২০২৪ সালের ১৬ অক্টোবর ওমর আবদুল্লা রাজনৈতিক পছন্দের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য আঞ্চলিক বিভাগ দ্বারা চিহ্নিত পরিসর জম্মু ও কাশ্মীর (জেঅ্যান্ডকে) কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের (ইউটি) মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এই বিভাজনটি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত তিন ধাপের বিধানসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলির এলাকাভিত্তিক ফলাফলের পার্থক্যের দরুন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (আইএনসি) নেতৃত্বাধীন জোট ৪১.০৮ শতাংশ ভোট পেয়ে কাশ্মীর প্রদেশের ৪৭টি আসনের মধ্যে ৪০টি আসনে জয়লাভ করেছিল। এর উলটো দিকে, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) জম্মুতে আধিপত্য বিস্তার করেছে এবং ৪৫.২৩ শতাংশ ভোট পেয়ে ২৯টি আসন জিতেছে।
বিজেপি-র তরফে শোরগোলের মাঝেই এই প্রস্তাবটি ভারতের সংসদ কর্তৃক কোনও বিতর্ক ছাড়াই পাস করা বিশেষ মর্যাদাটির একতরফা ভাবে অপসারণের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।
বহু-ধর্মীয় এবং বহু-জাতিগত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এই স্পষ্ট বিভাজনের মধ্যেই নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক আখ্যানে নয়াদিল্লি কর্তৃক ধারা ৩৭০-কে হ্রাস করার উপর মনোযোগ দেওয়া হয়েছে এবং তা স্পষ্টতই দর্শায় যে, কাশ্মীরি সামাজিক-রাজনৈতিক মানসিকতার মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদের বীজ এখনও প্রোথিত রয়েছে। ৪ নভেম্বর বিধানসভা অধিবেশনের প্রথম পর্বের পরপরই পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি) সেই ধারা ৩৭০ প্রত্যাহারের বিরোধিতা করে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে, যে ধারার দরুন এর আগে জম্মু ও কাশ্মীর বিশেষ মর্যাদা উপভোগ করত। দু’দিন পরে, এনসি-র উপমুখ্যমন্ত্রী ২০১৯ সালের ৫ অগস্ট নয়াদিল্লি কর্তৃক প্রত্যাহার করা কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা পুনরুদ্ধার করার জন্য একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। বিজেপি-র তরফে শোরগোলের মাঝেই এই প্রস্তাবটি ভারতের সংসদ কর্তৃক কোনও বিতর্ক ছাড়াই পাস করা বিশেষ মর্যাদাটির একতরফা ভাবে অপসারণের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। এনসি-নেতৃত্বাধীন সরকার এবং পিডিপি-এর প্রাক-স্বায়ত্তশাসন বাতিলের রাজনীতির রাজত্ব কাশ্মীরকে ভারতের বাকি অংশের সঙ্গে সমন্বিত করার জন্য নয়াদিল্লির নীতিকে শুধু জটিলই করে তোলেনি, বরং একটি মিথ্যা রাজনৈতিক বাগাড়ম্বরকে শক্তিশালীও করেছে।
ধারা ৩৭০ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ
১৯৪৯ সালে ভারতীয় সংবিধানে ধারা ৩৭০ অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল এবং সেটি কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক উভয় স্তরে রাজনৈতিক নেতাদের শোষণের একটি হাতিয়ার হয়ে ওঠে। যখন এক দিকে আঞ্চলিক রাজনীতিবিদরা অপশাসন, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারী শাসনের জন্য এই ধারা দ্বারা প্রদত্ত স্বায়ত্তশাসনের অপব্যবহার করেছেন, তখন অন্য দিকে কেন্দ্রীয় সরকার প্রায়শই এই অন্যায়ের প্রতি আমল দেয়নি। এই অপব্যবহারই পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদের দিকে চালিত করে এবং কয়েক দশক ধরে উপত্যকায় অশান্তির পরিবেশকেই স্থায়ী করে তুলেছিল। ১৯৭৮ সালের জননিরাপত্তা আইনের মতো কঠোর আইন – যার মাধ্যমে সাধারণ কাশ্মীরিদের মৌলিক