার আগে পর্যন্ত, ভুটানি নাগরিকদের জন্য ভারতই ছিল প্রধান গন্তব্য। ভুটানি শিক্ষার্থীদের শতাংশ এবং ভারতে অধ্যয়নরত ভুটানি শিক্ষার্থীদের গড় সংখ্যা বিগত বছরগুলিতে হ্রাস পেয়েছে (দ্রষ্টব্য সারণি ২)। ভুটানি শিক্ষার্থীরা তাঁদের শিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়ার মতো বিকল্প গন্তব্য খুঁজে নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতে কর্মরত ভুটানি নাগরিকদের সম্পর্কে তথ্যের অভাব থাকা সত্ত্বেও এমনটা অনুমান করা যেতে পারে যে, কর্মসংস্থানই অভিবাসনের প্রধান কারণ। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ২০১৭ সালে ভারতে ৬৫৮০ জনেরও বেশি ভুটানি নাগরিক ছিলেন, যার মধ্যে মাত্র ২২৮৪ জন শিক্ষার্থী (দ্রষ্টব্য সারণি ২) এবং তা ইঙ্গিত করে যে, তাঁদের বেশির ভাগই চাকরিরত, বা চাকরির সন্ধানে রয়েছেন। ভুটানি নাগরিকদের চাকরি্র ক্ষেত্রগুলি হল হসপিটালিটি , কল সেন্টার, বিউটি পার্লার, সালোঁ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট শিল্পক্ষেত্র।

সারণি ১: ভুটানি নাগরিকের প্রধান গন্তব্য

বছর ২০১২-২০১৩ ২০১৩-২০১৪ ২০১৪-২০১৫ ২০১৫-২০১৬ ২০১৬-২০১৭ ২০১৭-২০১৮ ২০১৮-২০১৯ ২০১৯-২০২০ ২০২০-২০২১
শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৪৬৮ ২৮৯১ ২৬৯৭ ২৯২৫ ২২৮৪ ১৯৯৯ ১৮১১ ১৮৫১ ১৮২৭
ভারতে মোট আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর মধ্যে ভুটানের অংশ ৭% ৭% ৬% ৬% ৪.৮% ৪.৩% ৩.৮% ৩.৮% ৩.৮%

উৎস: অল ইন্ডিয়া সার্ভে অন হায়ার এডুকেশন (২০১২-২০২১)

কর্মসংস্থান, উচ্চ বেতন এবং জীবনযাত্রার মান ভুটানিদের কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং কাতারের মতো উপসাগরীয় দেশগুলিতে অভিবাসন করতে অনুপ্রাণিত করেছে। ২০১৪ সাল থেকে কুয়েতে অভিবাসন চ্যানেল বিদ্যমান থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অন্য উপসাগরীয় দেশগুলি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে অস্ট্রেলিয়া ডিপ্লোমা কোর্সের জন্য বহুসংখ্যক ভিসা প্রত্যাখ্যান করার পাশাপাশি ভুটানে শিক্ষা ঋণ প্রদান বন্ধ হয়ে যাওয়া। এই সব দেশের শ্রমশক্তি স্কুল এবং কলেজের স্নাতকরাই গড়ে তুলেছেন। তবে কাতারে ভুটানি কর্মশক্তির ৭০ শতাংশেরও বেশি স্নাতক

আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, সাংস্কৃতিক সাযুজ্য এবং চাকরির সুযোগ বহু ভুটানিকে তাইল্যান্ডের প্রতি আকৃষ্ট করেছে। ২০২০ সালে তাইল্যান্ড ভুটানি শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের পরে তৃতীয় সর্বাধিক পছন্দের গন্তব্য ছিল। ভুটানও তার নাগরিকদের তাইল্যান্ডে স্থায়ী চাকরি এবং স্বেচ্ছাসেবীর সুযোগ খোঁজার জন্য চাপ দিয়েছে। ২০১২ সাল থেকে ভুটানি নাগরিকদের তাইল্যান্ডে ইংরেজি শেখানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি বা চাকরি প্রদানকারী সংস্থাগুলি ভুটানি নাগরিকদের জাহাজ শিল্প এবং আতিথেয়তা ক্ষেত্রের অন্যান্য শিল্পে নিয়োগ করার চেষ্টা করছে।

শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান মূল আকর্ষণের কারণ হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভুটানের অভিবাসন অনেক বেশি জটিল। ২০০০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে (ইউএস) ২০০ জনেরও বেশি ভুটানি নাগরিক ছিলেন। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বেশিরভাগ ভুটানি শরণার্থী/আশ্রয়প্রার্থী হিসাবে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি চেয়েছেন (দ্রষ্টব্য সারণি ৩) এবং ভুটানের বর্তমান অভিবাসন সংক্রান্ত সমস্যার ক্ষেত্রে তাঁদের বিশেষ ভূমিকা নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রাথমিক অভিবাসন সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা সে দেশে ভুটানি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পর্কিত। ভুটানি পরিবার এবং নিকটাত্মীয়রা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন সহজতর করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অস্থায়ী কাজের ভিসায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন অল্প কয়েকজন ভুটানি। এমনকি বেশ কম সংখ্যক ভুটানিই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার জন্য তাঁদের কর্মসংস্থানের অভিজ্ঞতা ব্যবহার করতে পেরেছেন।

