Author : Harsh V. Pant

Published on Feb 06, 2024 Updated 0 Hours ago
আর্টিকল ৩৭০ সংক্রান্ত রায় – আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের গুরুত্ববৃদ্ধি

২০১৯ সালের অগস্ট মাসে শুরু হওয়া একটি প্রক্রিয়া শেষ পর্যন্ত ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে শেষ হল, যখন সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের আর্টিকল ৩৭০ প্রত্যাহার করার বিষয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের সিদ্ধান্তে অনুমোদনের শিলমোহর দেয়। ২০১৯ সালের ৫ গস্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে আর্টিকল ৩৭০ বাতিল করার কথা ঘোষণা করেন, যা জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারতীয় সংবিধান থেকে ছাড় প্রদান (আর্টিকল ১ এবং আর্টিকল ৩৭০ ব্যতীত) এবং রাজ্যটিকে তার নিজস্ব সংবিধানের খসড়া তৈরি করার অনুমতি দিয়েছিল। রাজ্যটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছিল - আইনসভা ছাড়া লাদাখ এবং আইনসভা-সহ জম্মু ও কাশ্মীর। এটি ছিল একটি রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ এবং অনুমানযোগ্য ভাবে রাজনৈতিক পরিসর জুড়ে তা শক্তিশালী আবেগের জন্ম দিয়েছিল, যা আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। অগস্ট মাস থেকে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে প্রায় ২৩টি পিটিশন গ্রহণ করেছে।

আর্টিকল ৩৭০ বাতিল করার বিষয়টিকে জম্মু ও কাশ্মীরের ইউনিয়নের সঙ্গে ‘সমন্বিতকরণের প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত পরিণতি বলে উল্লেখ করে, সুপ্রিম কোর্ট ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঘোষণা করেছে যে, এই আর্টিকলটিকে নিষ্ক্রিয় ঘোষণা করার নেপথ্যে কোনও খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না। সাংবিধানিক বেঞ্চ অনুসারে, আর্টিকল ৩৭০ জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যকে প্রদেয় বিশেষ মর্যাদা একতরফা ভাবে বাতিল করার জন্য ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাকে বহাল রেখেছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, জম্মু ও কাশ্মীর ‘সম্পূর্ণ এবং চূড়ান্ত’ ভাবে তার সার্বভৌমত্ব সমর্পণ করেছে, যখন ১৯৫৯ সালের ২৫ নভেম্বর রাজ্যটির জন্য একটি ঘোষণা জারি করা হয়েছিল এবং আর্টিকল ৩৭০ সেই সময়ে ছিল একটি অস্থায়ী বিধান - রাজ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে এক অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাও বটে

রায়ের পরও এ বিষয়ে দলীয় রাজনীতি চলবে কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি নিয়ে আপাতত উপসংহার টেনেছে। একাধিক উপায়ে এই রায় বিশ্বমঞ্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অবস্থানকে শক্তিশালী করে তুলেছে এমন একজন নেতা হিসেবে, যিনি ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যার নিষ্পত্তিমূলক সমাধান অন্বেষণে বদ্ধপরিকর।

কাশ্মীরের স্থিতাবস্থা অনেক আগেই অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছিল। শুধু মাত্র রাজনৈতিক ও নীতির জড়তাই ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের পরিস্থিতির সংস্কারকে চ্যালেঞ্জ করা থেকে বিরত রেখেছিল। জম্মু ও কাশ্মীরের তথাকথিত সমস্যা সব সময়ই রাজ্যের জনগণ এবং দেশের বাকি অংশের মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক বিষয়। অবশিষ্ট ভারত গত সাত দশক ধরে জম্মু ও কাশ্মীরের বিপরীতে একগুচ্ছ নীতি মেনে চলেছে এবং তার ফলাফলও খুব একটা আশানুরূপ হয়নি। জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের যেমন বাকি ভারতে অংশীদারিত্ব রয়েছে, তেমন বাকি ভারতেরও অংশীদারিত্ব রয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরে। মোদী সরকার এ কথাই সুস্পষ্ট করে দেয় যে, তারা শুধু মাত্র ভারতের অশান্ত পরিধিকে সমন্বিত করার বিষয়েই আগ্রহী নয়, বরং একটি রাষ্ট্রের উচ্চাকাঙ্ক্ষা সম্পর্কেও সচেতন, যেটি সম্পদ থাকা সত্ত্বেও হিংসা এবং রাজনৈতিক অধঃপতনের বেড়াজালে আটকা পড়েছে।