অধিকার অস্বীকার করা হয়েছিল - স্বৈরাচারী নেতৃত্বের অপশাসন ও দুর্নীতিকে আরও প্রশস্ত করেছিল। ব্যক্তিগত লাভের জন্য শাসকশ্রেণী নির্লজ্জ ভাবে কেন্দ্রীয় তহবিল আত্মসাৎ করত। রাষ্ট্রীয় তহবিলের নির্লজ্জ অপব্যবহার এবং পক্ষপাতিত্ব ও স্বজনপ্রীতির সংস্কৃতি ২০০৫ সালে জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারতের দ্বিতীয় সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজ্যে পরিণত করেছিল। জাল অস্ত্র লাইসেন্স কেলেঙ্কারি (২০১২-২০১৬) – যার দরুন ভারতের অন্য ছ’টি রাজ্যও প্রভাবিত হয়েছিল - একটি জাতীয় নিরাপত্তা হুমকিতে পরিণত হয়েছিল এবং এর দরুন রাজ্যের পুলিশ, আমলাতন্ত্র ও অপরাধীদের মধ্যে গভীর ও অস্বাস্থ্যকর সম্পর্ক প্রকাশ্যে উঠে এসেছিল। অব্যবস্থাপনা, স্বৈরাচারী শাসন ও ব্যাপক দুর্নীতি গণতন্ত্রের প্রতি সাধারণ কাশ্মীরিদের আস্থা নষ্ট করেছে। উপরন্তু, রাজনৈতিক দলগুলি জনগণের অনুভূতিকে কাজে লাগানোর জন্য এবং নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে উস্কে দেওয়ার জন্যও ধারা ৩৭০-কে কাজে লাগিয়েছে।
আদালত এ কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ধারা ৩৭০ আসলে একটি অস্থায়ী বিধান এবং সংবিধান পরিষদ প্রতিষ্ঠার সুবিধার্থে ও ১৯৪৭ সালে নবগঠিত পাকিস্তানের আগ্রাসনের পরে ভারতের ইউনিয়নের সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরের সমন্বিতকরণকে সহজ করে।
২০১৯ সালের অগস্ট মাসে নয়াদিল্লি স্থিতিশীলতা, আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি ও জাতীয় সমন্বিতকরণের উদ্দেশ্যে জম্মু ও কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ করে তোলার জন্য রাজ্যের প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংবিধানিক ব্যবস্থা পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট ধারা ৩৭০ বাতিল করার জন্য নয়াদিল্লির সিদ্ধান্তকে বহাল রেখেছে এবং নির্দেশ দিয়েছে যে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জম্মু ও কাশ্মীরের অবস্থা পুনরুদ্ধার করা হোক। আদালত এ কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ধারা ৩৭০ আসলে একটি অস্থায়ী বিধান এবং সংবিধান পরিষদ প্রতিষ্ঠার সুবিধার্থে ও ১৯৪৭ সালে নবগঠিত পাকিস্তানের আগ্রাসনের পরে ভারতের ইউনিয়নের সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরের সমন্বিতকরণকে সহজ করে।
এই প্রেক্ষিতে জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভার প্রথম অধিবেশনে পিডিপি এবং ক্ষমতাসীন এনসি দ্বারা প্রবর্তিত প্রস্তাবগুলি স্থিতিশীল আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার বিষয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি করেছিল। এই কার্যকলাপগুলি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলির ক্ষুদ্র সুবিধার প্রতি সঙ্কীর্ণ মনোযোগকেই তুলে ধরে এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ইচ্ছাকৃত অবাধ্যতাকেই দর্শায়।
জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করা
