ফিলিপিন্সের জলসীমায় ফিলিপিন কোস্ট গার্ডের (পিসিজি) পুনঃসরবরাহ মিশনকে হয়রানি করা থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর মাসে স্কারবোরো শোলের কাছে একটি ফ্লোটিং ব্যারিয়ার বা ভাসমান বাধা স্থাপন করার জন্য নিজের ‘টেন-ড্যাশ লাইন’ মানচিত্র ঘোষণা করা পর্যন্ত চিন ম্যানিলার সার্বভৌমত্ব ও পশ্চিম ফিলিপিন সাগরের সার্বভৌম অধিকারের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক কার্যকলাপ বৃদ্ধি করে চলেছে। সামুদ্রিক পরিসরের জন্য বেজিংয়ের বৃহত্তর উচ্চাকাঙ্ক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে চিনের এই ধরনের আগ্রাসন বোঝা অত্যন্ত জরুরি। চিন ফিলিপিন্সের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলির পাশাপাশি অঞ্চল-বহির্ভূত শক্তিগুলিকে হটিয়ে দেওয়ার নীতি কার্যকর করার মাধ্যমে বৃহত্তর দক্ষিণ চিন সাগরে তার প্রভাবের ক্ষেত্রকে আরও সুদৃঢ় করতে চায়। আসলে বৃহত্তর দক্ষিণ চিন সাগর এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী অবস্থানের বিরুদ্ধে চিনের পক্ষে একটি ভৌগোলিক ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে বেজিংয়ের জন্য এটির সামরিকীকরণই কেবল গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং একই সঙ্গে মার্কিন জোটের শৃঙ্খলকে কৌশলগত জলসীমার বাইরে ঠেলে দেওয়ার জন্য সামুদ্রিক পরিসরে নিজের জোরালো উপস্থিতি সুসংহত করা জরুরি।
চিন ফিলিপিন্সের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলির পাশাপাশি অঞ্চল-বহির্ভূত শক্তিগুলি্কে হটিয়ে দেওয়ার নীতি কার্যকর করার মাধ্যমে বৃহত্তর দক্ষিণ চিন সাগরে তার প্রভাবের ক্ষেত্রকে আরও সুদৃঢ় করতে চায়।
এই আলোকে মার্কিন প্রভাবের ঐতিহ্যগত ক্ষেত্র ও চিনা শক্তির ক্রমবর্ধমান অবস্থানের মধ্যে সংযোগস্থলে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশ হিসাবে ফিলিপিন্সের অনস্বীকার্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের বর্তমান প্রশাসনের অধীনে ম্যানিলা তার সার্বভৌমত্ব ও সার্বভৌম অধিকারের পক্ষে লড়াই করার জন্য আরও দৃঢ় সংকল্প প্রদর্শন করে চলেছে। বহু দিন ধরে চিন পশ্চিম ফিলিপিন সাগরে ফিলিপিন্সকে তার সার্বভৌমত্ব ও সার্বভৌম অধিকারের প্রতি সংবেদনশীল এবং কিছুটা সঙ্কুচিত অবস্থায় দেখতেই অভ্যস্ত ছিল। যাই হোক, বর্তমান সময়ের ফিলিপিন্স স্পষ্টতই বিগত কয়েক বছর বা দশক আগেকার ফিলিপিন্স নয়। ম্যানিলা শুধুমাত্র প্রথাগত নিরাপত্তা পদ্ধতির উপর নির্ভর করেই নয়, বরং এর সম্প্রসারিত প্রতিরক্ষা শৃঙ্খলের উপযোগিতাকে প্রসারিত করার মতো অভিনব কৌশলগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে চিনের সালামি স্লাইসিং বা ধীরে ধীরে অঞ্চল আগ্রাসনের বিষয়টিকে সক্রিয় ভাবে মোকাবিলা করার ব্যাপারে তার অবিচল আকাঙ্ক্ষাকে তুলে ধরেছে। ফিলিপিন্স এ ছাড়া চিনা আগ্রাসনকে মানুষের সামনে তুলে ধরার জন্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ব্যবহার, ইউএন কনভেনশনস অন দ্য ল অব দ্য সি-র (ইউএনসিএলওএস) মূল নীতি ও ২০১৬ সালের সালিসি রায়ের নীতিকে প্রকাশ্যে সমর্থন করা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে ‘সমগ্র জাতি’ মনোভাবের দিকে এক পা এক পা করে অগ্রসর হওয়ার মনোভাবকে তুলে ধরার কাজটিও করেছে। এই অঞ্চলে সমসাময়িক ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে মার্কোস জুনিয়র প্রশাসন একটি পদ্ধতিগত ও লক্ষ্যযুক্ত নিরাপত্তা কৌশল স্থাপনের প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা আগামী কয়েক বছরে বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে ফিলিপিন্স সরকারের জন্য একটি স্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত কাঠামো তুলে ধরবে। এই ধরনের উপলব্ধি এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন চিন পশ্চিম ফিলি্পিন সাগরে তার দৃঢ় আগ্রাসনের আকাঙ্ক্ষাকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। বেজিংয়ের এই জাতীয় কার্যকলাপকে ম্যানিলা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়সঙ্গত আলোচনা এবং সহযোগিতার জন্য শর্তগুলিকে সহজতর করতে চিনের অনিচ্ছা বলে মনে করে।
