মলদ্বীপ প্রজাতন্ত্র তার মাথাপিছু উচ্চ মোট জাতীয় আয় ও মানবসম্পদ সূচক (এইচএআই)–এর ভিত্তিতে ২০০৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তীর্ণ হয়। যাই হোক, সুনামির ধ্বংসযজ্ঞের কারণে প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হয়েছিল, এবং মলদ্বীপকে শেষ পর্যন্ত ২০১১ সালে একটি উচ্চ–মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে ঘোষণা করা হয়। প্রায় ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নামমাত্র জিডিপি সহ মলদ্বীপের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে আমদানির উপর নির্ভরশীল এবং প্রধানত পর্যটন ক্ষেত্র দ্বারা চালিত। ২০২৩ ও ২০২৪–এর জন্য স্থিতিশীল অর্থনৈতিক বৃদ্ধি অনুমান করা হয়েছে, কারণ অর্থবর্ষ '২৩–এ ১.৮ মিলিয়ন পর্যটক প্রত্যাশিত৷ যাই হোক, অনুমিত নিম্ন বৈশ্বিক জিডিপি–র কারণে একটি মন্দা আসতে পারে, যার ফলে পর্যটন ক্ষেত্র সঙ্কুচিত হবে।
চিত্র ১: মলদ্বীপের জিডিপি বৃদ্ধির হার
সূত্র: এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্ক
মলদ্বীপ সরকারের সামনে আরেকটি প্রধান সমস্যা হল ২০২৩ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের শেষে ঋণের ক্রমবর্ধমান বোঝা। যদিও মোট ব্যয় মাত্র ১০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, সরকারি রাজস্ব উল্লেখযোগ্যভাবে ২৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, এবং তা ঘটেছে প্রাথমিকভাবে কর রাজস্ব হ্রাসের কারণে। প্রধান বেসরকারি ক্ষেত্র, যেমন, পর্যটন, ব্যক্তিগত ঋণ, বাণিজ্য ও রিয়েল এস্টেট ঋণের প্রবাহ দেখেছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে দেশটি অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির উন্নয়নে মনোনিবেশ করছে। চাহিদা এবং সঞ্চয় আমানতের সুদের হার স্থির রয়েছে, তবে ২০২২ সাল থেকে বেসরকারি ক্ষেত্রের ঋণ আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বাণিজ্যে লক্ষণীয় সঙ্কোচন ঘটেছিল, এবং ২০২২ সালের একই মাসের তুলনায় মোট রপ্তানি ২৩ শতাংশ কম ছিল, এবং আমদানি ৪ শতাংশ কম ছিল। রপ্তানি হ্রাসের কারণ হিসাবে প্রাথমিকভাবে পুনরায় রপ্তানি ও অভ্যন্তরীণ রপ্তানি হ্রাসকে দায়ী করা হয়েছিল।
চিন–মলদ্বীপ গতিশীলতার বিকাশ
ভারত মহাসাগরে মলদ্বীপের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অবস্থান রয়েছে, যা ভারতীয় ও চিনা স্বার্থকে আকর্ষণ করে। ভারত এই দ্বীপপুঞ্জকে বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে তার সঙ্গে সাংস্কৃতিক, ভাষাগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে মূল্যবান মনে করে। মলদ্বীপের অবস্থান ভারতকে তার উপকূলকে জলদস্যুতা ও সন্ত্রাসবাদ থেকে সুরক্ষিত করতে সাহায্য করে। তার ‘স্ট্রিং অফ পার্লস’ কৌশল অনুসরণ করে চিন মলদ্বীপকে তার ভারত মহাসাগর যোগাযোগ লাইনকে দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত করার জন্য একটি প্রধান মুক্তা হিসাবে দেখে। পরিবেশগত উদ্বেগ মলদ্বীপের অস্তিত্বের ক্ষেত্রে বিপদস্বরূপ হওয়া সত্ত্বেও চিন তার শক্তি আমদানি রক্ষার জন্য সেখানে একটি ভিত্তি সুরক্ষিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, এবং এই ঘটনা এই অঞ্চলের ভূ–রাজনীতি ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের জটিল ক্রিয়া–প্রতিক্রিয়াকে তুলে ধরে।