বিধানসভা নির্বাচনের পরপরই পাকিস্তান ও তার এজেন্সিরা কাশ্মীর উপত্যকায় একের পর এক সন্ত্রাসবাদী ঘটনার মাধ্যমে সমস্যা সৃষ্টি করতে শুরু করে। ২০ অক্টোবর পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট-এর (টিআরএফ) আক্রমণে গন্দরবাল জেলায় সাতজন নিহত এবং পাঁচজন আহত হন। ২ নভেম্বর নিরাপত্তা সংস্থাগুলি শ্রীনগরের প্রাণকেন্দ্রে বহুদিনের প্রত্যাশিত এক বিদেশি সন্ত্রাসবাদীকে হত্যা করে। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয় ৩ নভেম্বর যখন শ্রীনগরে গ্রেনেড হামলায় একজন মহিলা নিহত এবং দশজন আহত হন। অনেক সাধারণ কাশ্মীরি, বিশেষ করে যুবকরা সন্ত্রাসবাদে হতাশ এবং পাকিস্তান ও তার সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সময় সন্ত্রাসী ঘটনার নিন্দা করেছে। বেশিরভাগ শিক্ষিত যুবক শান্তি ও স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে চায়, যার লক্ষ্যে ইউটি ২০১৯ সাল থেকে ধীরে ধীরে এগিয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরে পাকিস্তানের তীব্র প্রক্সি যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে, আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলিকে অবশ্যই ধারা ৩৭০-এর মতো ঐতিহাসিক ভুলগুলিকে সমর্থন করার বদলে সন্ত্রাসবাদ ও হিংসার নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করতে হবে। এনসি-নেতৃত্বাধীন সরকারের উচিত রাজনৈতিক ছলচাতুরি ও বাগাড়ম্বরে মনোনিবেশ না করে একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ জম্মু-কাশ্মীরের জন্য তরুণদের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করা।
তরুণদের মধ্যে মাদকাসক্তির উদ্বেগজনক বৃদ্ধি মোকাবিলায় আঞ্চলিক দলগুলিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
প্রতিবেদন অনুসারে, ইউটি-তে ন’লক্ষেরও বেশি মানুষ মাদকাসক্ত, এমনকি ধর্মীয় নেতারাও এই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান মাদকের অপব্যবহারের নিন্দা জানিয়ে বক্তৃতা দিতে শুরু করেছেন ও পদক্ষেপের জরুরি প্রয়োজনের কথা তুলে ধরেছেন। তরুণদের মধ্যে মাদকাসক্তির উদ্বেগজনক বৃদ্ধি মোকাবিলায় আঞ্চলিক দলগুলিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সীমান্তের ওপার থেকে আনা এই মাদক ইউটি-র সামাজিক স্থিতিশীলতাকে পঙ্গু করে দেওয়ার পাকিস্তানের উদ্দেশ্যকেই দর্শায়। সন্ত্রাসবাদ ও বিদ্রোহের প্রতি পাকিস্তানের গোপন সমর্থনের প্রেক্ষিতে তাই আরও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা রোধ করতে ও এই অঞ্চলের যুবকদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ করতে হবে।
আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলিকে অবশ্যই চিরাচরিত অভিযোগ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনীতির কবল থেকে সরে আসতে হবে, যা পাকিস্তানের দুষ্ট পরিকল্পনায় মদত জোগায়। বরং দলগুলির উচিত জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের প্রকৃত আকাঙ্ক্ষার দিকে মনোনিবেশ করা, বিশেষ করে তরুণদের উপর, যাঁরা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কাণ্ডারি। মেধাসম্পন্ন হাজার হাজার বেকার যুবক সংরক্ষণ নীতির তীব্র সমালোচনা করেছে, যা ২০১৯ সালের পরে কার্যকর হওয়ার পর থেকে সমাজের দুর্বল শ্রেণির জন্য ৬০ শতাংশেরও বেশি চাকরি সংরক্ষিত করেছে।
আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলিকে অবশ্যই জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের চাহিদা এবং আকাঙ্ক্ষার উপর মনোযোগ দিয়ে, সামাজিক সম্প্রীতি ও অন্তর্ভুক্তি প্রচার করে সমন্বিতকরণের পথে হাঁটতে হবে। এই দৃষ্টিভঙ্গিই অঞ্চলটির জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে, যার বৈশিষ্ট্য শান্তি, সমৃদ্ধি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন। যদি দলগুলি এমনটা করতে ব্যর্থ হয়, তা হলে জম্মু ও কাশ্মীর আবার অশান্তি ও সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘরে পরিণত হবে।
আয়জাজ ওয়ানি অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.