এই আলোকে মার্কিন প্রভাবের ঐতিহ্যগত ক্ষেত্র ও চিনা শক্তির ক্রমবর্ধমান অবস্থানের মধ্যে সংযোগস্থলে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ হিসাবে ফিলিপিন্সের অনস্বীকার্য ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান রয়েছে।
অস্থির আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটের কারণেই ফিলি্পিন্সের ন্যাশনাল সিকিউরিটি পলিসি (এনএসপি) ২০২৩-২০২৮ গত অগস্ট মাসে প্রকাশিত হয়। নথিটি নিঃসন্দেহে সবচেয়ে মৌলিক নির্দেশিকাগুলির অন্যতম যা আগামী বছরগুলিতে ফিলিপিন্সের নিরাপত্তা নীতিকে পথ দেখাবে। আরও গুরুত্বপূর্ণ ভাবে, সাম্প্রতিক এনএসপি-তে পশ্চিম ফিলিপিন সাগরকে ‘একটি প্রাথমিক জাতীয় স্বার্থ’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। এ কথাও মনে রাখা প্রয়োজন, অন্যান্য দাবিদার দেশ ২০১৬ সালে ফিলিপিন্সের স্বার্থ, সার্বভৌমত্ব ও সার্বভৌম অধিকারের পক্ষে রায়টি ক্রমাগত প্রত্যাখ্যান করেছে। এই প্রেক্ষিতে নতুন এনএসপি আরও জোর দিয়ে বলে যে, কী ভাবে ফিলিপিন্সের স্বার্থকে চ্যালেঞ্জ করে এ হেন একগুচ্ছ নিরাপত্তা সমস্যার মধ্যে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্য হুমকির কারণগুলি সর্বাগ্রে জায়গা করে নিয়েছে, ফলে সরকারের প্রাথমিক কর্মসূচি হিসাবে ‘প্রতিরক্ষা এবং সামরিক নিরাপত্তা’ই উঠে এসেছে। সেই অনুসারে, ফিলিপিন্সের সার্বভৌমত্ব ও সার্বভৌম অধিকার সংক্রান্ত উদীয়মান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি বহুমুখী পদ্ধতি গ্রহণের জন্য পিসিজি, ফিলিপিন নেভি (পিএন) ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলির মধ্যে সমন্বয়কে উন্নত করার জন্য এনএসপি-তে একটি সমগ্র দেশব্যাপী দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, ফিলিপিন সেনেটও পশ্চিম ফিলিপিন সাগরে চিনের কার্যকলাপের নিন্দা জানিয়ে একটি উল্লেখযোগ্য প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (এনএসসি) আনক্লজ এবং ২০১৬ সালের রায়ের উপর ভিত্তি করে দেশের বৈধ দাবিগুলির উপর জোর দেওয়ার জন্য ফিলিপিন্স নতুন করে একটি মানচিত্র প্রকাশ করতেও প্রস্তুত। এর পাশাপাশি ফিলিপিন সেনেট আনক্লজ দ্বারা নির্ধারিত উদ্দেশ্যমূলক মানদণ্ডের ভিত্তিতে দেশের সামুদ্রিক অঞ্চলের পরিসরকে ঘোষণা করে ম্যানিলার সামুদ্রিক দাবিকে শক্তিশালী করার জন্য একটি প্রস্তাবিত মেরিটাইম জোন বিলের শুনানি শুরু করেছে। এই প্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ফিলিপিন্সের জোটের অধীনে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হওয়ার দরুন কোনও যুদ্ধের সূচনা না করে ফিলিপিন্সের সার্বভৌমত্ব ও সার্বভৌম অধিকারের মূল্যে নিজের কৌশলগত স্বার্থকে চরিতার্থ করার জন্য চিন কত দূর এগোতে পারে, তা নির্ধারণ করার চেষ্টা করছে। চিন তার সামরিক সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন এবং কোনও ব্যাপক কৌশলগত সামরিক ঝুঁকি ছাড়াই ধীরে ধীরে স্থিতাবস্থার পরিবর্তন করতে আগ্রহী। একটি অত্যন্ত হিসেবি শক্তি হওয়ার দরুন চিনকে তার সাম্প্রতিক উস্কানিমূলক প্রতিক্রিয়াগুলির বিদ্যমান অভিজ্ঞতামূলক মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রথমে নিজের নীতি কৌশল গ্রহণ করতে হবে। অনুকরণসাপেক্ষ কোনও মৌলিক সূত্র বের করতে সক্ষম হলে এবং বাস্তবে যে পরিবর্তন ঘটছে, সেটিকে কার্যকর ভাবে কাজে লাগাতে পারলে তা চিনের জন্য ইতিবাচক হবে।
জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (এনএসসি) আনক্লজ এবং ২০১৬ সালের রায়ের উপর ভিত্তি করে দেশের বৈধ দাবিগুলির উপর জোর দেওয়ার জন্য ফিলিপিন্স একটি নতুন মানচিত্র প্রকাশ করতেও প্রস্তুত।