তার ‘স্ট্রিং অফ পার্লস’ কৌশল অনুসরণ করে চিন মলদ্বীপকে তার ভারত মহাসাগর যোগাযোগ লাইনকে দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত করার জন্য একটি প্রধান মুক্তা হিসাবে দেখে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে নির্বাচিত বর্তমান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজু তাঁর প্রচারাভিযানের সময় চিনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা এবং ভারতীয় প্রভাব কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এইভাবে, ভারত–মলদ্বীপ সম্পর্ক একটি নড়বড়ে মোড়ে দাঁড়িয়েছে, এবং নীতিনির্ধারকরা মলদ্বীপের উপর চিনের প্রভাব এবং দুই দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) অনুমোদনের সম্ভাব্য ফলাফল বিবেচনা করছেন।
২০১৫ সালে চিন–মলদ্বীপ এফটিএ–র জন্য আলোচনা শুরু হয়েছিল দেশগুলির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করা এবং একটি পারস্পরিক ভাবে লাভজনক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব সুরক্ষিত করার উদ্দেশ্যে। মলদ্বীপ ৮ ডিসেম্বর ২০১৭–এ তার প্রথম দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি হিসাবে এফটিএ স্বাক্ষর করে, যা দুই পক্ষের মধ্যে বিশাল আয়তনগত পার্থক্যের কারণে সমালোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। অন্যদিকে, প্রবক্তারা দাবি করেছেন যে এফটিএ — পণ্য ও পরিষেবার বাণিজ্য, বিনিয়োগ, এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা — পারস্পরিকভাবে উপকারী হবে।
এফটিএ উভয় দেশের দ্বারা লেনদেনকৃত পণ্যের ৯৬ শতাংশকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল, এবং বাণিজ্যের শর্তাবলিতে বিস্তৃত ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল, যেমন উৎপত্তি বিধি, শুল্ক পদ্ধতি এবং স্যানিটারি ও ফাইটোস্যানিটারি ব্যবস্থাদি। যাই হোক, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন আবদুল গাইয়ুম ২০১৮ সালে তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত চুক্তিটি অনুমোদন করতে সক্ষম হননি। তাঁর উত্তরসূরি ইব্রাহিম সোলি ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ নীতি গ্রহণ করেছিলেন এবং এফটিএ কার্যকর করেননি, যার ফলে চিনা উদ্যোগগুলি চিন–মলদ্বীপের বাণিজ্য সম্প্রসারণের সম্ভাবনা সম্পর্কে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল।
এফটিএ পুনরুজ্জীবন
এখন প্রেসিডেন্ট মুইজু মালে–বেজিং সম্পর্ক জোরদার করার দিকে মনোনিবেশ করেছেন, এবং সম্ভবত কিছু পরিবর্তন–সহ ২০১৭–র এফটিএ অনুমোদন করা হবে। একটি এফটিএ সাধারণত স্বাক্ষরকারী দেশগুলির মধ্যে বাণিজ্যের উপর সমস্ত শুল্ক ও বিধিনিষেধ দূর করে, যদি না অন্যথায় কিছু নির্দিষ্ট করা হয়। এটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের বাইরেও দেশগুলির মধ্যে বাণিজ্য ও সহযোগিতার প্রসারের জন্য অনুসৃত শর্তগুলিকে আরও নির্দিষ্ট করে দেয়, যেমন, প্রযুক্তি, জ্ঞান এবং অন্যান্য সংস্থান বিতরণ। সুতরাং, দুটি দেশের উপর এবং তাদের দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীদের উপর এর প্রভাব মূল্যায়ন করার জন্য এফটিএ–র ধারাগুলির একটি বিশদ বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
প্রথমত, এফটিএ–র অধীনে সংশোধিত শুল্ক কাঠামো খতিয়ে দেখা দরকার। এফটিএ মলদ্বীপে চিনা আমদানিকে তিনটি বিভাগে শ্রেণিবদ্ধকরণ বাধ্যতামূলক করেছে: যে পণ্যগুলির উপর শুল্ক অবিলম্বে বাদ দেওয়া হবে, যে পণ্যগুলির উপর শুল্কগুলি পাঁচ ও আট বছরের মেয়াদে ধীরে ধীরে বাদ দেওয়া হবে, এবং যে পণ্যগুলির উপর ২০১৪ সালে ঘোষিত বেস রেটে শুল্ক থাকবে।