সারণি ৩: আমেরিকায় ভুটানি নাগরিক

বছর ২০১২ ২০১৩ ২০১৪ ২০১৫ ২০১৬ ২০১৭ ২০১৮ ২০১৯ ২০২০ ২০২১
স্থায়ী বাসিন্দা ১০১৯৮ ৮৯৫৪ ৭২৯৮ ৬৩২৫ ৪২১৭ ২৯৪০ ২৩৫০ ১৪৪১ ১০৯১ ১৩৭
স্থায়ী বাসিন্দা (শরণার্থী/ আশ্রয়প্রার্থী) ১০১৭১ ৮৯১১ ৭২৫৪ ৬২৯০ ৪১৫৩ ২৮৭৩ ২২৮৩ ১৩৬০ ১০৪৫ ৮০
স্থায়ী বাসিন্দা (চাকরিভিত্তিক অগ্রাধিকার) অপ্রকাশিত ১১ ১৭ অপ্রকাশিত অপ্রকাশিত
স্থায়ী বাসিন্দা (পরিবার সমর্থিত/ঘনিষ্ঠ আত্মীয়) ১৯ ২৯ ৩৩ ২৮ ৫০ ৪৯ ৫৫ ৫৬ ৩১ ৪৬
শিক্ষার্থী ও আদানপ্রদানকারী পর্যটক ১৪০ ১৫৮ ১৯৭ ২৫৫ ২৩৩ ২৩৩ ২২৬ ২২৬ ৭৫ ১০৬
অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ এবং পরিবার ১৪ ২২ ১৮ ১৬ ২৮ ২৪ ২৯ ১৭ অনুপলব্ধ

উৎস: ইয়ারবুক অফ ইমিগ্রেশন স্ট্যাটিস্টিকস, ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (২০১২-২০২১)

আগামী দিনের পরিকল্পনা

এই প্রচলিত প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি ভুটান সরকার কিছু অতি প্রয়োজনীয় বৃহৎ আকারের সংস্কারের বাস্তবায়ন করেছে। ২০২২ সালের শেষের দিকে সরকার পার্লামেন্টে ৪৬টি সংস্কারমূলক আইন প্রবর্তন করেছে। এই সংস্কারগুলির উদ্দেশ্য ছিল সরকারি চাকরিতে পার্শ্বীয় প্রবেশ চালু করা, মন্ত্রণালয় এবং সংস্থাগুলির পুনর্গঠন ও পরিষেবাগুলির দায়বদ্ধতা, বেতন এবং অবসরের বয়সসীমা বাড়ানো। লাল ফিতের আমলাতন্ত্রকে সীমিত করতে এবং দেশে বেসরকারি খাত, বিনিয়োগ, ব্যবসা এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রচারের জন্যও সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গৃহীত হচ্ছে। আরও দক্ষতা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য শিক্ষা খাতেরও সংস্কার করা হয়েছে। দেশের চাকরির বাজারের অমিলকে অতিরঞ্জিত করে, এমন শিক্ষামূলক প্রকল্পগুলিকে বাতিল করা হচ্ছে বা নতুন করে ঢেলে সাজা হচ্ছে।

শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান মূল আকর্ষণের কারণ হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভুটানের অভিবাসন অনেক বেশি জটিল।

সরকার গয়ালসুং প্রকল্পকেও বাধ্যতামূলক করেছে। এই কর্মসূচির অধীনে ১৮ বছরে পৌঁছোনো ভুটানি নাগরিকরা এক বছরের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন, যার মধ্যে রয়েছে তিন মাসের প্রাথমিক সামরিক প্রশিক্ষণ। এর পর নির্মাণ প্রযুক্তি, কম্পিউটিং, উদ্যোগ, কৃষি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ন’মাসের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রকল্পটি ২০২৪ সালে শুরু হবে এবং ১৩০০০ ভুটানি যুবককে সম্পৃক্ত করবে। আশা করা যায় যে, এই কর্মসূচিটি দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলতে ও যুব সম্প্রদায়ের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে এবং চাকরির বাজারে চাহিদা-সরবরাহের ব্যবধান দূর করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে দেশের বুদ্ধিমত্তার পরিযান প্রতিরোধ করবে।

এইসব সংস্কারের সময় মতো বাস্তবায়ন অবশ্যই ভুটানে কিছুটা আশাবাদের সঞ্চার করেছে। যদিও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতিতে এবং ভবিষ্যৎ অভিবাসন প্রশমনে তাদের প্রভাব ও দক্ষতা দেশের ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর হবে।


লেখক এই প্রতিবেদনের প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের জন্য ওআরএফ-এর ইন্টার্ন হ্যারিস আমজাদের কাছে কৃতজ্ঞ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.