যাই হোক, ফিলিপিন্স কাউকে জায়গা ছেড়ে দেওয়া ও নিজের জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত রাখার মাঝে কী ভাবে সমতা বজায় রাখবে, সে সম্পর্কে রাজনৈতিক ভাবে আরও সচেতন হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে চিনের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসন মোকাবিলা করার জন্য ফিলিপিন্সকে অবশ্যই বৃহত্তর কৌশল গ্রহণ করতে হবে। বৃহৎ ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়ে তার জাতীয় নিরাপত্তা সক্ষমতা ও বাহ্যিক প্রতিরক্ষা শৃঙ্খলকে উন্নত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ম্যানিলাকেও শক্তিশালী অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের নেতৃত্বে দ্ব্যর্থহীন থাকতে হবে। চিনের শক্তি প্রদর্শনের ক্ষমতা তার প্রসারিত অর্থনৈতিক প্রভাবের মধ্যে গভীর ভাবে নিহিত। দেশটি প্রায়শই ভূ-রাজনৈতিক উপায় হিসাবে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে তার অপ্রতিসম বাণিজ্যিক সম্পর্ককে হাতিয়ার করে তুলেছে। জুলাই মাস পর্যন্ত চিন ফিলিপিন্সের শীর্ষ রফতানি গন্তব্য এবং আমদানির উত্স থেকেছে। ফিলিপিন্স একটি নেট আমদানিকারক দেশ হওয়া সত্ত্বেও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশটির শীর্ষ রফতানি গন্তব্যের বাস্তবতা গত কয়েক বছর ধরে ক্রমশ বদলে যাওয়ার দরুন শীর্ষ আমদানিমূলক উত্স হিসাবে চিনের শক্তিশালী অবস্থান উদ্বেগের মুখে পড়েছে। এ ভাবে, ম্যানিলা যখন মুদ্রাস্ফীতির হার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, তখন চিন থেকে সস্তা পণ্য আমদানি করার বিষয়টির হঠাৎ বৈচিত্র্যকরণের আর্থ-সামাজিক বিপদ সম্পর্কে ফিলিপিন্স সচেতন। তাই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশটি সমমনস্ক দেশগুলির সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করে চলেছে এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও এটির অংশীদারিত্বের পরিধি আরও প্রসারিত করতে হবে। তার অংশীদারদের সঙ্গে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়সঙ্গত বাণিজ্যিক চুক্তি গড়ে তোলার মাধ্যমে ফিলিপিন্স ধীরে ধীরে চিনের উপর থেকে তার আমদানিমূলক নির্ভরতা হ্রাস করতে পারে এবং এ ভাবে নিজের জন্য আরও কৌশলগত নমনীয়তা সৃষ্টি করতে পারে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশটি সমমনস্ক দেশগুলির সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করে চলেছে এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও এটির অংশীদারিত্বের পরিধি আরও প্রসারিত করতে হবে।
যেহেতু ফিলিপিন্স ইন্দো-প্যাসিফিক ও ইউরোপের সমমনস্ক দেশগুলির সঙ্গে তার কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি অব্যাহত রেখেছে, চিন এমন সময়ে তার নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থকে আরও কার্যকর ভাবে অনুসরণ করার জন্য এবং পশ্চিম ফিলিপিন সাগর ও বৃহত্তর দক্ষিণ চিন সাগরে নিজের কৌশলগত উপস্থিতিকে সুদৃঢ় করার আকাঙ্ক্ষায় এই সম্প্রসারিত সম্পর্কগুলিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। অতএব, ম্যানিলার জন্য তার জাতীয় স্বার্থ অনুসরণের উদ্দেশ্যে একটি ধারাবাহিক রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির প্রদর্শন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। বেজিংয়ের হাতে সময় ও অর্থ উভয় থাকার দরুন চিন ফিলিপিন্সের পুনরুজ্জীবিত নিরাপত্তা ও বৈদেশিক নীতির দৃষ্টিভঙ্গিতে যে কোনও অসঙ্গতিকে কাজে লাগাতে চাইবে।
ডন ম্যাকলেন গিল ফিলিপিন্সভিত্তিক ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক, লেখক এবং ডে লা সালে ইউনিভার্সিটির (ডিএলএসইউ) ডিপার্টমেন্ট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর অধ্যাপক।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.