এফটিএ–র একটি মূল বিষয় হল যে চিনে উৎপাদিত যে কোনও পণ্য এফটিএ শুল্ক কাঠামোর অধীনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, অর্থাৎ চিনে উৎপাদিত প্রথম বিভাগের পণ্য অন্য দেশ থেকে আমদানিকৃত হলেও কোনও শুল্ক বাধার সম্মুখীন হবে না। ২০১৯ সালের হিসাবে মলদ্বীপের আমদানিতে চিনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল, যা সরকারের রাজস্বের একটি বড় অংশ। যাই হোক, শুল্ক বর্জন শুধুমাত্র চিন থেকে মলদ্বীপের রাজস্ব কমিয়ে দেবে না, সেইসঙ্গেই যেসব দেশ চিনা পণ্য পুনরায় রপ্তানি করে তাদের থেকেও। সামগ্রিকভাবে, এটি সরকারি ঋণ ক্রমাগত বাড়িয়ে চলবে, এবং সরকারকে অভ্যন্তরীণ ঋণ বাড়াতে বা অভ্যন্তরীণ কর রাজস্ব বাড়াতে বাধ্য করবে। এই উভয়েরই পারিবারিক খরচের জন্য গুরুতর পরিণতি হতে পারে, এবং সম্ভবত মলদ্বীপের অর্থনীতিকে সঙ্কোচনের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
মলদ্বীপের সার্বভৌম ঋণের ৬০ শতাংশেরও বেশি চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাঙ্ক অফ চায়না ও এক্সপোর্ট–ইমপোর্ট ব্যাঙ্ক অফ চায়নার কাছে। এভাবে চিনা ঋণদাতাদের কারণে সুদের পরিমাণ অত্যধিক হয়, এবং চিন থেকে মলদ্বীপের ঋণ বৃদ্ধি পায়।
দ্বিতীয়ত, আরও গুরুতর উদ্বেগ হল চিনের ঋণ ফাঁদ কূটনীতি, যা ভারত মহাসাগরকে নিয়ন্ত্রণ করার চিনা প্রচেষ্টায় মলদ্বীপকে একটি বোড়ে করে তুলতে পারে। গত দশকে জিডিপি–র অনুপাতে মলদ্বীপের বাহ্যিক ঋণ আকাশচুম্বী হয়েছে, যা ঋণের ফাঁদের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্রমবর্ধমান প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়। সার্বভৌম–গ্যারান্টিযুক্ত ঋণ বলতে বোঝায় এমন ঋণ যাতে সরকারের অপরিবর্তনীয় ও নিঃশর্ত গ্যারান্টি রয়েছে। মলদ্বীপের সার্বভৌম ঋণের ৬০ শতাংশেরও বেশি চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাঙ্ক অফ চায়না ও এক্সপোর্ট–ইমপোর্ট ব্যাঙ্ক অফ চায়নার কাছে। এভাবে চিনা ঋণদাতাদের কারণে সুদের পরিমাণ অত্যধিক হয়, এবং চিন থেকে মলদ্বীপের ঋণ বৃদ্ধি পায়।
সারণি ১: পাওনাদার দ্বারা সার্বভৌম–গ্যারান্টিযুক্ত বাহ্যিক ঋণে মলদ্বীপের বকেয়া
সূত্র: অর্থ মন্ত্রক, মলদ্বীপ
কুখ্যাত ঋণ ফাঁদ কূটনীতি মলদ্বীপের অর্থনীতিতে চিনা অনুপ্রবেশকে আরও গভীর করার জন্য বেজিংয়ের প্রচেষ্টার সামনে মালেকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করতে পারে।
যেহেতু এফটিএ দুই দেশের মধ্যে বর্ধিত অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে উৎসাহিত করে, এটি মলদ্বীপকে নিয়ন্ত্রণাতীত ঋণের মাত্রার দিকে নিয়ে যেতে পারে। কুখ্যাত ঋণ ফাঁদ কূটনীতি মলদ্বীপের অর্থনীতিতে চিনা অনুপ্রবেশকে আরও গভীর করার জন্য বেজিংয়ের প্রচেষ্টার সামনে মালেকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করতে পারে। সেই কারণে মলদ্বীপ সরকারের উচিত আঞ্চলিক অর্থনীতি এবং নিরাপত্তার জন্য সম্ভাব্য প্রভাবগুলি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে এফটিএ–র ধারাগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখা।
সৌম্য ভৌমিক সেন্টার ফর নিউ ইকনমিক ডিপ্লোম্যাসি, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন সহযোগী ফেলো
আর্য রায় বর্ধন সেন্টার ফর নিউ ইকনমিক ডিপ্লোম্যাসি, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন গবেষণা সহকারী
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.