সরকারের সংস্কারমূলক কর্মসূচির সাফল্য জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের জন্য এবং ভারতের নিজের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবং এটিকে সম্পূর্ণ কার্যকর করতে সময়ের প্রয়োজন হলেও এর ফলাফল ইতিমধ্যেই হিংসার পরিমাণ হ্রাস, অবকাঠামোগত উন্নয়নে দ্রুতগতি এবং ক্রমবর্ধমান পর্যটকের সংখ্যায় প্রতিফলিত হয়েছে।

ভারতে সমালোচকরা সরকারি পদক্ষেপগুলি নিয়ে ক্রমাগত সমালোচনা করলেও, তাঁদের অভিপ্রাভারতের প্রতিপক্ষ দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে। সর্বোপরি, চিনের লাদাখের দিকে অগ্রসর হওয়ার নেপথ্যে অন্যতম কারণ ছিল এই সত্যের স্বীকৃতি যে, এই পদক্ষেপগুলি চিনের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির জন্য ভারতের কৌশলগত পরিধিকে মৌলিক ভাবে বদলে দিতে পারে। যারা বর্তমান স্থিতাবস্থায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছিল, তাদের অস্বস্তিতে ফেলবে… ভারত নিজের অভিপ্রায় শেষ  পর্যন্ত স্পষ্ট ব্যক্ত করেছে।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে পাকিস্তানে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে, তা স্পষ্ট করে দেয় যে কাশ্মীর নিয়ে আলোচনায় পাকিস্তান বর্তমানে কতটা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছেনানাবিধ খামখেয়ালিপনার জন্য পাকিস্তান দীর্ঘদিন যাবৎই এই বিষয়টিতে তার অবস্থান হারিয়েছিল। বর্তমানে পাকিস্তানি রাজনীতিবিদদের সমস্ত মনোযোগই দেশের জনগণের উপর নিবদ্ধ। পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং আর্টিকল ৩৭০ প্রত্যাহার করার বিষয়ে ভারতের সিদ্ধান্তের পরে হাইকমিশনারের কাছে আবেদন জানানোর বিষয়ে পদক্ষেপ করার চেষ্টা করলেও আন্তর্জাতিক পটভূমি ক্রমশ বদলে গিয়েছে এবং পাকিস্তানের এই সকল সিদ্ধান্ত ইসলামাবাদকে ভারতীয় বিদেশনীতির পরিসরে আরও অবান্তর করে তুলেছে।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর পাকিস্তানের মাটিতে নতুন বাস্তবতা স্বীকার করে নিলে সেই দেশের পক্ষে নতুন করে শুরুর সুযোগ থাকবে। তবে তার জন্য অবশ্যই পাকিস্তানকে নিজেদের নির্বাচন হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এখন যা-ই ঘটুক না কেন, কথা স্পষ্ট, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে যে কোনও শর্তই এ বার নয়াদিল্লি নির্ধারণ করবে।

অবশিষ্ট বিশ্বের জন্য - যা ইতিমধ্যেই একটি ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে ভারতের সঙ্গে সম্পৃক্ততায় আগ্রহী - সুপ্রিম কোর্টের রায় এই ধারণাটিকে আরও শক্তিশালী করবে যে, প্রধানমন্ত্রী মোদী দেশের বৃহত্তর আবেগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং কাশ্মীর সমস্যাভারত বা দেশের সরকারকে দেখার প্রধান আঙ্গিক নয়। আর্টিকল ৩৭০-এর কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে সরকার সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতীয় বিদেশনীতির সম্মুখে উপস্থিত সবচেয়ে গুরুতর চ্যালেঞ্জটির নিষ্পত্তি ঘটিয়েছে। এই পদক্ষেপ সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের বৈধতা মোদীর জন্য সর্বোৎকৃষ্ট সময়েই ঘটেছে।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় এনডিটিভি-তে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.